বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

ইসলামে সন্তান দত্তক নেওয়া কেন কুফরী এবং হারাম !?!


বাংলাদেশে কোন শিশুকে অ্যাডপ্শন বা দত্তক নেওয়ার বিষয়ে কোন আইন না থাকলেও দত্তক বা সন্তান পালক নেওয়ার বিষয়টি থেমে নেই এবং দীর্ঘকাল ধরেই নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে কম-বেশী শিশু সন্তান দত্তক নেওয়া হয়ে থাকে।তবে বাংলাদেশে দত্তক নেয়া ব্যাপারটা খুব একটা প্রচলিত নয়। সামাজিক, ধর্মীয় কিংবা স্রেফ পারিবারিক কারণে অনেকেই দত্তক নেয়ার কথা ভাবেন না।তারমধ্যে বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হবার কারণে ধর্মীয় জটিলতাও রয়েছে।কারণ ইসলামে সন্তান দত্তক নিতে পারলেও দত্তককারী ব্যক্তি তাকে পিতৃ/মাতৃ পরিচয় দিতে পারবেনা এবং কি দত্তক সন্তান কোন ধরনের উত্তরাধিকারীও হতে পারবেনা ইসলাম ধর্মের রিতী অনুযায়ী।

তবে,ইসলামে অন্য কারো সন্তান লালন-পালন ও তার অভিভাবকত্ব নিতে পারবে।যেমনটা জায়েদকে নবী মুহাম্মদের পালক পুত্র বলা হয়।কিন্তু দত্তক কখনোই উত্তরাধিকারী হয় না। ইসলামে দত্তক নেওয়া হারাম, দত্তক নেওয়া জায়েজ নেই অর্থাৎ কেউ কোনো শিশুকে দত্তক নিলে ইসলাম তাকে তার সন্তান হিসেবে গণ্য করে না। বরং সন্তান সবসময় তার আসল পিতার দিকেই সম্পৃক্ত হবে। এ সম্পর্কে কোরানে বলা আছে,

আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন। সুরা আহযাব: ৪

কিন্তু নবী মুহাম্মদ নিজেইতো জায়েদ নামে এক সাহাবিকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল হারেসা। তাঁকে সবাই জায়েদ ইবনে মোহাম্মাদ—অর্থাত্ মোহাম্মাদের পুত্র বলে ডাকা হতো।

এ প্রসঙ্গে কয়েকজন সাহাবি বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.)-এর নবুওয়েতের পূর্বে কৃতদাস শিশু যায়েদ ইবনে হারেছাকে মুক্ত করে দত্তক পুত্র করে রেখেছিলেন। সে রাসূল (সা.)-এর ঘরে, তারই পিতৃস্নেহে লালিত-পালিত হয়ে বড় হয়। আমরা তাকে যায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ (মুহাম্মদের পুত্র যায়েদ) বলেই সম্বোধন করতাম। যখন আহজাবের ৫ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন, ‘তাদের (পালক সন্তানদের) পিতৃ-পরিচয়ে তোমরা তাদের ডাকবে’- তখন আমরা আমাদের পূর্বের ডাক পরিবর্তন করি।‘ (সহিহ মুসলিম:৬৪১৫)

তাহলে এবার দেখে নেওয়া যাক সূরা আহজাবের ৫ নম্বর আয়াত থেকেই,

তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুরা আহযাব: ৫

এ-ব্যাপারে হাদিস চষে দেখা যাক তাহলে, এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জানা সত্ত্বেও অন্য কাউকে পিতা বলে ডাকবে সে কুফরি করবে। যে ব্যক্তি অন্য বংশের পরিচয় দিবে সে জাহন্নামকে তার ঠিকানা বানাবে।’ (সহিহ বোখারি: ৩৫০৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজের পিতাকে ছাড়া অন্য কাউকে পিতা বলে দাবি করে, তার জন্য জান্নাত হারাম। ’ (সহিহ বোখারি: ৪৩২৬)

এ জন্যই যুগশ্রেষ্ঠ ফকিহ মুফতি শফি (রহ.) বলেন, ‘লালন-পালনকারীকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মা-বাবা ডাকা বৈধ হলেও অনুত্তম ও অনুচিত। কেননা এতে জাহেলিয়াতের কুসংস্কারের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায়। ইসলাম এ ধরনের সাদৃশ্য পছন্দ করে না। ’ (আহকামুল কোরআন : ৩/২৯২)

পালক সন্তান উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকারী হবে না, লালন-পালনকারীর মৃত্যুর পর ওই সন্তান উত্তরাধিকার হিসেবে তার সম্পত্তি থেকে কোনো অংশ পাবে না। লালন-পালনকারীরাও ওই সন্তানের ওয়ারিশ হবে না। হ্যাঁ, লালনকারী জীবদ্দশায়ই পালক সন্তানকে সম্পত্তি থেকে দান করতে পারবেন বা মৃত্যুর পর তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ দেওয়ার অসিয়ত করে যেতে পারবেন। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী এই অসিয়ত কেবল এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকেই কার্যকর হবে। অনুরূপ সন্তানের আসল মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজন থেকে অবশ্যই সে উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকারী হবে। তাকে পালক দেওয়ায় তার উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার খর্ব হয়নি। (তাকমিলাতু ফাতহিল কাদির : ১০/১২২) সূত্র

এ সুরা এবং হাদিসগুলার মাধ্যমে পালক পুত্ররা যে রক্ত সম্পর্কিত পুত্রের মর্যাদা পাবেন না সেটা ও প্রমানিত হয়।

কোরআনে বিষয়টি নিষেধ করে দেওয়ার পরে সবাই তাঁকে জায়েদ ইবনে হারেসা বলেই ডাকা আরম্ভ করে।কিন্তু কেন হঠাত করে সন্তান দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধ কিংবা নিরুতসাহিত করা হলো কোরআনে !?!

মদীনায় মহানবীর মধ্যস্থতায় জায়েদ ও জয়নবের বিবাহ হয়। জয়নব ছিলো আবার নবী মুহাম্মদের ফুফাতো বোন। জায়েদ ও জয়নবের বিবাহ সম্পন্ন হবার পর স্বামী-স্ত্রী মদীনায় তাদের নিজ বাসগৃহে বাস করতেন। জায়েদের সাতে জায়নাবের বিবাহ খুব সুখের ছিলনা এবং এ বিবাহ ভেঙে যায়। কথিত আছে যে, রাসুল জায়নাবের প্রতি প্রেম অনুভব করেন এবং জায়েদ তা জানতে পেরে জায়নাব কে তালাক দেন।তালাকে পর নবী মুহাম্মদ জয়নবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে অনেকের মাঝেই বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় জয়নব পালক পুত্রের প্রাক্তন স্ত্রী হওয়ায় এবং নবী মুহাম্মদও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সমস্যা সমাধানের জন্য নবী যেমন বারবার আল্লাহ্‌কে ব্যবহার করতেন, এ ক্ষেত্রেও ঠিক তাই করলেন। এ প্রসঙ্গে নবী আল্লাহর মুখ দিয়ে নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল করালেন,

আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন; আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন; তাকে যখন আপনি বলেছিলেন, তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে। সুরা আহযাব: ৩৭

এ থেকে এটাই প্রমানিত হয় যে,নবী মুহাম্মদ জয়নবের প্রেমে মগ্ন ছিলেন এবং নিজের স্বার্থ  মনোবাসনা পোষন করার জন্যই  দত্তক নেওয়ার মতো মহৎ কর্মকে চুপীসারী বৈধতা দিলেও দত্তককারী ব্যক্তি তাকে পিতৃ/মাতৃ পরিচয় দিতে পারবেনা এবং কি দত্তক সন্তান কোন ধরনের উত্তরাধিকারীও হতে পারবেনা ইসলাম ধর্মের রিতী অনুযায়ী।

বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭

মুসলিম নারীদের বস্তাবন্দী করার ধান্ধা কাঠ মোল্লাদের

হঠাৎ করেই বাল্যকালের এক মেয়ে বান্ধবীকে খোঁজে পাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।যদিও তার সাথে বাল্যকালে খুব একটা বেশী পরিচিতি বা খেলার সাথী ছিলো তাও না।যখন কিন্ডার গার্ডেনে পড়া হয় তখন শুধু এক সাথে স্কুলের গাড়িতে করে যাওয়া আসা আর ঠুকড়া-ঠুকড়ি পর্যন্তই সম্পর্ক ছিলো।এই ঠুকড়া-ঠুকড়ি থেকে এক পর্যায়ে তাকে একদিন গালে চপেটাঘাতও করেছিলাম।আর সেদিন অপ্রাসঙ্গিকভাবে কান্না করে একটা কথা বলেছিলো যা,আজও স্পষ্ট কানে বেজে উঠে এবং সেই সময়ের দৃশ্যটাও চোখে ভেসে উঠে।

যাইহোক,পরবর্তীতে তার প্রতি আমার একটা ভালো লাগাও কাজ করে।কিন্তু সেটা কখনো বলা হয়নি।আর বলবোই বা কি করে!তখনও অনেক ছোট বাচ্চা দুজনেই।যার কারণে, ভালো লাগাটা মনের মাঝে পোষে রাখা হয়ে গেছিলো ততোদিনে।পরবর্তী কিছুদিন পরেই তার সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ সব শেষ হয়ে যায় স্কুল বদলানোর কারণে।তারপরে তাকে কয়েকবার আমি দেখলেও সে আমাকে দেখেনি আর দেখলেও তার মনে নাই অথবা স্বীকার করে নিচ্ছে না।কিন্তু আমাকে খুব ভালো করেই চিনে এবং জানে।তবে আমার সাথে তার কেমন সম্পর্ক ছিলো এমন কোন কিছু মনে নাই বলে দাবি অথবা মনে থাকলেও সে স্বীকার করতে চাচ্ছে না এমনও হতে পারে।অন্যদিকে তার প্রতিটা আচরন থেকে শুরু করে তার কথা বলা,তার পোশাকসহ সব কিছুই স্পষ্ট মনে আছে।হয়তো,তার প্রতি আমার যে, ভালো লাগা ছিলো সেটাই মূখ্য কারণ তার এসব আমার মনে গেঁথে যাওয়ার জন্য।

যাইহোক,এরজন্য ফেসবুক আমার কাছে ধন্যবাদ অবশ্যই পায় কারণ এক যুগেরও বেশী সময় পরে তার সাথে আমার কথা হচ্ছে।এরমধ্যে দুইজনেরই অনেক কিছু শেয়ার করাও হয়েছে।আমার মাঝেও যেমন অনেক পরিবর্তন হয়েছে এতোদিনে ঠিক তেমনি তার মাঝেও।আমি হয়েছে মডারেট ধার্মিক থেকে অবিশ্বাসী আর সে হয়েছে মডারেট ধার্মিক থেকে বুরখাধারী হিজাবী পাক্কা ধার্মিক।

বলাবাহুল্য যে,তার বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে আমার কোন হিংসা-বিদ্বেষ কোন কিছু নাই।কারণ যতক্ষন পর্যন্ত না সে সমাজ কিংবা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর না হয়ে উঠছে।কিন্তু তার সাথে কথা বলার প্রসঙ্গে আমি তার হিজাব নিয়ে কথা বলি।সেও উত্তর দেয় খুব ভালো ভাবেই এবং কোন কিছু মনে না করেই।

যাইহোক তাকে যখন বলি,তুমি এই গরমে এরকম হিজাবী হয়ে থাকতে বিরক্ত লাগে না?সে আমাকে প্রত্যুতরে বলে ধর্মে নাকি আরও বেশী কঠিন করে হিজাব করার পরিধান আছে।আমার কাছে বিষয়টা খটকা লাগে।তাকে আমিও বলি,আচ্ছা তুমি এই কথা কোথায় পাইছো?সে বলে কেন,ধর্মগুরুরা এবং অনেক ওয়াজ আছে শুনে দেখতে পারো।আমি তাকে বললাম কোরানের বাংলা অনুবাদ পড়েছ?সে বলে কোরান পড়তে জানি কিন্তু বাংলা অনুবাদ পড়া হয়নি।আমিও তাই ভাবছিলাম এই কথাটা তাকে বলার পর সে আমাকে বলে,কেন আমি পড়েছি কিনা?আমি তাকে বলি এ নিয়ে কাল তোমাকে বিস্তারিত বলবো এবং তুমিও একটু আমার কথাগুলা পরখ করে নিও।সেও রাজী হয়ে যায়,এবং কথা অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়।তাই আজকের লিখাটা আমার নারীদের পোশাক সম্পর্কে আলোচনাই করাই মূল উদ্দেশ্য তাকে উৎসর্গ করে।

পোশাক মোটামুটি দু’ ধরনের হয়।ভৌগলিক বা সাংস্কৃতিক আর ধর্মীয়।তবে আমি ছেলেদের না মেয়েদের পোশাক সম্পর্কে হালকা একটু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো ।বিশেষ করে এবং উল্লেখ্য যোগ্যভাবেই মুসলিম নারীদের পোশাক নিয়ে।বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে নারীদের সবচেয়ে পছন্দের পোশাক শাড়ি, একটু কম বয়েসী তরুণীদের পছন্দ সালওয়ার কামিজ।সালওয়ার কামিজ বা শাড়ি দুটোই আমাদের দেশে শালীন পোশাক বলেই পরিচিত।

এরপরে আসি, ধর্মীয় পোশাক। ধরে নেই, আমাদের দেশের সব মুসলিম নারীদেরই ধর্মী পোশাক বুরখা/হিজাব।কিন্তু এই পোশাকটা মুলত আরাবিয়ান ভৌগলিক পোশাক।কিন্তু এটা মোল্লারা বা বাংলাদেশীসহ অনেক মুসলিম ধার্মিকরাই ধর্মীয় পোশাক বানিয়ে ফেলেছে কালের বিবর্তনে ধর্মের কারসাজী করে।কারণ কোরানের কোন জাগায় আমি পাইনি বোরখার কথা।তবে যে নির্দেশনা পাওয়া যায় সেটা হলো শালীন পোশাক।যা নারীদের লজ্জাস্থান নিবারণ করে রাখবে।



দেখুন এ ব্যাপারে কোরআন কি বলা আছে, ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।(সূরা আন-নূর:৩১)

সবচাইতে আসল কথাটি হল, শালীনতাকে স্টান্ডারডাইজড করা যায়না, কারো কাছে শাড়ি অশালীন, কারো কাছে বুরখা ব্যতিত এমনকি হিজাবও অশালীন। কারো কাছে আবার আপনার হাটা-চলা,খাওয়া-দাওয়া অথবা কথা বলার স্টাইলও অশালীন হতে পারে।

বিশ্বাস না হলে এবারও কোরআন থেকেই দেখে নিন, হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।(সূরা আল আহযাব:৫৯)

কিন্তু গোড়াপন্থি মুসলিম মোল্লারা নারীদের যে পর্দা করার কথা বলেন তার সঙ্গে ইসলামের মৌলিক বিধানের কোনো মিল নেই। বরং ইসলামের মৌলিক বিধানে পর্দার যে কথা বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ নারীই সেই বিধান মেনে চলেন। তারা সবাই শালীন পোশাক পরেন। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, কোরআন মেয়েদের এসব বলার আগে ছেলেদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখতে এবং যৌনতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন।

দেখা যাক তাহলে কোরআন এব্যাপারে কি বলে, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।(সূরা আন-নূর:৩০)

অর্থাৎ পুরুষরা যদি তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে, কে কোন ধরনের পোশাক পরল, কার শরীর কতটুকু দেখা যায়, তা তো বোঝার কথা না। আসল পর্দা হচ্ছে নফসের পর্দা। ওইটা নারী পুরুষ সবার থাকা উচিত।নারীর পাশাপাশি ইসলাম ধর্মে পুরুষের জন্যও পর্দা ফরজ করা হয়েছে এবং দৃষ্টি অবনত করতে বলা হয়েছে।

দেখুন এব্যাপারে কোরআনেও স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে, হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।(সূরা আল আহযাব:৫৩)

