শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

দূর্বিত্ত নাকি মৌলবাদী



একদিকে,

নবীর সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল ইহুদীরা;

কোরআন আগুনে পুড়িয়েছিল খ্রিষ্টানরা;

কোরআনে প্রসাব করে দিয়েছিল বৌদ্ধরা;

ভারতের বাবরী মসজিদ ভেঙ্গেছিল হিন্দুরা;

ইসলাম ধর্মকে কটুক্তি করে লিখছে নাস্তিকরা;

ইসলামের শরীয়ত মোতাবেক চলে না শিয়ারা।

উপরের সকল কথাগুলা তথাকথিত বাংলাদেশের মডারেট সুশীল মুসলিমরা জোর গলায় প্রচারনা চলায় এবং এই অনৈতিক কর্মকান্ডকে পুজি করে আজও তাদের কাজ বৈধ করে নেয় সুশীল নামধারী মৌলবাদী মুসলিমরা।

অন্যদিকে,

সংখ্যালঘুদের আক্রমন করে বেড়ায় দূর্বিত্তরা;

গির্জায় চার্চের গলা কেটে হত্যা করে দূর্বিত্তরা;

রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা করেছিল দূর্বিত্তরা;

শিয়াদের মসজিদে আক্রমন করে দূর্বিত্তরা;

নাস্তিক ব্লগার কুপিয়ে হত্যা করে দূর্বিত্তরা;

হিন্দুদের মন্দিরে আক্রমন করে দূর্বিত্তরা।

উপরের সকল কথাগুলা তথাকথিত বাংলাদেশের মডারেট সুশীল মুসলিমরা জোর গলায় প্রচারনা চলায়।কিন্তু তারা মানে মুসলিম ভাইয়েরা কেন বলে না যে,বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যেসকল আক্রমন হয় তারা কোন না কোন ধর্মের লোক।কেন তাদের দূর্বিত্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়?আর তারা কে বা কারা আপনার না বললেও গতকাল জন্ম নেওয়া শিশুটিও বলতে পারে এ আক্রমন গুলা বাংলাদেশী মৌলবাদী মুসলিমদেরই কাজ।অপরদিকে আবার যখন অন্য কোন দেশ বা গোষ্ঠী মুসলিমদের উপর চড়াও হয়ে আক্রমন করে তখন আবার ঠিকই আপনারা তাদের ধর্মকেই টেনে আনবেন সবার আগে।এবং এদেশ থেকে সংখ্যালঘুদের তাড়ানোর জন্য ডাক দিবেন মসজিদের মাইকে মাইকে।আর পরবর্তীতে তা আবার ঢালাও ভাবে প্রচারনা চালানো হবে অমুক সংখ্যালঘু জাতীদের উপর আক্রমন করেছে দুষ্কৃতকারী দুর্বিত্তরা।


কিন্তু অপরদিকে দেখুন-

সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া,ভারতে আখলাকের ঘরে গরুর মাংস আছে এই খবরে স্থানীয় গ্রামের শত শত “হিন্দু” মৌলবাদীরা আক্রমন করে,তাকে এবং তার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে বাংলাদেশের সকল নিউজ চ্যানেল এবং নিউজ পোর্টাল প্রচার করে।

অন্যদিকে যখন, ফেনী জেলা সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের জেলে পল্লীতে হিন্দু কোজাগরী পূর্ণিমা (শ্রীশ্রীলক্ষ্মী পূজা)-তে আতশবাজি পোড়ানোকে ইস্যু করে চাঁদা দাবী করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। চাঁদা না পেয়ে এর জের ধরেই পরদিন জেলেপল্লীতে গিয়ে অতর্কিত হামলা করে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক জেলের দোকানে লুট পাট, ভাঙচুর শুরু করলে অন্যরা এগিয়ে আসলে এলোপাথাড়ী কোপানো,লাঠিপেটা, কিলঘুষি, লাথি চালাতে থাকে অবিরত।এবং ৭ মাসের গর্ভবতী টুনী রাণীর গর্ভপাত হয়ে যায় লাথির আঘাতে।কিন্তু সেটাও প্রচার করা হলো দূর্বিত্ত এবং ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী বলে।কিন্তু কেন তারা যে “মুসলিম” এবং “ধর্ম”-কে কেন্দ্র করেই মুলত এ আক্রমন করা হয় তা কেন প্রচার করা হলো না?

আমীর খান কিছুদিন আগে বলেছেন- ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কমে যাচ্ছে এবং অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই নিয়ে বাংলাদেশী অনেক মডারেটর বলছেন সেই তুলানায় বাংলাদেশে হিন্দুরা অনেক ভালো আছে।আবার অনেকে আমীরের বিপক্ষেও মন্তব্য করেছে।

এই মতামতের বিরোধীতা করে ধর্মান্ধ মৌলবাদী “হিন্দু” শিবসেনা গ্রুপের শীর্ষনেতা রাজ থ্যাকারে এই ধরণের মতামত দেয়ার কারণে আমীর খানকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। সেই সাথে এটাও বলেছে, যারাই এই ধরণের কথা বলবে সবাইকেই হত্যা করা হবে।

কিন্তু আবার যখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলোক সেনকে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয় তখন সেটা প্রচার করা হলো “দূর্বিত্ত”-দের আক্রমনের শিকার বলে।কিন্তু কেন সেটা ইসলামী মৌলবাদের আক্রমন ফলে প্রচার করা হলো না?

এরকম হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যাবে,কিন্তু এই “দূর্বিত্ত” শব্দটি পরিবর্তন করে বাংলাদেশে “ইসলামী মৌলবাদী” শব্দটি কী আদো ব্যবহার করা যাবে কখনো?

মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫

হিন্দু ধর্মের এক বর্বর প্রথার নাম সতীদাহ



ধর্মের প্রতি মোহমুক্ত হয়ে তাকালেই দেখা যায়, ধর্মকে যতটা মানবিক হিসেবে প্রচার করা হয়, আসলে তা নয়। ধর্মটা মনুষ্যত্বের নয়, কতিপয় গোষ্ঠীর-গোত্রের। ধর্ম মানুষের মাঝে একতা গড়ে তোলে না, আনে বিদ্বেষ; যা আসলে উগ্র, হিংস্র, জংলী আচরণে পর্যবসিত হয়। কোনো ধর্মই গণমানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখায়নি।কিন্তু ধর্মবাদীরা মাঝেমাঝে সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে মিলে-মিশে থাকার কথা ঘোষণা করেন, শান্তিবাদী হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে্ন, সেটা একটা ফন্দী মাত্র কেবল। কারণ জগতে ধর্মের নামে, এক ধর্ম অন্য ধর্মের ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে মানব সভ্যতার গোড়া থেকেই অগণিত, অসংখ্য মানুষ খুন করেছে এবং আজও সে ধারা অব্যাহত আছে। ফলে ধর্ম আজ মানব-সভ্যতার কলঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে।

সনাতন ধর্ম হলো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ধর্ম। এর আরেক নাম হলো হিন্দুধর্ম। এই ধর্মের ধর্মগ্রন্থের সংখ্যা অনেক বেশি।তাই আমি বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থের আলোকে হিন্দু ধর্মের সতীদাহ প্রথা নিয়ে সংকলিত করব-

সনাতন সমাজে সব চেয়ে খারাপ এবং বর্বর প্রথা হিসেবে গণ্য হয়েছে সতীদাহ প্রথা। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে জোর পূর্বক স্বামীর সাথে চিতায় ভস্ম করা ছিল এই প্রথা। ব্রিটিশ শাসনামলে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং রাজা রাম মোহন রায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার আইনের মাধ্যমে এ প্রথাকে রদ করে।সতীদাহ প্রথা কুপ্রথা হিসেবে প্রকটরূপ ধারণ করে অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে। সতীদাহ প্রথা বেশি প্রচলিত ছিল সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের মাঝে, যেমন- ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়।

সনাতন ধর্মানুসারী অনেক প্রগতিশীল মানুষ দেখেছি, যাঁরা বলেন, হিন্দুধর্ম নারীকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করেছে। ইসলামী মৌলবাদ নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ ও গণমাধ্যমগুলো ব্যস্ত থাকার কারণে এইসব তথাকথিত প্রগতিশীল হিন্দু সমালোচনা করে ইসলামিক শরিয়া আইন ও নারীকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করাকে। কিন্তু তারা সমালোচনা করে না সতীদাহ প্রথার। আবার অনেকে স্বীকারই করে না যে, সতীদাহ প্রথা বলতে কিছু ছিলো হিন্দু ধর্মে।আবার যারা স্বীকার করেও নেয় তারা বলে এটা আসলে একটা প্রথা ছিল,এখানে ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থের কোন হাত ছিল না।যা কেবল ছিল কিছু গোত্র কিংবা অঞ্চল ভিত্তিক।তাহলে আসল সত্যটা কি তা জেনে নিই আসুন-

স্বামীর শব দাহের সঙ্গে বিধবা স্ত্রীকে জীবন্ত দাহ করার পূর্বেকার হিন্দুধর্মীয় প্রথা। সংস্কৃত ‘সতী‘ শব্দটি আক্ষরিক অর্থে এমন সতীসাধ্বী রমণীকে বোঝায় যিনি তার স্বামীর প্রতি চূড়ান্ত সততা প্রদর্শন করেন এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিও থাকেন সত্যনিষ্ঠ। কিন্তু একটি আচার হিসেবে সতীদাহের অর্থ হলো মৃত স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর সহমরণের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা এবং ওই অনুষ্ঠানে তূরীবাদক জনতার মাঝে স্বামীর শেষকৃত্যের চিতায় আরোহণ করা। কবে এবং কিভাবে এ ধরনের আচার ধর্মীয় প্রথারূপে গড়ে উঠেছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

হিন্দু নারীরা কি স্বামীর মৃত্যুর পর স্বেচ্ছায় স্বামীর চিতায় ওঠে যেতেন? মোটেই তা নয়। ঐতিহাসিকগণ জানিয়েছেন, কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সদ্য বিধবা নারীকে উত্তেজক নেশা জাতীয় পানীয় পান করিয়ে কিংবা নেশা জাতীয় দ্রব্য শুঁকিয়ে অজ্ঞান করে কিংবা অর্ধচেতন অবস্থায় স্বামীর চিতায় তুলে দেওয়া হতো।

কোন একজনের ফেসবুক পোস্টে পড়েছিলাম, “যে নারী স্বামীর চিতায় আত্মোৎসর্গ করে সে তার পিতৃকুল, স্বামীকুল উভয়কেই পবিত্র করে।” যেমন করে সাপুড়ে সাপকে তার গর্ত থেকে টেনে বার করে তেমনভাবে সতী তার স্বামীকে নরক থেকে আকর্ষণ করে এবং সুখে থাকে। ব্রহ্মপুরাণ বলে, “যদি স্বামীর প্রবাসে মৃত্যু হয়ে থাকে তবে স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর পাদুকা বুকে ধরে অগ্নিপ্রবেশ করা।”(ভারতের অন্যতম মানবতাবাদী লেখক ড. সুকুমারী ভট্টাচার্য,প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ, পৃষ্ঠা ১৪৭)

