বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

লাশের উপর দাঁড়িয়ে নৃত্য

গত দুই বছর আগে যখন ওয়াশিকুর বাবুকে হত্যা করা হলো,তখন কত জনই কত কিছু বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মায়া কান্না শুরু করলো।মনে হয়েছিলো,বাবুর মৃত্যুতে শুধু তার পরিবার বা অতি নিকট আত্মীয়রাও না, তার থেকেও অনেক বেশী কষ্ট পেয়েছিলো বাবুর ফেসবুক বন্ধুরা।সবাই আবেগ তাড়িত হয়ে নানা ভাবেই তাদের আবেগ প্রকাশ করেছে।এবং কি অনেকেই এমনই আবেগে আবেগান্বিত হয়েছিলো যে (কয়েকজন মেয়ে),বাবুকে নিজের বিএফ বলে পরিচয় দিলো,তারপর তাদের কিভাবে পরিচয়,কোথায় দেখা ইত্যাদি ইত্যাদি।এসব দেখে যে কেও আরো বেশী আবেগান্বিত হয়ে মেয়েগুলোকে কি স্বান্তনাবানী ফেসবুক বন্ধুদের এবং অনেকেই সান্তনা দিয়ে বলে "আপু আপনাকে রিকু দেওয়া হয়েছে দয়া করে এড করে নিবেন"।আবার অনেকের সাথে ইনবক্সে কথা হয়েছে,দেখা করতে চেয়েছে,কার সাথে কি নিয়ে কথা হয়েছে লাস্ট ইত্যাদির স্ক্রীনশট ফেসবুকে পোস্ট করেও অনেকেই নিজের আবেগ ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলো।তবে সবথেকে বেশী ভালো লেগেছিলো একটি মেয়ের গল্প এবং বাবু আর তার মাঝের প্রেম কাহিনী।

তাদের প্রেম কাহিনীর ধরণটা এমন ছিলো অনেকটাই যে, বাবু আর মেয়েটার মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হতো,তারা একে অপরের নানা কথা শেয়ার করতো মানে ফেসবুকে চ্যাট করতে করতে যেভাবে ভালো পরিচয় বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। যাই হোক মূল কথায় ফিরে আসি,মেয়েটি তখন সবে মাত্র ইন্টার পরীক্ষা দিছে বা ২য় বার বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশনের চেষ্টা করছে।কিন্তু মেয়েটা খুব হতাশায় ভোগে কারণে বা অকারণে।একদিন মায়ের উপর রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে টিএসসিতে চলে যায় আর বাসায় না ফিরার চিন্তা করে।তারপর সেখানে বসে বসে বাবুকে ফোন দিয়ে বলে সে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরছে আর বাড়িতে ফিরতে চায় না।বাবুকে ওকে ফোনে শান্ত করার চেষ্টা করে এবং অফিস শেষ করে তার সাথে দেখা করবে এবং কিছু একটা ব্যবস্থা করবে বলে জানায়।এবং এক সময় বাবু তার কাজ শেষ করে মেয়ের কাছে ছুটে আসে।তারপর তারা এক সাথে আড্ডা এবং মেয়েকে বুঝিয়ে রাতে তার বাড়িতে দিয়ে আসে।মেয়ের মা খুব খুশী তার মেয়ে ফিরে এসেছে এবং মেয়ে ছেলেটির সব কথা খুলে বলে।তখন মেয়ের মা বলে,এই ছেলে না হয়ে যদি অন্য ছেলে হতো মানে একটু অন্য টাইপের তাহলেই একটা দূর্ঘনা ঘটে যেত পারতো বলে আশংকা প্রকাশ করে।এ দিক দিয়েও ,মেয়ের মনে হালকা প্রেমের বাতাস লাগে এবং তারা এক সময় প্রেমে ঝড়ায়।তাদের খুব ভালো সম্পর্ক চলতে চলতেই ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হয় বাবুকে।আর তখন সেই মেয়ের থেকে কে বেশী শোকে থাকতে পারে বলে মনে হয় না।তারমধ্যে বয়সটাও তখন আবেগময় ছিলো মেয়ের জন্য।

কিন্তু হায়! সেই আবেগ! সেই ভালোবাসা!......!