অর্থাৎ নিজেদেরই মানে পুরুষদেরই সংযত রাখতে হবে।কিন্তু মোল্লারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য উপরের সূরাগুলো পরোক্ষভাবে এড়িয়ে গিয়ে বেশ কিছুই সূরা টেনে আনে নারীদের বন্দী করে রাখার জন্য।কিন্তু সেই সময় আর এখনকার সময় পাল্টাছে।কারণ তখন ছিলো জাহেলী যোগ আর এখন একবিংশ শতাব্দী।মানুষ এখন অনেক এগিয়ে গেছে,নারী পুরুষ একসাথে কাজ করে সভ্য থেকে সভ্যতার দিকে যাচ্ছে।কিন্তু তারপরেও মোল্লারা যে কথা বলে নারীদের বন্দী করতে চায় সেগুলাই দেখুন কিভাবে এড়িয়ে গিয়ে করে।তারা প্রথমেই যে রেফারেন্সটা টেনে আনে এবং বয়ান দেয় সে সম্পর্কেই একটু যেনে নেয়া যাক তাহলে, তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।(সূরা আল আহযাব:৩৩)

এখানে বলে রাখা ভালো যে,আয়াত দেখেই মনে হতে পারে নারীদের ঘরে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থাকতে বলা হয়েছে,এবং কাঠ মোল্লারা তাই বলে প্রচার করে থাকে।এবং তারা আজ অনেকটাই সফলও।তার কারণ আমরা নিজেরা না যতোটা জানার চেষ্টা করি তার থেকে বেশী বিশ্বাস করি কাঠমোল্লাদের।আর এই সুযোগটাই তারা হাতিয়ে নেয়।কিন্তু আপনি যদি ভালোভাবে খেয়াল করেন ,তাহলে এর উত্তর সহজেই খুজে পাবেন।‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।‘ যদি আমি শুধু এই লাইনটুকু ধরেই ব্যাখ্যা করি তাহলে সহজেই উত্তর খুজে পাওয়া যাবে।কারণ এখানে স্পষ্ট করেই বলা আছে, মূর্খতা যুগ’র কথা।আর এই যুগটা হলো,জাহেলী যুগ।ইসলামের অনেক পূর্বের যুগের নাম হলো জাহেলী যুগ।এই যুগ যে অনেক বর্বর ছিলো তা অনেকেই জানি।আর কোরআনেও সে কথাই উল্লেখ করেছে।কারণ কোথায় ৫০০০ বছর পূর্বে আর কোথায় ১৪৫০ বছর পূর্বের যুগ আর বর্তমান যুগ।বাদ দিলাম এসব যুগ ফুগের কথা কিন্তু কোরানতো আর অস্বীকার করতে পারেন না।কারণ বিশ্বাসীদের আল্লাহই কোরানে বলেছেন, আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?( সূরা আল ক্বামার:১৭)

তারপরেও কি বলবেন কোরআন বুঝা এতো সহজ না?কোরান বুঝতে হলে হাদিস পড়তে হবে,ইসলামী পণ্ডিতদের তাফসীর পড়তে হবে?তাহলে আপনি অবশ্যই বোকার রাজ্যে আছেন।এতো ভয় কিসের !নিজের চোখ খুলে দেখুন কোরআনে কি বলা আছে, সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ।(সূরা নাহল:৮৯)

কি হলো তারপরেও বুঝতাছেন না,এসব বানানো কথা আমার!তাহলে এবার আরও একটু ভালোভাবে পরখ করে নেন, আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু’ ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি শ্রেণী। আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়িনি। অতঃপর সবাই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে।(সূরা আল আন-আম:৩৮)

এবারও যদি না বুঝেন তাহলে,হাতে পপ কর্ণ নিয়ে কাঠমোল্লাদের ওয়াজ শুনতে বসে যান।তারপর নিজেকে ধার্মিক বলে দাবি করে ফাল দিয়ে উঠুন।এতে সমাজের জন্য আপনি ক্ষতিকারক ছাড়া আর কোন কিছুই হতে পারবেন না।কিন্তু তারপরেও আপনাকে আরও বুঝার বৃথা চেষ্টা করে দেখি কিছু বুঝেন কিনা কোরআন থেকে, হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতেরঅন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।(সূরা আল আরাফ:২৬)

কি মনে হচ্ছে এই আয়াত পড়ে?এইটাইতো সেই বয়ান যেটা কাঠমোল্লা হুজুরেরা দেয়?তাহলে আরও একবার বলবো আমাকে বিশ্বাস করার দরকার নাই।তবেই নিজেই নিজ ভাষায় একবার কোরআন পড়ে দেখুন।নিজেই প্রশ্নের উত্তর খুজে পাবেন এবং সিদ্ধান্তও নিতে পারবেন ধর্ম বিষয়ে।বিশ্বাস না হলে কোরআন বের করে দেখুন, “হে বনী আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জা-স্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম”।(সুরা আরাফ : ২৬)

এখন আপনার কাছে মনে হতে পারে তাকওয়ার পোশাক কি আবার?তাকওয়ার পোশাক বলতে যা বুঝায়,যে কাপড় পরিধান করলে অপচয় ও অহংকার করা না হয়।কি হলো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা?তাহলে এবার হাদীস শরীফ থেকেই দেখে নেয়া যাক, হযরত আমর ইবনে শুআইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা খাও, পান কর, অন্যদের দান কর এবং কাপড় পরিধান কর যে পর্যন্ত অপচয় ও অহংকার করা না হয়।-সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫৫৯; ইবনে মাজাহ,হাদীস : ৩১০৫

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, যা মনে চায় খাও, যা মনে চায় পরিধান কর যে পর্যন্ত দুটি বিষয় না থাকে : অপচয় ও অহংকার।-সহীহ বুখারী ১০/১৫২

এরপরেও যদি আপনার মনে হয় এসব আমার বানানো এবং কোরআন বিকৃতি করে উপস্থাপন করে ইহুদীদের পেইড এজেন্ট আমি তাহলে আপনার জন্য এই আয়াত, কোরআনের আল্লাহর বানী অস্বীকার করবে যে সে মুনাফিক।আর মুনাফিকের পরকাল জাহান্নামের আগুন।এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেছে,-আল্লাহ মুনাফেক নর-নারী ও অবিশ্বাসীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাহান্নামের আগুনের যেখানে ওরা থাকবে চিরকাল, এই ওদের জন্য হিসেব। ওদের ওপর রয়েছে আল্লাহর অভিশাপ, ওদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।(সূরা আত তাওবাহ:৬৮)

সেহেতু বিশ্বাস অবিশ্বাস আপনার,এতে আমার কিচ্ছুই যায় আসে না।

রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৭

ফ্যাসিবাদী সরকারের তেব্র নিন্দা জানাই

সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটা ঘটনা জুড়ে অনলাইনে জাগ্রত।এর মধ্য উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে, www.Sarahah.com সহ রাজনৈতিক অরাজনৈতিক অনেক কিছুই।
গতকাল বামদলীয় ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বিপুল অস্ত্রের ধরা খাইছে,আবার ৪ জন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা গ্রেফতার হইছে মা ও মেয়েকে মাথা নেড়া করানোর দায়ে!এই নিয়ে অনলাইন জুড়ে সয়লাব আর নিউজ শেয়ার করে ছাত্রইউনিয়নের চণ্ডী চটকানো শুরু করে দিছে ছাত্রলীগের ভাই বেরাদাররা।
অন্যদিকে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগের হামলা এবং শিক্ষকদের আংগুল ভেংগে দেওয়া হলো তখন ডান দলীয় চামারেরা চুপ!কারণ এই ভোদাই মার্কা অবলা শিশুরা নাকী শান্তিপূর্ণভাবে খেলাধূলা করতে ছিলো।অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লোহার গেট ভেংগে ছাত্রলীগের নেতাদের উপর হামলা চালায়।ছাত্রলীগ এবং ডানদলের উপর শিক্ষকদের এমন হামলার তেব্র নিন্দা জানিয়ে ঈদের পর ফের কোষ্ঠকাঠিন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ম্যাডাম খালদা জিয়া উরফে জেন্টস কিলার গোলাপী।
কারণ ডানেরা অতি শিক্ষিত বই পড়ুয়া জ্ঞানের অধিকারী,তারা কোন অনৈতিক কাজ করতেই পারে না বলে দাবি করে বেজীর এমন কর্মসূচী দেওয়াই লক্ষ্য,সেই সাথে ডিজিএফআই এর সহতায় ক্ষমতায় যাওয়া বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোও হবে স্বৈরাশাসক এরশাদকে সাথে নিয়েই বলে দাবি করা হয়।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী পানামা পেপার কেলাংকারী মামলায় ক্ষমতা থেকে ছিটকে পরে যাওয়ায় বিরোধী দলের জামাতী শিক্ষামন্ত্রীর ঘর জামাই দাঁতভাঙ্গা এমরান এইডস সরকার পাকিস্তানের বিচার বিভাগের প্রশংসা করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে শিক্ষা নিতে বললেও,আজ তার নিতী কথার কন্ঠস্বর ফাটা বাশের চিপায় পরেছে এবং তার আল্লাহ জিহ্বা কাটা পরেছে বলে বাশের কেল্লার বিশেষ প্রতিনিধি একাধিক সূত্রে নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু ফকেট ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি এতো সহজে হাল ছেড়ে দিতে রাজী না ঘরজামাইয়ের কাছ থেকে নিজে কথা না বের করা পর্যন্ত।কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করার কোন উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত,ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেটে ঢুকে এবং দাঁতভাঙ্গা ডাক্তার এইডস সরকার লিখে ফেসবুকে সার্চ করে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ বের করে এবং ইনবক্স করে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়।ওইদিক থেকে ঘরজামাইয়ের উত্তর আসে, তার প্রানের সংগঠন ছাত্রলীগের মত একটা আধা মূর্খ জ্ঞানীরা শিক্ষকদের উপর হামলা এবং আংগুল ভেঙে দিয়েছে এগুলা সবই মিথ্যা বানোয়াট এবং মিডিয়ার সৃষ্টি এবং এর পিছনের মুন্নী সাহার হাত থাকতে পারেও বলে দাবি জানান জামাতী শিক্ষামন্ত্রী টাকলার ঘর জামাই সরকার সাহেব।তিনি আরও জানান,এনিয়ে যদি তিনি শক্ত অবস্থান নিয়ে মাঠে নামতে চান, তাহলে আবার ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা ক্ষেপে গিয়ে পচা ডিম ছুড়ে মারতে পারে বলেও আশংকা করেন জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে।
এদিকে ছাত্রলীগের নেত্রী লাকি আক্তারের কাছে একই বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বলেন,ফ্যাসীবাদী সরকারেরই এসব চক্রান্ত।ছাত্রলীগের উপর শিক্ষকদের লেলিয়ে দেওয়ার পিছনে সরকারেরই হাত রয়েছে বলে দাবি করেন।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে না তর্ক-বিতর্ক সহ সমালোচনা।পর্বরতী আপডেট জানতে ঘরাজামাইয়ের পেইজে চোখ রাখুন।তার পেইজে এ নিয়ে আপডেট হলে ফকেট ডটকম আপডেট জানাবে বলে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞবদ্ধ।

শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭

৫৭ ধারার শিকার এবার ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মাহমুদ !!!

শিশুর আঁকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আমন্ত্রণপত্রের কার্ড বানিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি ও অবমাননার অভিযোগে বরগুনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারেক সালমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রেশ কাটতে না কাটতেই, এবার ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ইমতিয়াজ মাহমুদ নামে সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি সদর থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ১৭, তারিখ-২১-০৭-২০১৭।

মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি ইমতিয়াজ মাহমুদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক পোস্ট করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাসিন্দাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়ানোর লক্ষ্যে তিনি এই পোস্টগুলো করেন। এতে বাঙালি জাতিকে হেয় করে ‘সেটলার’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। ইমতিয়াজ মাহমুদের ফেসবুক পোস্টগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি অটুট রাখতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

ইমতিয়াজ মাহমুদ খারাপ,সাম্প্রদায়িক!কারণ তিনি সংখ্যালঘুদের প্রতিবাদী কন্ঠ।তিনি পাহাড়ী বাংগালীদের সেটালার বলেন,এর জন্য এটা সাম্প্রাদায়িক উস্কানি!কিন্তু আপনারা ভিন্ন ধর্মালম্বীদের মালু, কাফের যখন বলেন তখন সাম্প্রদায়িকতা উস্কানি হয় না!
যখন কাসালং কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চাকমাদের হত্যা বা হামলা করার ছাত্রলীগের কর্মীদেরকে রামদা নিয়ে আসতে বলে চাকমাদের কাটার জন্য তখন সাম্প্রদায়িক উস্কানি হয় না,কিংবা ৫৭ ধারায় তখন মামলা হয় না!

কারণ, পাহাড়ী উপজাতি আর সেটেলার বাংগালীরা অনেক বছর ধরেই মিলেমিশে আছে!উপজাতিদের উপর কোন হামলা হয় না!ইমতিয়াজ মাহমুদ ভাই,ফেসবুকে মিথ্যা উস্কানি দেয়!যেমন,কিছুদিন আগে রাঙামাটি জেলার লংগদুতে যা ঘটেছে,তা ইজরায়েল থেকে অবৈধভাবে আগত ইহুদীদের তাড়ানোর জন্য প্রায় ২৫০ বাড়িঘর পুড়ানো হয়েছে প্রশাসনের সহায়তায় সেটলারদের নিয়ে!কিন্তু ইমতিয়াজ মাহমুদ সেটাকে পাহাড়ী উপজাতি নির্যাতন বলে প্রতিবাদের নামে উস্কানি দিয়েছে!যা মিথ্যা এবং বানোয়াট,কারণ অনেকদিন ধরেই বাংগালী সেটেলার এবং পাহাড়ী উপজাতিরা পাহাড়ে মিলেমিশে ভাইয়ের মত বসবাস করে আসছে!

তোমরা পিনাকীর সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেখো না!কারণ সে সংখ্যালঘুদের হয়ে কথা বলে না,সে কথা বলে জামাতীদের হয়ে!জামাতীরা যেহেতু মুসলিম সেহেতু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও জাতের ভাই!অন্যদিকে ইমতিয়াজ ভাই, যেহেতু জাতের ভাই হয়েও পাহাড়ী কিংবা ভিন্ন ধর্মালম্বীদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদী কন্ঠ সেহেতু তাকে মুরতাদ বলে ৫৭ ধারায় মামলা দিয়ে কন্ঠরোধ করার বৃথা চেষ্টা করাই যেতে পারে।
যে মানুষটির স্বরে বাংলাদেশের পাহাড়ে সমতলে সকল নির্যাতিত-নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের স্বর কথা ব'লে ওঠে, সেই মানুষের কণ্ঠরোধের পায়তারা শুরু হয়েছে। সত্যকথন যে শাসকের কানে বিষ ঢালবে সে তো জানাই ছিল। তবু কলম চলবে, প্রতিবাদ চলবে। সাদাকে সাদা সুন্দরকে সুন্দর নষ্টকে নষ্ট বলতে পারা,নিপীড়িত,নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলা, আঙুল দিয়ে ভুল ধরিয়ে দেওয়া মানুষটা সুপ্রিম কোর্ট এর আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করুন।

খুব জানতে ইচ্ছে করছে, ৫৭ ধারায় কি অন্য ধর্মের নামে কটুক্তি কিংবা ওয়াজ মাহফিলের নামে উস্কানিমূলক সাম্প্রদায়িক ঝড় তোলা কথাবার্তা কি আওতাধীন নয়? যদি না হয়, তাহলে, আমাদেরও ৫৭ ধারা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে পারবেন না।এক ইমতিয়াজ মাহমুদকে মামলা দিছেন শতশত কলম জেগে উঠেছে অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বরুপ।

ক্ষমতা কারও কাছেই চিরদিন থাকে না।সেহেতু বর্তমান সরকারও চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না।হ্যা,আমি একজন আওয়ামী-লীগের সাপোর্টার হয়েই বলছি,কোন সরকারই চিরস্থায়ী না।তবে বর্তমান সরকারের দলীয় লোকেরা ক্ষমতার জোরে যেভাবে ভিন্ন মতালম্বীদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে,সেটা ঘুরে তাদের ঘাড়েই পরবে।তখন বুঝবে,কতধানে কত চাল।বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এখন আর বিরোধী কিংবা বামাতী কিংবা লুঙ্গী মজাহারদের দরকার নাই।সরকার দলের চাটুকারিতারাই যথেষ্ট দলের ক্ষতি করার জন্য।

# ৫৭ ধারা বাতিল হোক,কালো আইন থেকে মুক্তি চাই।

মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭

পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –শেষ পর্ব (ইসলাম ধর্ম)