“সদ্যবিধবা নারী নববধূর মতো সাজে, তার শ্রেষ্ঠ পোষাক পরে, সিঁদুর, কাজল, ফুলমালা, চন্দন, আলতায় সুসজ্জিত হয়ে ধীরে ধীরে সে চিতায় ওঠে, তার স্বামীর পা দুটি বুকে আঁকড়ে ধরে কিংবা মৃতদেহকে দুই বাহুতে আলিঙ্গন করে, এইভাবে যতক্ষণ না আগুন জ্বলে সে বিভ্রান্তির সঙ্গে অপেক্ষা করে। যদি শেষ মুহূর্তে বিচলিত হয় এবং নীতিগত, দৃশ্যগতভাবে ছন্দপতন ঘটে তাই শুভাকংখীরা তাকে উত্তেজক পানীয় পান করান। এমন কি পরে যখন আগুনের লেলিহান শিখা অসহনীয় হয়ে ওঠে, পানীয়র নেশা কেটে যায়, তখন যদি সেই বিধবা বিচলিত হয়ে পড়ে, ‘সতী’র মহিমা ক্ষুণ্ন হবার ভয় দেখা দেয় তখন সেই শুভাকাংখীরাই তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে চেপে ধরে যদি সে চিতা থেকে নেমে আসতে চায়, প্রতিবেশী, পুরোহিত, সমাজকর্তা সকলেই অনুষ্ঠানের সাফল্যের জন্য অতিমাত্রায় সাহায্য করতে চায়। তারা গান করে, ঢাক বাজায় এতো উচ্চ জয়ধ্বনি দেয় যে সতী যা কিছু বলতে চায় সবই উচ্চনাদে ঢেকে যায়।” (ভারতের অন্যতম মানবতাবাদী লেখক ড. সুকুমারী ভট্টাচার্য,প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ, পৃষ্ঠা ১৪৭)
স্বত:প্রণোদিত হয়েই পতির মৃত্যুতে স্ত্রী অগ্নিতে আত্মাহুতি দিত। পৌরাণিক কাহিনীতে এ আত্মাহুতি অতিমাত্রায় শোকের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখা হত। মহাভারত অনুসারে পাণ্ডুর দ্বিতীয় স্ত্রী মাদ্রী সহমরণে যান কারণ মাদ্রী মনে করেছিলেন পান্ডুর মৃত্যুর জন্য তিনি দায়ী যেহূতু পান্ডুকে যৌনসহবাসে মৃত্যুদন্ডের অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল। রাজপুতানায় "জহর ব্রত" প্রচলিত যাতে কোন শহর দখল হবার পূর্বেই পুরনারীরা আত্মসম্মান রক্ষার্থে আগুনে ঝাঁপ (বা জহর বা বিষ) দিয়ে স্বেছায় মৃত্যুবরণ করতেন, যা সতীদাহের অনুরূপ। কিন্তু কালক্রমে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে হিন্দু স্ত্রীকেসহমরণএ বাধ্য করা হত। বিশেষ করে কোন ধনী লোকের মৃত্যুর সম্পত্তি অধিকার করার লোভে তার আত্মীয়রা তার সদ্যবিধবা স্ত্রীকে ধরে বেঁধে, ঢাক-ঢোলের শব্দ দ্বারা তার কান্নার আওয়াজকে চাপা দিয়ে তার স্বামীর সাথে চিতায় শুইয়ে পুড়িয়ে মারতো।(সূত্রঃউইকিপিডিয়া)

পরাশর সংহিতায় পাই, “মানুষের শরীরে সাড়ে তিন কোটি লোম থাকে, যে নারী মৃত্যুতেও তার স্বামীকে অনুগমন করে, সে স্বামীর সঙ্গে ৩৩ বৎসরই স্বর্গবাস করে।” (৪:২৮)

ষষ্ঠশতকের বরাহমিহির তার বৃহৎসংহিতায় বলেন, “অহো নারীর প্রেম কি সুদৃঢ়, তারা স্বামীর দেহ ক্রোড়ে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করে।” (৭৪:২৩)

মহাভারতের মৌষল পর্বে আমরা দেখি, ভগবান কৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাঁর চার স্ত্রী রুক্কিণী, রোহিণী, ভদ্রা এবং মদিরা তাঁর চিতায় সহমৃতা হয়েছিলেন। এমন কি বসুদেবের আট পত্নীও তাঁর মৃত্যুর পরে সহমরণে গিয়েছিলেন। ব্যাসস্মৃতি বলছে, চিতায় বিধবা নারী তার স্বামীর মৃতদেহে আলিঙ্গন করবেন অথবা তার মস্তকমুণ্ডন করবেন। (২:৫৫)

হিন্দুধর্মের ইতিহাসে সনাতন ধর্ম শাস্ত্র কি বলে আসুন জেনে নিই এবার-

ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্। ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।(অথর্ববেদ ১৮.৩.১)

অর্থঃ হে মনুষ্য! এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে। সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।

অথর্ববেদ ১৮.৩.২ (এই মন্ত্রটি ঋগবেদ ১০.১৮.৮ এ ও আছে)

উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকং গতাসুমেতমুপশেষ এহি। হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।(অথর্ববেদ ১৮.৩.২;এই মন্ত্রটি ঋগবেদ ১০.১৮.৮ এ ও আছে)

অর্থঃ হে নারী! মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি?বাস্তব জীবনে ফিরে এস। পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে,সতীদাহ কেবল একটা প্রথাই না,যা অনেক বড় বর্বর ধর্মীয় কুসংস্কার এবং একমাত্র ধর্মান্ধরাই মেনে নিতে পারে এমন অমানবিক পথ,কিছু মাত্র লোকের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্ররোচনায় পরে।

এই বাংলায় ১৮১৫ সাল থেকে ১৮২৮ সাল পর্যন্ত মাত্র তের বছরে ব্রাহ্মণ্যবাদীর দল পুণ্যলাভের আশায় আর নারীর সতীত্ব রক্ষার ধুয়া তুলে ৮১৩৫ জন নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে সতী বানিয়েছিল! একটু ভাবুন তো, একটি নিরাপরাধ মেয়েকে টেনে-হিচড়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলছে, পাশে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন সবাই দাঁড়িয়ে ‘বল হরি বল’ কীর্তন গেয়ে নিজেদের স্বর্গে যাবার আয়োজন করছে, ভাবতেই অবাক লাগে।

আফিমীয় মাদক মানুষকে কতটুকু নিবোর্ধ-মানবিকতাশূণ্য বানিয়ে দেয়, তারই উদাহরণ হতে পারে উপমহাদেশের এই সতীদাহ প্রথা।ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি” সরকার প্রথম দিকে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু ইংল্যান্ডে উদারপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠা এবং উনিশ শতকের বিশের দশকে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের ভিত মজবুত হওয়ার পর সরকার কিছু জনহিতকর আইন প্রণয়নে চিন্তাভাবনা শুরু করে। খ্রিস্টান মিশনারি, ঈঙ্গ-ভারতীয় সংবাদপত্র এবং রাজা রামমোহন রায়সহ কতিপয় দেশীয় সংস্কারবাদী জনহিতকর সংস্কারের পক্ষে সমর্থন যোগান। অবশেষে নিজ দেশের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক (১৮২৮-১৮৩৩) রেগুলেশন XVII, ১৮২৯ পাস করেন। বেন্টিঙ্ক নিজেও একজন মানবহিতৈষী সংস্কারপন্থী ছিলেন। এই আইনে ‘সতীদাহ প্রথা বা হিন্দু বিধবা নারীকে জীবন্ত দাহ বা সমাধিস্থ করা বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়।

বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫

মুক্তচিন্তা মুক্ত হোক



শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।শিক্ষিত জাতি পারে একটি সুখী সুন্দর সাবলীল রাষ্ট্র উপহার দিতে।একটি জাতিকে প্রসারিত করতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজন চিন্তার বিকাশ প্রসারণ। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পুঁথিগত বিদ্যা হয়তো মুখস্ত করলেই পাওয়া যায়। কিন্তু সৃজনশীল ও মুক্তচিন্তা মানুষকে কষ্ট করেই অর্জন করতে হয়। তাই মুক্তচিন্তার অধিকারী হতে শিশুকাল থেকেই শিক্ষার প্রকৃত অর্থটা বোঝানোই হতে পারে মুক্তচিন্তার প্রাথমিক ধাপ। আধুনিক সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। তথ্যের অবাধ প্রবাহ বাড়ায় মুক্ত চিন্তার ক্ষমতা। সুশিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে সচেতনতার হার, বাড়ে যুক্তি দিয়ে কাজ ও চিন্তা করার ক্ষমতা, এবং কমে অন্ধ বিশ্বাসের পরিধি।আজকাল মুক্তচিন্তা বিষয়টি বারবার আলোচিত এবং সমালোচনা হচ্ছে পুঙ্খানোপুঙ্খ ভাবে।যে জাতি যত বেশী মুক্তভাবে জ্ঞান চর্চা করতে পারছে সে জাতি তত বেশী সভ্য এবং প্রগতিশীল জাতি হিসাবে পরিচিত লাভ করতে পেরেছে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে।

উইকিপিডিয়া বলছে, মুক্তচিন্তা হলো এক প্রকার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী। যা বলে যে, বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা এবং যুক্তির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। মতামত গঠনের ক্ষেত্রে প্রথা, অন্ধ বিশ্বাস এবং কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। সচেতনভাবে মুক্তচিন্তার প্রয়োগকে বলে মুক্তচিন্তন এবং এর অনুশীলনকারীদের বলে মুক্তমনা।

মনোবিজ্ঞানীরা আরও বলেন, মুক্তচিন্তার অধিকারী হতে হলে একজন মানুষের কখনোই জ্ঞান ও যুক্তিহীন দাবিকৃত কোনও মতকেই সত্য হিসেবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করা উচিত না। সুতরাং মুক্তমনারা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান, বাস্তব সত্য এবং যুক্তির আলোকে মত গড়ে তুলবেন।অথবা কর্তৃপক্ষ, পক্ষপাতদুষ্টতা, লোকজ্ঞান, জনপ্রিয় সংস্কৃতি, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, প্রথা, গুজব এবং অন্য সব গোঁড়া, বৃদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতার উৎসাহদাতার ভূমিকা পালনকারী জিনিস থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন। ধর্মের ক্ষেত্রে মুক্তমনারা সাধারণত সমস্ত অলৌকিক বিষয়াবলি এড়িয়ে চলে তার পেছনের যুক্তি খুঁজে বের করবেন। মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে-মানুষ ধর্মের জন্য নয় বরং মানুষের জন্যই ধর্ম।

মানুষ চিন্তাশীল প্রাণি। সে তার জীবন, জগৎ, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব নিয়ে চিন্তা করে। কেননা সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের যে ঘটমান-রূপান্তর তা কোনো-না-কোনোভাবে তার জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং কোনো-না-কোনোভাবে তার জীবনে প্রভাব বিস্তার করে।বিশ্বব্যাপী মুক্তভাবে চিন্তা করা এবং নিজের চিন্তা স্বাধীনভাবে প্রকাশ করা একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত।

যুগ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি আর যোগাযোগে সভ্যসমাজ হয়ে উঠছে আধুনিক। অথচ এই একুশ শতকে এসেও আজ পৃথিবী ধুঁকছে মুক্তচিন্তার অভাবে। দেশে দেশে যেমন ছড়িয়ে পড়েছে কট্টরপন্থিতা, ধর্মীয় মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ। তেমনি সমাজে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অন্যের মত ও পথের প্রতি সহনশীলতার অভাব, হানাহানি।মুক্তচিন্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সোস্যাল মিড়িয়ার দ্রুততম যোগাযোগের সৌজন্যে একটি প্রযুক্তিগত ন্যায্যতা পায়। বিশ্বব্যাপী মিডিয়া অধ্যয়নে সোস্যাল মিডিয়া সেভাবেই বিরাট জায়গা দখল করে নিচ্ছে। কেননা সমাজের গতিশীলতায় নতুন মাত্রা যোগ করার ক্ষেত্রে সোস্যাল মিড়িয়া একটি অভূতপূর্ব প্রভাব-বিস্তারকারী শক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে তার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে।তৃতীয় কিংবা চতুর্থ বিশ্বের কোনো প্রত্যন্ত প্রান্তের কোনো প্রান্তিক মানুষের মতামত সোস্যাল মিড়িয়া হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে পৃথিবীর অন্যান্য প্রত্যন্ত প্রান্তরে।