সবই ধান্ধারে ভাই, এতক্ষন যা বলছিলাম এখন তার বিপরীত বিবেচনা করতে গেলে।এখন আর তার বাবুর কথা মনে নাই,বাবুকে নিয়ে কোন মায়া কান্নাও নাই,বাবুকে নিয়ে কোন গল্পও নাই।সবই ছিলো এক ধরনের ধান্ধা এবং বাবুর নাম বেচে নিজে জাতে উঠার চেষ্টা।মেয়েটার সেই সময়ে এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ৩০০০ হাজার ফলোয়ার হয়ে যায়।তারপর একদিন দেখি মেয়েটা একটা পোস্ট দিছে এখন তার ফলোয়ার সংখ্যাও ৫০০০ ছাড়াইছে।এখন আর যা ইচ্ছা তাই লিখে মনের ভাব প্রকাশ করা যাবে না,সব কিছুই ভেবে চিনতে করতে হবে।হুম মেয়েটা এখন সবকিছু ভেবে চিনতে করে এখন তার ফলোয়ার ৮০০০+। ভেবে চিনতে করা মানে এই না যে,আগের মত সারাদিন স্ট্যাটাস দিবে তা না কিন্তু।হয়তো অন্য কিছু চিন্তা এবং যা তা লিখবেনা।আগে পোস্টে চুদানী,খাঙ্কির পোলা এসব থাকতো এখন আর তা থাকে না।অনেকটা ভদ্র মেয়ে,ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো বিষয় নিয়ে পড়তেও আছে ।তার সব কিছুই ঠিক থাকলেও আজ হয়তো আর তার বাবুর জন্য মায়া কান্না করার সু্যোগ নাই।বাবু নামে কেও ছিলো এটাই হয়তো তার এখন স্মৃতিতে নাই।কারণ তখন বাবুর জন্য দীর্ঘদিন হ্যাশট্যাগ, নো জাস্টিস ইন বিডি,কলম চলবে কত কিছু লিখে পোস্ট করতো আর কান্নার ইমো ব্যবহার করে ফেসবুকে চোখের জল দিয়ে বন্যা করে ফেলতো।সেই মেয়ের ফেসবুক মায়া কান্নার কথা মনে পরলো আমার বাবুর মৃত্যু দুই বছরপূর্ত্তির দিনে।তাই সেই খেয়াল বশত আজ আবার সেই মেয়ের টাইম লাইনে গেলাম,সকাল থেকে এ পর্যন্ত তার ওয়ালে প্রচুর আমপাতা,কাঠাল পাতা শেয়ার হলেও কলম চলবে বলে যে ধরণের লিখা চালিয়ে যাবার কথা ছিলো তা অনেক আগ থেকেই হারিয়ে গেছে অতীত হয়ে।শুধু তাই না,আজ বাবুর জন্য কোন পোস্ট দেখতে পেলাম না তার ওয়ালে।কোথায় হারিয়ে গেল সেই কান্নামাখা ফেসবুক।মাত্র দুই বছর আগে এতো কান্না আর এখন আমপাতা ,কাঠালপাতা শেয়ার করে!

সবই ছিলো ভাই নিজের পরিচিতি এবং একটা প্লাটফর্ম নেবার ধান্ধা বাবুর লাশের উপর দাড়িয়ে।আর মেয়েটা সফল।হেরে গেছে শুধু মুক্তচিন্তার মানুষগুলো,যাদের লাশের উপর দাঁড়িয়ে সুযোগ সন্ধানীরা নৃত্য করে আজ জাতে উঠে গেছে।
#NO_JUSTICE_IN_BD.

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

নারী খেকো ফেসবুক সেলিব্রেটি

মেয়েদের যদি কোন সাধারণ ছেলে ইনবক্স করে তাহলে তারা বিরক্ত হয়।--উফ অসহ্য

আর যখন সেলিব্রেটি নক করে,ভাইয়া...আমার যে কি ভালো লাগছে।--উফ অসাম

যখন কোন সাধারণ ছেলে ইনবক্সে কথা বলার পর নাম্বার চায় তখন ছেলে হয়ে যায় লুচ্চা।--উফ বিরক্তিকর

আর যখন সেলিব্রেটি ইনবক্সে কথা বলার পর নাম্বার চায় তখন, ভাইয়া আপনার নাম্বার দেন আমি ফোন দিচ্ছি।--উফ ফ্যান্টাসটিক