মানব সভ্যতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে ধর্মের ইতিহাস।যা আমাদের পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভব না।একসময় আমাদের ধর্ম একটা জনগোষ্ঠীতে রুপান্তরিত করে শক্তিশালী গোষ্ঠীতে পরিনত করেছে এবং বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন মতবাদ দিয়ে নিজেকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে ঈশ্বর নামক কাল্পনিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে।ধর্ম আমাদের সমাজ সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের রন্ধ্রে রন্ধ্রে খুব দৃশ্যমানভাবেই বহমান, তাতে করে এর সত্যতা অগ্রাহ্য করার মত আমাদের তেমন কোন শক্তি নাই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা অনেক বেশিই প্রকট।

যে কোনো দেশ-কাল-প্রেক্ষাপটের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যায় অনিবার্যভাবেই নারীর অবস্থান নিয়ে আলোচনা চলে আসে; অর্থাৎ আমরা চাই বা না-চাই, নারীর অবস্থান দিয়ে বিবেচনা করা হয়। নারীরা মানবসভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পুরুষদের প্রেরণা ও শক্তির মূলে নারীর ভূমিকা অপরিসীম।একজন সুন্দর মনের নারী পারে একজন বখে যাওয়া ছেলেকে ভালোপথে ফিরিয়ে আনতে,আবার একজন নারী পারে প্ররোচনায় ফেলতে। তাদের ব্যতিরেকে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনাতীত। সব উন্নতি-অগ্রগতির মূলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রয়েছে নারীর।সেই হিসাবেই “পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী” নামে পূর্বে হিন্দু,খৃষ্ট,বৌদ্ধ,এবং ইহুদী ধর্মের দৃষ্টিতে চারটি পর্ব লিখেছি।এবং সেই ধারাবাহিকতায় আজ মুসলিম ধর্মের দৃষ্টিতে দেখবো আসলে ইসলাম কিভাবে নারীকে দেখে।আর চারটি পর্ব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে নিজের মধ্যে কোন কার্পন্যবোধ কিংবা ভয় না থাকলেও এই ধর্ম নিয়ে ছিটেফুটা বলতে গেলেই নানা হুমকি,ধামকি এবং ভয় পেতে হয়।তাই লিখাটা অনেকবার লিখার চেষ্টা করেও পিছিয়ে গেছি।অবশ্য আমার লিখাটাই প্রথম লিখা হবে না ইসলাম ধর্ম কিভাবে নারীকে দেখে।তার কারণ অনেকেই এ নিয়ে পূর্বে লিখেছে।সেহেতু নতুন কিছু না পাওয়ারই সম্ভাবনা বেশী।তারপরেও কিছুটা ভিন্নতা আনার অপচেষ্টা করবো শুধু মাত্র আপনাদের বুঝার জন্য শর্ট ফিল্মের মাধ্যমে।যাই হোক,আগে দেখা যাক ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘আল-কোরান’ নারীকে কিভাবে দেখে।

# তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র।তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক।আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে,আল্লাহর সাথে তোমাদের সাক্ষাত করতেই হবে।আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।(২:২২৩)

এ থেকে সহজেই বুঝা যায়,আপনি আপনার স্ত্রীকে যেভাবে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারেন।শুধুমাত্র বিবাহ করার কারণেই তাকে আপনি আপনার সম্পদ মনে করতে পারেন।

# আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়েদের হক যথাযথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্ক্ষা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকার সম্ভাবনা ।(৪:৩)

# তোমরা কখনও নারীদের সমান রাখতে পারবে না,যদিও এর আকাঙ্ক্ষী হও।অতএব,সম্পুর্ন ঝুঁকেও পড়ো না যে,একজনকে ফেলে রাখ দোদুল্যমান অবস্থায়।যদি সংশোধন কর এবং খোদাভীরু হও,তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল,করুনাময়।(৪:১২৯)

উপরের সূরা দুটি থেকে একজন পুরুষকে চারটি বিয়ের অনুমতি দিলেও তাদেরকে সমান ভাবে দেখতে হবে।কিন্তু নিচের আয়াতটি খেয়াল করেন এবার...

# পুরুষেরা নারীদের উপর কতৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে ও তারা হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্ক্ষা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।(৪:৩৪)

অর্থাৎ আপনি আপনার স্ত্রীর উপর শুধু কতৃত্বই না,প্রহারও করতে পারবেন।

# আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীরদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।(২:২২৮)

অর্থাৎ পুরুষ নিজ ইচ্ছায় তালাক দিয়েও তাকে আবার ফিরিয়ে নিতে পারবে এবং নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে,যা খুবই স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে।

# তারপর যদি সে স্ত্রীকে তৃতীয়বার তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কতৃêক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।(২:২৩০)

হা হা হা,তালাক দিয়ে তাকে নিতে হলে তাকে অন্যের বউ হতে হবে এবং সে যদি তালাক দেয় তবেই পূর্বের পুরুষ তাকে গ্রহন করতে পারবে।মানে মহিলাদের সাথে একধরনের পুতুল খেলা বিয়ের নামে।

এ বিষয়ে একটা অসাধারণ এবং ইসলামিক আইন অনুযায়ী এবং অনেক রেফারেন্সের মাধ্যমে রচিত 'হাসান মাহমুদ'-এর 'হিল্লা' শর্ট ফিল্মটা দেখে নিতে পারেন হাতে সময় থাকলে।সূত্র

# আল্লাহ্ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন: একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অত:পর যদি শুধু নারীই হয় দু-এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে| যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অত:পর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যেেতর পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ।(৪:১১)

অর্থাৎ একজন পুরুষ=১/২ নারী অথবা ২ জন নারী।আর সম্পত্তির ভাগের ক্ষেত্রেও রয়েছে নারীদের প্রতি দ্বিচারীতা।

# ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।(২৪:২)

# ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে।(২৪:৩)

# তোমাদের মধ্য থেকে যে দু’জন সেই কুকর্মে লিপ্ত হয়, তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর। অতঃপর যদি উভয়ে তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নাও। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু।(৪:১৬)

হুম,এখানে যদি দুইজনের সম্মতিতে তারা যৌন মিলনে আবদ্ধ হয় তাহলে অবশ্যই অন্যের ঘুম হারাম হবার কথা না।কিন্তু যেহেতু ধর্মের বিধানে না আছে সেহেতু দুইজনে সমান অপরাধী অন্যদিকে জোর পূর্বক হলে অবশ্যই একজন অপরাধী হবার কথা।দেখা যাক পরের সূরায় কি বলা হয়েছে...,

# আর তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন।(৪:১৫)

অর্থাৎ চারজন পুরুষ সাক্ষী ব্যতীত বিচার হবে না।আবার ৪ জন পুরুষ সাক্ষী দিলেই একজন অপরাধী হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে একটা অসাধারণ এবং ইসলামিক আইন অনুযায়ী এবং অনেক রেফারেন্সের মাধ্যমে রচিত 'হাসান মাহমুদ'-এর 'নারী' শর্ট ফিল্মটা দেখে নিতে পারেন হাতে সময় থাকলে।সূত্র


# হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখাবে। দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু যদি কারবার নগদ হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা না লিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। আল্লাহকে ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন।(২:২৮২)

একজন পুরুষের বিপরীতে আবারও দুইজন মহিলার কথা বলা হয়েছে।সত্যি কি আপনার মনে হয়,একজন স্ত্রীলোক আপনার থেকে জ্ঞানবুদ্ধিতে কম?যদি এমনটা ভাবেন তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন এই আধুনিক যুগে এসেও।তার প্রমান রয়েছে আপনার আমার আশে পাশে অনেক প্রমান।অন্যদিকে পুরুষ শাসিত সমাজই নারীদের জোর করে দাবিয়ে রাখতে চায় যা অস্বীকার করলেও সত্যি এটাই।

এবার আসুন কিছু হাদিসের দিক খেয়াল করি,

# আব্দুল্লা ইবনু সামিত(রাঃ) বর্নিত আছে, তিনি বলেন ,আমি আবূ যার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি ,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি নামায আদায় করে তখন তা সামলে হাওদার পিছনের কাঠের মত কিছু না থাকলে কালো কুকুর,গাধা ও স্ত্রীলোক তার নামায নষ্ট করে দিবে।আমি আবূ যার (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম,কালো কুকুর এমন কি অপরাধ করল,অথচ লাল অথবা সাদা কুকুরও তো রয়েছে?তিনি বলেন ,হে ভ্রাতুস্পুত্র।আমিও তোমার মত রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন প্রশ্ন করেছিলা,। তিনি বলেনঃ কালো কুকুর শাইতান সমতুল্য।–সহীহ।ইবনু মাজাহ-৯৫২,মুসলিম।(২৯৬ পৃষ্ঠা,অনুচ্ছেদ ১৪১ ,সহীহ আত-তিরমিযি)

# স্বামী প্রতি প্রেমাস্পদ,অধিক সন্তান জন্মদাত্রী জান্নাতী।-তারগীব,৩/৩৭
# কোন মহিলা ইন্তেকাল করল আর এ সময় স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট ছিল-সে মহিলা জান্নাতে যাবে।-বায়হাকি-২/৪২২

# আমি যদি কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে স্ত্রীদের তাদের স্বামীকে সেজদা করার আদেশ দিতাম।--তিরমিযি,১/১৩৮

# স্বামী তার স্ত্রী কে স্বীয় বিছানায় আহবান করলে স্ত্রী তার আহবানে সাড়া না দিলে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা উক্ত স্ত্রীর উপর লানত বর্ষন করে।-বুখারি,২/২৮২

# স্বামী স্ত্রীকে আহবান করলে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসতে হবে,যদিও স্ত্রী চুলার পাশে বসে থাকুক তবুও।-তিরমিযি,তাগরীব-৩/৩৮

এরকম বহু হাদিস আছে,যেখানে সবসময় নারীকে পুরুষের নিচেই দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে তবে সেটা আপেক্ষিক ভাবে।আপনার ইহজগৎ থেকে পরকাল পর্যন্ত যেতে হলে, কেবল নারীদের পুরুষদেরকে সন্তুষ্ট রাখার কথাই বলা হয়েছে।অর্থাত,নারী মানেই পুরুষের ব্যবহৃত পন্য এবং পুরুষ মানেই স্ত্রী লোকের উপর কতৃত্বশীল।

পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০১ (হিন্দু ধর্ম)
পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০২ (খৃষ্ট ধর্ম)
পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০৩ (বৌদ্ধ ধর্ম)
পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০৪ (ইহুদী ধর্ম)

শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭

দেশের সকল ভাস্কর্য অপসারন এবং শরিয়া আইন চাই

মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এবং ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের চাপের মুখে পরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গত রাত ২৫ মে ন্যায় বিচারে প্রতীক গ্রীক দেবী থেমিসের অনুকরনে তৈরী করা ভাস্কর্য মৃণাল হকের উপস্থিতে সরানো হয়।মৃণাল হকই এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন।সেই থেকে চলছিলো প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক লোকদের মাঝে নানা আলোচনা এবং সমালোচনা।

আবার এরই মধ্যে,আজ শুক্রবার ২৬ মে দেশে স্থাপিত সব ‘মূর্তি’ অপসারণ করার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। শুক্রবার দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক শুকরিয়া আদায় মিছিলে এ দাবি জানান ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী।

এনিয়ে এখন আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে মৌলবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং সেই সাথে চিন্তিত বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল থেকে অসাম্প্রদায়িক সাধারণ মানুষদের মাঝেও মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং ক্ষমতাশীল দল আওয়ামী-লীগকে নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা এবং চুলছেড়া বিশ্লেষন ভবিষ্যৎ’র কথা চিন্তা করে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে থাকা ভাস্কর্য যদি ধর্মানুভুতিতে আঘাত করে তাহলে দেশের সকল ভাস্কর্য অপসারনের দাবিতেও কোন ভুল নাই।এখন আমিও চাই,দেশের সকল ভাস্কর্য অপসারণ করে ধর্মানুভূতি থেকে আঘাত হানা বন্ধ করা হোক।একটা দেশের সাথে ভাস্কর্য মূর্তির কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না।দেশতো দেশই,সেখানে ভাস্কর্য মূর্তি স্থাপন করা সেটা একদিকে যেমন বিশেষ ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের দেশে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানাও অন্যায় এবং জোর করে অবিচার করার সমতুল্য।ন্যায় বিচার যদি মনে না থাকে,তাহলে ভাস্কর্যকে ন্যায় বিচারের প্রতীক ভাবাও এক ধরণের ভণ্ডামি।কারণ দেশে এখন ন্যায় বিচার বলতে যা আছে তা কেবল স্বজনপ্রিতী এবং ক্ষমতার অপব্যবহার।

সেই সাথে এই দাবিও জানাই,সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের দেশে গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাও ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক।সেহেতু খৎনা করা নামেমাত্র অসাম্প্রদায়িক ধ্বজভঙ্গ গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দেশ থাকার থেকে শরিয়া আইন থাকাই ভালো।কারণ এদেশ কখনো অসাম্প্রদায়িক না যেমন,তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের দেশে গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থাকাও অন্যায়।সেহেতু অতিশীঘ্রই শরীয়া আইন প্রতিষ্ঠত করার জন্য আন্দোলনের ডাক দেওয়া হোক এবং নারীনেত্রীত্ব হারাম বলে ফতোয়া জারি করা হোক।আমিও সেই আন্দোলনের সাথেই থাকবো একজন অবিশ্বাসী এবং জন্মসূত্রে বিধর্মী হওয়া সত্বেও।কারণ,অবশ্যই আমাদের মত মোট জনসংখ্যার ৭-৮% এর জন্য ৯২-৯৩% সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের সাথে ধর্মীয় সাংঘর্ষিক এমন কোন অপ্রীতিকর কিছু না হোক তা সংখ্যালঘুদের অবশ্যই বুঝা উচিত।আমার একার জন্য পাশের ১০ জন লোকের অসুবিধা হোক বা তারা সুবিধা বঞ্চিত হোক তা অবশ্যই আমি চাইবো না।এবং এটাও স্বাভাবিক যে,একজন মানুষের দিক চেয়ে ১০ জন মানুষের মনের বিরুদ্ধে কোন কাজ হচ্ছে তা মেনে নেওয়াও অস্বাভাবিক।সেহেতু আমি সংখ্যাগরিষ্ঠদের লোকের কথা ভেবেই বলবো,এদেশে শরীয়া আইন চালু করা হোক এবং সকল ধরনের বিশেষ ধর্মের ধর্মীয় সাংঘর্ষিক হয় এমন ধরনের সকল প্রচার বন্ধ করা হোক কঠোর ভাবে।

আর হ্যা,সকল সংখ্যালঘু অবিশ্বাসী এবং ভিন্ন ধর্মালম্বীদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো,আপনার আমার জন্য গুটিকয়েক লোকের জন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোন সমস্যা বা কোন ধরনের অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কোন কিছু অবশ্যই একজন বিবেকবান মানুষ করতে পারে না।সেহেতু আমরা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীরা এই কথা ভেবে এবং চিন্তা করে অবশ্যই বৃহত্তর গোষ্ঠীর জন্য আমাদের ত্যাগ স্বীকার করা উচিত।সেই সাথে শরিয়া আইন মেনে জিজিয়া কর দিয়েই থাকা উচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের দেশে।অন্যথায় এদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান।তার থেকে বড় কথা এই ধ্বজভঙ্গ খৎনা করা নামেমাত্র অসাম্প্রাদায়িক গনতান্ত্রিক দেশের থেকে শরিয়া আইনের বেশ কিছু সুবিধা এবং সুনির্দিষ্ট বিধান আছে।যা আপনাকে মেনে চলতে হবে অন্যথায় শরিয়া আইনে আপনার শাস্তি হবে।কিন্তু এই ধ্বজভঙ্গ খৎনা করা নামেমাত্র অসাম্প্রাদায়িক গনতান্ত্রিক দেশে সেরকম কিছু নাই কিন্তু বাস্তবিত হচ্ছে শরিয়া আইনের অনুকরনে।যদিও সেটা হাইলেও না আবার জাইলেও না।কারণ আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলছে বিশেষ ধর্মের লোকদের চাওয়া এবং আন্দোলনের উপর নির্ভর করে আবার সাংবিধানের উপর নির্ভর করেও।মানে সাপও যেন না মরে আবার লাঠিও যেন না ভাংগে।কিন্তু সাধারণ অসাম্প্রদায়িক এবং প্রগতিশীলরা পরছে চিপায়।কারণ তারা চুপ করেও থাকতে পারে না আবার কথা বললেও বিপদ।মানে একজন মানুষের দুই পা দুই নৌকায় রাখলে যা হয়।সেই হিসাব বিবেচনা করেই,আমাদের সকলের শরিয়া আইন চাওয়া উচিত এবং ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের সাথে সমর্থন দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।যেমনটা করছে,অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীলদের আস্থা বৃহত্তর রাজনৈতিক দল আওয়ামী-লীগ।

শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য

মূর্তি বলতে দেবতার প্রতিমাকে বোঝায়। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “অবয়ব”। মূর্তি দেবতার প্রতিনিধি। সাধারণত পাথর, কাঠ, ধাতু অথবা মাটি দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করা হয়।হিন্দুরা মূর্তির মাধ্যমে দেবতার পূজা করে থাকেন। মূর্তিতে দেবতার আবাহন ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পরই হিন্দুরা সেই মূর্তিকে পূজার যোগ্য মনে করেন। ধর্মীয় সংস্কার বা শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট দেবতার মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে।অর্থাৎ প্রতিমা হল মানুষ যার প্রতিকীকে সামনে রেখে আরাধনা উপাসনা করে, ইহকালে-পরকালে মঙ্গল চায়, ধর্মীয় বিধি মেনে পূজা করে ইত্যাদি।

ভাস্কর্য (ইংরেজি ভাষায়: Sculpture) ত্রি-মাত্রিক শিল্পকর্মকে ভাস্কর্য বলে।অর্থাৎ, জ্যামিতিশাস্ত্রের ঘণকের ন্যায় ভাস্কর্যকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা সহ ত্রি-মাত্রিক হতে হবে। ভারত, বাংলাদেশ এবং চীনের ন্যায় বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন ধরনের, বহুমূখী আকৃতির ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়। রেনেসাঁ এবং আধুনিককালে এটি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। পুতুল, মুখোশ, মাটির জিনিসপত্র ভাস্কর্যের উদাহরণ। কিন্তু প্রায় চারশত বছর পূর্বে তুরস্কে ইসলামপন্থী দলের বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে সেখানে ভাস্কর্য শিল্পকলার তেমন উন্মেষ ঘটেনি।

মূর্তি আর ভাস্কর্যের মূল পার্থক্য হচ্ছে, ভাস্কর্যের সামনে উপাসনা কিংবা পূজা করা যায় না কেবল মাত্র সেটাকে একটা প্রতিকী হিসাবেই মেনে টিকেয়ে রাখা হয় এবং কোন ধর্মের কোন ঈশ্বরের প্রতি ভাস্কর্য নিবেদিত নয়।অন্যদিকে,মূর্তি কেবলমাত্র প্রতিকী না এটাকে বিধি অনুযায়ী পূজাও করা হয়।

ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে কোর’আনে কোথাও নিষেধ নাই,যা আছে তা মূর্তি পূজার বিপক্ষে এবং মূর্তি পূজা শেরক।তাই ভাস্কর্য কে মূর্তি হিসাবে গুলিয়ে শরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলার কোন মানেই হয় না এবং অবৈধ ফতোয়া দেওয়ার কোন যুক্তি নেই। একটি সরল সত্য হলো, ইসলামের বৈধ-অবৈধ নির্দ্ধারণের বেলায় মানদণ্ড হচ্ছে কোর’আন।অথচ আজ আল্লামা ,পীর আরো ইসলামিক টাইটেল লেবাস ধারী ধর্ম ব্যবসায়ীরাই অন্যায় ভাবে ফতোয়া জারি করে।আর তাতে সাধারন ইসলাম ধর্মের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তাদের কথা সায় দিয়ে মাথায় তুলে রাখে নিজেরা নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে না ঘেটে।আর যখনই কেও এসব ভুল ব্যাখ্যার প্রতিবাদ করে সত্যতা যাচাই করে বলবে তখনই তাকে নাস্তিক,ইহুদীদের পেইড এজেন্ট,ইসলাম বিদ্বেষী ইত্যাদি বলে ট্যাগ দেওয়া শুরু করবে এবং তার কল্লার মূল্য নির্ধারণ করে চাপাতি নিয়ে পিছন থেকে আঘাত করে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে না।আসল কথা এবং অপ্রিয় সত্য হলো বৃহত্তর মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী ধর্ম ইজারা দিয়ে রাখছে লেবাসধারী ধর্ম ব্যবসায়ীদের মগজের নিকট।আজ আমি বিধর্মী/নাস্তিক/মূরতাদ হয়েও লিখতে হচ্ছে সাধারন ইসলাম ধর্মের মানুষের পক্ষ নিয়ে।এর থেকে বড় ব্যার্থতা আপনাদের জন্য আর কিছু হতে পারেনা!

যাই হোক,লেবাস ধারী ধর্ম ব্যবসায়ীরা যেভাবে সাধারন মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বোকা বানিয়ে নিজেদের সার্থ সফল করে এবং যে রেফারেন্স ব্যবহার করে সেই দিক থেকেই আগে প্রমান হোক করা হোক মূর্তি এবং ভাস্কর্য একই না ভিন্ন।কিন্তু সেই কথায় আসতে হলে নবীর মক্কা বিজয় থেকেই আলোচনা আসতে হবে বলে আমার ধারনা।কারন মক্কা বিজয়ের পর থেকে মূলত মূর্তি বিরোধীতা পাওয়া যায় কোরআন এবং হাদীস থেকে।তাই নিজের ব্যক্তিগত মতামত দীর্ঘায়িত না করে মূল প্রসঙ্গে চলে আসে এবার,-

হুবাল মক্কা নগরীতে পূজিত দেবতা ছিলেন। কাবা শরীফের হুবালের একটি ছবিকে পূজা করা হতো। কারেন আর্মস্ট্রংয়ের মতানুসারে, উপাসনাগৃহটি হুবালের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ছিলো এবং কাবা শরীফে রক্ষিত ৩৬০ টি মূর্তির মধ্যে হুবালকে প্রধান দেবতা হিসেবে পূজা করা হতো।

হুবালের উপাসনা এবং রক্ষনাবেক্ষণের ভার ছিলো মক্কার কুরাইশ বংশের উপর্। কাবা ঘরের দেয়ালে যে কাল পাথর আছে , যার নাম হজরে আসওয়াদ , সেটাকে প্রাক ইসলামী যুগ থেকে কুরাইশরা অতি পবিত্র জ্ঞান করত। কাবা ঘরে যে ৩৬০ টা মুর্তি ছিল , সেগুলো ছিল কুরাইশদের দেব দেবী।তাদের মধ্যে অন্যতম আরো ৩টা বেদবতার নাম পাওয়া যায় যা,কোরানেও উল্লেখ রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান দেবী ছিল তিনটা – লাত, উজ্জা আর মানাত।

# তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে। (সূরা আন নাজম-৫৩ঃ১৯)

# এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? (সূরা আন নাজম-৫৩ঃ২০)

কুরাইশ ও অন্যান্য প্যাগানরা যখন কাবা ঘরে আসত , প্রথমেই তারা কাবা ঘরকে ঘিরে সাতটা পাক খেত, তারপর কাল পাথরকে চুম্বন করত। তারা বিশ্বাস করত , কাল পাথরকে চুম্বন করলে তাদের সব পাপ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। অর্থাৎ কুরাইশদের কাছে উক্ত কাল পাথর ছিল তাদের ঈশ্বরের মত, যে আসলে কাল পাথরের অবয়বে কাবায় অবস্থান করত।

৬২৪ খিস্টাব্দে বদরের যুদ্ধে মূর্তিপূজারীগণ মুহাম্মদ (সঃ) এর অনুসারী দের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ৬৩০ খিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মদ (সঃ) কাবাঘরের রক্ষিত হুবাল সহ ৩৬০টি মূর্তি সরিয়ে ফেলেন।কারণ,এই মূর্তিগুলিকে তারা দেবতার আসনে বসিয়েছিল এবং এই বিশ্বাস স্থাপন করেছিল যে, এই মূর্তিগুলি তাদেরকে স্রষ্টার সান্নিধ্য এনে দেবে, স্রষ্টার কাছে সুপারিশ করবে এবং ভাগ্য বদলে দেবে তাদের বিশ্বাস ছিলো।

আচ্ছা এবার দেখা যাক,হাদিস কোরআনে এসম্পর্কে কি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে,

অতঃপর তিনি মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন এবং হাতের মাথা বাঁকানো লাঠি দ্বারা হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করেন। অতঃপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন।[2] এ সময় কা‘বাগৃহের ভিতরে ও বাইরে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাতের লাঠি দ্বারা এগুলি ভাঙতে থাকেন এবং কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়তে থাকেন। وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوْقًا ‘তুমি বল, হক এসে গেছে, বাতিল দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই বাতিল দূরীভূত হয়েই থাকে’ (বনু ইসরাঈল ১৭/৮১)। তিনি আরও পড়েন, قُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ وَمَا يُعِيْدُ ‘তুমি বল হক এসে গেছে এবং বাতিল আর না শুরু হবে, না ফিরে আসবে’ (সাবা ৩৪/৪৯)। অর্থাৎ সত্যের মুকাবিলায় মিথ্যা এমনভাবে পর্যুদস্ত হয় যে, তা কোন বিষয়ের সূচনা বা পুনরাবৃত্তির যোগ্য থাকে না।’ (বুখারী হা/৪২৮৭)

ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা অনুযায়ী অতঃপর তিনি ওছমান বিন ত্বালহাকে ডেকে তাকে ভিতর থেকে সমস্ত মূর্তি-প্রতিকৃতি বের করার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি তার মধ্যে ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর দু’টি প্রতিকৃতি দেখেন। যাদের হাতে ভাগ্য নির্ধারণী তীর দেখে তিনি বলে ওঠেন, قَاتَلَهُمُ اللهُ لَقَدْ عَلِمُوا مَا اسْتَقْسَمَا بِهَا قَطُّ ‘মুশরিকদের আল্লাহ ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম! তারা জানে যে, তাঁরা কখনোই এ ধরনের ভাগ্যতীর ব্যবহার করেননি’। তিনি বলেন,مَا كانَ إِبْراهِيمُ يَهُودِيًّا وَلا نَصْرانِيًّا، وَلكِنْ كانَ حَنِيفاً مُسْلِماً، وَما كانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ‘ইবরাহীম কখনো ইহূদী বা নাছারা ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’ (আলে ইমরান ৩/৬৭)। ইবনু আববাসের অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, সেখানে মারিয়ামের ছবিও ছিল (বুখারী হা/৩৩৫১)। এভাবে সমস্ত ছবি-মূর্তি দূর হওয়ার পর তিনি কা‘বাগৃহে প্রবেশ করেন ও ঘরের চারিদিকে তাকবীর দেন। (বুখারী হা/৪২৮৮)

আচ্ছা এখন দেখা যাক,নবী মুহাম্মদ কেন মূর্তিগুলা ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছিলো তা কোরআনে স্পষ্ট করেই বলা আছে।

# ‘স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বললেন, তুমি কি প্রতিমা সমূহকে উপাস্য মনে কর? আমি দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি ও তোমার সম্প্রদায় স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছ।’ (আন‘আম-৬/৭৪)

# ‘তুমি এই কিতাবে ইবরাহীমের কথা বর্ণনা কর। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও নবী’। ‘যখন তিনি তার পিতাকে বললেন, হে আমার পিতা! তুমি তার পূজা কেন কর, যে শোনে না, দেখে না এবং তোমার কোন উপকারে আসে না?। ‘হে আমার পিতা! আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে, যা তোমার কাছে আসেনি। অতএব তুমি আমার অনুসরণ কর। আমি তোমাকে সরল পথ দেখাব’। ‘হে আমার পিতা! শয়তানের পূজা করো না। নিশ্চয়ই শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য’। ‘হে আমার পিতা! আমি আশংকা করছি যে, দয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর তুমি শয়তানের বন্ধু হয়ে যাবে।’ (মারিয়াম-১৯/৪১-৪৫)

# ‘তোমার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক! আমি আমার পালনকর্তার নিকটে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয়ই তিনি আমার প্রতি মেহেরবান’। ‘আমি পরিত্যাগ করছি তোমাদেরকে এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের তোমরা পূজা কর তাদেরকে। আমি আমার পালনকর্তাকে আহবান করব। আশা করি আমার পালনকর্তাকে আহবান করে আমি বঞ্চিত হব না।’ (মারিয়াম ১৯/৪৭-৪৮)

# ’ ইবরাহীম স্বীয় পিতা ও সম্প্রদায়কে বলল, ‘এই মূর্তিগুলি কী যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ’? ‘তারা বলল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এরূপ পূজা করতে দেখেছি’।‘সে বলল, তোমরা প্রকাশ্য গুমরাহীতে লিপ্ত আছ এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও’ । ‘তারা বলল, তুমি কি আমাদের কাছে সত্যসহ এসেছ, না কেবল কৌতুক করছ’? ‘সে বলল, না। তিনিই তোমাদের পালনকর্তা, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং আমি এ বিষয়ে তোমাদের উপর অন্যতম সাক্ষ্যদাতা’। ‘আল্লাহর কসম! যখন তোমরা ফিরে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা কিছু করে ফেলব।’ (আম্বিয়া-২১/৫২-৫৭)

# ‘এটা শ্রবনযোগ্য।আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্য উত্তম।উল্লেখিত ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া তোমাদের জন্য চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে।সুতরাং তোমরা মূর্তিদের থেকে বেচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক।‘ (হাজ্জ্ব-২২/৩০)

# ‘আর তাদেরকে ইবরাহীমের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন’। ‘যখন সে স্বীয় পিতা ও সম্প্রদায়কে ডেকে বলল, তোমরা কিসের পূজা কর’। তারা বলল, আমরা প্রতিমার পূজা করি এবং সর্বদা এদেরকেই নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে থাকি’।‘সে বলল, তোমরা যখন আহবান কর, তখন তারা শোনে কি’? ‘অথবা তারা তোমাদের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে কি’? ‘তারা বলল, না। তবে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি, তারা এরূপই করত’।‘ইবরাহীম বলল, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, যাদের তোমরা পূজা করে আসছ’?‘তোমরা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষেরা’। ‘তারা সবাই আমার শত্রু, বিশ্ব পালনকর্তা ব্যতীত’। ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আমাকে পথ প্রদর্শন করেছেন’ । ‘যিনি আমাকে আহার দেশ ও পানীয় দান করেন’ । ‘যখন আমি পীড়িত হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন’। ‘যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন’ । ‘আশা করি শেষ বিচারের দিন তিনি আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিবেন’ । ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর’। ‘এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী কর’ । ‘তুমি আমাকে নে‘মতপূর্ণ জান্নাতের উত্তরাধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর’। (হে প্রভু) ‘তুমি আমার পিতাকে ক্ষমা কর। তিনি তো পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত’। (হে আল্লাহ) ‘পুনরুত্থান দিবসে তুমি আমাকে লাঞ্ছিত কর না’ । ‘যে দিনে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না’। ‘কিন্তু যে ব্যক্তি সরল হৃদয় নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে’ ।‘জান্নাত আল্লাহভীরুদের নিকটবর্তী করা হবে’। ‘এবং জাহান্নাম বিপথগামীদের সামনে উন্মোচিত করা হবে’।‘তাদেরকে বলা হবে, তারা কোথায় যাদেরকে তোমরা পূজা করতে’? ‘আল্লাহর পরিবর্তে তারা কি (আজ) তোমাদের সাহায্য করতে পারে কিংবা তারা কি কোনরূপ প্রতিশোধ নিতে পারে’? । ‘অতঃপর তাদেরকে এবং (তাদের মাধ্যমে) পথভ্রষ্টদেরকে অধোমুখী করে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে’। ‘এবং ইবলীস বাহিনীর সকলকে’ । ‘তারা সেখানে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে বলবে’। ‘আল্লাহর কসম! আমরা প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে ছিলাম’। ‘যখন আমরা তোমাদেরকে (অর্থাৎ কথিত উপাস্যদেরকে) বিশ্বপালকের সমতুল্য গণ্য করতাম’।‘আসলে আমাদেরকে পাপাচারীরাই পথভ্রষ্ট করেছিল’ । ‘ফলে (আজ) আমাদের কোন সুফারিশকারী নেই’ । ‘এবং কোন সহৃদয় বন্ধুও নেই’। ‘হায়! যদি কোনরূপে আমরা পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ পেতাম, তাহ’লে আমরা ঈমানদারগণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম’।‘নিশ্চয়ই এ ঘটনার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে। বস্ত্ততঃ তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী ছিল না’ ।‘নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা পরাক্রান্ত ও দয়ালু।’ (শো‘আরা-২৬/৬৯-১০৪)

# ‘স্মরণ কর ইবরাহীমকে, যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ’। ‘তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর নিকটে রিযিক তালাশ কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই নিকটে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (আনকাবূত-২৯/১৬-১৭)

# ‘তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে।’ (সূরা নূহ-৭১/২৩)

উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তিগুলো সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, এগুলো হচ্ছে নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু পুণ্যবান লোকের নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করেছে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রনা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হল। -সহীহ বুখারী হাদীস : ৪৯২০

# ‘আর তারা বলেছিল, তোমরা পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদের এবং পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ সুওয়াকে, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে। অথচ এগুলো অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।’ (সূরা নূহ- ৭১/২৩-২৪)

আসুন দেখি তাহলে হাদিস কি বলে,

হাদীস শরীফেও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ সম্পর্কে পরিষ্কার বিধান দান করেছেন।

১. হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ‘আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। -সহীহ মুসলিম হা. ৮৩২

২. আবুল হাইয়াজ আসাদী বলেন, আলী ইবনে আবী তালেব রা. আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে ওই কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা এই যে, তুমি সকল প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং সকল সমাধি-সৌধ ভূমিসাৎ করে দিবে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে,... এবং সকল চিত্র মুছে ফেলবে।’ -সহীহ মুসলিম হা. ৯৬৯

৩. আলী ইবনে আবী তালেব রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোনো প্রাণীর মূর্তি পাবে তা ভেঙ্গে ফেলবে, যেখানেই কোনো সমাধি-সৌধ পাবে তা ভূমিসাৎ করে দিবে এবং যেখানেই কোনো চিত্র পাবে তা মুছে দিবে?’ আলী রা. এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্ত্তত হলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ পুনরায় উপরোক্ত কোনো কিছু তৈরী করতে প্রবৃত্ত হবে সে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি নাযিলকৃত দ্বীনকে অস্বীকারকারী।’ -মুসনাদে আহমাদ হা. ৬৫৭

এবার আসুন তাহলে দেখি,নবী মুহাম্মদ কেন মূর্তিগুলা ভেঙ্গে ফেলতে বলছেন,

‘তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর নিকটে রিযিক তালাশ কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই নিকটে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবুত-২৯/১৭)

উপরের এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে সহজেই বলা যায় ইসলামে মূর্তি পুজা নিষেধ রয়েছে যা কিনা স্পষ্টভাবে বলাও আছে।

হে মুমিনগণ,এই যে মদ,জুয়া,প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়।অতএব,এগুলা থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমার কল্যাণপ্রাপ্ত হও।(সুরা আল মায়িদাহ-৫/৯০)

# জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত।যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহন করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি,যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।নিশ্চয় তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন।আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (আল-যুমার-৩৯/৩)

অর্থাৎ কোরানের নিষেধ মূর্তিপূজা, উপাসনা-আরাধনা-ইবাদত সম্পর্কে। কারণ, মূর্তি স্রষ্টার অংশীদার অর্থাৎ শরিক হয়ে দাঁড়ায়। এটাই মানুষকে মুশরিক বানায়। তাহলে যে ভাস্কর্যকে আরাধনা বা আল্লাহর সাথে শরীক করে না সে সম্পর্কে কোরআনে সুস্পষ্টভাবে কি বলা আছে এবার তাই দেখা যাক,

# তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ। (সুরা সাবা-৩৪/১৩)

# আপনি বলুনঃ আল্লাহ সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্রবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে? আপনি বলুনঃ এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে।(আ’রাফ-৭/৩২)

সহি মুসলিম – বুক ০০৮, নং ৩৩১১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁহাকে সাত বৎসর বয়সে বিবাহ করিয়াছিলেন (যদিও অন্য রেওয়াতে আমরা পাই ছয় বছর: হাসান মাহমুদ) এবং তাঁহাকে নয় বৎসর বয়সে কনে হিসেবে তাঁহার বাসায় লইয়া যাওয়া হয়, এবং তাঁহার পুতুলগুলি তাঁহার সাথে ছিল এবং যখন তিনি দেহত্যাগ করিলেন তখন তাঁহার বয়স ছিল আঠারো।

সহি মুসলিম – বুক ০৩১ নং ৫৯৮১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে তিনি আল্লাহর রাসুলের (সা.) উপস্থিতিতে পুতুল লইয়া খেলিতেন এবং যখন তাঁহার সঙ্গিনীরা তাঁহার কাছে আসিত তখন তাহারা চলিয়া যাইত। কারণ তাহারা আল্লাহর রাসুলের (সা.) জন্য লজ্জা পাইত। যদিও আল্লাহর রাসুল (সা.) তাহাদিগকে তাঁহার কাছে পাঠাইয়া দিতেন।

অর্থাৎ, এথেকেও বুঝা যায় যে,নবী মুহাম্মদ মূর্তি পূজারী নিষেধ করেছে ঠিকই কিন্তু ভাস্কর্যকে নিষেধ করলে অবশ্যই নিজের ঘরের স্ত্রী আয়েশাকে পুতুল খেলতে এবং পুতুল গুলোকে সাথে রাখতে দিতো না।

আজ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়,এই আলেম-ওলামারা জঙ্গিবাদ নিয়ে কোন প্রতিবাদ না করে, সুপ্রিম কোর্টের সামনের গ্রীক দেবীর ভাস্কর্যসহ এখন দেশের সকল ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে,সরকার পতনের ডাক দেয়, রাস্তায় নির্মিত স্থাপনার বিরুদ্ধে মিছিল, ওয়াজ-নসীহত, বিক্ষোভ ইত্যাদি কত বড় মূর্খতা, কত বড় অজ্ঞতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ জন্যই এই বিকৃত ইসলামের আলেমদের প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষকে বোঝান মুশকিল যে তোমরা এই ধর্ম ব্যবসায়ী না নিজের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে,জানো,চিন্তা করতে শিখেন এবং এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন।

উল্লিখিত কোরান-হাদিসের এই নির্দেশে পরিষ্কার বোঝা গেল যে, আল্লাহ ঈশ্বরত্ব আরোপ করার উদ্দেশ্যে, উপাসনা করার উদ্দেশ্যে যে কোন মূর্তি নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞা গুলির কারণে মানুষ ধরেই নিয়েছে যে, ভাস্কর্য নিষিদ্ধ এবং এই লেবাসধারী টাইটেল যুক্ত ধর্মব্যবসায়ীরা যা করছে তাই ঠিক আর যারা ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে তারাই ইহুদী নাসারাদের পেইড এজেন্ট/নাস্তিক/ইসলাম বিদ্বেষী ইত্যাদি ইত্যাদি।তারপরেও আবার বলবো,দয়া করে অন্ধতা থেকে বের হয়ে আসুন এবং দেশকে এবং নিজেরা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাচান আপনাদের মতই সহজ সরল ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের।আপনাদের এরকম অন্যায় আবদারের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকা দেখে আপনাদের প্রতি আমার করুনা হচ্ছে যে, এইভেবে আমার মত একজন ধর্মবিরুধী/প্রথা বিরুধী/নাস্তিকেরও আপনাদের পক্ষে সাফাই গেয়ে লিখতে হয় ধর্ম ব্যবসায়ীদের ধান্ধা দেখিয়ে দিবার জন্য।জানি,তারপরেও আপনাদের হয়তো বিশ্বাস হবে না যে,এই গুলাই অপ্রিয় সত্য কথা এবং ধর্ম ব্যবসায়ীরা নিজেদের পকেটভারী করার জন্যই এসব ফয়দা লুটে।বিশ্বাস না হলে তাদের আয়ের উৎস এবং সম্পত্তির পরিমান দেখুন উত্তর পেয়ে যাবেন।

রেফারেন্সঃ
উইকিপিডিয়া
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মক্কায় প্রবেশ
ইসলামে মূর্তি ও ভাস্কর্য
মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক

বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭

হেফাজতের সাথে প্রেমের সম্পর্কের দায় কি শুধুই শেখ হাসিনার !!!

এখন প্রায়ই একটা কথা শুনা যায় চায়ের স্টল থেকে শুরু করে হাটে,বিলে,খাটে,ঘাটে,মঞ্চে,লঞ্চে,ট্রেনে,বাসে,নীল সাদার দুনিয়াসহ সব জাগায় যে,নেত্রী (শেখ হাসিন) যা করছে তা ভালোর জন্যই করছে এবং তা সমালোচনার উর্ধ্বে।আর যারা সমালোচনা করবে তাদের উদ্দেশ্যে চাটুকারীরা (নেতা-কর্মী) একধাপ এগিয়ে বলবে,নেত্রীর থেকে বড় দেশপ্রেম আর কারো নাই।সেহেতু সমালোচনা করা যাবে না।আরে ভাই,নেত্রী কি দেশপ্রেমের ইজারা নিছে নাকি!এখানে দেশ প্রেম কম আর বেশী কোথায় থেকে আসে।আর নেত্রী যা করছে তাই যদি ঠিক হয়,তাহলে তাকে এবার সৃষ্টিকর্তাই মেনে ফেলুন না।

কি মনে হচ্ছে,কথাটা একটু বেশী বলে ফেললাম!হুম বেশী বলছি,তা আপনাদের কারণেই।নেত্রী যা করছে তা ভালোর জন্য করছে এটা আমিও বিশ্বাস করি।কিন্তু তার থেকে বড় কথা সমালোচনা করা কোন ভুল না।আর আপনারা যে,অন্ধ সাপোর্ট দিয়ে যান এখানে আমার একটু কথা আছে।আর এই কারণেই নেত্রী কিছু ভুল পথে হাটছে।এর জন্য দায়ভার এবং দোষ আপনাদেরই।কারণ আপনারা এক সমালোচনা করতে দেন না এবং আপনারা নিজেদের উদ্যোগে কোন কাজ করেন না।নেত্রী যখন বলবে তখনই করবেন,তাও আবার তখন গ্রুপিং শুরু করে দেন।

এখন আসি সাম্প্রতিক আলোচনা তেতুল হুজুর মানে শফী হুজুর এবং মৌলবাদীদের সাথে সমঝোতা করে দলের আদর্শভুলে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার কথায়।হুম,শেখ হাসিনার এখন মূল উদ্দেশ্য ক্ষমতায় থাকা এবং তার মিশন কমপ্লিট করা।যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা।কিন্তু এই মিশন কমপ্লিট করায় একমাত্র বাধা হয়ে দাড়াইছে এই হেফাজত এবং কিছু মৌলবাদী দল যারা হেফাজতের সাথে তাল মিলায়।শেখ হাসিনা এখন আর বিএনপি কিংবা জামাত শিবিরকে না,শেখ হাসিনা ভয় করে হেফাজতকে।কারণ এই হেফাজতই এখন পারে পোগ্রাম,মিছিল,মিটিং করে বিভিন্ন নৈতিক অনৈতিক দাবি করার ধর্মকে ব্যবহার করে।আর এসব দেখেও আপনারা চুপ করে বসে থাকেন।কারণ নেত্রী কখন বলবে আর তখন প্রতিরোধ করবেন।কিন্তু সত্যিটা কি জানেন,কিছু কিছু বিষয় প্রকাশ্যে বলতে হয় না,নিজেদের বুঝে নিতে হয়।কারণ শেখ হাসিনা যখনই জামাত শিবির এবং বিএনপির বিপক্ষে গেছে এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করেছে তখনই দেশের মানুষকে আওয়ামী নাস্তিক এবং ধর্মবিরোধী দল বলে ট্যাগ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আওয়াজ পৌছে দিছে।এবং অনেক সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাসও করে।

অন্যদিকে,আপনারা সেসব কথার কোন প্রতিবাদ করে অবস্থান নেন নাই।আপনাদের নিরবতা দেখে শেখ হাসিনা হয়তো নিজেও ভেবেছে,আপনারা ধর্মনিরপেক্ষতা চান না।মুসলিম দেশ হিসাবেই পরিচয় দিতে চান এবং দেন।সত্যি তাই,আপনারা ধর্ম নিরপেক্ষতার থেকে মুসলিমদেশ পরিচয় দিতেই গর্ভবোধ করেন।

তাই নেত্রী বুঝে গেছে,কিভাবে ক্ষমতায় থাকতে হয়।এখন যদি সে একাই জামাত শিবিরদের যেভাবে কোপকাত করেছে ঠিক সেভাবেই যদি হেফাজতকে করতে যায় তাহলে তখন দেশের প্রতিটা মানুষই ধরে নিবে হাসিনা ধর্মবিরোধী এবং নাস্তিক দল।তার ক্ষমতায় দুইদিন থাকাও কষ্ট হয়ে যাবে।কারণ বিপক্ষের দলগুলা সাধারণ মানুষকে সহজেই উস্কিয়ে দিতে পারবে ধর্ম বিরোধী নাস্তিক দল বলে।আর যদি আপনারা নিজ দায়িত্বে এসবের প্রতিবাদ করে যেতেন,নেত্রীর নির্দেশ পাবার অপেক্ষা না করে এবং নিজেদের অবস্থান ক্লিয়ার করতে পারতেন যে আপনারা ধর্মবিরোধী দল না ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষেরদল তাহলে আজ হেফাজত আজ সুই থেকে কুঠার হতে পারতো না।এখন বানরকে রায় দিয়ে দিয়ে গাছে তুলেছেন,সেহেতু নেত্রী যখন কোন নামানোর পথ না পাইছে তখনই তাদের সাথে সমঝোতা করে যাচ্ছে একের পর এক।আর আপনারা চুপ করে থাকবেন তারপরেও।বুঝতেছেন না,আপনারাই নেত্রীকে কোণঠাসা এবং দলের আদর্শচুত করার জন্যদায়ী।আর আপনাদের,এই নষ্ট বস্তা পচা কথা শুনলে আমার হাসি পায়,নেত্রী যা করছেন তা দলের ভালোর জন্যই করছেন।যেমনটা ধার্মিকরা বলে আল্লাহ যা করছেন তা ভালোর জন্যই করছেন!আবার বলেন,নেত্রীর থেকে বড় কোন দেশ প্রেমিক নাই।এটা এমন কথা হয়ে গেল না,আপনি আপনার মাকে যতটা ভালো না বাসেন তার থেকে আমি আমার মাকে বেশী ভালোবাসি!এখানে কম আর বেশী পরিমাপ করা যায় না।তবে প্রকাশের ভঙ্গী ভিন্ন হতে পারে।আর যদি নেত্রীর থেকে বড় দেশ প্রেমিক না থাকতো তাহলে, জীবনের বাজী রেখে কেও ভাষার জন্য জীবন কিংবা দেশের জন্য ঝাপিয়ে পরতো না।আর সে সকল বীরদের মাঝে অনেকেই বেচে আছে এখনো।জানি ভালোবাসা কিংবা দেশপ্রেম,অনুভূতি এসব তুলনা করে মাপা যায় না আমার মতে।তবে আপনাদের লুলামীর কারণেই তুলনা করা।আর একটা কথা না বললেই না হয়,আসলে আপনাদের মাঝে কোন দেশপ্রেম নাই,যেটা আছে দলপ্রেম।তাও আবার স্বার্থের জন্য।আজ লীগ ক্ষমতা থেকে চলে যাক,আপনাদের লাইট দিয়েও খুজে পাওয়া যাবে না এবং তরী ফেরাবেন ক্ষমতাসীন দলের দিকেই।আর এজন্যই নিজের দিক বিবেচনা এবং নিজের দূর্বলতা থেকে বলেন,নেত্রী যা করে তাই সঠিক এবং সেই বড় দেশ প্রেমিক।

