রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬

পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০৩ (বৌদ্ধ ধর্ম)

কোন সৎ, চিন্তা ব্যক্তি নারীর প্রতি কোনো ধর্মের স্থূল নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ও বর্বরতার উপেক্ষা করতে পারে না ।শক্তিশালী সৃষ্টিকর্তা দেবতা পুরুষ শাসিত, উপজাতীয়, সহিংস, অসহিষ্ণু সমাজের পণ্য ছিল। সমাজ জীবনে নারীর তুলনামূলক অনুপস্থিতি এবং নারীর উপর ধর্ষবাদী পুরুষদের যৌন আগ্রাসন ও ধর্ষণের আধিক্য যে কোনও মানুষের চোখে পড়বে।

আমরা জানি যে, নারীর হাত দিয়েই প্রধানত মানুষের সভ্যতার সূচনা হয়। কৃষি, পশুপালন, বস্ত্র, মৃৎ পাত্র নির্মাণ এগুলো মূলত নারীদের উদ্ভাবন এবং অনেক কাল পর্যন্ত এগুলো মূলত তাদেরই কাজ ছিল।কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে যুদ্ধ বা সমরবাদের শক্তিবৃদ্ধি নারীর অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটায়।

বৌদ্ব ধর্মের অনুসারীগণ মনে করে নারীসংগ নির্বান লাভে অন্তরায়।বৌদ্ব ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বোদ্ধ বলেছেন, “নারীদের সাথে কোনরুপ মেলামেশা কর না এবং তাদের প্রতি অনুরাগ রেখ না।তাদের সাথে কথা-বার্তাও বলবে না।কারণ পুরুষের পক্ষে নারী ভয়ংকরস্বরুপ।নারী থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।”

বৌদ্ধ ধর্মে নারীরা শুধু সামাজিকভাবে নিগৃহীত হয়নি ধর্মীয়ভাবেও তাদের মর্যাদা ছিল অতিনগন্য যা বৈদিক ধর্মীয় গ্রন্থ 'মনুস্মৃতি'র শ্লোক উদাহরণ স্বরূপ প্রদত্ত হল।
নাস্তি স্ত্রীনাম পৃথগ্ যজ্ঞো ন ব্রতম্ নাপ্যুপোষথম্
পতিম্ শুশ্রুষতে যেন তেন স্বর্গে মহীয়তে। - শ্লোক ১৫৩

অর্থাৎ, প্রয়োজন নেই পৃথক কোন যজ্ঞ কিংবা উপোসনালয়ের,
পতি সেবায় স্বর্গ লাভ হবে স্ত্রীদের।

বৌদ্ধশাস্ত্রের ৫৩৬ নম্বর জাতক - নাম কুণাল জাতক। এই জাতকের প্রধান চরিত্র হল কুণাল যার মুখ নিঃসৃত বানী থেকে আমরা নারীদের সম্পর্কে জানতে পারি । কুণাল বলেন নারী কখনই বিশ্বাসযোগ্য নয়, নারী স্বভাবতই বিশ্বাস ঘাতিনী। নারী কোন ভাবেই প্রশংসার যোগ্য নয় এবং কি নারী কামাচারে পাত্রাপাত্র বিচার করে না।

এ নিয়ে বিদূরপণ্ডিত জাতকে আছে,
“নারীর চরিত্র হায়, কে বুঝিতে পারে?
অসতী প্রগলভা বলি জানি সবাকারে।
কামিনী কামাগ্নি তাপে জবে দগ্ধো হয়
উচ্চে নীচে সমভাবে বিতরে প্রণয়।
খাবার প্রস্তুতে বিচার নাই আগুনের ঠাই
নারীর প্রেমে পাত্রাপাত্র ভেদ জ্ঞান নাই।
অতএব ত্যাজি হেন জঘন্য সংসার
সন্ন্যাসী হইবো এই সংকল্প আমার।”