যখন কোন সাধারণ ছেলে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দেয় তখন ছেলে হয়ে যায় ইতর,বদামাইশ,ধান্ধাবাজ,নারীখেকো ইত্যাদি ইত্যাদি।--উফ ছাগলামী

যখন কোন সেলিব্রেটি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মেয়েদের ভিডিও ফোন দেয়,হুম ভাইয়া কেমন আছেন,জানো ভাইয়া আমি তোমার অনেক বড় ফ্যান,তোমাকে যে আমার কি ভালো লাগে বলে বুঝাতে পারবো না।ভাইয়া তোমার ওই লিখাটা,কবিতাটা,ছবিটা,গানটা আরো কত্তকি যে আমাকে কাছে টানে।উফ ভাইয়া,বুঝাতে পারবো না তোমাকে।তারপর সেলিব্রেটি পুরুষ-আচ্ছা আপু তোমার মুখটা একটু দেখি।

-না ভাইয়া!

-আরে দেখাও না।

-হুম,দেখছ?

-হুম,এবার একটু মাফলার সড়াও।

-হুম,সড়াইছি, দেখা যায়?

-হুম,এবার উড়নাটা সড়াও।

-হুম,সড়াইছি।

-এবার তোমার জামাটা একটু নিচে নামাও।😘

-না!

-না,নামাও একটু প্লিজ লক্ষীটি।

-না,ছি: ভাইয়া তুমি এমন!

-ওকে নামাতে হবে না,টুট টুট।

তারপর আবার ইনবক্সে,সেলিব্রেটি,

-স্যরি,আসলে আমি ড্রাংক ছিলাম।

-তাই বলে এমন!

-আরে বাবা বললামতো স্যরি।আর জীবনেও এমন হবে না।

-ওকে,ঠিক আছে।সত্যি আর যেন না হয়।

-হুম,গড প্রমিজ হবে না।

-মনে রেখ কিন্তু কথাটা।

-ঠিক আছে।

দুইদিন পর আবার অন্য মেয়ের সাথে....

ধরা না খাইলে এভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকে আর যখন ধরা খায় জায়গা মত তখন.....সেলিব্রেটি,

আমার মা/বাবা অসুস্থ,আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র,আমাকে ফাসিয়ে মাফ চাওয়ানো হচ্ছে,আমি মরে যাব,সুইসাইড করবো,আমার এম্বিশন সব ধুলিসাৎ হয়ে যাবে বলে না বাহনা শুরু।কিন্তু কে শুনে কার কথা,স্ক্রীনশট বেরিয়ে পরে।কিন্তু সমস্যা হলো গিয়ে সমস্যা না,দুইদিন পর সব ভুলে সেলিব্রেটিকে আবার মাথায় তুলে নাচাবো আর তাকে সাপোর্ট দিবো।আর বাদ দেন ভাই,কে কেমন তা জানা আছে,মেয়ে সাড়া না দিলে সেতো আর এমন বলার সাহস পেতো না।অত:পর ভক্তকুলের ব্যাপার বুঝে আবার অনলাইনে বিচরন অত:পর নতুন মাইয়াকে ফাদে ফালিয়ে আবার নাটক শুরু ধরা পরলে আর না পরলেতো বাদশাই।তবে কথায় আছে না,চোরের দশদিন আর গীরস্থের একদিন।

সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭

একটি ভাষন একটি জাতির ইতিহাস ।

বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস “মার্চ মাস”।কারণ ’১৯৭১’ সালের এই মার্চ মাসেরই ২৫ তারিখ গভীর রাতে, মানে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছিলো।শুধু তাই না, ২৫ মার্চ গভীর রাতে, এদেশের নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী।আরও একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আছে এই মাসে। সেটি হচ্ছে- ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।