তবে মুক্তচিন্তা সবসময় মুক্ত ছিল না। এখনও নেই। মুক্তমনাদের ওপর আঘাত এসেছে বারবার। চিন্তা যত যৌক্তিক ও বস্তুনিষ্ঠ হোক, তা মেনে নিতে চান না অনেকেই। বিশেষ করে ধর্মান্ধরা মুক্তচিন্তার বিরোধিতা করেছেন বরাবরই। বিশেষ কোনো মতবাদের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস থেকে অন্য মতবাদকে বাতিল করতে চেয়েছেন বারবার। তারা চিন্তা দিয়ে চিন্তার জবাব দেননি, জবাব দিয়েছেন অস্ত্র দিয়ে। কারণ, তারা নতুন করে চিন্তা করতে পারেন না বা করেন না। মুক্তভাবে চিন্তা করা পছন্দও করেন না তারা। বিজ্ঞান অন্ধকার পথকে আলোকিত করে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, অজানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রক্ষণশীল সমাজের সত্যের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। স্বার্থে আঘাত লাগে বলে রক্ষণশীলরা বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়, বিজ্ঞানের চিন্তাকে যারা ধারণ করে, লালন করে তাদের উপর অত্যাচার চালায়, কখনো কখনো জীবননাশের পথও বেছে নেয়।

সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে নাকি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে — এই প্রশ্নে যদি কেউ বলে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে — তাহলে লোকে তাকে নির্ঘাত আজ পাগল ভাববে। অথচ একসময় এই ধারণাই ছিল প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠিত সেই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ব্রুনো, কোপার্নিকাস বলেছিলেন — পৃথিবী-ই সূর্যের চারদিকে ঘোরে। গাণিতিকভাবে তা প্রমাণও করে দেখিয়েছেন। এই সত্য আবিষ্কার ও প্রচারের কারণে ধর্ম যাজকরা ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ছিল। গ্যালিলিওকে সারাজীবন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দিনাতিপাত করতে হয়েছিল।এসব মহান মানুষ সরাসরি ধর্মের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু মণীষীদের বক্তব্য ধর্মান্ধদের বিশ্বাসের বিপরীত হওয়ায়, তাদের হেনস্তা এমনকি হত্যা করা হয়।

সব ধর্মেরই লক্ষ্য পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা।প্রত্যেক ধর্মেরই অসংখ্য ধার্মিক পণ্ডিত আছেন।তারা ভালো বলতে পারেন, লিখতে পারেন। ধর্মবিরোধী কোনো বক্তব্যের জবাব তারা মুখে কিংবা লিখে দিতে পারেন। এ দেশে নাস্তিক পণ্ডিতের চেয়ে আস্তিক পণ্ডিতের সংখ্যা অনেক বেশি। সব ধার্মিক পণ্ডিত যদি লিখতে থাকেন, তাহলে তো ধর্মে অবিশ্বাসী বা ধর্মবিরোধী চিন্তাবিদরা পাত্তাই পাবেন না।

ধর্মীয় অনুশাসন শিক্ষা দেওয়া অন্যায় নয়।কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেলের মতো গ্রন্থ যে পবিত্র তা আমরা জন্ম থেকে জেনে আসি না। কেউ পরিচয় না করিয়ে দিলে ধর্ম কি তা আমরা জানতাম না। জন্মের পর আমাদের আশেপাশের মানুষ-ই আমাদেরকে এসবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আর আমরা প্রায় সবাই ধর্ম না বুঝে শুধুমাত্র তাদের ওপর আস্থা রেখেই তা মানা শুরু করেছি। ধর্মের ব্যাপারে শুরু থেকেই শোনা কথার ওপর আস্থা রাখার এই মানসিকতা আমাদের আজও রয়ে গেছে।

অন্য দিকে, ‘অন্ধত্ব’ শুধু ধর্মানুসারীদের জন্যই প্রযোজ্য নয়। ‘ধর্মান্ধ’ আস্তিক যেমন আছেন, তেমনি কট্টরপন্থি নাস্তিকও রয়েছেন। ধর্মানুসারীদের যেমন উচিত ‘ধর্মান্ধতা’ পরিহার করা, তেমনি নাস্তিকদেরও উচিত নাস্তিক্যের ‘অন্ধত্ব’ থেকে বেরিয়ে আসা। উভয় পক্ষেরই উচিত পরমত-সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা। অপরের কথা শোনা এবং বোঝার মানসিকতা থাকতে হবে।

আমরা কেউ পর্যাপ্ত মাত্রায় সহনশীল নই। সহনশীলতা শুধু ধর্মান্ধদের পক্ষ থেকেই প্রত্যাশিত না, প্রগতিশীলদের কাছ থেকেও সমমাত্রার সহনশীলতা কাম্য। বিকৃত বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করলেই যে তর্কযুদ্ধে জয়লাভ ঘটে না, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মুক্ত আলোচনার নামে আমরা এসব করে থাকি। এটা হলো রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশের সূচনা।ক্রোধ মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। অমানুষের মধ্যে কোনো মানবিকতা থাকে না।

মুক্তচিন্তা মানে সমস্ত অজ্ঞতা-ধর্মীয় গোঁড়ামি-কুসংস্কার-পশ্চাৎপদ ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা।এর মানে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় চিন্তা না করেই খেয়াল-খুশি মতো যেকোন কিছু করা বা বলা নয়। অনেকেই মুক্তচিন্তা বলতে ব্যক্তি স্বাধীনতার নাম করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করাকে বোঝেন, কোনো নিয়ম না মানাকে বোঝেন। তারা এই সত্যটি ভুলে যান যে, জাগতিক কোনো কিছুই নিয়মের বাইরে নয়, সবকিছু নিয়মের শাসনাধীন।সমাজ বিকাশের নিয়ম মেনে চিন্তা ও কাজ করতে পারার নামই প্রগতিশীলতা।

মুক্তচিন্তার প্রতিপক্ষ ধর্ম নয় কোনভাবেই। ধর্ম ক্ষেত্র বিশেষে কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে পারে মাত্র। আজকের দুনিয়ায় মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানের প্রতিপক্ষ প্রকৃতপক্ষে শাসকগোষ্ঠী আর সাম্রাজ্যবাদ যার দখলে আছে রাষ্ট্রযন্ত্র আর কর্মকৌশল। তারাই দখল করেছে চিন্তা-জ্ঞান আর বিজ্ঞানকে। এই দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্যই তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে।ধর্ম একটা বিশ্বাস।আর এই বিশ্বাসকে পুঁজি করেই প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি ধর্মীয় গোঁড়ামিকে কাজে লাগিয়ে দেশে প্রতিনিয়ত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে।তাদেরকে প্রথমে তাদের নিজেদের জ্ঞানের ভিতকে সুসংহত করতে হবে। বুঝত হবে, ধর্মীয় কুসংস্কার ও ধর্মের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ আর ধর্মীয় মূল্যবোধকে অবমাননা করা এক নয়।

পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মুক্ত চিন্তাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। নতুন নতুন চিন্তাই দুনিয়াকে এগিয়ে নেবে। মানুষ হবে মুক্তচিন্তার জোরেই। সুতরাং মুক্তচিন্তা মুক্ত হোক।

মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫

শহীদ নূর হোসেন দিবস (‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’)

আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ কখনো মসৃণ ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের আপনজনদের নৃশংসভাবে হত্যা,৩ নভেম্বর জেলের ভিতরেই হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চার স্তম্ভ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতা -তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আ.হ.ম কামরুজ্জামান এবং মনসুর আলীকে।এবং ৩ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মত জগন্যতম ইতিহাস।যার মধ্যদিয়ে এ দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলার জনগণ আন্দোলন করে।
১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাস। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ছিলো অবরোধ দিবস। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন-সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এক দিন। সারা দেশ থেকে দলে দলে মানুষ এসে জড়ো হয়েছিলো ঢাকায়।মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো সেদিন ঢাকা নগরী। দিনটি বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচারী এরশাদ তার ক্ষুদার্ত সৈন্যবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছিল অসহায় বাঙ্গালীর উপর।হাজারো প্রতিবাদী যুবকের সঙ্গে জীবন্ত পোস্টার হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন যুবলীগের কর্মী নূর হোসেন।শহীদ নূর হোসেন খালি গায়ে বের হয়েছিল কারফিউ ভঙ্গ করে। তার বুকে সাদা হরফে লিখা ছিল "স্বৈরাচার নিপাত যাক" আর পিঠে লিখা ছিল "গনতন্ত্র মুক্তি পাক"। হাজারো প্রতিবাদী যুবকের সঙ্গে জীবন্ত পোস্টার হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন যুবলীগের কর্মী নূর হোসেন।
গুলিস্তান-বংগবন্ধু এভিনিউ-বায়তুল মোকারম এলাকায় জনতার ভিড়ে,সমস্ত জনতাকে ছাপিয়ে বারবার একটি মুখই উদয় হচ্ছিলো। আর সেটি নূর হোসেনের খালি গা,জিন্সের প্যান্ট পরনে। নূর হোসেন তাঁর বুকে ও পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান উৎকীর্ণ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫-দলীয় ঐক্যজোটের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন।সে ছুটছিলো এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।থামছিলো না সে খানিকক্ষণের জন্যেও।ডিউটিরত পুলিশদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হচ্ছিলো তার কর্মকান্ডে।এক পর্যায়ে সেই পথ দিয়ে আওয়ামী-লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে যাচ্ছিলো।যুবকটিকে দেখে গাড়ি থামিয়ে তিনি তাকে ডাকলেন। বললেন,শিগগির জামা গায়ে দাও, পুলিশ তো তোমাকে গুলি করবে।উদোম-উদ্দাম বুকে পিঠে স্লোগান লেখা সেই যুবক তার প্রিয় নেত্রিকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। তারপর স্লোগান দিতে দিতে হারিয়ে গেলো জনতার ভেতরে।
এর কিছুক্ষণ পরেই গুলির শব্দ। মিছিলটি যখন জিরো পয়েন্টে পৌঁছে, তখন স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিল লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়। বুলেট নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়।নূর হোসেনের সঙ্গে আরও আত্মাহুতি দেন যুবলীগের নেতা নুরুল হুদা ও কিশোরগঞ্জ বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা।তাঁর এই আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলকে বেগবান করে।গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই সংগ্রামে বাবুল, ফাত্তাহসহ অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ ফিরে পায় ভোট ও ভাতের অধিকার।
বায়তুল মোকারম গেইটের কাছে পুলিশের গুলিতে ঢলে পড়লো সেই যুবক।জনতা কিছুটা ছত্রভংগ।এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই পুনরায় সংগঠিত।আবারো গুলির শব্দ।নূর হোসেনের লাশ ছিনিয়ে নিয়েছিলো পুলিশ। নূর হোসেনের লাশ তার গরিব বাবা মাকে একটিবার দেখতেও দেয়া হয় নি। গোপনে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে তাকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।জীবন্ত নূর হোসেনকে স্বৈরাচার এরশাদ যতোটা ভয় পেয়েছিলো তার চেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলো তাঁর লাশকে। আর তাই দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো তাঁর সমাধিকে।কিন্তু এরশাদ জানতো না—এ লাশ মাটির তলায় থাকবে না।জেগে উঠবেই।এরশাদ কি জানতো যে নূর হোসেনরা কখনো মরে না।নূর হোসেনরা চলে যাবার আগে বলে যায়—‘আমরা সহস্র হবো অজস্র মৃত্যুতে।
নূর হোসেনের মা বলেছিলেন,”কত থানায় গিয়া তার বাপে কান্নাকাটি করছে, পোলার লাশ দেখতে চাইছে। কেউ তার কথা শোনে নাই।সে যে শহীদ হইছে এইটা পরথম জানবার পারি পেপারে ফটো দেখার পর। রাইতে বিবিসির খবরে তার কথা কয়। আমার অবস্থা তো তখন বুঝেন। হায় হায় কইরা বুক চাপড়াইলাম। কিন্তু কেউ লাশটার খোঁজ দিলো না। আমি নামাজ পইড়া আল্লার কাছে কইলাম, যে জালিম আমার পোলার লাশ পর্যন্ত দেখতে দিলো না, তার উপর য্যান গজব নাজিল হয়।“
মিছিলের পুরোভাগে থাকা এই অকুতোভয় যোদ্ধা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছেন। নূর হোসেনের এ আত্মদান স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। তাঁর আত্মাহুতির ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ এর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। সেদিনের সেই ২৬ বছরের যুবক আবার ফিরে আসুক অন্য কোন বেশে, অন্য কোন নূর হয়ে। জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে এই হোক আমাদের কামনা।

এর পর থেকে প্রতিবছর দিনটি শহীদ নূর হোসেন দিবস বা গণতন্ত্র মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।







সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

একজন হিটলারের গল্প



অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ অ্যাডলফ হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল জার্মানির সীমান্তবর্তী ব্রাউনাউ-আম-ইন গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম ছিল Alois ও মায়ের নাম ছিল Klaaraa.ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যতা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ।হিটলার যিনি জার্মানিতে জন্মগ্রহণ না করেও জার্মানির চ্যান্সেলর হয়েছিলেন অথচ তিনি জন্ম নিয়েছিলেন অস্ট্রিয়ায়।যতটুকু জানা যায়, আলোইসের মা মারিয়া আন্না ও সিকেলগ্রাবার প্রতিবেশি মিলশ্রমিক জোয়ান জর্জ হিটলারের মিলিত ফসল এই আলোইস হিটলার। সে হিসেবে হিটলারের দাদা ছিলেন একজন ইহুদি। হিটলারের বাবার কোনো জাত ছিল না। সোজা বাংলায় বললে বলা যায় হিটলার ছিলেন একজন জারজ সন্তান। তিনি জীবনের অনেকটা সময় শেষ নাম হিসেবে তার মায়ের নাম ব্যবহার করেছিলেন। ১৯১৬ সালেই প্রথম হিটলার নামটি গ্রহণ করেন। সৎ বাবা সরকারি কাস্টমস থেকে অবসর গ্রহণের পর সপরিবারে অস্ট্রিয়ার লিনৎসে শহরে চলে আসেন। এখানেই হিটলারের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। এ কারণে সারাজীবন তিনি লিনৎসকে ভালোবেসে গেছেন, কোনো শহরকে এর ওপরে স্থান দিতে পারেননি। বাবাকে তিনি পছন্দ করতেন না বরং ভয় করতেন। কিন্তু মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। ১৯০৩ সালে বাবা মারা যান। বাবার রেখে যাওয়া পেনশন ও সঞ্চয়ের অর্থ দিয়েই তাদের সংসার কোনোমতে চলতে থাকে। অনেক ভোগান্তির পর ১৯০৭ সালে মাও মারা যান। হিটলার নিঃস্ব হয়ে পড়েন।ছোটবেলায় হিটলার ধর্মযাজক ও চিত্রশিল্পী হতে চেয়েছিলেন।হিটলারের মায়ের মৃত্যুর পর ও আর্ট স্কুল থেকে দ্বিতীয়বারের মত বিতাড়িত হওয়ার পর হিটলার ছিল একেবারেই গৃহহীন, আশ্রয়হীন।পড়াশোনায় সুবিধা করতে না পেরে ভিয়েনায় গিয়ে চিত্রশিল্পী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন নিজের পুরনো শহরে। পরবর্তী বেশ কয়েক বছর কেটেছে হতাশা আর গ্লানিতে।



১৯১৩ সালে হিটলার চলে আসেন মিউনিখ শহরে। তখনো চলছিল তার এলোমেলো জীবন। এখানে আসার পরের বছর ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অস্ট্রিয়ান মিলিটারি সার্ভিসে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেও শারীরিক অযোগ্যতায় ব্যর্থই হচ্ছিলেন বলা চলে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে জার্মান সেনাবাহিনী এত কিছু আর যাচাই-বাছাই করেনি। জার্মানির ১৬তম ব্যারাভিয়ান রিজার্ভ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টের ভলান্টিয়ার সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে যুদ্ধে গুরুতর আহত হন হিটলার। দুই বছর পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যখন সমাপ্তি ঘটে তিনি তখন পর্যন্ত হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। যুদ্ধে বীরত্ব দেখানোর জন্য তাকে বিভিন্ন পদক ও সম্মাননা দেওয়া হয়। কিন্তু যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় হিটলার মেনে নিতে পারেননি। এর মধ্যেই হিটলারের জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়। ১৯১৯ সালে হিটলার মিউনিখের ছোটখাটো একটি ডানপন্থি দলে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই দলটি হিটলারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এর মধ্যেই পার্টির নাম পাল্টে রাখা হয় নাৎসি।



হিটলারের নাৎসি পার্টির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। হিটলার চেয়েছিলেন জার্মানিতে যেন আর কোন রাজনৈতিক দল না থাকে। কিন্তু তার এ ষড়যন্ত্র ধরা পড়লে কারাবন্দি হন হিটলার।এরপর কারাগার থেকেই হিটলার লিখেছিলেন বিখ্যাত বই ‘মেইন ক্যাম্প’।

এক বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদি বিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্র বিরোধিতা ছড়াতে থাকেন। এভাবেই একসময় জনপ্রিয় নেতায় পরিনত হন হিটলার। এক বছরের মধ্যেই পুরো জার্মানি তিনি নিজের নিয়ন্ত্রনে নেন।




নাৎসিরা তাদের বিরোধীপক্ষের অনেককেই হত্যা করেছিল, দেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিল, সামরিক বাহিনীকে নতুন নতুন অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত করেছিল এবং সর্বোপরি একটি সমগ্রতাবাদি ও ফ্যাসিবাদি একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। হিটলার এমন একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহন করেছিলেন যাতে সকল জীবন্ত অঞ্চলকে দখল করে নেয়ার কথা বলা হয়।

বুদ্ধিজীবী, উন্নত সংস্কৃতি এবং শ্রমিক আন্দোলনকে মনেপ্রাণে ঘৃণাকারী ব্যাক্তি ছিলেন হিটলার। ছোটবেলা থেকেই হিটলার ছিলেন ভীষণ রগচাটা, একগুঁয়ে ও জেদি। মা মারা যাওয়ার পর সংসারের সব বন্ধন ছিন্ন করে হিটলার চলে যান ভিয়েনায়। ভিয়েনায় থাকাকালিন সময়েই তার মনের মধ্যে প্রথম জেগে উঠে ইহুদিবিদ্বেষ।ইতোমধ্যে জার্মানির পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জার্মানির সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ১৯৩৩ সালের জানুয়ারি মাসেই জার্মানির শাসন ক্ষমতায় চলে আসে নাৎসিরা। আর হিটলার হয়ে যান জার্মানির চ্যান্সেলর। তার বয়স তখন ৪৪ বছর। চ্যান্সেলর হয়েই হিটলার খুব দ্রুত একনায়কত্ব কায়েম করতে শুরু করেন। তার প্রথম নীতিই ছিল বিরোধী এবং ইহুদি নিধন

১৯৩৪ সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৩৫ সালে নতুন আইন চালু করে দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে বিভক্ত করেন। এ আইনে ইহুদিরা জার্মানিতে বসবাসের অধিকার পেলেও নাগরিকত্ব হারান।




বিশ্বজয়ের স্বপ্নে মত্ত হয়ে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমন করে। এই দিন থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ব মানচিত্রকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত জার্মানির ওপর বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেয় ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে। সন্ধির শর্ত সম্পর্কে জার্মান প্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করে তাদের সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই একতরফা চুক্তিকে জার্মানরা কখনোই মেনে নেয়নি।

জার্মানির জনগণের সেই জনরোষকে কাজে লাগিয়ে তাই মাত্র বিশ বছরের মধ্যেই অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি জার্মানি ভার্সাই চুক্তি ভেঙে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য এককভাবে একজন ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়। কেবলমাত্র তার উচ্চাভিলাষ ও একগুঁয়েমির কারণেই গোটা বিশ্ব একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তিনি আর কেউ নন। অ্যাডলফ হিটলার। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একজন ঘৃণিত ব্যক্তি। তার বিস্ময়কর উত্থান যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। এই ছবিটি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একজন সাধারণ সৈনিক ছিলেন তিনি। হাজারও মানুষের ভিড়ে দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক হিটলারকে।ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম যুদ্ধটির মাত্র ২৫-৩০ বছর না পেরোতেই আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের খড়গ নেমে আসে শান্তিপ্রিয় পৃথিবীবাসীর কপালে। গোটা পৃথিবী বিস্ময় আর বিহ্বল চোখে তাকিয়ে দেখল আরও একটি ধ্বংসযজ্ঞ। দেখল আরও একটি বিশ্বযুদ্ধ।




এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে সভ্য সমাজের সবচেয়ে বড় আর ধ্বংসাত্দক যুদ্ধ বলা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধে গোটা পৃাথবী লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে। জার্মানির সঙ্গে মিত্রপক্ষের যুদ্ধের মাধ্যমে এর সূচনা ঘটে। মিত্রপক্ষে প্রথমদিকে ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং পোল্যান্ড। জার্মানির সঙ্গে পরবর্তীতে ইতালি যুক্ত হয়ে অক্ষশক্তি হিসেবে আত্দপ্রকাশ করে। জার্মানি কর্তৃক দখলকৃত কিছু দেশ হতেও অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সৈন্যবাহিনী প্রেরিত হয়। বিশেষত পূর্ব সীমান্তের যুদ্ধে এসব দেশের সৈন্যরা অংশগ্রহণ করে; অন্যান্য জাতিসমূহ মিত্রশক্তির সঙ্গে যোগ দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানির সঙ্গে যে কোনো ধরনের আক্রমণ থেকে বিরত থাকার মর্মে অনাক্রমণ চুক্তি নামে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছিল। কিন্তু ১৯৪১ সালের ২২ জুন জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে এবং এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তির সঙ্গে যোগ দেয়। মূলত জার্মানি এবং জাপান দুই অক্ষশক্তিই যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করার মাধ্যমে একে যুদ্ধে ডেকে আনে। অপরদিকে চীনের সঙ্গে জাপানের ছিল পুরাতন শত্রুতা; ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিল। এর ফলে চীনও মিত্রপক্ষে যোগদান করে। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্দসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ভয়াবহ এই যুদ্ধে আনুমানিক ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার নাগরিক। নিহতের এই বিশাল সংখ্যার মূল কারণ ছিল গণহত্যা আর অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার। আধুনিক সময়ে সংঘটিত এই যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবেও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার এই যুদ্ধের ভয়াবহতাকে কয়েক হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে একজন ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়। তিনি অ্যাডলফ হিটলার। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।



বিশ্বজুড়ে গণহত্যার মধ্য দিয়ে একের পর এক দেশ দখল করতে থাকেন হিটলার। ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালে হিটলার বাহিনী রাশিয়া আক্রমন করে। প্রথমদিকে জার্মান বাহিনী সর্বত্র জয়লাভ করলেও মিত্রশক্তি যখন সম্মিলিতভাবে অগ্রসর হতে শুরু করে তখন হিটলার বাহিনী ধীরে ধীরে পিছু হটতে থাকে।অবশেষে মিত্র শক্তি বিজয় লাভ করে। ১৯৪৫ সালের মধ্যে জার্মানি ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়। হিটলারের রাজ্যজয় ও বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রান হারাতে হয়। ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয়।


হিটলার বাহিনী ৬০ লক্ষ ইহুদি ছাড়াও সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, কমিউনিস্ট, রোমানি ভাষাগোষ্ঠীর (যাযাবর) জনগন, অন্যান্য স্লাবিক ভাষাভাষী জনগন, প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষদের উপর এই অমানবিক গণহত্যা পরিচালিত করে। নাৎসি অত্যাচারের সকল ঘটনা আমলে নিলে নিহতের সংখ্যা দাড়াতে পারে নব্বই লক্ষ থেকে এক কোটি দশ লক্ষের মত। ইহুদি নিধনের এই ঘটনা ইতিহাসে "হলোকষ্ট" নামে পরিচিত।




১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ দিনগুলিতে হিটলার বার্লিনে ছিলেন। রেড আর্মি যখন বার্লিন প্রায় দখল করে নিচ্ছিল সে রকম একটা সময়ে হিটলার তার প্রেমিকা ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন। ইভা হিটলারকে গভীরভাবে ভালবাসতেন। বিয়ের পর হিটলার তার সঙ্গীদের সঙ্গে শ্যাম্পেন পান করেন। তারপর দুটি চিঠি লিখেন। একটিতে সবকিছুর জন্য তিনি ইহুদিদের দায়ি করেন এবং অপরটিতে নিজের সব সম্পত্তি তিনি পার্টিকে দান করে দেন।




এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মিত্রশক্তির বিজয় হয়। জাতিসংঘ সৃষ্টি হয়। বৃহৎ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের আত্দপ্রকাশ ঘটে আর রাশিয়া-আমেরিকা স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধের মাধ্যমে সর্বপ্রথম পারমাণবিক বোমার ব্যবহার হয় আর এর শিকার হয় জাপান। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্দসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে আধুনিক সময়ের এই যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে মানুষ একে কখনো ভুলতে পারবে না।



৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সাল। বার্লিনের চারদিক অবরোধ করে ফেলেছে লালফৌজ। হিটলার বুঝতে পারেন যেকোনো মুহূর্তে তিনি লালফৌজ বাহিনীর হাতে বন্দি হতে পারেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি বাঙ্কার থেকে ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে তার সহযোগীদের সাথে শেষবারের মত দেখা করে আসেন।




এসময় তিনি তার সহযোগীদের বলেন, তার মৃত্যুর পর যেন তার লাশ এমনভাবে পোড়ান হয় যাতে তার দেহের অংশের কোন চিহ্ন না থাকে। এর কিছুক্ষন পরেই গুলির শব্দ শোনা যায়। হিটলার নিজের পিস্তল দিয়েই আত্মহত্যা করেন। এর আগে তার সদ্য বিবাহিতা বউ ইভা বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
চারদিক থেকে গোলা পড়ছে। তখন হিটলারের দুই সৈন্য তার মৃতদেহ কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে বাগানে নিয়ে যান এবং এ অবস্থাতেই তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন।

জার্মানির একনায়ক অ্যাডলফ হিটলার তার জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন একটি বাঙ্কারের ভেতর। পৃথিবীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জুড়ে আছেন হিটলার। স্বভাবতই তার শেষ দিনগুলোর সঙ্গী সেই বাঙ্কার সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ থাকবে। সেই আগ্রহ মিটেছে ক'দিন আগেই। সেই বাঙ্কারের অপ্রকাশিত কিছু ছবি প্রকাশ করেছে লাইফ ডট কম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকের ওই সময়টাতে হিটলার তার প্রেমিকা ইভা ব্রাউনকে নিয়ে বার্লিনের এক বাঙ্কারে থাকতেন। যুদ্ধে পরাজয় আসন্ন জেনে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল প্রেমিকাসহ ওই বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেন হিটলার।



প্রকাশিত সাদাকালো ছবিগুলোতে ক্ষমতাধর একজন একনায়কের শেষ জীবনের বেশ অগোছালো ও সাদামাটা জীবনযাপন উঠে এসেছে। বাঙ্কারের যে সোফায় হিটলার ও ইভা ঘুমাতেন যুদ্ধকালীন প্রতিবেদকেরা তা পরীক্ষা করে দেখছেন। সোফার ফেব্রিকে লেগেছিল গুলিতে আত্দহত্যার পর ছিটকে পড়া ছোপ ছোপ রক্ত।গোটা বিশ্বধ্বংসের খেলা শেষ করে নিজেই শেষ হয়ে যান অ্যাডলফ হিটলার।

তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া, দৈনিক যুগান্তর ও কয়েকটি ওয়েবসাইট

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

সিপাহী বিপ্লবের ইতিহাস এবং একজন মেজর জিয়া

১৯৪৭ সালে যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা নির্ধারণ করে ভারত ভাগ হয়েছিল, পাকিস্থান নামের এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, সেই দ্বিজাতি তত্ত্ব যে এদেশের মানুষের কোন মঙ্গল বয়ে আনতে পারেনি তা অচিরেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল। এই তথাকথিত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্থানের মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছিল নানা রকম অসঙ্গতি আর অসন্তোষের।ভাষা আন্দোলন এবং ষাটের দশকের ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিকতায় এলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বাহ্নেই শোষক পাকিস্তানী প্রশাসন বুঝতে পেরেছিল এদেশের সহজ-সরল মানুষগুলোকে আর শাসন-শোষন করা যাবেনা।বাঙ্গালী জেগে উঠেছে। এদেশে পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের পতন অনিবার্য।এটা কেবল কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র।এই পরাজয়কে সহজে মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা।তাই হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসর বিশ্বাসঘাতক স্বাধীনতাবিরোধী চক্র–জামাত,আল বদর, আল শামস, রাজাকারদের নজিরবিহীন নৃশংসতা এবং এক ভয়ংকর নীলনকশা বাস্তবায়নের একটি প্রামাণ্য দলিল করে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসম্বর বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য।১৪ই ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্য বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল।৩০ লাখ শহিদের রক্ত এবং ৪ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন হলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ও মুসলিম লীগের এদেশীয় একশ্রেণীর বাঙালি রাজাকার আলবদর বাহিনী গঠন করে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস বাঙালির বিরুদ্ধে সীমাহীন গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগের মতো নির্মম মানবতাবিরোধী অপরাধ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামায়াত ও মুসলিম লীগের বড় নেতারা পালিয়ে গেল, কেউ কেউ গ্রেফতারও হলো।দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ১০ মাসের মাথায় বিশ্বনন্দিত একটি সংবিধান তৈরি হলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হলো নতুন যাত্রা।

দেশি-বিদেশি পরাজিত শত্রুরা নানা ছদ্মাবরণে সংগঠিত হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতিসত্তার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল স্তম্ভ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ১৫ আগস্টের ওই ঘাতকদের নির্দেশেই জেলের অভ্যন্তরে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে, যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের দর্শনের ওপর বাংলাদেশকে ধরে রাখতে পারতেন। ৩ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় ৭ নভেম্বর।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্ষমতালিপ্সু অফিসারদের ক্ষমতা দখল-পুনর্দখলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের এই দিনে 'সিপাহি-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থান' ঘটেছিল।৭ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাসের একটি অবিস্মরণীয় দিন।সেনাবাহিনীতে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিরোধ তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলছিল, তারই উদগিরণ ঘটে ৭ নভেম্বর এবং একই সঙ্গে জনমনে ও সেনাবাহিনীতে সবকিছু স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। তাই ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস বলে দাবি করা হয়।১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এক ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হবার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন ১৫ই অগাষ্টের ঘটনার মুল নায়কেরা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশারফ এই ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি।বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল মেজরের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য এবং সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ডকে ফিরিয়ে আনার জন্য তৎকালীন চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) এবং ঢাকায় অবস্থিত ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর সম্পূর্ণ রক্তপাতহীন একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান নিজ বাসায় বন্দি হন। খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদচ্যুত হন। বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজররা সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু খালেদ মোশাররফের কিছু অদূরদর্শিতার কারণে মাত্র চার দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর আরেকটি পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে। ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের কারিগর ছিলেন মুলত কর্ণেল তাহের।

কর্নেল (অবঃ) আবু তাহের সে সময় চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। কর্নেল তাহের ছিলেন জিয়াউর রহমানের একজন বিশেষ শুভাকাংখী। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। সৈনিক-অফিসার বৈষম্য তার পছন্দ ছিলনা। তার এই নীতির জন্য তাহের সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকদের মাঝেও দারুন জনপ্রিয় ছিলেন। কর্নেল তাহের বিশ্বাস করতেন জিয়াও তারই আদর্শের লোক।ঢাকাতে তার অনুগত ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহীদের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার নির্দেশ দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রওনা হন, এ সময় তার সফর সঙ্গী ছিল শত শত জাসদ কর্মী। কর্নেল তাহেরের এই পাল্টা অভ্যুত্থান সফল হয় ৭ই নভেম্বর। কর্নেল তাহের, জিয়াউর রহমানকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। ঐ দিনই পাল্টা অভ্যুত্থানে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জেনারেল খালেদ মোশাররফকে হত্যা করে।

কথা ছিল, জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনা হবে। তারপর জাসদের অফিসে তাঁকে এনে তাহেরদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হবে। পরে সিপাহী-জনতার এক সমাবেশ হবে। সেখানে বক্তব্য রাখবেন জিয়া আর তাহের। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। জিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হতে সম্মত হন না। উর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা তাঁকে পরামর্শ দিতে থাকেন। তাহের জিয়াকে ভাষণ দিতে বলেন। জিয়া ভাষণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তাহের বুঝতে পারেন জিয়া তাঁদের সাথে আর থাকছেন না। তিনি পুনরায় সংগঠিত হতে থাকেন। কিন্তু জিয়া বুঝতে পারেন ক্ষমতায় টিকতে হলে তাহেরসহ জাসদকে সরাতে হবে। সেই অনুযায়ী গ্রেফতার হতে থাকেন জাসদের সব নেতারা। তাহেরও গ্রেফতার হন। শুরু হয় এক প্রহসনের এক বিচার। গোপন আদালতের সেই বিচারে ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে আলোকিত উজ্জ্বল সূর্য আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম তা ৭ নভেম্বরের কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। তাই ৭ নভেম্বরকে বিপ্লব বললে প্রকৃত অর্থে বিপ্লব শব্দটিকে অবমাননা ও ছোট করা হয়। কেননা ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে তা একেবারেই বেমানান।

৭ নভেম্বর - সিপাহী বিপ্লবের সত্যি ইতিহাস এবং জিয়াকে কেন মীর জাফর বলা হয় জানতে নিচের লিঙ্ক ক্লিক করুন.....
https://www.facebook.com/NogorBowlJames/videos/648774211932312/

শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

বাংলাদেশ দিন দিন এক আতংক রাষ্ট্রে পরিনত হচ্ছে



বাংলাদেশ দিন দিন এক হিংস্র আতংক রাষ্ট্রে পরিনত হচ্ছে।সমগ্র জাতি আজ স্তব্ধ ও নিস্তব্ধ।কারন সমগ্র জাতিকে আজ,ঘাতকের চাপাতি কিংবা বুলেট তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি দেশের আরাজকতা ভয়ংকর পরিস্হিত তাই প্রমান করে। বছরের শুরু থেকেই প্রকাশ্য দিবা লোকে একে একে বেশ কয়েক জন মুক্তমনা ব্লগার হত্যা দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে এই হিংস্রতা দাঁড়িয়েছে বিদেশী নাগরিক থেকে শুরু করে প্রকাশক,পুলিশ এবং কি সাধারন মানুষ।এ যেন রক্তের হলি খেলা চলছে সাম্প্রতিক কাল ধরে।


দেশে দিন দিন বেড়েই চলছে চাপাতির কোপে হত্যাযজ্ঞ।হত্যার কারণে দেশের মুক্ত-চিন্তক মানুষ,সুশীল সমাজ লেখক,প্রকাশক এবং কি এখন সাধারণ জনগণও চিন্তিত। দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও বাহিনী রয়েছে। এছাড়া অপরাধ তদন্তের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। দিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, রাহাজানিসহ নানা রকম দুষ্কর্ম। রোধ করা যাচ্ছে না দূস্কৃতদের। চাঁদাবাজি, খুনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে দেশের কোথাও না কোথাও।

দুই বিদেশি খুন,গর্ভবতী মায়ের পেটে লাথি মেরে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই শিশুকে বিদায় জানানো পরিবারের বোবা মুখ,রাতের আঁধারে ধর্মীয় উৎসবে বোমা হামলা,উৎকন্ঠাময় কাশেম স্যারের শোকাহত মুখ, দীপনের রক্তাক্ত লাশ, টুটুল, রনপদীপমের রক্তভেজা শরীর আর অস্ফুট গোঙানি,ফুচকা বিক্রেতা পরিবারের আর্তনাদ,১২ বছরের মেয়ে হারানো পরিবারের উৎকণ্ঠা,পুলিশ চেকপোস্ট এর নিরাপত্তা- সেখানে যারা দায়িত্বে থাকেন তাদের প্রস্ততি নিয়ে প্রথম আলোর রিপোর্ট প্রকাশের সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই আশুলিয়ায় আরো একজন পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা দেখে যারা আজ এসবকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করেন তাদের প্রতি আমার অভিযোগ দেওয়ার মত সাহস নাই।অপর দিকে গন মাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারছি হঠাৎ করে বিমান বন্দর ও কারাগার সমুহের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা আশংকা করছে সরকার, কিন্তু এই বিষয়ে ও তাদের নির্লিপ্ত বক্তব্য হচ্ছে এগুলো প্রচলিত ব্যাবস্থারই অংশ।

তবে স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক,পরিকল্পিত ও বিচ্ছিন্ন, এই শব্দ গুলোর অর্থ বোঝার মত বিত্তবান বুদ্ধি আমার বা আমার মতো আমজনতা মার্কা বাংলাদেশের কোটি মানুষের নেই বলে মনে হচ্ছে।

সামাজিক অবক্ষয় আজ সর্বগ্রাসী। সর্বক্ষেত্রে সামাজিক অস্থিরতা প্রতিদিনের জীবন যাপনকে অতিশয় দুর্বিষহ করে তুলছে। সমাজের কর্তা ব্যক্তিরা কখনও চান না সৎ সাহস নিয়ে কথা বলতে। যেখানে লাভ-লোকসানের ব্যাপার আছে সেখানেই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চান। আর যারা দুর্বল, যাদের সামাজিক ও গোষ্ঠীগতভাবে জোর কম তাদের উপর চান সমাজপতিরা শক্তি দেখাতে। অবক্ষয় এতটা গ্রাস করেছে যে, মানুষ বাড়িঘরে ও নিরাপদে থাকতে পারছে না। আইন আছে, কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ নেই। অন্যায়ের বিবেচনাবোধ যেন নির্বাসিত হয়েছে। সমাজে ক্রোধ, প্রতিহিংসা ও ক্ষোভ বেড়ে চলেছে।

যারা দায়িত্তপ্রাপ্তআছেন তারা সাদা কে সাদা কালো কে কালো বলুন, আমরা বাংলাদেশ এর সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আপনাদের সাথে ছিলাম, আছি, থাকবো।দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায়। কিন্তু স্বাধীন দেশে আমরা কতটা নিরাপদে আছি-এই প্রশ্নটি মুখ্য হয়ে উঠেছে।

একের পর এক ব্লগার হত্যার কারণ প্রশাসন এবং সরকারের নিরবতা

একবিংশ শতাব্দী যাকে বলা হছে ডিজিটাল যুগ,এই যুগ কে কেন্দ্র করে মানুষ অগ্রসর হচ্ছে নতুন এর দিকে।আর এই নতুন সময় চলছে ইন্টারনেট ভিত্তিক। ইন্টারনেট এ কোনো প্রকার কাজে শারীরিক ভাবে থাকার ও প্রয়োজন নেই, তাই এই মাধ্যমকে বলা হয়ে থাকে সেফ জোন। কিন্তু এখন এই সেফ জোন হচ্ছে মৃত্যুর প্রধান কারণ।গত কয়েক বছরে হয়েছে একাধিক ব্লগার হত্যা। এই ব্লগার হত্যার সব কারনই প্রায় একই ছিল।

ব্লগার ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনসহ ৫ ব্লগার খুন হয়েছেন চলতি বছরে এবং দুই বছরে প্রকাশ্যে ও গোপনে নয়জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে।হামলা হয়েছে বেশ কয়েকজনের ওপর। প্রতিটি ঘটনার পর মামলা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে একটি মামলার বিচারও শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত একাধিক মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। ব্লগারদের ওপর হামলা হচ্ছে কিন্তু বিচার হচ্ছে না। মূলত বিচারহীনতার কারণে একের পর এক মুক্তমনা ব্লগার খুন হচ্ছেন।

হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক বা টুইটারে হত্যাকারীরা হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাসও দিয়েছে। এসব স্ট্যাটাসে প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি অথবা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগ দেখানো হয়েছে।ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যে কয়েকজনকে আটক করা গেছে তাদের বেশিরভাগের সঙ্গে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।আড়াই বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ৭ জন মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক ও ব্লগার মুসলিম জঙ্গীদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন।ঘাতকচক্রও খুনের পর বীরদর্পে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়ও স্বীকার করেছে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটক করতে পারছে না। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ আসছে ভুক্তভোগী পরিবার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট এবং সাধারন সুশীল মানুষের কাছ থেকে।

ব্লগার খুনিরা যে বেপরোয়া, একের পর এক হত্যাকা- তারই বহিঃপ্রকাশ। একটি খুনের পর খুনিচক্র ধরা না পড়ায় তারা আরেকটি খুনের সাহস পাচ্ছে। খুনিদের ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মুক্তমত প্রকাশে মানুষের মধ্যে অনীহা সৃষ্টি হবে। রাজনীতিতে ধর্মের জোরালো প্রভাবের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। যে কারণে একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করা হলেও বিচারের বিষয়টি সরকারের দিক থেকে তেমন কোন গুরুত্ব পাচ্ছে না।

সারাদেশে একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটছে কিন্তু সরকার নির্বিকার, হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনছে না। এতে মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষদের উপর ক্রমান্বয়ে আক্রমন বাড়ছে যা হত্যাকারীদের মদদ দেওয়ার সামিল। সরকার যদি পূর্বে ব্লগার হত্যার সাথে জড়িত মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির বিচারের আওতায় এনে অপরাধীদের শাস্তি দিত তাহলে দেশে একের পর এক বর্বর হত্যাকান্ড ঘটতো না।

ব্লগার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি। আর বাংলাদেশে হত্যাকারীরা পার পেয়ে যায়- বৈশ্বিকভাবে দেশটি এভাবে চিহ্নিত হওয়াটা যথার্য। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষগুলো ব্লগারদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কয়েকজন ব্লগার নির্মমভাবে হত্যার শিকার হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে মামলাগুলো তদন্তও করছে না। এটা এখন সকলের জানা হয়ে গেছে খুব ভালো করেই। একের পর এক ব্লগার হত্যার মধ্য দিয়ে এ প্রজন্মের মেধাবীদের যে লাশের মিছিল তৈরি হয়েছে তা অচিরেই বন্ধ করার জন্য সরকারকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।দেশের প্রগতিশীল শিক্ষক, লেখক, ব্লগার হত্যার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তা দিন দিন ভয়ঙ্কর থেকে আরো ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিজ্ঞান ভিত্তিক মতামত, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রগঠনে নতুন প্রজন্মের পক্ষে যারাই লেখা লেখি করছে, তারাই লাশ হচ্ছে।

একটা সংগঠন, যার নাম ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’, তারা একের পর এক হত্যার কৃতিত্ব দাবি করছে৷।ব্লগারকে একইভাবে হত্যা করা হলেও ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এর জড়িত থাকার ‘সন্দেহ’ আর ‘ধারণা’ করা ছাড়া ঘটনা তদন্তে তেমন কোন সফলতাই দেখাতে পারেনি পুলিশ।

সন্ত্রাস কিংবা যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রেই সত্যনিষ্ঠ তদন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাতে প্রকৃত অপরাধীই যেন শাস্তি পায়। কিন্তু এর পরিবর্তে যদি অনুরাগ-বিরাগ কিংবা অন্য কোন বিষয় প্রভাব ফেলার সুযোগ পায়, তাহলে প্রকৃত অপরাধীর বদলে নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তির আওতায় চলে যেতে পারে।কারণ এখন রাজনৈতিক দলগুলোও একে অপরের দোষারুপে ব্যাস্ত।

প্রচলিত সমাজ এবং বিভিন্ন প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলো মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে কি বলে আসুন জেনে নিই

প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে।

এর তিনটি অংশ, ১মটি চারদিন স্থায়ী হয় (৪-৭ দিন) এবং একে মিনস্ট্রাল ফেজ, ২য়টি ১০দিন (৮-১০ দিন) একে প্রলিফারেটিভ ফেজ এবং ৩য়টি ১৪ দিন (১০-১৪ দিন) স্থায়ী হয় একে সেক্রেটরি ফেজ বলা হয়।

মিনস্ট্রাল ফেজ এই যোনি পথে রক্ত বের হয়। ৪-৭ দিন স্থায়ী এই রক্তপাতে ভেঙ্গে যাওয়া রক্তকনিকা ছাড়াও এর সাথে শ্বেত কনিকা, জরায়ুমুখের মিউকাস, জরায়ুর নিঃসৃত আবরনি, ব্যাকটেরিয়া, প্লাজমিন, প্রস্টাগ্লানডিন এবং অনিষিক্ত ডিম্বানু থেকে থাকে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের যৌথ ক্রিয়ার এই পর্বটি ঘটে।

পিরিয়ড নিয়ে শুধু এদেশে নয়, সারা পৃথিবার সমাজ ব্যবস্থাতেই অনেক রকম মিথ প্রচলিত। প্রাচীন রোমে, প্লিনি দ্য এল্ডার তাঁর ন্যাচারাল হিস্ট্রি-তে লিখেছিলেন যেসব কুকুর পিরিয়ডের রক্তের স্বাদ পেয়েছে, তারা জলাতঙ্কগ্রস্ত এবং উন্মাদ হয়ে যেত, মাদী ঘোড়ার গর্ভপাত হয়ে যেত এবং শস্যক্ষেতের কাছে ঋতুমতী নারী গেলে নাকি সেই ক্ষেতের সব ফসল নষ্ট হয়ে যেত! ইউরোপে আবার বিশ্বাস করা হতো, ঋতুমতী নারীরা জ্যাম ছুঁলে তা নষ্ট হয়ে যাবে অথবা ওয়াইনে হাত দিলে তা ভিনিগার হয়ে যাবে!

এসময় কোনো মেয়ে গাছে উঠলে সে গাছে ফল ধরে না। এসময় রান্নাঘরে ঢুকতে মানা। পুজার ঘরে ঢুকতে মানা, মন্দিরে ঢুকতে মানা, গির্জায় ঢুকতে মানা, নামাজ পড়তে মানা, রোজা রাখা মানা, ধর্ম গ্রন্থ ধরতে মানা। কারণ একটাই তোমার পিরিয়ড চলছে, তুমি অশুদ্ধ, অপবিত্র! অথচ পিরিয়ড নামক যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটিকে আজও মানুষ অশুদ্ধ, অপরিচ্ছন্ন মনে করেন, তার কারণেই কিন্তু টিকে আছে এই মানবসভ্যতা। রেনেসাঁ যুগে নারীর ঋতুস্রাবের রক্তের প্রতি মানুষের ঘৃণা এবং ভয় এতো বেশি ছিলো যে একে বিষ বলে ধারণা করা হতো। বলা হতো এই বিষ থেকে তৈরি হয় বিষাক্ত বাষ্প এবং তা নারীর মাঝে হিস্টেরিয়ার উদ্রেক করে। বিংশ শতাব্দীতে এসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এখনো পর্যন্ত ইন্ডিয়ার কিছু জায়গায় ঋতুস্রাবের প্রতি আছে ভীষণ ট্যাবু। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে কোনো নারী রান্না করলে সেই খাবার খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় এমনও নিয়ম আছে যে এই সময়টা নারীকে কাটাতে হবে গোয়ালঘরে।এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে নানা কথা।তবে গ্রন্থ গুলোর একটা কমন তসবি হচ্ছে পিরিয়ড চলা কালীন মেয়ে অপবিত্র থাকে এবং সেই সময় তারে দিয়ে কিছু করা বা ধর্মীয় কোন কাজ করানো যাবে না।এই শতাব্দীতে একটি ভয়াবহ কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে,নারীর পিরিয়ড চলাকালীন সময় যদি কোন পুরুষ ঐ নারীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হয় তাহলে সেই পুরুষের লিঙ্গ ছোট হয়ে যাবে।অথচ বিজ্ঞান সম্মত ভাবে কথাটা কেবল উদ্ভটই হিসাবে প্রমানিত হয়।আজ থেকে দু-হাজার বছর আগে, যাকে বলা হতো Biblical Times, এ ঋতু চলাকালীন সময়ে সেই নারীকে এতোটাই অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য মনে করা হতো যে এই পুরো সময়টা তাকে পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হবে।

পিরিয়ড নিয়ে ধর্মও কম কুসংস্কারের জন্ম দেয়নি। ছোটবেলায় অধিকাংশ মেয়েকে বোঝানো হয় পিরিয়ড পাপের ফল, তা ওই ধর্ম থেকেই এসেছে। অ্যাডামকে যখন ইভ নিষিদ্ধ গন্ধম খেতে প্ররোচিত করে এবং খাওয়ায় ঈশ্বর তখন রাগান্বিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে গন্ধমের নিষিদ্ধ রসটাকেই ইভের পাপের স্মারকস্বরুপ তার শরীরে দেন, যাতে বংশ পরম্পরায় এ পাপের কথা তারা স্মরণ রাখতে পারে। ফলে ধর্মগ্রন্থে পিরিয়ডকে অপবিত্র শুধু তাই নয় পিরিয়ডের সময় নারীর পুরো শরীরটাকেই অপবিত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পিরিয়ডের সময় স্ত্রী সঙ্গম থেকে বিরত থাকার জন্য কুরআনে নির্দেশ করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে তো পিরিয়ডের সময় স্ত্রীকে আলাদা ঘরে এক প্রকার বন্দী করে রাখার কথা বলা হয়েছে।

 সনাতন ধর্ম পিরিয়ড বিষয়ে কি নির্দেশ দিয়েছে? উজ্জয়িনীর কামশাস্ত্রের “শিব পার্বতীর কথোপকথন” অধ্যায় থেকে ‘ঋতুকালে নারীর কর্তব্য’ আলোচনা করা হলোঃ

যেদিন প্রথম রজঃদর্শন হবে সেদিন থেকে তিন রাত্রি পর্যন্ত রমণী সবকিছু পরিত্যাগ করে ঘরের মধ্যে সর্বদা আবদ্ধ থাকবে। যাতে অন্য কেউ তাকে না দেখতে পায়। স্নান করবে না, অলংকার পরবে না। এক বস্ত্র পরিধান করবে। দীনাভাবে মুখ নিচু করে বসে থাকবে। কারো সাথে কোন কথা বলবে না। নিজের হাত, পা ও চোখ থাকবে স্থির। দিনের শেষে মাটির হাড়িতে তৈরি করা ভাত সে খাবে এবং ভূমিতে সাধারণভাবে শয্যা করে নিদ্রা যাবে। এইভাবে তিনদিন কেটে যাওয়ার পর চতুর্থ দিনে সূর্য উদিত হওয়ার পর স্নান সেরে কাঁচা কাপড় পড়ে সে শুদ্ধা হবে।

শাস্ত্রে লেখা আছে, যে নারী রজঃস্বলা হবে, সে নারী প্রথম তিন দিন মধু, মাংস ভোজন, গন্ধমাল্যদি ধারণ, দিবাভাগে শয়ন, তামাক সেবন, মুখ শোধন, গন্ধদ্রব্য ব্যবহার, বেশভূষা ধারণ, রোদন, আরোহণ, অগ্নিস্পর্শন – এসব কাজ মোটেও করবে না। কোন কোন শাস্ত্রকার বলেছেন, নারী ঋতুমতী হলে প্রথম তিনদিন চোখে কাজল পরবে না। স্নান, স্থানান্তরে গমন, দন্তধাবন ও গ্রহনক্ষত্রাদির দর্শন করবে না।

মহাদেব বলেন, হে প্রিয়, বর্তমানে শাস্ত্রে যেসব বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে তা সংক্ষেপে তোমাকে বর্ণনা করছি। ঋতুকাল থেকে ষোড়শ দিনের মধ্যে যুগ্ম দিনে নারী গমন করা শ্রেয়। কিন্তু দ্বিতীয় ও চতুর্থ দিনে এটি নিষিদ্ধ।

ঋতুমতী নারী জাতি ৩ দিন অপবিত্র বলে গণ্য হয়। এই সময় তারা কি কি বিধিনিষেধ মেনে চলবে তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করব এখন-রাত্রির প্রথম ও শেষ প্রহরে নারী গমন করা সমীচীন নয়। ঐ দুই প্রহরে শাস্ত্রচর্চা করে কাটানো উচিৎ। এছাড়া বাকি দুটি প্রহরে স্ত্রী সঙ্গ লাভ করলে মোক্ষপ্রাপ্তি ঘটে। এই নিয়মের অন্যথা করলে নরক প্রাপ্তি ঘটে। সেই ব্যাক্তি পশুযোনি লাভ করে। পিতামাতার সহবাসের দোষে তাদের সন্তানাদি দুঃখ কষ্ট লাভ করে।

ঋতুর প্রথম দিন সহবাসের ফলে সন্তান জন্মালে সেই সন্তান দীর্ঘায়ু হয় না। দ্বিতীয় দিনে সহবাসের ফলে সন্তানের জন্ম হলে সেই সন্তান প্রসবাগারেই মারা যায়। তৃতীয় দিনের সহবাসের ফলে বিকলাঙ্গ বা স্বল্পায়ু সন্তান জন্মগ্রহণ করতে পারে। শরীরতত্ত্ব বিষয়ে মহামতি সুশ্রুতের এইসব উপদেশ অত্যান্ত মূল্যবান। মহর্ষি চরক প্রভৃতি আয়ুর্বেদাচার্যগণও এই ধরণের উপদেশ দিয়েছেন।

ঋতুমতী নারীর তিনদিন গায়ে তেল মাখা, নখ কাঁটা, কান্নাকাটি করা, চোখে কাজল দেয়া, দিবা নিদ্রা, স্নান, সুগন্ধি দ্রব্য গায়ে লেপন, অট্টহাসি, অতিরিক্ত কথাবার্তা, কেশবিন্যাস, বিকট আওয়াজ শোনা, অধিক বায়ু সেবন এবং অতিরিক্ত কাজ করা নিষিদ্ধ। কেননা ঐ সব কর্মের ফলে তার রক্ত দুষিত হয়ে নানারকম ব্যধির সঞ্চার হতে পারে।

ইসলামের দৃষ্টিতে এসময় যৌন মিলন হারাম। ইসলামের দৃষ্টিতে মাসিকের সময় যৌন মিলনঃ

পবিত্র কুরআ’ন এ আল্লাহ বলেছেন, “লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারা/আয়াত-২২২)

কিন্তু নিকটবর্তী হয়ো না’র অর্থ হল সঙ্গমের জন্য তাঁদের কাছে যেও না। অর্থাৎ যোনিপথে সঙ্গম হারাম। পায়খানারদ্বারেও সঙ্গম হারাম। আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বলেন,

“আল্লাহ আযযা অজাল্ল (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষের মলদ্বারে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে।” (তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, সহিহুল জামে ৭৮০১ নং)

তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি কোন ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন গনকের কাছে উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।” (অর্থাৎ কুরআনকেই সে অবিশ্বাস অ অমান্য করে। কারণ, কুরআনে এক সব কুকর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।) (আহমাদ ২/৪০৮, ৪৭৬, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)

সুতরাং স্বামীর জন্য জায়েয হবে না স্ত্রী সহবাস করা যতক্ষন না স্ত্রী হায়েয থেকে মুক্ত হয়ে গোসল করে পবিত্র হয়।

ঋতুচলাকালীন সময়ে নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা স্থাপন করা হয় বাইবেলের লেভিটিকাস বইতে।

নারীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়েই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত ছিল ভয়াবহ সব কুসংস্কার যা এখনো বজায় আছে বহাল তবিয়তে। দেখুন কালের সাথে সাথে কী করে বদলেছে এসব কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। বদলে গেলেও মানুষের মধ্য থেকে পিরিয়ড নিয়ে ভয় ও ঘৃণা দূর হয়নি মোটেই।তার মধ্যে রয়েছে আবার বিভিন্ন গ্রন্থের ভয়াবহ ছোবল।আপনার আশেপাশে এমনকি আপনার পরিবারের পুরুষ এমনকি নারীদের মাঝেও রয়েছে এমনই সব কুসংস্কার।

ভালোবাসি ভাবনা



তোকে নিয়ে নতুন একটা স্বপ্ন দেখালাম
জানি না বাস্তব হবে কি না...!!
তবে স্বপ্ন দেখাতো দোষের কিছু না
তাই হয়তো এতো গভীরে চলে গেলাম !!

