মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

বিচারহীনতায় বাংলাদেশ

যখন একটি রাষ্ট্রে বিচারহীনতার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, অযাচিত রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পায় তখনই সমাজের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে থাকে। আর তখনই রাজনৈতিক প্রভাবে অপরাধরীরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে। গোটা দেশটাই হয়ে উঠে অপরাধ রাজ্য।

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে সমাজের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি। ঘটনার বিশ্লেষণ বা তরজমা এখন আর জনমানসে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কোপাকুপির আতঙ্ক। কে কখন সন্ত্রাসীদের চাপাতির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন এই ভয় পেয়ে বসে আছে দেশের সকল শ্রেনীর কিংবা বিশেষ কিছু লোকের মনে।কারণ কে কোথায়,কিভাবে এই টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন তা আমাদের কারো জানা নাই। আর কী অপরাধে মানুষ একের পর এক খুন হচ্ছেন বা তাও কেউ জানছে না।তবে ব্লগার,মুক্তমনা,লেখক,শিক্ষক,প্রগতিশীল,সংস্কৃতিমনারাই খুনীদের টার্গেট তা বিগত হত্যাকান্ড এবং একই কায়দায় হত্যার কৌশল থেকে মোটামোটি সুস্পষ্টভাবেই বলা যায়।আর খুনীদের হত্যার মূল হাতিয়ার হচ্ছে চাপাতির ব্যবহার।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারনা দিতে পারছে না। বিগত কয়েক বছর ধরে সংঘটিত হত্যাকান্ডগুলো দেশের স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিফল ঘটায় না ৷ সরকার সেইসব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিধায় একের পর এক হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে ৷ ফলস্বরূপ আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ৷

সরকারের বিভিন্ন তদন্তে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সক্ষমতা এবং পেশাদারীত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ৷ তদন্তে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সাগর-রুনী হত্যা, নাস্তিক,ব্লগার,প্রকাশক,অধ্যাপক, মুয়াজ্জিন,পুরোহি ত,সাধু,বিদেশী পুলিশ হত্যার সঠিক কারন এবং হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বিধায় খুনীরা এখন কাউকে হত্যা করতে দ্বিতীয়বার ভাবছে না ৷ খুনীরা খুন করে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে খুন করেও।অন্যদিকে সাধারণ মানুষ অনিরাপত্তায় ভোগছে।

ইদানিং শুধু চাপাতির ব্যবহার করেই খুনিরা আর সন্তুষ্ট থাকছে না। এর সঙ্গে তারা যুক্ত করে নিয়েছে গুলি। টার্গেট করা ব্যক্তির মৃত্যু দ্রুত নিশ্চিত করতেই খুনিরা গুলির ব্যবহার করছে। কুপিয়ে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যাচ্ছে। অথবা মোটরসাইকেলে করে এসে খুন করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য একসাথে সবাইকে অনিরাপদ করে ফেলেছে।গত বছর পর্যন্ত চাপাতি হত্যা হতো মাসিক হিসাবে। কিন্তু গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পর, বর্তমানে তা দৈনিক হিসাবেই শুরু হয়েছে।কারণ চাপাতিবাদীরা জেনে গেছে, দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তাদের কিছু করতে পারবে না।নাস্তিক,ব্লগার ,প্রকাশক,অধ্যাপক, মুয়াজ্জিন,পুরোহি ত,সাধু,বিদেশী দুতাবাসের কর্মকর্তার পর এবার মন্ত্রী মিনিষ্টারদের আত্মীয়-স্বজনদের গর্দান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে চাপাতি। এভাবে চলতে থাকলে অল্পদিনের ভেতরেই মন্ত্রীদের গর্দানেও আঘাত হানবে চাপাতি। বাসায়, অফিসে, রাস্তায়, বাজারে যে কোন জায়গায় আমাকে-আপনাকে কুপিয়ে মারবে।