কিন্তু ৭ মার্চের প্রেক্ষাপট হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি।যদি অন্তত ১৯৪৭ সালের পর দেশ বিভাগের পর থেকে পাকিস্তান শাসনকাল ধরি, তাতেও প্রায় দুই যুগের ইতিহাস।পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর থেকেই, পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের বাঙালিদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছিলো। যেন আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো দামই ছিলোনা তাদের কাছে।১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়, কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান।পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক থেকে পার্থক্য ছিল প্রচুর।১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগণের মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি করে।দীর্ঘ প্রায় চার বছর আন্দোলনের ফসল হিসেবে ১৯৫২ সালে সেটি পরিণতি লাভ করে শেষ পর্যন্ত এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।কিন্তু তার জন্য যথারীতি রাজপথে দিতে হয়েছিল অনেক রক্ত।

১৯৫৪ সালে ১০ই মার্চ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে।কিন্তু পাকিস্তান শাষকগোষ্ঠী বাঙালির এই আধিপত্য মেনে নিতে পারেনি।মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ৩০শে মে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।

১৯৫৯ সালে সমগ্র পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে আসলে বাঙালিদের মধ্যে বিপুল সাড়া দেখা দেয়।অতএব এই নির্বাচনের ফলাফল চিন্তা করে কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।একই সময়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের কৌশলে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যেও বিরোধ সৃষ্টি করে।এই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করে।১৯৬২ সালে সামরিক শাসন তুলে নেওয়ার পর ছাত্র সমাজ পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে এই সময় দেশব্যাপী শাসন তুলে নেয়ার পর ছাত্রদের এই আন্দোলন নতুন করে গণ-আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।

১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা ‘কপ’-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম অবহেলা ও ঔদাসীন্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোচ্চার হন। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় রাজনীতির গতিধারা নিরূপণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন।ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেলরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই ফেডারেলরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ন স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয়দফা কর্মসূচীর ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব।পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয়।

১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বুঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে ৮ মে, ১৯৬৬ সালে দেশ রক্ষা আইন অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়। এরপর ৭ জুন, ১৯৬৬ এ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সারা দেশে ধর্মঘট ডাকে। ৭ জুন যে ধর্মঘট ডাকে সেই আন্দোলনকারীদের উপর পাকিস্তানী সরকার নির্মম ও নিষ্ঠুর অত্যাচার চালায়। এই দিন প্রায় ১০ জন নিহত হয়। এরপর কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের প্রায় ৯৩৩০ জন কর্মী গ্রেফাতার হন।

শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর ১৮ জানুয়ারি, ১৯৬৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হলেও ঐদিন তার বিরুদ্বে আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করা হয়। এই মামলার জন্য তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুসহ মোট ৩৫ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়। এদের ভিতর প্রায় সকলে বাঙ্গালী সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। এতে করে পূর্ব পাকিস্তানের সকল প্রভাবশালী লোকদের পাকিস্তান শাষকগোষ্ঠী আটক করে বাঙ্গালীদের একদম নিস্তেজ করে ফেলে।

১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রকৃষ্ট হতে শুরু করে। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকাস্তানকে বিচ্চিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দায়ের করা হয়। ১৯৬৯-এ আইয়ুব খানের পতন হয় তবে সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে।সামরিক সরকারের অধীনে ১৯৭০-এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনেঅংশ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জ্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনৈতিকদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে বিরত থাকন।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবেরকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু’জন প্রধানমন্ত্রী। “এক ইউনিট কাঠামো” নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং কেন্দ্রের সামরিক-বেসামরিক আমলাচক্র চঞ্চল হয়ে ওঠে। তাদের দুরভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষও উদাসীন ছিল না। বঙ্গবন্ধুও বুঝতে পারছিলেন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কুচক্রী মনোভাব। ইয়াহিয়া-ভুট্টো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে সমস্ত জানুয়ারি মাসটিকে কাজে লাগান। ১২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে। তিনি ছয় দফার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চান। অতি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি সন্তুষ্ট হন না। এরপর জানুয়ারির শেষ সপ্তায় ভুট্টো আসেন তাঁর দলের নেতাদের নিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে ছয় দফা বিষয়ে আলোচনার জন্য। তাঁর কাছে ছয় দফা বিচ্ছিন্নতাবাদী এজেন্ডা। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া-ভুট্টো দীর্ঘ আলোচনা করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া এক ঘোষণায় ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।কিন্তু ১ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেল এই সিদ্ধান্ত। সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয় এবং ডাক দেওয়া হয় হরতালের। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।