ওহ হ্যা! আরেকটা কথা,নেত্রী কিন্তু মানুষ,কোন সুপার কম্পিউটার না যে,তার কোন ভুল হবে না সফটওয়্যার থাকার কারণে।তবে হ্যা,যদি আপনারা সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতেন তাহলে ভুল হতো না এবং আজ হেফাজতের সাথে মিশে গিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াই করতে হতো না।তাই এখনো সময় আছে,নেত্রীর পাশে দাঁড়ান এবং দলের হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করুন দেশকে ভালোবেসে।
জয় বাংলা।

সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭

ধর্মান্ধ বিদ্বেষী

কেও যখন আমাকে বলে তুমি ধর্ম বিদ্বেষী?
--অবশ্যই না।
তাহলে হিন্দু বিদ্বেষী?
--কখনোই না।
তাহলে মুসলিম বিদ্বেষী?
--কল্পনাই করতে পারি না।
তাহলে খ্রিষ্টান বিদ্বেষী?
--তাও না।
তাহলে ইহুদী বিদ্বেষী?
--জীবনেও না।
তাহলে বৌদ্ধ বিদ্বেষ?
--জ্বী না।
তাহলে ধর্ম নিয়ে লিখ কেন?কোন কিছুই বিদ্বেষী না অথচ ধর্ম নিয়ে লিখে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রান মানুষের সাথে সম্পর্ক খারাপ করার কোন মানে হয়?
--কারণ আমি ধর্মান্ধ বিদ্বেষী।

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

লাশের উপর দাঁড়িয়ে নৃত্য

গত দুই বছর আগে যখন ওয়াশিকুর বাবুকে হত্যা করা হলো,তখন কত জনই কত কিছু বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মায়া কান্না শুরু করলো।মনে হয়েছিলো,বাবুর মৃত্যুতে শুধু তার পরিবার বা অতি নিকট আত্মীয়রাও না, তার থেকেও অনেক বেশী কষ্ট পেয়েছিলো বাবুর ফেসবুক বন্ধুরা।সবাই আবেগ তাড়িত হয়ে নানা ভাবেই তাদের আবেগ প্রকাশ করেছে।এবং কি অনেকেই এমনই আবেগে আবেগান্বিত হয়েছিলো যে (কয়েকজন মেয়ে),বাবুকে নিজের বিএফ বলে পরিচয় দিলো,তারপর তাদের কিভাবে পরিচয়,কোথায় দেখা ইত্যাদি ইত্যাদি।এসব দেখে যে কেও আরো বেশী আবেগান্বিত হয়ে মেয়েগুলোকে কি স্বান্তনাবানী ফেসবুক বন্ধুদের এবং অনেকেই সান্তনা দিয়ে বলে "আপু আপনাকে রিকু দেওয়া হয়েছে দয়া করে এড করে নিবেন"।আবার অনেকের সাথে ইনবক্সে কথা হয়েছে,দেখা করতে চেয়েছে,কার সাথে কি নিয়ে কথা হয়েছে লাস্ট ইত্যাদির স্ক্রীনশট ফেসবুকে পোস্ট করেও অনেকেই নিজের আবেগ ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলো।তবে সবথেকে বেশী ভালো লেগেছিলো একটি মেয়ের গল্প এবং বাবু আর তার মাঝের প্রেম কাহিনী।

তাদের প্রেম কাহিনীর ধরণটা এমন ছিলো অনেকটাই যে, বাবু আর মেয়েটার মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হতো,তারা একে অপরের নানা কথা শেয়ার করতো মানে ফেসবুকে চ্যাট করতে করতে যেভাবে ভালো পরিচয় বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। যাই হোক মূল কথায় ফিরে আসি,মেয়েটি তখন সবে মাত্র ইন্টার পরীক্ষা দিছে বা ২য় বার বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশনের চেষ্টা করছে।কিন্তু মেয়েটা খুব হতাশায় ভোগে কারণে বা অকারণে।একদিন মায়ের উপর রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে টিএসসিতে চলে যায় আর বাসায় না ফিরার চিন্তা করে।তারপর সেখানে বসে বসে বাবুকে ফোন দিয়ে বলে সে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরছে আর বাড়িতে ফিরতে চায় না।বাবুকে ওকে ফোনে শান্ত করার চেষ্টা করে এবং অফিস শেষ করে তার সাথে দেখা করবে এবং কিছু একটা ব্যবস্থা করবে বলে জানায়।এবং এক সময় বাবু তার কাজ শেষ করে মেয়ের কাছে ছুটে আসে।তারপর তারা এক সাথে আড্ডা এবং মেয়েকে বুঝিয়ে রাতে তার বাড়িতে দিয়ে আসে।মেয়ের মা খুব খুশী তার মেয়ে ফিরে এসেছে এবং মেয়ে ছেলেটির সব কথা খুলে বলে।তখন মেয়ের মা বলে,এই ছেলে না হয়ে যদি অন্য ছেলে হতো মানে একটু অন্য টাইপের তাহলেই একটা দূর্ঘনা ঘটে যেত পারতো বলে আশংকা প্রকাশ করে।এ দিক দিয়েও ,মেয়ের মনে হালকা প্রেমের বাতাস লাগে এবং তারা এক সময় প্রেমে ঝড়ায়।তাদের খুব ভালো সম্পর্ক চলতে চলতেই ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হয় বাবুকে।আর তখন সেই মেয়ের থেকে কে বেশী শোকে থাকতে পারে বলে মনে হয় না।তারমধ্যে বয়সটাও তখন আবেগময় ছিলো মেয়ের জন্য।

কিন্তু হায়! সেই আবেগ! সেই ভালোবাসা!......!

সবই ধান্ধারে ভাই, এতক্ষন যা বলছিলাম এখন তার বিপরীত বিবেচনা করতে গেলে।এখন আর তার বাবুর কথা মনে নাই,বাবুকে নিয়ে কোন মায়া কান্নাও নাই,বাবুকে নিয়ে কোন গল্পও নাই।সবই ছিলো এক ধরনের ধান্ধা এবং বাবুর নাম বেচে নিজে জাতে উঠার চেষ্টা।মেয়েটার সেই সময়ে এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ৩০০০ হাজার ফলোয়ার হয়ে যায়।তারপর একদিন দেখি মেয়েটা একটা পোস্ট দিছে এখন তার ফলোয়ার সংখ্যাও ৫০০০ ছাড়াইছে।এখন আর যা ইচ্ছা তাই লিখে মনের ভাব প্রকাশ করা যাবে না,সব কিছুই ভেবে চিনতে করতে হবে।হুম মেয়েটা এখন সবকিছু ভেবে চিনতে করে এখন তার ফলোয়ার ৮০০০+। ভেবে চিনতে করা মানে এই না যে,আগের মত সারাদিন স্ট্যাটাস দিবে তা না কিন্তু।হয়তো অন্য কিছু চিন্তা এবং যা তা লিখবেনা।আগে পোস্টে চুদানী,খাঙ্কির পোলা এসব থাকতো এখন আর তা থাকে না।অনেকটা ভদ্র মেয়ে,ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো বিষয় নিয়ে পড়তেও আছে ।তার সব কিছুই ঠিক থাকলেও আজ হয়তো আর তার বাবুর জন্য মায়া কান্না করার সু্যোগ নাই।বাবু নামে কেও ছিলো এটাই হয়তো তার এখন স্মৃতিতে নাই।কারণ তখন বাবুর জন্য দীর্ঘদিন হ্যাশট্যাগ, নো জাস্টিস ইন বিডি,কলম চলবে কত কিছু লিখে পোস্ট করতো আর কান্নার ইমো ব্যবহার করে ফেসবুকে চোখের জল দিয়ে বন্যা করে ফেলতো।সেই মেয়ের ফেসবুক মায়া কান্নার কথা মনে পরলো আমার বাবুর মৃত্যু দুই বছরপূর্ত্তির দিনে।তাই সেই খেয়াল বশত আজ আবার সেই মেয়ের টাইম লাইনে গেলাম,সকাল থেকে এ পর্যন্ত তার ওয়ালে প্রচুর আমপাতা,কাঠাল পাতা শেয়ার হলেও কলম চলবে বলে যে ধরণের লিখা চালিয়ে যাবার কথা ছিলো তা অনেক আগ থেকেই হারিয়ে গেছে অতীত হয়ে।শুধু তাই না,আজ বাবুর জন্য কোন পোস্ট দেখতে পেলাম না তার ওয়ালে।কোথায় হারিয়ে গেল সেই কান্নামাখা ফেসবুক।মাত্র দুই বছর আগে এতো কান্না আর এখন আমপাতা ,কাঠালপাতা শেয়ার করে!

সবই ছিলো ভাই নিজের পরিচিতি এবং একটা প্লাটফর্ম নেবার ধান্ধা বাবুর লাশের উপর দাড়িয়ে।আর মেয়েটা সফল।হেরে গেছে শুধু মুক্তচিন্তার মানুষগুলো,যাদের লাশের উপর দাঁড়িয়ে সুযোগ সন্ধানীরা নৃত্য করে আজ জাতে উঠে গেছে।
#NO_JUSTICE_IN_BD.

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

নারী খেকো ফেসবুক সেলিব্রেটি

মেয়েদের যদি কোন সাধারণ ছেলে ইনবক্স করে তাহলে তারা বিরক্ত হয়।--উফ অসহ্য

আর যখন সেলিব্রেটি নক করে,ভাইয়া...আমার যে কি ভালো লাগছে।--উফ অসাম

যখন কোন সাধারণ ছেলে ইনবক্সে কথা বলার পর নাম্বার চায় তখন ছেলে হয়ে যায় লুচ্চা।--উফ বিরক্তিকর

আর যখন সেলিব্রেটি ইনবক্সে কথা বলার পর নাম্বার চায় তখন, ভাইয়া আপনার নাম্বার দেন আমি ফোন দিচ্ছি।--উফ ফ্যান্টাসটিক

যখন কোন সাধারণ ছেলে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দেয় তখন ছেলে হয়ে যায় ইতর,বদামাইশ,ধান্ধাবাজ,নারীখেকো ইত্যাদি ইত্যাদি।--উফ ছাগলামী

যখন কোন সেলিব্রেটি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মেয়েদের ভিডিও ফোন দেয়,হুম ভাইয়া কেমন আছেন,জানো ভাইয়া আমি তোমার অনেক বড় ফ্যান,তোমাকে যে আমার কি ভালো লাগে বলে বুঝাতে পারবো না।ভাইয়া তোমার ওই লিখাটা,কবিতাটা,ছবিটা,গানটা আরো কত্তকি যে আমাকে কাছে টানে।উফ ভাইয়া,বুঝাতে পারবো না তোমাকে।তারপর সেলিব্রেটি পুরুষ-আচ্ছা আপু তোমার মুখটা একটু দেখি।

-না ভাইয়া!

-আরে দেখাও না।

-হুম,দেখছ?

-হুম,এবার একটু মাফলার সড়াও।

-হুম,সড়াইছি, দেখা যায়?

-হুম,এবার উড়নাটা সড়াও।

-হুম,সড়াইছি।

-এবার তোমার জামাটা একটু নিচে নামাও।😘

-না!

-না,নামাও একটু প্লিজ লক্ষীটি।

-না,ছি: ভাইয়া তুমি এমন!

-ওকে নামাতে হবে না,টুট টুট।

তারপর আবার ইনবক্সে,সেলিব্রেটি,

-স্যরি,আসলে আমি ড্রাংক ছিলাম।

-তাই বলে এমন!

-আরে বাবা বললামতো স্যরি।আর জীবনেও এমন হবে না।

-ওকে,ঠিক আছে।সত্যি আর যেন না হয়।

-হুম,গড প্রমিজ হবে না।

-মনে রেখ কিন্তু কথাটা।

-ঠিক আছে।

দুইদিন পর আবার অন্য মেয়ের সাথে....

ধরা না খাইলে এভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকে আর যখন ধরা খায় জায়গা মত তখন.....সেলিব্রেটি,

আমার মা/বাবা অসুস্থ,আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র,আমাকে ফাসিয়ে মাফ চাওয়ানো হচ্ছে,আমি মরে যাব,সুইসাইড করবো,আমার এম্বিশন সব ধুলিসাৎ হয়ে যাবে বলে না বাহনা শুরু।কিন্তু কে শুনে কার কথা,স্ক্রীনশট বেরিয়ে পরে।কিন্তু সমস্যা হলো গিয়ে সমস্যা না,দুইদিন পর সব ভুলে সেলিব্রেটিকে আবার মাথায় তুলে নাচাবো আর তাকে সাপোর্ট দিবো।আর বাদ দেন ভাই,কে কেমন তা জানা আছে,মেয়ে সাড়া না দিলে সেতো আর এমন বলার সাহস পেতো না।অত:পর ভক্তকুলের ব্যাপার বুঝে আবার অনলাইনে বিচরন অত:পর নতুন মাইয়াকে ফাদে ফালিয়ে আবার নাটক শুরু ধরা পরলে আর না পরলেতো বাদশাই।তবে কথায় আছে না,চোরের দশদিন আর গীরস্থের একদিন।

সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭

একটি ভাষন একটি জাতির ইতিহাস ।

বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস “মার্চ মাস”।কারণ ’১৯৭১’ সালের এই মার্চ মাসেরই ২৫ তারিখ গভীর রাতে, মানে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছিলো।শুধু তাই না, ২৫ মার্চ গভীর রাতে, এদেশের নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী।আরও একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আছে এই মাসে। সেটি হচ্ছে- ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।

কিন্তু ৭ মার্চের প্রেক্ষাপট হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি।যদি অন্তত ১৯৪৭ সালের পর দেশ বিভাগের পর থেকে পাকিস্তান শাসনকাল ধরি, তাতেও প্রায় দুই যুগের ইতিহাস।পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর থেকেই, পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের বাঙালিদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছিলো। যেন আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো দামই ছিলোনা তাদের কাছে।১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়, কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান।পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক থেকে পার্থক্য ছিল প্রচুর।১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগণের মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি করে।দীর্ঘ প্রায় চার বছর আন্দোলনের ফসল হিসেবে ১৯৫২ সালে সেটি পরিণতি লাভ করে শেষ পর্যন্ত এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।কিন্তু তার জন্য যথারীতি রাজপথে দিতে হয়েছিল অনেক রক্ত।

১৯৫৪ সালে ১০ই মার্চ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে।কিন্তু পাকিস্তান শাষকগোষ্ঠী বাঙালির এই আধিপত্য মেনে নিতে পারেনি।মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ৩০শে মে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।

১৯৫৯ সালে সমগ্র পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে আসলে বাঙালিদের মধ্যে বিপুল সাড়া দেখা দেয়।অতএব এই নির্বাচনের ফলাফল চিন্তা করে কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।একই সময়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের কৌশলে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যেও বিরোধ সৃষ্টি করে।এই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করে।১৯৬২ সালে সামরিক শাসন তুলে নেওয়ার পর ছাত্র সমাজ পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে এই সময় দেশব্যাপী শাসন তুলে নেয়ার পর ছাত্রদের এই আন্দোলন নতুন করে গণ-আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।

১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা ‘কপ’-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম অবহেলা ও ঔদাসীন্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোচ্চার হন। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় রাজনীতির গতিধারা নিরূপণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন।ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেলরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই ফেডারেলরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ন স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয়দফা কর্মসূচীর ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব।পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয়।

১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বুঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে ৮ মে, ১৯৬৬ সালে দেশ রক্ষা আইন অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়। এরপর ৭ জুন, ১৯৬৬ এ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সারা দেশে ধর্মঘট ডাকে। ৭ জুন যে ধর্মঘট ডাকে সেই আন্দোলনকারীদের উপর পাকিস্তানী সরকার নির্মম ও নিষ্ঠুর অত্যাচার চালায়। এই দিন প্রায় ১০ জন নিহত হয়। এরপর কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের প্রায় ৯৩৩০ জন কর্মী গ্রেফাতার হন।

শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর ১৮ জানুয়ারি, ১৯৬৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হলেও ঐদিন তার বিরুদ্বে আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করা হয়। এই মামলার জন্য তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুসহ মোট ৩৫ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়। এদের ভিতর প্রায় সকলে বাঙ্গালী সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। এতে করে পূর্ব পাকিস্তানের সকল প্রভাবশালী লোকদের পাকিস্তান শাষকগোষ্ঠী আটক করে বাঙ্গালীদের একদম নিস্তেজ করে ফেলে।