যাকে হত্যা করা হোল তার পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তিনি বিশ্বাসী কি অবিশ্বাসী তাতে কোন হত্যা জায়েজ হয়না। রাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। কোন হত্যারই সুরাহা হচ্ছে না। কারণ যা-ই হোক না কেন "হত্যা" প্রচলিত আইনেই অপরাধ। কিন্তু আমরা দেখছি প্রতিটি হত্যার পর, বিভিন্ন মহল থেকে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।“ এই হত্যাকান্ডে বি এন পি জামায়াত জড়িত”-প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর কলাবাগানে দুর্বিত্তকতৃক দুজনকে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যার পর বিরোধীদলকে ফাঁসানোর জন্য তিনি একটি রাজনৈতিক মন্তব্য করে ফেললেন। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী কতটা নিন্মমানের হতে পারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে শিক্ষনীয়।কিন্তু কেনো? হত্যাকারী নিজ দলের হতে পারে না নাকি ?খুনি, ধর্ষক, লুটেরা, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। তারা দেশের শত্রু। তারা জাতির শত্রু,বিবেকের শ্ত্রু। ফলে হত্যার তদন্ত ও বিচার অন্ধকারে হারিয়ে যায়।সেই খুনের বিচার করার সাহস এই নাজুক অনুভূতিপ্রবণ রাষ্ট্রের নেই। এই হত্যাযজ্ঞ চলবেই, আমরা যা করতে পারি তা হলো, মৃত্যুচিন্তা মাথায় না নিয়ে যতদিন বেঁচে আছি সময়টাকে উপভোগ করতে পারি। এর বেশি কিছু আমাদের সক্ষমতার সীমায় নেই।

কিন্তু সাধারণ মানুষ আজ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। কিন্তু সুরক্ষিত কারাগার অঞ্চল ও অরক্ষিত, চাপাতি শিল্পের অগ্রযাত্রায় গত কয়েকটি বছরের ব্যাপক সফল্যে আজ উদ্ভাসিত বাংলাদেশ।

আহামদ ছফা যথার্থই বলেছিলেন- “আওয়ামি-লীগ হেরে গেলে হেরে যায় সমগ্র বাংলাদেশ ,জিতে গেলে পুরুবাংলাদেশ জিতে না”।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

বেখায়ালী

যোজন যোজন দূরে হারিয়ে গেছ তুমি
ফিরে পাবার নেইকো কোন আশা
তবুও কেন এতো মিছে মায়ায়
বেখায়ালি জীবন কাটছে ভবের পাড়ে।


আখি খুলে চেয়ে দেখ ঐ নীল আকাশের বুকে
উঠেছে নতুন সূর্য,পাখিরা করছে কলরব।
নগরী হয়ে উঠেছে ক্রমশ ব্যস্তময়
একা মনে বসে আছি জানালার পাশে।


বেলা শেষে রাত এসে জানালার প্রানে কড়া নাড়ে
পাখিরা নীড়ে ফিরেছে,চাঁদ মামা আলো ছড়াচ্ছে।
রাতের সংগী হয়েছে নতুন করে নিকোটিনের ধোয়া
আর গিটারের টুং টাং কর্কশ শব্দ
বেখায়ালী সবকিছুতেই তবু জীবনটা কাটছে বেশ।

শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৬

বিধর্মী/নাস্তিক হত্যা কি ইসলাম স্বীকার করে???

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।নাজিমুদ্দিন সামাদের ওপর আক্রমণের সময় তার সঙ্গে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ ইস্টের শিক্ষার্থী নাজিবের ওপরও আক্রমণ হয়। সৌভাগ্যক্রমে নাজিব বেঁচে যান।রাত নয়টার দিকে ঢাকার পুরনো অংশ সূত্রাপুরের একরামপুর ট্রাফিক মোড়ে কয়েকজন যুবক সামাদের গতিরোধ করে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে তাকে গুলি করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই সময় হত্যাকারীরা 'আল্লাহু আকবার' স্লোগান দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