২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ. স. ম আবদুর রব। সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফারেল আহমদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং নূরে আলম সিদ্দিকী। বিশাল এই সভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়।

৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে- আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দিবেন। তাদেরও যদি হত্যা করা হয়, যিনি জীবিত থাকবেন, তিনিই নেতৃত্ব দিবেন। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে- অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” বঙ্গবন্ধু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ৭ মার্চ রোববার রেসকোর্স ময়দানে তিনি পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন।এবং ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালনের আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে তাঁরই নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে ইতিপূর্বে বেতন দেয়া হয়নি সেসব অফিস বেতন প্রদানের জন্য খোলা থাকে।

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে মুক্তির বাণী শোনার জন্য (৭ মার্চ,১৯৭১) সেদিন সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ দলে দলে রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষের রেসকোর্স ময়দান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, রমনা পার্কসহ আশপাশের এলাকা ছিল পূর্ণ। মঞ্চের সামনে নারীদের বসার জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে বাঁশ। পোস্টার, ফেস্টুন, ফানুস সঙ্গে ‘জাগো জাগো-বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল সেদিনকার রেসকোর্স।বঙ্গবন্ধু বিকাল আনুমানিক ৩টা ২০ মিনিটে মঞ্চে উঠেছিলেন।৫ দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।একাত্তরের ৭ মার্চ ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি মাহেন্দ্রক্ষণ।আন্দোলন-সংগ্রামের পরিণত ফসল। বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, যখন বাঙালি জাতি পরাধীনতার দীর্ঘ প্রহর শেষে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল তখনই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন তার ঐতিহাসিক ভাষণে।এ ভাষণের স্তরে স্তরে ছিল এদেশে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের পরিসমাপ্তির ঘোষণা ও বিবরণ।সেই সঙ্গে ছিল পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন দেশের স্বাধীনতা অভ্যুদয়ের বার্তা।পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন এই বলে, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।“
জয় বাংলা।

রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্টপতি আব্দুল হামিদের ভাষনকে কেন্দ্র করে মিথ্যা গুজব

সকাল থেকেই “প্রথম আলো” নিউজ লিঙ্কের কিছু অংশ অনলাইনে কিংবা ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে নিয়ে এবং কিছু অতি উৎসুক ফেসবুকাররা তা বিতর্কিতভাবে ভাবে বিভিন্ন অনলাইন পেইজ অথবা ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট করে নিজেকে জ্ঞানীর ভাণ্ডার হিসাবে দাবিতেই ব্যস্ত।যাই হোক,যে কথাটি নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা সরাসরি তুলে ধরি।তারপর না হয় এক লাইনে উত্তরটা দেওয়া যাবে। "মনে ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। ভর্তিও হয়ে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। ভর্তির কাজকর্ম শেষে গেলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। বঙ্গবন্ধু সব শুনলেন। তারপর জানিয়ে দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পড়তে হবে সেন্ট্রাল ল কলেজে। আর রাজনীতি করতে হবে কিশোরগঞ্জে। সেন্ট্রাল ল কলেজে যেহেতু নিয়মিত ক্লাস না করলেও পরীক্ষা দেওয়া যায়, সে কারণেই এ বিকল্প চিন্তা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিপুল আগ্রহ তাঁর। তাই নেতাকে একটু মিথ্যার আশ্রয় নিয়েই বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সব টাকা শেষ। কীভাবে আবার সেন্ট্রাল ল কলেজে ভর্তি হবেন। বঙ্গবন্ধু ডাকলেন পাশের রুমে থাকা তোফায়েল আহমেদকে। পাঞ্জাবির পকেট থেকে তিনটি ১০০ টাকার নোট বের করে তোফায়েলের হাতে দিয়ে বললেন, ‘ওকে সেন্ট্রাল ল কলেজে ভর্তি করিয়ে, বইপুস্তক কিনে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দে।’ নেতার ইচ্ছাই নিজের ইচ্ছা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে আবদুল হামিদ সেন্ট্রাল ল কলেজের ছাত্র হলেন।"

