বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০৪ (ইহুদী ধর্ম)

সম্প্রতি নারীদের সামাজিক এবং ধর্মীয় মর্যাদা সম্পর্কে যখন খুব বেশি আলোচনা ও সমালোচনা উঠছে, ঠিক এ সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ইহুদী ধর্মে নারীদের মর্যাদা সম্পর্কে প্রতেক্যকে অবগত হওয়া আবশ্যক।

হে নারী তুমি কি জান তোমাদের ধর্মগ্রন্থ বলে দিয়েছে, তোমার শিক্ষা, তোমার জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রতিভা,তোমার সদাহাস্য চেহারা, মানুষের প্রতি তোমার ভালবাসা, শ্রদ্ধা, তোমার সমুহ মানবিক গুণাবলী থাকা সত্বেও, তুমি একজন নিম্নমানের পুরুষের চেয়ে নিকৃষ্ট। একটিই কারণ -তুমি একজন নারী ।

গ্রীস সভ্যতায় নারী জাতিকে বিশৃঙ্খল ও ভাঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস বলা হতো।চৈনিক সভ্যতায় নারীকে দুঃখের কারন হিসেবে ভাবা হতো। রোম সভ্যতায় নারী ছিল পুরুষেরগৃহ সুসজ্জিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অন্তর্ভুক্ত।জাহেলি যুগে নারী ছিল পুরুষের ভোগের সামগ্রী। তারা ছিল অকল্যাণ অসম্মানের প্রতিক। সে যুগে নারীকে অত্যন্ত ঘৃণা করা হতো। নারীকে অভিশাপ মনে করে শিশু কন্যাকে ঠান্ডা মাথায় জীবন্ত কবর দিত। ঘোড়ার পায়ে বেধে নারীকে হত্যা করা হতো। ইচ্ছামত যত খুশি বিবাহ করা এবং আবার যখন খুশি তালাক দিত। নারী ছিল ভোগ্য পন্যের মত সামগ্রী। মধ্য যুগেও নারীর জাতির মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত ছিল না।আর ইহুদী ধর্মে নারীদের গুণের চেয়ে পুরুষের দোষও ভাল।

ইয়াহূদীগণ মনে করে থাকে যে সর্বপ্রথম নারী জাতি শয়তানের প্ররোচনায় লিপ্ত হয়ে পুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে আর সেই থেকে নারীদের উপর পুরুষেরা সর্বদা কর্তৃত্বশীল হবে এবং নারীদের এর দ্বারা প্রসবের কষ্ট দেওয়া হয়েছে।তাই তারা নারী জাতিকে এভাবে করে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।

আগে ইহুদী সমাজে নারীদেরকে সাক্ষ্যদানের অধিকার দেয়া হত না।ইহুদী পন্ডিতের মতে , বেহেশত থেকে বের হওয়ার পর নারীদের প্রতি যে সমস্ত অভিশাপ এসেছে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য না হওয়া। বর্তমানেও ইসরাইলে ইহুদীদের ধর্মীয় কোর্টে নারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না।এর কারণ হিসেবে ইহুদী পন্ডিতদের ভাষ্য হচ্ছে ইবরাহীম আ. এর স্ত্রী সারাহ মিথ্যা বলেছিলেন। (জেনেসিসঃ১৬/৯-১৮)

আবার,"যদি কোন পুরুষ কোন মহিলাকে বিবাহ করার পর তার নিকটবর্তী হয়ে তাকে অপছন্দ করে এবং সমাজে তার দুর্নাম করে বলে- আমি একে বিবাহ করে কুমারী হিসেবে পাইনি। তখন তার পিতামাতা তাকে নিয়ে যাবে এবং তাদের বাড়ীর সামনে অবস্থানরত সমাজের বয়স্কদের সামনে তার কুমারিত্বের প্রমাণ হাজির করে বলবে, আমি আমার কন্যাকে এই লোকের সাথে বিবাহ দিয়েছি। সে তাকে অপছন্দ করে কুমারী পায়নি বলে সমাজে দুর্নাম ছড়াচ্ছে। এই দেখুন,এটা তার কুমারিত্বের প্রমাণ বলে বয়স্কদেরকে তার কাপড় দেখাবে। তখন সমাজের বয়স্ক ব্যক্তিরা ঐ ছেলেকে ধরে নিয়ে শাসন করবে এবং ১০০ রৌপ্যমুদ্রা জরিমানা করে অপবাদের বিনিময় হিসেবে মেয়ের পিতাকে দেবে। আর ঐ মেয়ে হবে তার আজীবনের জন্য স্ত্রী। তালাক দেয়ার কোন অধিকার তার অবশিষ্ট্য থাকবে না। পক্ষান্তরে, যদি কন্যার কুমারিত্ব না পাওয়া যায় তাহলে, মেয়েকে পিত্রালয়ের সামনে নিয়ে এসে পুরুষেরা তাকে পাথর মেরে হত্যা করবে।কেননা,সে ব্যভিচার করে তার পিত্রালয়কে কলংকৃত করেছে। তাই এ পাপিষ্টকে ওদের থেকে দূর করে ফেলতে হবে। (ডিউটারনমী: ২২/১৩-২১)

ইহুদী বিধি-বিধান ঋতুবতী মহিলাদেরকে কঠোরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।যদি কোন মহিলার শরীরে কোন প্রবাহিত রক্ত থাকে যা গোশতের উপর প্রবাহিত হয়, তাহলে সে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপবিত্র থাকবে। যে তাকে স্পর্শ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাপাক থাকবে। সে যার উপর বসবে বা শয়ন করবে তা নাপাক বলে গণ্য হবে। যে তার বিছানা স্পর্শ করবে তার শরীরের পোশাক ধৌত করতে হবে, গোসল করতে হবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সে নাপাক থাকবে। সে যার উপর বসেছে এমন কোন আসবাব পত্রকে স্পর্শ করলেও অনুরুপ তাকে গোসল ও তার পোশাক ধৌত করতে হবে। এমতাবস্থায় সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাপাক থাকবে। (লেভিটিকাসঃ ১৫/১৯-২৩)

কোন এক জাগায় পড়েছিলাম প্রফেসর ড.মিনাখিম এম.ব্রায়ারের মন্তব্য।ব্রায়ার বলেন,” টান্নাইটিক যুগে যে সমস্ত ইহুদী মহিলা মাথা অনাবৃত রাখত তাদেরকে বেহায়া হিসেবে গণ্য করে ৪০০ দিরহাম করে জরিমানা করা হত”।

অর্থাৎ,উপরিউক্ত আলোচনা থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে,প্রত্যেকটা ধর্মগ্রন্থ নারীদের ক্ষেত্রে কতোটা প্রক্ষর এবং অমানবিক দৃষ্টিকোন রাখে।
(পর্ব আকারে লেখা হচ্ছে, চলতে থাকবে)