নাজিমউদ্দীনকে যে বা যারা খুন করেছে তারা একটা ভিন্ন মতবাদ,ভিন্ন দর্শন,ভিন্ন চিন্তার পার্থক্যের ভিত্তিতেই খুন করেছে। আর এই ভিন্ন পার্থক্যটা হচ্ছে প্রগতিশীলতা,নাস্তিকতা,ধর্মান্ধদের সমালোচনা কিংবা বিশেষ কোন ধর্মকে সমালোচনা করা। আর অনেকগুলো ধর্মের মধ্যে সেই বিশেষ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম ধর্ম এবং নবীর সমালোচনা করা। ইসলামী মতবাদ বলে নবী ও ইসলাম সমালোচনাকারীর একমাত্র শাস্তি হচ্ছে তাদেরকে হত্যা করে ফেলা। তাই ইসলাম যে তার সমালোচনাকারীকে হত্যা করতে বলে এটি যাতে প্রকাশিত হয়ে না পড়ে তার জন্য সব রকম চেষ্টা মডারেট মুসলিরা। তাদের প্রচারের মূল লক্ষ্য হলো, ইসলামী নিদের্শে হওয়া খুনগুলোকে প্রচার করা যে, ইসলামের এই ধরণের খুনকে কোনভাবেই সমর্থন করে না। কিন্তু আসুন তাহলে এবার একটু জেনে নিই ইসলাম এ ধরনের হত্যাকে সমর্থন করে কি করে না,তা কোরআনের মাধ্যমেই একটু পর্যালোচনা করা যাক।কারণ হাদিসের কথা বললে সেটাতো আবার জাল হাদিস হয়ে যায় আপনাদের চোখে।তবে আমারও এতো সুভাগ্য হইনি এখনো এত বড় হাদিসের বই ধৈর্য ধরে পড়ার।তবে কোরআনটা পড়া হইছিল এই ইহুদীদের তৈরী স্মার্টফোনের কল্যানে।আচ্ছা ফালতু কথা না বলে এখন একটু নিচের দিকে নজর রাখা যাক,-

# আর তাদের কে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে।বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষন তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে।এ হল কাফেরদের শাস্তি।(২:১৯১)

# খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো।কারণ,ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্ক কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি।আরা ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন।বস্তুতঃ জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।(৩:১৫১)

# যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।(৫:৩৩)

# যখন নির্দেশদান করেন ফেরেশতাদিগকে তমাদ্র পরওয়ারদেগার যে,আমি সাথে রয়েছি তোমাদের,সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমুহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।(৮:১২)

# যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।(৯:১৪)

# তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম।(৯:২৯)

# হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন।(৯:৭৩)

আর একটা হাদিসের কথা না বললেই না হয়।যেখানে বিভিন্ন সময় ওয়াজ মাহফিলে ইহুদী বৃদ্ধ কবি আবু আফাক এবং আসমা-বিনতে মারওয়ান যখন তার সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছিলেন তখন কিভাবে হত্যা করেছিল নবীর এক অনুসারী এবং হত্যার পর নবী ইবনে আব্দুলার সাথে নামাজ আদায়ের কথা বর্নণা করা হয় খুব গর্ভ সহকারেই।

এরপরেও যদি কোন মডারেট মুসলি বলে ইসলাম নাস্তিক/বিধর্মী কিংবা ইসলাম সমালোচনাকারী হত্যা সাপোর্ট করে না তাহলে এখনো আপনি বোকার রাজ্যে বাস করছেন।আর এপনি যখন কোরআনের আল্লাহর বানী অস্বীকার করবেন তখন আপনিও মুনাফিক।আর মুনাফিকের পরকাল জাহান্নামের আগুন।এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেছে,-

‘‘আল্লাহ মুনাফেক নর-নারী ও অবিশ্বাসীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাহান্নামের আগুনের যেখানে ওরা থাকবে চিরকাল, এই ওদের জন্য হিসেব। ওদের ওপর রয়েছে আল্লাহর অভিশাপ, ওদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।’’(৯:৬৮)

‘‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ করেছেন তা ছিন্ন করে আর পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদেরই জন্য রয়েছে অভিশাপ এবং তাদের জন্য নিকৃষ্ট বাসস্থান।’’(১৩:২৫)

এখন আপনি বলেন ইসলাম এ হত্যা স্বীকার করে কি করে না?