কিন্তু যে বিষয় টুকু খুব সতর্কভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে তা তুলে দেওয়া হলো, “কোনোরকমে ম্যাট্রিক পরীক্ষার বৈতরণী পার হলেন, তৃতীয় বিভাগ নিয়ে। এইচএসসিও পার হয়ে গেলেন কীভাবে কীভাবে। বিএ পরীক্ষায় পেলেন রেফার্ড। কিন্তু বিএ পাস না করলে মান-ইজ্জত থাকে না। ইজ্জত রক্ষার জন্য জনসভায় একদিন ঘোষণা দিয়ে ফেললেন, যত দিন আইয়ুব সরকারের পতন হবে না, তত দিন তিনি পরীক্ষা দেবেন না, বিএ পাস করবেন না। এর মধ্যে আইয়ুব খানের বিরোধিতা করার দায়ে জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে তাঁর। রাজনীতিতেই ঢেলেছিলেন মন-প্রাণ। কীভাবে ঢেলেছিলেন তার একটা প্রমাণ দেওয়া যেতে পারে। পরে অবশ্য বিএ পাস করেন আইয়ুবের পতনের পরই। “

এখন কথা হলো,আমরা এতোটাই শিক্ষিত হয়ে গেছি যে, কথায় কথায় ভুল ধরা এবং একজন আরেকজনের পিছনে লেগে নিজের দাবিকে সত্য বলে প্রমানিত করতেই ব্যস্ত।একটু মাথা খাটালেই যে,নিজেই নিজের উত্তর পাওয়ার সম্ভবনা থাকে তা কখনো ভেবে দেখার চেষ্টা করবে না।বরং এক প্রকার জোর করেই অনৈতিক মিথ্যাকে সত্য বলে প্রমান করতে ব্যস্ত।আর একজন যখন এই ভুল করে, বিশেষ করে ফেসবুকে তা যখন অন্যএকজন উৎসুক ফেসবুকার দেখবে তখনই সেও চিন্তা না করে সরাসরি কপিপেস্ট মেরে কিংবা শেয়ার করে ভাইরাল করে দিবে।যাই হোক এতো কথা না বলে এবার আসল কথাটাই বলে ফেলি, “যোগ্যতা না থাকায় ঢাবিতে পড়তে পারি নাই ,কিন্ত আজ আমি ঢাবির চ্যান্সেলর , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে ৫০তম সমাবর্তনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি ফরম না পাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।“
প্রথম আলোর যে নিউজ লিঙ্কটা শেয়ার হচ্ছে এবং ৫০তম সমাবর্তনে বক্তব্য দিতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি ফরম না পাওয়ার যে গল্প শুনিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেটাও যেমন সত্য,ঠিক তেমনি সত্য হতে পারে প্রথম আলোর শেয়ার লিঙ্ক।কারণ, তিনি বিএ ভর্তি হওয়ার জন্য কিংবা ভর্তি ফরম উঠানোর যোগ্য ছিলেন না, আর তিনি বিএ পাস করে আইনে ভর্তি হওয়ার কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।আপনি যদি নিউজ লিঙ্ক দুইটাই পড়ে থাকেন তাহলে সহজেই উত্তর পেয়ে যাবেন।তবে অনলাইনে যেভাবে ভাইরাল করা হচ্ছে তা শুধু প্রথম আলো নিউজ লিঙ্কের ৬ নম্বর প্যারাটুকু।এতে সহজেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে সাধারণ মানুষদের মাঝে।কিন্তু এই বিভ্রান্তিটা মূলত উদ্দ্যেশ্যপ্রনোদীত এবং একজন মানুষকে মিথ্যার গুজব ছড়িয়ে ছোট করে উপস্থাপন করার জন্যই করা হচ্ছে।আপনার যদি সাধারণ জ্ঞানও থাকে তাহলে যে দুইটাই ভিন্ন জিনিস এবং ভিন্নভাবে বুঝানো হয়েছে তা আপনি অতি সহজেই বুঝতে পারবেন এবং যদি আপনি প্রথম আলোর আর্টিকেলটা পড়ে থাকেন।সেহেতু এটাকে মিথ্যা বলেছে বলে দাবিটা পুরাই বোকামী। আবার অনেকেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে রাষ্ট্রপতির কথার তাল মিলিয়ে ঘুলপাক খাইয়া নিজে নিজেই চন্দ্রজয় করেছেন।