কুণালের মুখে উচ্চারিত হয় নীতি গাথা-
“সদা রক্ত মাংস প্রিয়, কঠোর হৃদয়,
পঞ্চায়ুধ, ক্রূরমতি সিংহ দুরাশয়।
অতিলোভী, নিত্য প্রতিহিংসা পরায়ণ,
বধি অন্যে করে নিজ উদর পূরণ।
স্ত্রীজাতি তেমতি সর্বপাপের আবাস,
চরিত্রে তাহাদের কভু করো না বিশ্বাস।”

তার মানে, পুরুষের কখনোই নারীর চরিত্রে বিশ্বাস করা উচিত নয়।

নারীরা যে মলের মতো দুর্গন্ধময়, এ সম্পর্কে কুণাল বলেন,
“নারী হল উন্মুক্ত মলভাণ্ডের ন্যায়। উন্মুক্ত মলভাণ্ড দেখিলে মাছি সেখানে ঝাপ দিবেই তাকে রোহিত করা কষ্টকর। কিন্তু একজন জ্ঞানী মানুষ সব সময় এই মলভাণ্ডের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করে তা এড়িয়ে চলে। তদ্রূপ নারীরূপ মলভাণ্ডে মাছিরূপ পুরুষ ঝাপ দিবেই, কিন্তু একজন জ্ঞানী ভিক্ষু এই উন্মুক্ত মলভাণ্ডরূপ নারীদের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করিয়া তাদের সদাই পরিত্যাগ করেন।“

কুণাল তার নীতিগাথায় আরো বলেন,
“চৌর, বিষদিগ্ধসুরা, বিকত্থি বণিক
কুটিল হরিণ শৃঙ্গ, দ্বিজিহ্বা সর্পিণী
প্রভেদ এদের সঙ্গে নেই রমণীর।
প্রতিচ্ছন্ন মলকুপ, দুষ্কর পাতাল
দুস্তোস্যা রাক্ষসী, যম সর্বসংহারক
প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।
অগ্নি, নদী বায়ু, মেরু কিংবা বিষবৃক্ষ নিত্যফল
প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।”

বোধিসত্ত্ব এক রাজা ছিলেন, এবং তাঁর পুরোহিতের সঙ্গে নিয়মিত পাশা খেলতেন। খেলার সময় একটি গান গেয়ে চাল দিতেন, এবং গানটির সত্যতা-বলে প্রতিবারই জিততেন। সেটির অংশবিশেষ,

“পাপাচার পরায়ণ জানিবে রমণীগণ,
স্বভাব তাদের এই নাহিক সংশয়;
যখনই সুবিধা পায়, কুপথে ছুটিয়া যায়,
ধর্ম্মে মতি তাহাদের কভু নাহি হয়।”
অর্থাৎ,নারীদের এতোই জঘন্য স্বভাব যে এখানে সেখানে তারা ঘুরাফেরা করে।

দুরাজান (দুর্জ্ঞেয়)-জাতক এর একটি কবিতা আছে ,
“ভাল যদি বাসে নারী, হইও না হৃষ্ট তায়;
যদি ভাল নাহি বাসে, তাতেই কি আসে যায়?
নারীর চরিত্র বুঝে হেন সাধ্য আছে কার?
বারিমাঝে চলে মাছ, কে দেখিবে পথ তার?”

অর্থাৎ, নারীরা সব সময় প্রেমালাপে পুরুষদের বস করে যদিও মনের মধ্যে তাদের থাকে খারাপ অভিলাস।

অনভিরতি-জাতক গল্পের কবিতায় বলা হয়েছে,
“নদী, রাজপথ, পানের আগার উৎস, সভাস্থল আর,
এই পঞ্চস্থানে অবাধে সকলে ভুঞ্জে সম অধিকার।
তেমনি রমণী ভোগ্যা সকলের, কুপথে তাহার মন;
চরিত্রস্খলন দেখিলে তাহার, রোধে না পণ্ডিত জন।”

অর্থাৎ, সুযোগ পেলেই অসতীরা পুরুষের সম্মান নষ্ট করে।
(পর্ব আকারে লেখা হচ্ছে, চলতে থাকবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন