সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৯

সারেগামাপা-নোবেল-ভারতবিদ্বেষী


সারেগামাপাএকটি অত্যন্ত জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো, অনেক প্রতিশ্রুতিমান শিল্পীর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন এই শো। বিগত ১১ মাস ধরে চলা জি বাংলা সারেগামপা ২০১৯-এর সমাপ্তি হল। এদিন ৬ জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে এটাই স্বাভাবিক। প্রীতম, অঙ্কিতা, গৌরব, স্নিগধজিৎ, সুমন, নোবেল এরা প্রত্যেকেই এদিন নিজেদের সেরাটা উজার করে দিয়েছে। ফলে সেরার শিরোপা কার হাতে তুলে দেওয়া হলো এবং অমুক না হয়ে তমুক হলো না কিংবা তমুক প্রথম না হলো তাই বলে কি দ্বিতীয় না হয়ে একেবারে তৃতীয় হয়ে গেলো এ নিয়ে আমাদের মাঝে বিভিন্নজনে বিভিন্ন মতামত দিবে।যেহেতু দর্শকরা কেউ সঙ্গীৎ বিশেষজ্ঞ না।আমিও সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ না আমিও, সবার মত দর্শকসারির মানুষ।
আর এই দর্শকসারির মানুষরা সাধারণত অন্ধ হয়।এরা নিজের পছন্দসই মানুষ ছাড়া সর্বোচ্চ স্থানে অন্য কাউকে ভাবতে পারে না।বলছিলাম সারেগামাপা খ্যাত মাইনুল আহসান নোবেলের কথা।ইতিমধ্যে নোবেল এপার ওপার বাংলার বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে দর্শকদের মন জয় করে সারেগামাপা থেকেই।

গতকাল (২৮ -৭-২১৯)শেষ হয়েছে সারেগামাপা ২০১৯।নোবেল তৃতীয় স্থান অর্জন করায় বাংলাদেশের মানুষের মনে বাঁধে বিপত্তি।কেউ বলছে নোবেল শুধু মাত্র বাংলাদেশী হবার কারণেই তাকে প্রথম বানানো হয় নাই।আবার যারা রাজনৈতিক সচেতন তারা বলছেন, নোবেলের গান নির্বাচন ভুল ছিলো ।কারণ হিসাবে তারা বলছে, ফাইনালে গেয়েছে "আমার সোনার বাংলা" এই গানে উল্লেখ আছে হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী আর শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নাম।
এই দুই জন ব্যক্তি যতই বাংলাদেশে জনপ্রিয় ব্যক্তি হোন না কেন ওপার বাংলায় তথা পশ্চিম বাংলায় খুবই বিতর্কিত ব্যক্তি। কারন দেশ ভাগের জন্য এই দুইজন ব্যক্তিকে দ্বায়ী করা হয়। বিশেষ করে গ্রেটার ক্যালকাটা কিলিং/ নোয়াখালীর গনহত্যার জন্য প্রধান অভিযুক্ত অবিভক্ত বাংলার ততকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী।উনার নিস্ক্রিয় ভুমিকার কথা পশ্চিম বাংলার কেহ ভুলেনি। আর লাহোর প্রস্তাব করে সেখানকার মানুষের কাছে বিতর্কিত হয়েছিলেন ফজলুল হক।

তাছাড়া আবার অনেকেই বলছে, এই গানটা নোবেল যখন বাংলাদেশে গেয়ে কাভার করে একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে গানটা বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংগীত এর থেকে হাজার গুন বেশী বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে।তখন অনেকেই চরমভাবে বিরক্ত হয়েছিল এই সাক্ষাৎকারের জন্য।এতে ভারতের মানুষের রবীন্দ্রানুভুতিতে আঘাত লাগছে।এই কারণেও তাকে ইচ্ছা করেই তৃতীয় বানানো হতে পারে।

আবার অনেকে বলছেন টিআরপি বাড়ানোর জন্য কিংবা বাংলাদেশের দর্শক ধরে রাখার জন্যই কেবলমাত্র নোবেলকে এতদিন ধরে রাখা হয়েছিলো।অর্থাৎ ঘুরে ফিরে সন্দেহ এবং শেষে ভারত বিদ্বেষী কথা ঢেলে বিষাদাগার করা।

কিন্তু সত্যি কি তাই? আমার তা মনে হয় না যে, নোবেল শুধু মাত্র বাংলাদেশী হওয়ায় ,তার নির্বাচিত গান কিংবা রবীন্দ্রানুভুতিতে আঘাত পাওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে।আমার কাছে দুইটা কারণ আছে।সেই কারণ দুইটার আগে বলে নেই, আমরা যা বলতাছি সবই ভারত বিদ্বেষ থেকে।আর কিচ্ছুনা।নিজেকে আগে স্বতন্ত্র অবস্থানে নিয়ে যান তারপর এইসব কথা বলেন দেখেন আপনার কথা সাথে আপনি মিলাতে পারবেন না।মনে এতোটাই ভারত বিদ্বেষী জিইয়ে রাখি যার কারণে আমরা যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছি আর বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে ভারত বিদ্বেষী কথাবার্তা সাথে গালাগালি। কিন্তু এইটা ভুলে গেলে চলবে না এই নোবেলকে সবার মাঝে পরিচয় করিয়ে দিছে কিন্তু ভারত সারেগামাপা দিয়েই।এর আগে তাকে কেউ চিনে নাই।শুধু তাই না, বাংলাদেশে হওয়া এক প্রোগ্রাম থেকে নোবেল বাদ পড়ে যায় আর কলকাতায় গিয়ে সে বাজিমাৎ করে।তারপরেও আমরা কতসুন্দরভাবে অবলীলায় বলে দিচ্ছি, নোবেল শুধু মাত্র বাংলাদেশী হবার কারণেই তাকে তৃতীয় বানানো হয়েছে! এই নোবেলকে ভারতের জি বাংলায় দেখা না গেলে আজকের কয়জন তাকে মূল্যায়ন করতে পারতেন? কতজন মূল্যায়ন করতে পারতেন সেটাতো আগেই বুঝা গেছে যখন সে বাংলাদেশের প্রোগ্রাম থেকে বাতিল মাল হয়ে যায়।যারে নিজের দেশের মিডিয়া পুছে না তাকেই কিন্তু ভারত সেলিব্রেটি বানাইছে। এসব অন্তত একটু বলেন।আমরা কতটা অকৃতজ্ঞ জাতি হলেই কেবল এইভাবে ভারত বিদ্বেষী কথা বলতে পারি একটু ভাবুন।পান থেকে চুন খসলেই দোষ হয়ে যায় ভারতের।এইভাবে কারা দোষারুপ করে সব কিছুতে জানেন? নিজেদের কিছু করার, মূল্যায়ন করার যাদের সক্ষমতা নাই।অথচ দেখুন, ভারতই তাকে তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমার প্লে-ব্যাক করার সু্যোগ দিয়েছে সারেগামাপা চলাকালীন সময়ে।আর কত সুযোগ চান আপনারা? এতোটা ভারত বিদ্বেষী পুষে রাখেন যার কারণেই আপনারা এমন ভাবে চিন্তা করতে পারেন।দিলেই ভালো না দিলেই খারাপ এই কালচার থেকে আমরা যত তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে পারবো ততোই ভালো।

আপনার একটু অতীত মনে করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, আবুহেনা রনি, সজল, শাওন, কাজুদের কথা মনে আছে? যারা ভারতের মিরাক্কেল থেকে সেরা হয়ে দেশে এসেছিলো? তখনতো আপনারা বলেন নাই, বাংলাদেশী হবার কারণে, টিআরপি বাড়ানোর জন্য কিংবা বাংলাদেশী দর্শক ধরে রাখার জন্যই তাদের বিজয়ী মুকুট পড়ানো হয়েছিল!যাউজ্ঞা সেই কথা বাদ দেই।আপনারা অতীত ভুলে যান এবং কৃতজ্ঞতা বলতে যেটা থাকা দরকার এটা আমাদের কোনদিন ছিল না।তাছাড়া ৭১ আমাদের ভারত সাহায্য করার পরেও আমরা বলি তাদের লাভের জন্যই সাহায্য করেছিল এবং যে পরিমান ভারত বিদ্বেষী পুষোন করি তার বিন্দুমাত্র করিনা পাকিস্তানের এমন নির্মমতার পরেও।শুধু মাত্র এটা ধর্মের কারণেই।এই উপমহাদেশের সব থেকে বড় সাম্প্রদায়িকতা ধর্ম।এইসব আপনাদের বুঝানো যাবেনা।এবার আসি আসল কথায়।






নোবেল তৃতীয় স্থান অধিকার হবার কারণ একমাত্র তার পারফর্মেন্স।এই ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নাই।ভালো গলা, ভালো গাইতে পারে মানেই তাকে প্রথম বানাতে হবে এমন না।একজন প্রতিযোগীকে সেরা বানানোর ক্ষেত্রে আগের থেকে বেশী সচেতন হয়ে যায় বিচারকেরা।যা আমরা দর্শকরা হয়তো বুঝতে পারিনা।সারেগামাপা-২০১৯ ফাইনালের আগে নোবেল প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরের তিনটি গান গেয়েছেন। ‘বাবা’, ‘মা’ এবং ‘এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়’। তিনবারের একবারও গীতিকার বা সুরকার হিসেবে প্রিন্স মাহমুদের নাম উচ্চারণ করেননি তিনি।‘এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়’ গানের শুরুতে গানটিকে আর্ক ব্যান্ডের গান বলেও উল্লেখ করেন। এটি ভুল তথ্য। বিষয়টি প্রিন্স মাহমুদের নজরে আসার পরে ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, ‘দুঃখিত, “এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়” আর্ক ব্যান্ডের গান না। এটা ১৯৯৮ সালে রিলিজ হওয়া আমার কথা ও সুরে মিক্সড অ্যালবাম “শেষ দেখা”–তে হাসান গেয়েছিল।’

তাছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রিন্স মাহমুদের সাক্ষাতকার।তিনি বলেন, ‘আমি হতাশ। একই ঘটনা বারবার হলে সেটা ভুল না, অপরাধ। আগে দুবার এমন ঘটনা ঘটেছে। আমি শুরুতে অনেক ছাড় দিয়েছি, উদারতা দেখিয়েছি। আর না।’

প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ‘একটা মানুষের সৃষ্টিকে এভাবে অপমান করা হয়, তখন কী পরিমাণ খারাপ লাগে, এটা এদের মতো নবীন অবুঝেরা বুঝতে পারবে না। তবে বারবার এভাবে ছাড় দিলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে।’ প্রিন্স মাহমুদ জানান, তাঁর সঙ্গে নোবেলের আলাপ হয়েছে, জি বাংলার কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলাপ হয়েছে।

প্রিন্স জানান, দুই মাস আগে ‘বাবা’ গানটি প্রচারের পর নোবেলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। প্রতিটি গান নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়। প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ‘যতটা জানি, জি বাংলায় এ অনুষ্ঠান ধারণের সময় নোবেল যা যা বলেছে, সেটাই প্রচার করেছে কর্তৃপক্ষ। কোনো কিছু বাদ দেওয়া হয়নি। তার মানে নোবেল ইচ্ছা করেই বারবার এমনটা করছে। আমার করা গান যেকেউ গাইতেই পারে, কোনো সমস্যা না। তবে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য সে বিষয়ে অনুমতি নিতে হবে। যথাযথ নিয়মের মধ্যে যেতে হবে।’

যদিও ফাইনালে এমন ভুল করে নাই।কিন্তু এর রেশ কিন্তু একটা থেকেই যায়।কারণ প্রিন্স মাহমুদ তখন বেশ ভালোই নড়েচড়ে বসেছিলেন এবং বিতর্কের ঝড়ও হয়েছিল।এই প্রভাবটা যে ফাইনালে পরেছে এটা আমার কাছে স্বাভাবিক ভাবেই মনে হচ্ছে।এই হলো আমার দুইটা কারণের মধ্যে একটা কারণ তার পিছিয়ে পড়ার।

দ্বিতীয় কারণটা হলো, নোবেলের গানে লিরিকে উচ্চারন ভুল।‘তুমি রাগে অনুরাগে মুক্তি সংগ্রামের সোনা ঝরা সেই রোদ্দুর'।সে রোদ্দুরের স্থানে রোদ বলে।একটা গান আপনি সুর এবং লিরিক ঠিক রেখে নিজের স্টাইলে গাইতে পারেন।কিন্তু ভুল উচ্চারণ কিংবা ভুল লিরিকে গাইলে সেটা ভুলই।সেটা যত ভালো উপস্থাপনই হোক না কেন।ভুল যেটা ভুলই।সেহেতু তার তৃতীয় স্থান হওয়াটা স্বাভাবিক বলেই আমার মনে হয়েছে।

সেহেতু আমি একজন শ্রোতা হিসাবে বলতেই পারি নোবেল যে স্থান অধিকার করেছে সেটা বরং সে বেশী পেয়েছে।কারণ ভুল লিরিক কিংবা ভুল উচ্চারনেও সে তৃতীয় এবং এটাও হতে পারে বাকীরা মানে তার পরের স্থান অধীকারিরাও কোন না ভুল করেছিল।যার কারণে নোবেল এগিয়ে থাকে।

এখানে আরও একটা বিষয় উল্লেখ করা ভালো যে, আমি নোবেলের কিংবা সারেগামাপা নিয়ে আগে পরে কোন আগ্রহ ছিল না।কিন্তু সারেগামাপাতে ৪ চারটা গান জেমসের এবং বাচ্চু ভাইয়ের গান করেছিল সে গানগুলা ইউটিউবে শুনেছিলাম।শুধু তাই না, আমি ফাইনাল রাউন্ডের গানও আজ সকালের আগে শুনিনাই কিংবা দেখি নাই।হঠাৎ আজ সকালে শুনতে পেলাম সে , "আমার সোনার বাংলা" গানটা সে গেয়েছে।এরপরেই আমি গানটা ইউটিউব থেকে শুনি এবং প্রথমেই আমার কাছে রোদ্দুরের জায়গায় রোদ বলে উচ্চারন করে।কয়েকবার শুনি।কিন্তু একই ভুল আমার কাছে মনে হয়েছে।এরপর লিরিক দেখলাম, দেখি লিরিকেও রোদ্দুর।

আমি যেহেতু একজন ফিলিংস থেকে নগর বাউল এক কথায় জেমস ভক্ত এবং তার গাওয়া প্রতিটা গান আমার খুব ভালো করে শুনা সেহেতু ভুলটা সহজেই ধরা পরে।

এখন আসি বাকী কথায়, যারা বলতাছেন আপনারা আগেই জানতেন সে প্রথম হতে পারবেনা এবং রেজাল্ট আগেই পাবলিশ হয়েছে এই ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নাই।কারণ এই গান গুলা লাইভ হয় না।আগেই রেকর্ডিং করা হয়ে থাকে।সেহেতু রেজাল্ট আগেই প্রকাশ পাওয়াটা অস্বাভাবিক না।অন্যদিকে যে বা যারা প্রথম এবং যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছে তারা কেউ নোবেলের থেকে কোন অংশে কম মনে হয় নাই ফাইনালে।সেহেতু আগের প্রোগ্রাম দিয়ে না, শেষ ভালো যার সব ভালো তার।সেহেতু বিজয়ের মুকুট শেষ ভালোর মাথায় উঠবে এটাই স্বাভাবিক।

শেষ কথা বলবো, নোবেলের জন্য শুভ কামনা।তার একটা প্লাটফর্ম হয়েছে।সে পরিচিত লাভ করেছে।এখন নিজের মৌলিক গান করে সেই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাক।কভার করা গান দিয়ে বিখ্যাত হওয়া যায় না হয়তো একটা প্লাটফর্মে নিজেকে উপস্থাপন করা যায়।কারণ এমন অনেকেই হারিয়ে গেছে অতীতে নিজের মৌলিক গান না করতে পারার জন্য।নিজের টিকে থাকতে হলে অবশ্যই মৌলিক গান দিয়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে।আশা করি নোবেল সেটা পারবে এবং তাকে পারতেই হবে।

অনেক অনেক ভালোবাসা এবং নোবেলের জন্য শুভ কামনা।

শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী মিন্নিকে নিয়ে এলোমেলো ভাবনা



বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে খুন হওয়া রিফাত শরীফ হত্যায় স্ত্রী মিন্নির দোষ অবশ্যই আছে।ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেকেরই মাথা ঘুরান্টি দিছে।কিন্তু আমার এখানে মনে হয় এখনো একটা কিন্তু লুকিয়ে আছ।যা আমরা ভাবতে পারছিনা ভিডিও ফুটেজ দেখার পর এবং রিফাত শরীফের বাবার বক্তব্য শুনে। হয়তো নিজের উপরেই আমরা অনেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছি রিফাতের উপর হামলার আগে এবং শুরুতে মিন্নির বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে।


যাই হোক, মিন্নি দোষী হওয়ায় যেভাবে আপনারা প্রতিবাদ করছেন তার সিকি ভাগও খুনীদের বিরুদ্ধে না!অনেকেই শুরু থেকেই মিন্নি খারাপ এবং মিন্নির চরিত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিছেন।এলাকাবাসীসহ তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে।অবশ্যই এটা ভালো দিক।অপরাধীর শাস্তি হওয়া উচিত।


কিন্তু খুনতো আরও হয়।প্রকাশ্যেই হয়।সেগুলা নিয়ে এতো প্রতিবাদওতো দেখি না।বরং মানুষ এইসব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে।দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।মানুষ যদি এতোটাই সচেতন হতো তাহলে নয়ন বন্ডদের মতো সন্ত্রাসীর জন্ম হতো না। এখন যতোটা মিন্নিকে নিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হচ্ছে তার আগে কেন নয়ন বন্ডের মতো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জনগন এমন সোচ্চার কিংবা সচেতন হয় নাই।এখনতো পুরা বাংলাদেশই লেগে গেছে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা খোঁজার জন্য! আপনার এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কি এতোটা সোচ্চার আপনারা? আজ রিফাত শরীফ না হয় একটা মেয়ের জন্য খুন হইছে।কিন্তু আপনার এলাকাতেও এমন অনেক ছোট খাটো বিষয়ে খুন হয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে।কিন্তু খুনে কার হাত রয়েছে কিংবা থাকতে পারে তা আমরা সকলেই অনুমান করে নিতে পারি।যেমনটা অনুমান করেই মিন্নিকে দোষী বানিয়ে এখন সে সত্যি সত্যি তার সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।এটা অবশ্যই ভালো দিক যে, সমালোচনার কারণেই হয়তো মিন্নির অপরাধ সামনে আসতাছে ধীরে ধীরে।কিন্তু অন্য কোন অপরাধের সময় এমন আমরা হতে পারি না! আমরা কেন তখন ভয়ে মুখ খুলি না! নাকি এখানে মিন্নির কোন ক্ষমতা নাই এবং মিন্নির লিঙ্গ পরিচয়টার কারনেই?


নাকি এই প্রথম খুন হইছে এইভাবে আমাদের দেশে তাও আবার একটা মেয়ের প্ররোচনায় তাই এতো প্রতিবাদ?


যেখানে আবার, স্থানীয় এমপি শম্ভু দেবনাথের ছেলে সুনাম দেবনাথ শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস, পোস্ট ও ছবি প্রকাশ করেছেন। একটি পোস্টে তিনি রিফাত হত্যায় স্ত্রী মিন্নিকে ‘মূল ভিলেন’ হিসেবে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বিভিন্ন খবর ও মিডিয়াতে যাকে এখন হিরো বানানো হচ্ছে মূল ভিলেন সে নিজেও হতে পারে, রিফাত শরিফের বন্ধুদের থেকে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে এটাই বুঝা যায়।’


অপর একটি স্ট্যাটাসে স্থানীয় আইনজীবীদের রিফাত হত্যায় জড়িতদের পক্ষে না দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।সত্যি বলতে এখন মিন্নির পক্ষে কোন উকিল পাওয়া যাচ্ছে না। মিন্নির বাবা দাবী করে বলেন, ‘আমার মেয়েকে বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে আমার মেয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন, অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার নাসির ও অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদেরের দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু কী কারণে দাঁড়াননি আমি বলতে পারবো না।’


রিফাতের স্ত্রী মিন্নি খুনি কিনা এটা এখনও প্রমাণ হয়নি। প্রমাণ হবে যেখানে সেই আদালতে তাকে আইনি সহায়তা দেওয়ার মত কেউ নাই। বরগুনার আইনজীবীদের কেউ তার হয়ে লড়তে চাননি।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিন্নিকে তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার করতে পারেন, আদালত রিমান্ডে পাঠাতেও পারেন; কিন্তু তাই বলে কোন আইনজীবী তার পক্ষে দাঁড়াবেন না- এ কেমন কথা!


অন্যদিকে আলোচিত ধর্ষনের পর নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামীদের পক্ষে সম্ভবত ১৬ অথবা ১৮ জন উকিল দাঁড়িয়ে যায়। এই দেশে আলোচিত ধর্ষক খুনিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে উকিল দাঁড়িয়ে যেতে পারে।কিন্তু অপরাধী নারী এবং ক্ষমতা না থাকায় তার হয়ে উকিল দাঁড়ানোর সাহস নাই। এই সাহসটা কেন নাই তা আর ব্যাখ্যা করতে হবে না।আবার অপরাধীর পক্ষে এতো এতো উকিল দাঁড়িয়ে যায় কেমনে এটা নিয়েও আমাদের চিন্তা করতে হবে না।কারণ আমরা সবই জানি বুঝি।কিন্তু আমরা কোন কোন ক্ষেত্রে বধি এবং অন্ধ এবং কিছু ক্ষেত্রে আবেগী।


যাই হোক, এমপি পুত্রের কথা আবার উকিলদের না লড়ার পিছনের কারণটা কেমন করে যেন মিলে যাচ্ছে না?


মিন্নির দোষ থাকলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।কিন্তু মিন্নিকে শাস্তি কিংবা ফাসিয়ে দিয়েতো আবার খুনিদের অপরাধ হালকা করে দেওয়া হচ্ছে না কিংবা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে না কৌশলে?


কারণ অনেকেই দাবী করছে, মিন্নির জন্যই নাকি ১৪ ছেলের জীবন নষ্ট!আরে ১৪ জন ছেলে আজকে নষ্ট না।এরাতো আগের থেকেই মাদক,ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলো।যেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা।তাহলে মিন্নির জন্য কেন তাদের জীবন নষ্ট হবে মহামান্য জ্ঞানী ভাইয়েরা একটু বুঝিয়ে বলুন।


এখানে রিফাত শরীফ খুন হলেও সেও দোষী।কারণ সেও ভালো ছিলো না বলেই আমার ধারণা। যদি ভালোই হতো তাহলে রিফাত শরীফ নয়ন বন্ডের বন্ধু হয় কি করে?


খুনি নয়ন বন্ডের সাথে প্রেম বিয়ের কথা সবাই জানে।সেহেতু রিফাত শরীফও জানে এটা অবশ্যই বলা যায়।কারণ,


১/ নয়ন বন্ড এবং রিফাত দুইজনেই এক অপরের পরিচিত এবং বন্ধু।


২/ নয়ন বন্ড ও মিন্নি এবং রিফাত শরীফ একই এলাকার মানে কাছাকাছি সবাই থাকতো।


সেহেতু মিন্নির সাথে নয়নের সম্পর্কের কথা রিফাত কিংবা তার পরিবার জানতোনা এটা অস্বীকার করার মতো না। রিফাত শরীফের পরিবার এবং রিফাত জেনেই মিন্নিকে বিয়ে করেছে।এখন যত অস্বীকার করুক তারা কিছু জানতোনা কিংবা মিন্নির পরিবার লুকাইছে এটা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই না বলেই আমার বিশ্বাস এবং অনুমান।সেহেতু শুধু মিন্নির চরিত্র নিয়ে টানাটানির আগে আর একটু সাবধানতা অবলম্বন করি।


লিখাটা ছোট করতে চাচ্ছিলাম কিন্তু কোনভাবেই হচ্ছে না।কারণ কোন না কোনভাবেই মাথায় অনেকগুলা প্রসঙ্গ চলে আসে। এই যেমন ধরুন মিন্নির একটা স্ট্যাটাসের স্ক্রীনশট এবং নয়নের সাথে মিন্নির কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে।যেখানে স্ক্রীনশটের কমেন্টে মিন্নি প্রকাশ্যেই নয়ন বন্ডকে সরি জান বলে সম্বোধন করে।


এবং এরই সূত্র ধরে মিন্নিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় যোগাযোগ সামাজিক মাধ্যম গুলাতে।তাদের কথার যুক্তি ছিলো এবং রিফাত শরীফ হত্যায় মিন্নিরই হাত রয়েছে বলে দাবী।এটা অবশ্য তখন উড়িয়ে দেওয়া গেলেও ভিডিও ফুটেজ এবং আসামিদের জবানবন্দি,কললিস্ট চেক করে সংশ্লিষ্টতার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।কিন্তু এখানে যে, কোন ষড়যন্ত্র নাই তা যেমন বলা যাবেনা, ঠিক তেমনি এখনো অনেক কিছুই আমাদের না দেখা কিংবা না জানার মাঝেই রয়ে গেছে।তাছাড়া নিজ স্বামীকে কেন সে খুন কিংবা মারতে চাইবে?আমি আমার নিজস্ব চিন্তাধারা থেকে যা বুঝতে পারি এবং এই হত্যা মামলা সম্পর্কে গত কয়েকদিনে যতো কথা নড়াচাড়া হইছে তার প্রেক্ষিতেই আমার অনুমান নির্ভর কিছু কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।


দোষ সবারই আছে।


কিন্তু আমরা শুধু মিন্নিকেই কেন দোষ দিচ্ছি?


নিজের স্বামীকে কেন মিন্নি অন্যকে দিয়ে মারার প্ল্যান করলো?


রিফাত শরীফ কি কোন না কোন ভাবে মিন্নিকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করছে?


নয়ন বন্ড এবং মিন্নির প্রেম এবং তারা বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও কেন রিফাতকে কোন ঝামেলা ছাড়া এবং নয়ন বন্ডের মতো উঠতি সন্ত্রাসীও বাধা দিলো না বিয়েতে?


রিফাত শরীফ এবং নয়ন বন্ড বন্ধু হয়েও কেন বন্ধুর বিবাহিত বউ কিংবা প্রেমিকাকেই বিয়ে করলো রিফাত শরীফ?


মিন্নির মা এবং নয়ন বন্ডের মা জানতো নয়ন এবং মিন্নি বিবাহিত তাহলে তারাও কেন আগে মুখ খুললো না কিংবা তাদের মাঝে ডিভোর্স না করিয়েই বিয়ে দিলো?


মিন্নি বিয়ের পরেও কেন নয়ন বন্ডের সাথে যোগাযোগ রেখেই গেলো?


তাহলে কি রিফাত শরীফ মিন্নি এবং তার পরিবারকেও ব্ল্যাক মেইল করতো?


যার কারণেই কি মিন্নি এবং নয়ন বন্ড মুখ খুলতে পারে নাই এবং নিরবে বিয়েটা করে নিয়েছিলো?


মিন্নির জবানবন্দী অনুযায়ী, সে খুন না নয়নকে দিয়ে শাসানোর কথা ছিলো কেন?


মিন্নি কেন নয়নের কাছে চলে গেলো না রিফাতকে ছেড়ে কিংবা নয়নই কেনই মিন্নিকে নয়নের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিলো না?


তাহলে নয়ন মিন্নি এবং রিফাত শরীফের মধ্যে এমন কোন শত্রুতা ছিলো যার কারণে বন্ধুর স্ক্রীকে রিফাত বিয়ে করে নেয় এবং মিন্নির সাথে স্নায়ু যুদ্ধে লিপ্ত হয়?


তাহলে এই কারণেই কি রিফাতকে শাসানোর জন্য নয়ন বন্ডের সাথে হাত মিলানো?


কিন্তু মিন্নির প্ল্যান যদি কেবল শাসানোই থাকে তাহলে কেন তাকে কুপিয়ে খুন করে ফেললো?


নয়ন বন্ডকেও কেন পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজিয়ে খুন করা হলো?


রিফাত ফরাজী এবং তার ছোট ভাই রিশাত ফরাজী কেন এই হত্যায় সরাসরি জড়িত?


এইখানে কি শুধু প্রেম নাকি অন্য কোন কিছুও রয়েছে?


এরকম বহু প্রশ্নের উদয় হয়।এই মামলাটা এতো সহজ না।কারণ প্রধান আসামী/ খুনি নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে খুন এবং রিফাত শরীফ নয়নের হাতে খুন হয়েছে।


তবে এটা পরিষ্কার,মিন্নি রিফাতকে চাইতোনা। কিন্তু এমন কোন কারণ আছে বা ছিলো যার কারণে মিন্নি নয়নের কাছে কিংবা নয়ন মিন্নিকে তার কাছে নিতে পারতেছিলোনা।আবার নয়নকে পাওয়ার জন্যে বা তার কাছে ফিরে যাওয়ার জন্যে রিফাত কোনো বিশাল বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতার কারণ ছিলেন না।যার কারণে তাকে খুন করতে হবে।তাদের মাঝে এমন কোন ঝামেলা ছিলো বলেই তাকে শাসানোর কথা বলেছে নয়নকে।।কিন্তু তাকে খুন করে ফেলা হবে এমন প্ল্যান মিন্নির ছিলো না বলেই আমার ধারনা।এই ঝামেলাটা এতো সহজ না।অনেক কিছুই সামনে এসে যায়।এইখানে খুন করা হবে রিফাতকে বা তাকে চিরতরে সরিয়ে ফেলার প্ল্যানে মনে হয় না মিন্নির ছিলো।বড় জোর তাকে লাথি ঘুষি শাসানোর এইসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ প্ল্যান থাকতে পারে।


আবার আমার এটাও ধারণা হয়, মিন্নিও কোন না কোন ভাবে রিফাত শরীফ দ্বারা ম্যান্টাললি চাপে ছিল।যা কেউ বুঝতে পারে নাই।অন্যদিকে রিফাত শরীফকে খুন করা হবে এটা সে নিজেও বুঝে নাই অথবা সে এতোটা বিরক্ত থাকতে পারে রিফাত শরীফের উপর যার কারণে তাকে খুন করে ফেলার প্ল্যানে থাকতে নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে।অনেক সময় এমন হয় না, যা হবার হবে শালা তকেই আগে দেখে নিবো।জেলের ভাত ফাসি সব কিছুই মেনে নিবে কিন্তু তকে দুনিয়ায় রাখবোনা।এমনটা হলেও হতে পারে।অন্যদিকে নয়নের সাথে রিফাতেরও শত্রুতা। যার কারণে মিন্নি ডাবল রুল প্লে করতে পারে।কিন্তু এটা ঠিক, মিন্নি রিফাতকে খুন করে নয়নের সাথে থাকবে এমন চিন্তা ভুলেও করে নাই।


এইখানে এমন কিছু ঘটনা বা কারণ রয়েছে যা আমরা বুঝতেছিনা।দিন দুপুরে মানুষের সামনে নয়নের দ্বারা স্বামীকে খুন করিয়ে আবার পুলিশের কাছে নয়নের নাম বলে দিয়ে আবার খুনি নয়নের কাছে চলে যাবে এমন স্বপ্ন দেখার মত বোকা মেয়ে বলে আমার মনে হয় না মিন্নিকে।