১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রকৃষ্ট হতে শুরু করে। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকাস্তানকে বিচ্চিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দায়ের করা হয়। ১৯৬৯-এ আইয়ুব খানের পতন হয় তবে সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে।সামরিক সরকারের অধীনে ১৯৭০-এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনেঅংশ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জ্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনৈতিকদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে বিরত থাকন।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবেরকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু’জন প্রধানমন্ত্রী। “এক ইউনিট কাঠামো” নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং কেন্দ্রের সামরিক-বেসামরিক আমলাচক্র চঞ্চল হয়ে ওঠে। তাদের দুরভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষও উদাসীন ছিল না। বঙ্গবন্ধুও বুঝতে পারছিলেন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কুচক্রী মনোভাব। ইয়াহিয়া-ভুট্টো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে সমস্ত জানুয়ারি মাসটিকে কাজে লাগান। ১২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে। তিনি ছয় দফার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চান। অতি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি সন্তুষ্ট হন না। এরপর জানুয়ারির শেষ সপ্তায় ভুট্টো আসেন তাঁর দলের নেতাদের নিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে ছয় দফা বিষয়ে আলোচনার জন্য। তাঁর কাছে ছয় দফা বিচ্ছিন্নতাবাদী এজেন্ডা। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া-ভুট্টো দীর্ঘ আলোচনা করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া এক ঘোষণায় ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।কিন্তু ১ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেল এই সিদ্ধান্ত। সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয় এবং ডাক দেওয়া হয় হরতালের। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।

২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ. স. ম আবদুর রব। সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফারেল আহমদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং নূরে আলম সিদ্দিকী। বিশাল এই সভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়।

৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে- আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দিবেন। তাদেরও যদি হত্যা করা হয়, যিনি জীবিত থাকবেন, তিনিই নেতৃত্ব দিবেন। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে- অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” বঙ্গবন্ধু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ৭ মার্চ রোববার রেসকোর্স ময়দানে তিনি পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন।এবং ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালনের আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে তাঁরই নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে ইতিপূর্বে বেতন দেয়া হয়নি সেসব অফিস বেতন প্রদানের জন্য খোলা থাকে।

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে মুক্তির বাণী শোনার জন্য (৭ মার্চ,১৯৭১) সেদিন সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ দলে দলে রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষের রেসকোর্স ময়দান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, রমনা পার্কসহ আশপাশের এলাকা ছিল পূর্ণ। মঞ্চের সামনে নারীদের বসার জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে বাঁশ। পোস্টার, ফেস্টুন, ফানুস সঙ্গে ‘জাগো জাগো-বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল সেদিনকার রেসকোর্স।বঙ্গবন্ধু বিকাল আনুমানিক ৩টা ২০ মিনিটে মঞ্চে উঠেছিলেন।৫ দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।একাত্তরের ৭ মার্চ ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি মাহেন্দ্রক্ষণ।আন্দোলন-সংগ্রামের পরিণত ফসল। বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, যখন বাঙালি জাতি পরাধীনতার দীর্ঘ প্রহর শেষে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল তখনই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন তার ঐতিহাসিক ভাষণে।এ ভাষণের স্তরে স্তরে ছিল এদেশে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের পরিসমাপ্তির ঘোষণা ও বিবরণ।সেই সঙ্গে ছিল পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন দেশের স্বাধীনতা অভ্যুদয়ের বার্তা।পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন এই বলে, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।“
জয় বাংলা।

রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্টপতি আব্দুল হামিদের ভাষনকে কেন্দ্র করে মিথ্যা গুজব

সকাল থেকেই “প্রথম আলো” নিউজ লিঙ্কের কিছু অংশ অনলাইনে কিংবা ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে নিয়ে এবং কিছু অতি উৎসুক ফেসবুকাররা তা বিতর্কিতভাবে ভাবে বিভিন্ন অনলাইন পেইজ অথবা ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট করে নিজেকে জ্ঞানীর ভাণ্ডার হিসাবে দাবিতেই ব্যস্ত।যাই হোক,যে কথাটি নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা সরাসরি তুলে ধরি।তারপর না হয় এক লাইনে উত্তরটা দেওয়া যাবে। "মনে ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। ভর্তিও হয়ে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। ভর্তির কাজকর্ম শেষে গেলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। বঙ্গবন্ধু সব শুনলেন। তারপর জানিয়ে দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পড়তে হবে সেন্ট্রাল ল কলেজে। আর রাজনীতি করতে হবে কিশোরগঞ্জে। সেন্ট্রাল ল কলেজে যেহেতু নিয়মিত ক্লাস না করলেও পরীক্ষা দেওয়া যায়, সে কারণেই এ বিকল্প চিন্তা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিপুল আগ্রহ তাঁর। তাই নেতাকে একটু মিথ্যার আশ্রয় নিয়েই বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সব টাকা শেষ। কীভাবে আবার সেন্ট্রাল ল কলেজে ভর্তি হবেন। বঙ্গবন্ধু ডাকলেন পাশের রুমে থাকা তোফায়েল আহমেদকে। পাঞ্জাবির পকেট থেকে তিনটি ১০০ টাকার নোট বের করে তোফায়েলের হাতে দিয়ে বললেন, ‘ওকে সেন্ট্রাল ল কলেজে ভর্তি করিয়ে, বইপুস্তক কিনে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দে।’ নেতার ইচ্ছাই নিজের ইচ্ছা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে আবদুল হামিদ সেন্ট্রাল ল কলেজের ছাত্র হলেন।"

কিন্তু যে বিষয় টুকু খুব সতর্কভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে তা তুলে দেওয়া হলো, “কোনোরকমে ম্যাট্রিক পরীক্ষার বৈতরণী পার হলেন, তৃতীয় বিভাগ নিয়ে। এইচএসসিও পার হয়ে গেলেন কীভাবে কীভাবে। বিএ পরীক্ষায় পেলেন রেফার্ড। কিন্তু বিএ পাস না করলে মান-ইজ্জত থাকে না। ইজ্জত রক্ষার জন্য জনসভায় একদিন ঘোষণা দিয়ে ফেললেন, যত দিন আইয়ুব সরকারের পতন হবে না, তত দিন তিনি পরীক্ষা দেবেন না, বিএ পাস করবেন না। এর মধ্যে আইয়ুব খানের বিরোধিতা করার দায়ে জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে তাঁর। রাজনীতিতেই ঢেলেছিলেন মন-প্রাণ। কীভাবে ঢেলেছিলেন তার একটা প্রমাণ দেওয়া যেতে পারে। পরে অবশ্য বিএ পাস করেন আইয়ুবের পতনের পরই। “

এখন কথা হলো,আমরা এতোটাই শিক্ষিত হয়ে গেছি যে, কথায় কথায় ভুল ধরা এবং একজন আরেকজনের পিছনে লেগে নিজের দাবিকে সত্য বলে প্রমানিত করতেই ব্যস্ত।একটু মাথা খাটালেই যে,নিজেই নিজের উত্তর পাওয়ার সম্ভবনা থাকে তা কখনো ভেবে দেখার চেষ্টা করবে না।বরং এক প্রকার জোর করেই অনৈতিক মিথ্যাকে সত্য বলে প্রমান করতে ব্যস্ত।আর একজন যখন এই ভুল করে, বিশেষ করে ফেসবুকে তা যখন অন্যএকজন উৎসুক ফেসবুকার দেখবে তখনই সেও চিন্তা না করে সরাসরি কপিপেস্ট মেরে কিংবা শেয়ার করে ভাইরাল করে দিবে।যাই হোক এতো কথা না বলে এবার আসল কথাটাই বলে ফেলি, “যোগ্যতা না থাকায় ঢাবিতে পড়তে পারি নাই ,কিন্ত আজ আমি ঢাবির চ্যান্সেলর , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে ৫০তম সমাবর্তনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি ফরম না পাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।“
প্রথম আলোর যে নিউজ লিঙ্কটা শেয়ার হচ্ছে এবং ৫০তম সমাবর্তনে বক্তব্য দিতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি ফরম না পাওয়ার যে গল্প শুনিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেটাও যেমন সত্য,ঠিক তেমনি সত্য হতে পারে প্রথম আলোর শেয়ার লিঙ্ক।কারণ, তিনি বিএ ভর্তি হওয়ার জন্য কিংবা ভর্তি ফরম উঠানোর যোগ্য ছিলেন না, আর তিনি বিএ পাস করে আইনে ভর্তি হওয়ার কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।আপনি যদি নিউজ লিঙ্ক দুইটাই পড়ে থাকেন তাহলে সহজেই উত্তর পেয়ে যাবেন।তবে অনলাইনে যেভাবে ভাইরাল করা হচ্ছে তা শুধু প্রথম আলো নিউজ লিঙ্কের ৬ নম্বর প্যারাটুকু।এতে সহজেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে সাধারণ মানুষদের মাঝে।কিন্তু এই বিভ্রান্তিটা মূলত উদ্দ্যেশ্যপ্রনোদীত এবং একজন মানুষকে মিথ্যার গুজব ছড়িয়ে ছোট করে উপস্থাপন করার জন্যই করা হচ্ছে।আপনার যদি সাধারণ জ্ঞানও থাকে তাহলে যে দুইটাই ভিন্ন জিনিস এবং ভিন্নভাবে বুঝানো হয়েছে তা আপনি অতি সহজেই বুঝতে পারবেন এবং যদি আপনি প্রথম আলোর আর্টিকেলটা পড়ে থাকেন।সেহেতু এটাকে মিথ্যা বলেছে বলে দাবিটা পুরাই বোকামী। আবার অনেকেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে রাষ্ট্রপতির কথার তাল মিলিয়ে ঘুলপাক খাইয়া নিজে নিজেই চন্দ্রজয় করেছেন।

বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শিবলিঙ্গ এবং শিবরাত্রি কথন ।

সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বী দের বিশেষ একটি রাত্রির নাম শিব রাত্রি । এদিন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শিবের মাথায় ফুল বেল পাতা সমেত দুধ গঁঙ্গা জল ঢেলে ও ভোগ হিসেবে বেল চড়িয়ে দিনটি পালন করবে। শিবের প্রনাম মন্ত্র-

ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর।।

শিব হলেন হিন্দুধর্মের প্রধান তিন দেবতার (ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব) অন্যতম। তিনি সমসাময়িক হিন্দুধর্মের তিনটি সর্বাধিক প্রভাবশালী সম্প্রদায়ের অন্যতম শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা। এছাড়া শিব স্মার্ত সম্প্রদায়ে পূজিত ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের (গণেশ, শিব, সূর্য, বিষ্ণু ও দুর্গা) একটি রূপ। তিনি ধ্বংস, সংহার ও প্রলয়ের দেবতা। শিবমূর্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল তাঁর তৃতীয় নয়ন, গলায় বাসুকী নাগ, জটায় অর্ধচন্দ্র, জটার উপর থেকে প্রবাহিত গঙ্গা, অস্ত্র ত্রিশূল ও বাদ্য ডমরু। শিবকে সাধারণত ‘শিবলিঙ্গ’ নামক বিমূর্ত প্রতীকে পূজা করা হয়।

শিব আক্ষরিক অর্থে "শুভ" বা "মঙ্গল"।এই শিবলিঙ্গের "লিঙ্গ" শব্দের অর্থ বিশ্লেষণে অনেকেই অনেকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, কেও বলেন লিঙ্গ শব্দের অর্থ "বাস" মানে বাসস্থান। অর্থাৎ শিবঠাকুর যেখানে বাস করেন বা বিরাজ করেন সেটাই আসলে শিবলিঙ্গ।আবার ব্যাকরণে লিঙ্গ শব্দের আভিধানিক অর্থ চিহ্ন বা প্রতীক।তবে সনাতনীরা লিঙ্গ অর্থ চিহ্ন বা প্রতীকই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।তবে তারা এই মানতে রাজি না যে, লিঙ্গ অর্থ “নুনু/যোনী”।এখন সনাতনীরা যদি প্রতিকই মানে আর আমি তাই ধরে নিই,তবেও কিন্তু লিঙ্গ মানে “নুনু/যোনী” বলেই প্রমানিত হবে।যেমন, ব্যাকরণে লিঙ্গ শব্দ হচ্ছে স্ত্রী ও পুরুষ ক্লীব ভেদ।এর মানে লিঙ্গটাকে নির্দিষ্ট করে বুঝানো হয়নি।কিন্তু একটু খেয়াল করেন এখানে কিন্তু “শিবলিঙ্গ” বলে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।আরো যদি স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই তবে দ্বারায়, স্ত্রী লিঙ্গ বা যোনী হচ্ছে স্ত্রীর প্রতীক, পুংলিঙ্গ বা নুনু হচ্ছে পুরুষের প্রতীক, তেমনি শিবলিঙ্গ হচ্ছে শিবের প্রতীক।তবে হিন্দু ধর্মে শিবলিঙ্গ কে অনেক ক্ষেত্রে পু লিঙ্গই বুঝানো হয়েছে অথবা হিন্দু দেবতা শিবের একটি প্রতীকচিহ্ন কে বুঝানো হয়েছে।কিন্তু শিব লিঙ্গকে খুঁটিয়ে দেখলে তার দুটো ভাগ পাওয়া পায়। উপরের অংশকে বলা হয় লিঙ্গ। নিচের অংশ যোনিপীঠ।আর এ যোনীপীঠ হচ্ছে আদিমাতা পার্বতীর।

কথিত আছে, ঋষিরা একদা এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন সরস্বতী নদীর তটে। এখন, যজ্ঞ করলে তার ফল অর্পণ করতে হয় কোনও এক দেবতাকে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু না শিব- কাকে অর্পণ করা হবে এই যজ্ঞের ফল, তাই নিয়েই সমস্যায় পড়েন ঋষিরা। তখন তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন ভৃগু। তিন দেবতাকে পরীক্ষা করার জন্য তিনি হাজির হন কৈলাসে।

কৈলাসে গিয়ে ভৃগু দেখেন, শিবের কোলে বসে রয়েছেন পার্বতী। অন্তরঙ্গ অবস্থায় আদিপিতা আর আদিমাতাকে দেখে তিনি লজ্জা পান। কিন্তু, শিবের কোনও বিকার ছিল না। ভৃগুর সামনেই তিনি সঙ্গম করছিলো পার্বতীকে। তখন ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন ভৃগু। তাঁর যুক্তি ছিল, মহাযোগী হয়েও শিব যখন কামনা সংযত করেননি, তখন পৃথিবীতে তাঁর লিঙ্গেরই পূজা হওয়া উচিত। ভৃগুর কথা ব্যর্থ হয়নি। তার পর থেকেই পুরাণ মতে পৃথিবীতে শিবের লিঙ্গ পূজা হয়।



আরো কথিত আছে, কথিত আছে, একদা দূর্গার সাথে সঙ্গমকালে শিব এত বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন যে, তাতে দুর্গার প্রাননাশের উপক্রম হয়। দুর্গা মনে মনে শ্রীকৃষ্ণকে স্বরন করতে থাকেন, এমন সময় শ্রীকৃষ্ণ আর্ভিভূত হয়ে নিজ হস্তস্থিত সুদর্শন চক্রধারা আঘাত করল উভয়ের সংযুক্ত যৌনাংঙ্গ কেটে আসে। ঐ সংযুক্ত যৌনাঙ্গের মিলিত সংস্করনের নাম বানলিঙ্গ বা শিবলিঙ্গ যা হিন্দু সমাজের একটি প্রধান পূজ্য বস্তু এবং ঐ শিবলিঙ্গের পুজার জন্য বহু বড় বড় শিব মন্দির গড়ে উঠেছে। সেন রাজবংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন লক্ষ্মণ সেন। তিনি শিব ভক্ত পরায়ণ নৃপতি ছিলেন। রাজা লক্ষ্মণ সেন কর্তৃক বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে যশোর জেলার মুরলী গ্রামের জোড়া শিব মন্দির দুটি খুবই মনোরম।

হিন্দুরা শিবলিঙ্গ সৃষ্টির পিছনে নারী ও পুরুষ উভয়ের অবদানের কথা স্মরণ করেই শিবলিঙ্গের পূজা করেন । একটি সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী শিবলিঙ্গ শিবের আদি অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক এক আদি এবং অন্তহীন স্তম্ভের রূপবিশেষ।

কেউ কেউ মনে করেন, লিঙ্গপূজা ভারতীয় আদিবাসী ধর্মগুলি থেকে হিন্দুধর্মে গৃহীত হয়েছে। অথর্ববেদে একটি স্তম্ভের স্তব করা হয়েছে। এটিই সম্ভবত লিঙ্গপূজার উৎস। কারোর কারোর মতে যূপস্তম্ভ বা হাঁড়িকাঠের সঙ্গে শিবলিঙ্গের যোগ রয়েছে। উক্ত স্তবটিকে আদি-অন্তহীন এক স্তম্ভ বা স্কম্ভ-এর কথা বলা হয়েছে; এই স্কম্ভ চিরন্তন ব্রহ্মের স্থলে স্থাপিত। যজ্ঞের আগুন, ধোঁয়া, ছাই, মাদক সোমরস ও যজ্ঞের কাঠ বহন করার ষাঁড় ইত্যাদির সঙ্গে শিবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির যোগ লক্ষিত হয়। মনে করা হয়, কালক্রমে যূপস্তম্ভ শিবলিঙ্গের রূপ নিয়েছিল।

শিবমহাপুরাণের বিদ্যেশ্বরসংহিতা ভাগের তৃতীয় অধ্যায়ের পঁচিশতম শ্লোক,

উক্তং ত্বয়া মহাভাগ লিঙ্গ-বেরপ্রচারণম্‌।

শিবস্য চ তদন্যেষাৎ বিভজ্য পরমার্থতঃ।।

এখানে ব্রহ্মপুত্র সনৎকুমার ব্যাসদেবের শিষ্য সূতর কাছে শিবের লিঙ্গশরীর আবির্ভাবের কারণ এবং কিভাবে তা আবির্ভূত হয়েছে--তা জানতে চান।

তখন সূত বলে,

পুরাকল্পে মহাকালে প্রপন্নে লোকবিশ্রুতে।
অযুধ্যেতাং মহাত্মানৌ ব্রহ্ম-বিষ্ণু পরস্পরম্‌।।২৮
তয়োর্মানং নিরাকর্ত্তুং তন্মধ্যে পরমেশ্বরঃ।
নিষ্কলস্তম্ভরূপেণ স্বরূপং সমদর্শয়ৎ।।২৯
ততঃ স্বলিঙ্গচিহ্নত্বাৎ স্তম্ভতো নিষ্কলং শিবঃ।
স্বলিঙ্গ দর্শয়ামাস জগতাং হিতকাম্যয়া।।৩০

অর্থাৎ লোকবিখ্যাত পূর্ব্বকল্পের বহুকাল অতীত হইলে একদা ব্রহ্মা ও বিষ্ণু পরস্পর সমরাসক্ত হওয়ায় তাঁহাদিগের অভিমান দূরীকরণার্থ ত্রিগুণাতীর ভগবান্‌ মহেশ্বর, উভয় যোদ্ধার মধ্যস্থলে স্তম্ভরূপে আবির্ভূত হইলেন। পরে সেই স্তম্ভে স্বীয় লিঙ্গচিহ্ন নিবন্ধন জগত্রয়ের হিতকামনায় তাহা হইতে নির্গুণ নিজলিঙ্গ প্রকাশ করিলেন।

আবার সপ্তম অধ্যায়,

তুষ্টোহহমদ্য বাং বৎসৌ পূজয়াস্মিন্‌ মহাদিনে
দিনমেতং ততং পূণ্যং ভবিষ্যতি মহত্তরম্‌।
শিবরাত্রিরিতি খ্যাতা তিথিরেষা মম প্রিয়াং।।১০

অর্থাৎ অদ্য আমি এই মহৎ দিনে তোমাদিগের পূজায় পরম প্রীতিলাভ করিলাম, অতএব চিরকাল এই পবিত্র দিন শ্রেষ্ঠতম বলিয়া সমাদৃত হইবে এবং মৎপ্রিয় এই তিথি 'শিবরাত্রি' নামে জগতে খ্যাতিলাভ করিবে।সূত্র

বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সরস্বতী পূজার ইতিবৃত্ত !!


হিন্দু ধর্মমতে সরস্বতী বিদ্যার দেবী। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথিতে জ্ঞানপিপাসু বিদ্যার্থীরা সরস্বতী দেবীর অর্চনা করে থাকে দেবীর পুণ্য দৃষ্টি লাভের প্রত্যাশায়।

বাঙালির ঘরে ঘরে সারা বছর যে নানারকমের পালাপার্বণ লেগেই থাকে, তার মধ্যে অন্যতম এক অনুষ্ঠান। সরস্বতী পুজো আবার যত না বড়দের পুজো, তার থেকে অনেক বেশি ছোটদেরই পুজো। সরস্বতীকে আমরা বিদ্যার দেবী বলে জানি। সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের আশাভরসা তিনি, কারণ তিনি তুষ্ট থাকলেই ছাত্ররা ভালোভাবে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো ফল করবে, এটাই বিশ্বাস। তাই বেশিরভাগ স্কুলে, অনেকের নিজেদের বাড়িতেই সবাই ধূমধাম করে সরস্বতী পূজা করে।

শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা হয় সাধারণ পূজার আচারাদি মেনে। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপাচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়, যেমন অভ্র-আবির, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিষ, বাসন্তী রঙের গাঁদা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির উপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা বিংশ শতাব্দীতেও প্রচলিত ছিল। শহরে ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সরস্বতীর প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করতেন। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে সরস্বতী দেবী হলেও মেয়েরা অঞ্জলি দিতে পারত না। পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেত বস্ত্র পরিধান করে থাকে যা পবিত্রতার নিদর্শন। দেবীর আসন কে পুষ্পশোভামন্ডিত করে রাখা হয়। পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগ পর্যন্ত দেবীর মুখমন্ডল ঢাকা থাকে।লোকাচার অনুসারে ছাত্রছাত্রীরা পূজার আগ পর্যন্ত কূল খেতে পারে না। দেবীকে নতুন বছরের কূল দিয়ে তবেই কূল খায় ছাত্রছাত্রীরা।পূজার আগের দিন সংযম পালন অর্থাৎ সংযমের দিন মাছ-মাংস পরিহার করে নিরামিষ খাওয়া বাঞ্চনীয়। পূজার দিন লেখাপড়া নিষেধ থাকে। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, লেখনী-মস্যাধার, পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করা হয়। পূজার শেষে পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র-
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।।
এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।

প্রনাম মন্ত্র-
নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।

সরস্বতীর স্তব-
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারব‌ভূষিতা
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।।
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।

পাঠ করে পূজার কার্যাদি শেষ করা হয়। পরদিন সকালে ফের পূজার পর চিড়া ও দই মেশানো দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করে পূজা সমাপ্ত হয় ও সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।তবে সব মিলে এসব আচার-অনুষ্ঠানেও রয়েছে আনন্দ।

সরস্বতী শব্দের দুই অর্থ - একটি ত্রিলোক্য ব্যাপিনী সূর্যাগ্নি, অন্যটি নদী। সরস্‌ + বতী = সরস্বতী, অর্থ জ্যোতির্ময়ী। আবার সৃ ধাতু নিস্পন্ন করে সর শব্দের অর্থ জল। অর্থাৎ যাতে জল আছে তাই সরস্বতী। ঋগ্বেদে আছে ‘অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী', সম্ভবত সরস্বতী নদীর তীরেই বৈদিক এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির উদ্ভব।

সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী। সরস্বতী শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থে সরস+বতু আর স্ত্রী লিঙ্গে ‘ঈ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে সরস্বতী। তিনি বিদ্যাদেবী, জ্ঞানদায়িনী, বীণাপাণি, কুলপ্রিয়া, পলাশপ্রিয়া প্রভৃতি নামে অভিহিতা। তাঁর এক হাতে বীণা অন্য হাতে পুস্তক।

বৃহস্পতি হচ্ছেন জ্ঞানের দেবতা, বৃহস্পতি পত্নী সরস্বতীও জ্ঞানের দেবী। সরস্বতী নদীর তীরে যজ্ঞের আগুন জ্বেলে সেখানেই ঋষি লাভ করেছিলেন বেদ বা ঋগমন্ত্র। সুতরাং সরস্বতী জ্ঞানের দেবী হিসেবেই পরিচিত হয়েছিলেন এ ধরাতে। কালের বিবর্তনে সরস্বতী তাঁর অন্য বৈশিষ্ট্যগুলো হারিয়ে কেবল বিদ্যাদেবী অর্থাৎ জ্ঞান ও ললিতকলার দেবীতে পরিণত হলেন। সরস্বতী জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী। ঋগবেদে তিনি বৈদিক সরস্বতী নদীর অভিন্ন এক রূপ।

ঋগ্বেদে বাগ্দেবী ত্রয়ীমূর্তি - ভূ: ভুব: স্ব:, জ্ঞানময়ীরূপে সর্বত্রব্যাপিনী। বিশ্বভূবন প্রকাশ তারই জ্যোতিতে। হৃদয়ে সে আলোকবর্তিকা যখন প্রজ্বলিত হয়, তখন জমাট বাধা অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার যায় দূর হয়ে। অন্তরে, বাইরে সর্বত্র তখন জ্বলতে থাকে জ্ঞানের পুণ্য জ্যোতি।এই সবই সনাতনীদের বিশ্বাস কেবলমাত্র।

কেউ কেউ বলেন, মর্ত্য ধামে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে প্রথম বারের মতো শ্রীশ্রী সরস্বতী দেবী পূজার প্রচলন করেন।

নানা পূরান মতে বর্ণনা-

স্কন্দপুরাণে, ব্রহ্মা তাঁর কন্যা সরস্বতীর প্রতি দুর্ব্যবহার করলে শিব তাঁকে শরবিদ্ধ করে হত্যা করেন। তখন ব্রহ্মার পত্নী গায়ত্রী কন্যা সরস্বতীকে নিয়ে স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য গন্ধমাদন পর্বতে তপস্যা শুরু করেন। তাঁদের দীর্ঘ তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব ব্রহ্মার প্রাণ ফিরিয়ে দেন। সেই থেকে শিবের নির্দেশে গায়ত্রী ও সরস্বতীর তপস্যাস্থলে দুটি প্রসিদ্ধ তীর্থ সৃষ্টি হয়।

দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে, দেবী আদ্য প্রকৃতির তৃতীয় অংশে দেবী সরস্বতীর জন্ম। তিনি কৃষ্ণের জিহ্বাগ্র থেকে উৎপন্ন হয়েছেন। সরস্বতী বাক্য, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী;সকল সংশয় ছেদকারিণী ও সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িনী এবং বিশ্বের উপজীবিকা স্বরূপিনী। ব্রহ্মা প্রথম তাঁকে পূজা করেন। পরে জগতে তাঁর পূজা প্রতিষ্ঠিত হয়। সরস্বতী শুক্লবর্ণা, পীতবস্ত্রধারিণী এবং বীণা ও পুস্তকহস্তা। তিনি নারায়ণের অন্যতম পত্নী হয়েছিলেন। তারপর কৃষ্ণ জগতে তাঁর পূজা প্রবর্তন করেন মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে তাঁর পূজা হয়।

"শুক্ল যজুর্বেদ" অনুসারে, একসময় ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে যাওয়ার ফলে তিনি মেষ আকৃতি গ্রহণ করেন। সেসময় ইন্দ্রের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল স্বর্গের অশ্বিনীদ্বয়ের উপর এবং সেবা-শুশ্রুষার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ইন্দ্র সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ার পর তাকে মেষটি দান করেন।

মার্কণ্ডেয় পুরাণে, শ্রীশ্রীচণ্ডী উত্তরলীলায় শুম্ভ নিশুম্ভ নামক অসুরদ্বয়কে বধ করার সময় দেবীর যে মূর্তির কল্পনা করা হয়েছিল তা ছিল মহাসরস্বতী। এ মূর্তি অষ্টভূজা - বাণ, কার্মূক, শঙ্খ, চক্র, হল,মুষল, শূল ও ঘন্টা ছিল তাঁর অস্ত্র। তাঁর এই সংহারলীলাতেও কিন্তু জ্ঞানের ভাবটি হানি ঘটেনি,কেননা তিনি ‘একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়াকা মমাপরা' বলে মোহদুষ্ট শুম্ভকে অদ্বৈত জ্ঞান দান করেছিলেন।

সরস্বতীর বাহন হাঁস। তিনি এ বাহন ব্রহ্মার কাছ থেকে পেয়েছিলেন।তবে বৈদিক সাক্ষ্য থেকেই জানা যায় সিংহ ও মেষ সরস্বতী দেবীর আদি বাহন ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেবী দুর্গা সরস্বতী দেবীর কাছ থেকে সিংহ কেড়ে নিলেন আর কার্ত্তিক কেড়ে নিলেন ময়ূর। পরবর্তী সময়ে সরস্বতী দেবী হংসকেই তাঁর চিরস্থায়ী বাহনের মর্যাদা দিলেন।আর সরস্বতীর এ বাহন সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে সর্বত্রই তাঁর সমান গতি ঠিক যেমনভাবে জ্ঞানময় পরমাত্মা সব জায়গায় বিদ্যমান। হংস জল ও দুধের পার্থক্য করতে সক্ষম। জল ও দুগ্ধ মিশ্রিত থাকলে হাঁস শুধু সারবস্তু দুগ্ধ বা ক্ষীরটুকুই গ্রহণ করে, জল পড়ে থাকে। জ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রেও হংসের এ স্বভাব তাৎপর্য বহন করে।

শুধু বৈদিক যুগেই নয়, পরবর্তীকালে মহাভারত, পুরাণ, কাব্যে পূতসলিলা সরস্বতীর মহিমা বর্ণিত হয়েছে। সরস্বতী নদীর উৎপত্তিস্থল ছিল হিমালয়ের সিমুর পর্বতে, সেখান থেকে পাঞ্জাবের আম্বালা জেলার আদবদ্রী নামক স্থানে সমভূমিতে অবতরণ করেছিল। যে প্রসবণ থেকে এই নদীর উৎপত্তি তা ছিল প্লক্ষ্ণাবৃক্ষের নিকটে, তাই একে বলা হতো প্লক্ষ্ণাবতরণ। ঋগ্বেদের যুগে গঙ্গা যমুনা ছিল অপ্রধান নদী, সরস্বতী নদীই ছিল সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়। এর তীরে ছিল প্রসিদ্ধ তীর্থভূমি।

বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে তাঁকে 'সকলকলাত্মিকা' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই যখন তাঁর মূর্তি তৈরীর প্রশ্ন আসল, তখন কলাবিদ্যার প্রতীক হিসেবে তাঁকে একটা বীণা দেওয়া হল। বিখ্যাত তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ সমস্ত শাস্ত্র ঘেঁটে সরস্বতীর যে ছয়টি ধ্যানমন্ত্রের উল্লেখ করেছেন, তাতে দেবীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

১) তাঁকে তুলনা করা হয়েছে কুন্দ, চন্দ্র ও তুষার অর্থাৎ বরফের সঙ্গে। মানে তাঁর বর্ণ এদের মত শুভ্র; সঙ্গে তাঁর পোষাক সাদা, তিনি বসে আছেন সাদা পদ্মফুলের উপর। এমনকি তাঁর বাহনও শ্বেতহংস।

২) বেশির ভাগ জায়গায় তিনি চতুর্ভুজা, পদ্ম, বীণা, বই, অক্ষমালা, কমণ্ডলু ও বরাভয় মুদ্রায় তাঁকে সাজানো হয়েছে।

৩) তিনি ত্রিনয়নী। এই তন্ত্রশাস্ত্রেই কোথাও তাঁকে দ্বিভুজা বলেও দেখানো হয়েছে। সরস্বতীর এক নাম সারদা। সাধারণতঃ তাঁর একটাই মুখ হলেও এই নামের পূজাতে তাঁর পাঁচটা মুখ এবং দশটা হাত।

বিভিন্ন পুরাণে সরস্বতীর রূপ বর্ণনায় শিবের মত মাথায় জটা ও কপালে চাঁদ দেখা যায়। আজকাল আমরা যেসব সরস্বতী মূর্তি দেখি তা শিল্পীরা এইসব বর্ণনাকে আশ্রয় করে মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরী করে থাকেন।

বি.দ্রঃ প্রখর জ্ঞানকোষ আইস্টাইন সরস্বতীর পূজা না করেও মেধা-মননে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতমদের একজন হয়ে প্রমান করেছিলেন বিদ্যার্জনে সরস্বতীর ভূমিকা শূন্য।--আরজ আলী মাতু্ববর

সোর্স ঃ ইন্টারনেট