ভালোবাসা তোমাকে মুক্তি দিলাম
শঙ্খ গাংচিলের মত মুক্ত আকাশে
আমি ছোট্ট খাচায় বন্দী নির্বাক চোখে
ভালোবাসা আমি দেখব তোমায়।

সময় পেলে এসো আমার ছোট্ট খাচায়
তোমাকে আলিঙ্গন করব,আদর করব
সোহাগ করে বলব হৃদয়ের যত না বলা কথা।

ভালোবাসা তোমার জন্য সুপ্রভাত
আমার জন্য তিমির রাত।
ভালোবাসা তোমার জন্য জোছনা
আমার জন্য অমাবস্যার পূর্নিমা।
ভালোবাসা তুমি শান্ত শীতল পাটি
আমি উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরি।
ভালোবাসা তোমার জন্য শান্ত সমুদ্র
আমার জন্য উত্তাল ঢেউ।

তোমার সাথে কতই না অমিল
তবু তোমায় ভালোবাসি।
ইচ্ছে করে তোমায় আলিঙ্গন করি
ভালোবাসা তোমাকে পেতে ইচ্ছা করে
ছুঁতে ইচ্ছা করে কাছে পেতে ইচ্ছা করে।

এটাই কি আমার অপরাধ ভালোবাসা....!!
তোমাকে ভালোবেসে না হয় হলাম অপরাধী

তবু তোমায় যে বড্ড ভালোবাসি ভাবনা তোমায়।।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক হাল

প্রতিটি গণতন্ত্রের মূলভিত্তি জনগণ। যেখানে জনগণের উপস্থিতি নেই, সেখানে কোনোদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। বিরোধী দল বা শাসক দলের আস্থা বৃদ্ধির একমাত্র হাতিয়ার জনগণ। জনগণের উপর আস্থা থাকলে বিরোধী দলের আন্দোলন কিংবা শাসক দলের শাসন সবসময় গণমুখী হয়। কিন্তু গণতন্ত্রে জনগণের ঘাটতি মানেই রাজনীতিতে মূল্যবোধের অবক্ষয়।দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো উন্নয়ন হবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দু’দলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। তবে বিরোধী দল ছাড়া কখনই পার্লামেন্ট চলে না।“বিরোধী দল” শব্দটি একটি গণতান্ত্রিক শব্দ। আমাদের দেশের মত সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে এই শব্দটির সাথে আমরা খুবই পরিচিত। একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা আয়না স্বরূপ। সরকার যখন কোনক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হয় বিরোধী দল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দূরদর্শী সরকার হলে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার চেষ্টা করে এটাই বাস্তবতা এবং একটি আদর্শবাদী সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


সরকারের কোন অগণতান্ত্রিক, জনগণ ও দেশের জন্য অকল্যাণকর কাজ ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা ও সরকারকে পরামর্শ দেয়াই ও সরকারকে সহযোগিতা করাই হল বিরোধী দলের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর সংজ্ঞা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে দলই সরকারে থাকুক না কেন তাদের অন্যতম এজেন্ডা হয়ে ওঠে বিরোধী দলকে দমন করা। তাদের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। জেল, যুলুম, অযৌক্তিক, রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলা দ্বারা প্রতিহত করা হয় তাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে।


কোন দলের পক্ষে আজও সম্ভব হয়নি বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে দেশের কাজ করা। আজীবনই আমাদের জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারটি খালি থাকে। সরকার তাদের সংসদে যোগ দেবার নামমাত্র আহবান জানায়।আর সেই আহবানের সাড়া দিয়ে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে সংসদের সেই আসনটি ভরাট হয়েছে কিনা তা আমার জানা নাই ঠিক।কিন্তু আবার সেই বিরোধী দলই আবার বলবে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে না,বাজেট ঠিকমত হচ্ছে না,মানুষ নানা রকম দূর্ভোগে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি বলে দেশের মানুষকে পাগল করতে পাঁরে কিন্তু সে এটা জানে না যে,বিরোধী দল থেকে যেমন সমালোচনা করা যায় ঠিক তেমনই দেশের জন্য কাজ করে উন্নয়ন এবং পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের কাছে প্রাধান্যও বৃদ্ধি করা যায়।অপরদিকে আমাদের দেশের বিরোধী দলের কোন পরামর্শও সরকার দল আমলে নেয়।আমাদের দেশে প্রধান দল হচ্ছে আওয়ামি-লীগ এবং বিএনপি।এই দুইটা দলের মাঝেই যেকোন একটা প্রধান বিরোধী দল থাকে।আর বাকী দল যেগুলা আছে সেগুলার কথা না বলাই ভালো।কারন সেগুলার কোমড় এবং হাটু দুইটাই ভাঙ্গা মেরুদণ্ড বিহীন দল।এদের সকালে এক কথা আবার বিকালে এক কথা।সেহেতু এদের কথা না বাড়িয়ে সরকার এবং বিরোধী দল নিয়েই বলা যাক।


আমরা যদি এই সঙ্কীর্ণতা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে না পারি তাহলে নিজেদের উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। কারণ একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিরোধী দল যদি না থাকত তবে সরকারের কোনো ভুলই চোখে পড়ত না এবং কোন কাজ সমালোচনাহীনভাবে সুচারুরূপে শেষ হতো না।নয়তবা, সরকার জনগণ হতে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ হতে বিচ্চিন্ন কোনো দলের পক্ষে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আদৌ সম্ভব নয়।


কিন্তু আমাদের দেশের দুটি প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক ও মানসিক দূরত্ব এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এই দূরত্ব ঘুচে যাওয়ার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই।তারা একদল আরেক দলের পিছনে সাপে নেওলের সম্পর্ক করে আছে।একদিকে বিরোধীদল সাধারন মানুষকে সাথে না নিয়ে বরং জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে জ্বালাও পোড়াওয়ের নামে আন্দোলন করে অন্যদিকে সরকার দল বিরোধীদলকে দমানোর জন্য নেতা কর্মী গ্রেফতার এবং যৌক্তিক অযৌক্তিক মামলা দিয়ে জেলে পুড়ে রাখে।জনগণ আজ উভয় দলের ব্যবহারে ক্ষুব্দ।অথচ এটা তাদের স্মরণে থাকে না যে,দেশের জনগণ তাদের ভোট না দিলে ক্ষমতার মসনদেও বসার সুযোগ হতো না।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপের দিকে যাচ্ছে।দেশে আলোচিত খুন(ব্লগার,বিদেশী),নারী নির্যাতন,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,সংখ্যালঘুদের জমি দখল এবং উৎখাত,স্বাধীনতার বিপক্ষ দল গুলোর অমানবিক তান্ডব,জঙ্গীবাদ,ধর্ষন,ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের উৎপাত চোখে পড়ার মত প্রতিদিন খবরের হেড লাইন(এমপি মন্ত্রী থেকে সাধারন মাঠ পর্যায়ের কর্মী),প্রশাসন দিনদিন ক্ষমতার জালে আটকে পড়ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।এই খারাপ অবস্থার জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। ফলে ক্রমজনিত খারাপ পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। একটি স্বাধীন সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক দেশে এমন অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।একদিকে বিরোধী দল যেমন যৌক্তিক সমালোচনা না করে ক্ষমতা লাভের জন্য বিভিন্ন অযৌক্তিক কথা বলে।যেমন,ঈদের পর সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নামবে,১০ম জাতীয় নির্বাচন কে প্রত্যাখান করে ক্ষমতা লাভের জন্য অপচেষ্টা,দেশের বাইরে কিংবা বিভিন্ন জাগায় সরকারের,দেশের,বিভিন্ন অন্যায়ের কথা উল্লেখ না করেই বলা দেশ অপরিস্থিশীল,৫ জানুয়ারির নির্বাচন অবৈধ বলে নিজের ক্ষমতা লাভের জন্য সমালোচনা করা।কিন্তু কখনো এটা বলে না যে,দেশের মানুষ কি কি সমস্যায় ভুগছে,দেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়,দেশের কোন কোন জাগায় এখনো ঠিকমত উন্নয়নের ছোয়া পাচ্ছে না,সরকারকে কোন সহযোগীতার আশ্বাস না দিয়ে শুধু ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বৈধ না বলেই দাবি করা বিরোধী দলের যেন প্রধান কাজ।সরকারের যদি সঠিকভাবে সমালোচনা করতে পারত বিরোধী দল,দেশের সরকারের যেমন উন্নয়ন করতে সুবিধা হতো,তেমনি বিভিন্ন ভুল ত্রুটি,অনিয়ম সরকারের চোখে পড়ত অন্যদিকে এসবের সমালোচনা করে জনগণের যেমন নজর কারা যেত বিরোধী দলের তেমনি বিরোধী দলের কোন যৌক্তিক আন্দোলনে মানুষের সমর্থন পেত।বিরোধীদলের উচিত বিভিন্ন সরকার দলীয়র অপকান্ড,দূর্নীতির পাশাপাশি উন্নয়নের দিক গুলা তুলে ধরে সাধারন মানুষের কাছে খোলাসা করা।


অবাক ব্যাপার যে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এসব বিষয়ে আন্দোলন না করেই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দিশাহারা হয়ে পড়েছে। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে হলে জনসমর্থন নিয়েই যেতে হবে। জনসমর্থন ছাড়া বাংলাদেশে পেশিশক্তির মাধ্যমে বা বন্দুকের নলের জোরে আর ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং বিরোধী দলের উচিত হবে, প্রথমে নিজের ঘর গোছানো এবং পরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা।তারপর ক্ষমতা যাওয়ার স্বপ্ন দেখা উচিত বিরোধী দলের।তাছাড়া বিরোধী দল সরকার দলীয়র চাপে যেভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এতে করে তাদের আর আগের অবস্থানে ফিরে আসা সম্ভব হবে না বলে আমি মনে করি। এ দেশের খেটে খাওয়া জনগণের মৌলিক চাহিদা যদি কোনো সরকার পূরণ করতে পারে তবে সে জনগণ কেন সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। কোনো সরকারের দ্বারা জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটলে, ওই সরকারকে কেউ ক্ষমতাচ্যুতও করতে পারে না। অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখল সে তো ভিন্ন বিষয়।


দেশের জনগণ যে সীমাহীন সমস্যা ও দুর্ভোগের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে এ থেকে তাদের উদ্ধার করার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের, হোন তিনি সরকারি কিংবা বিরোধী দলের। যারা দেশ পরিচালনা করেন কিংবা দিকনির্দেশনা দেন, তাদের সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা এবং সুনজর ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। জনগণ কেবল পণ্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ঠ হবে এবং যানজটে পড়ে আটকে থাকবে।

বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও কর্মসংস্থান সঙ্কটে পড়বে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা পদে পদে বিঘ্নিত হবে। অপরদিকে সরকার যদি জনগণকে দেয়া অঙ্গীকার ভুলে গিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে দাবিদাওয়া উপেক্ষা করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বিরোধী দল নিহ্নিন করার চক্রান্তে মেতে থাকে এতে যেমন তাদের জন্য আত্মঘাতী তেমনি দেশ চলে যায় সংঘাতের মধ্যে।


রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশপ্রেম থাকলে, জনগণের সমস্যা নিজেদের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা সমাধানে এগিয়ে এলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন হওয়ার কথা নয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। যে দেশে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মহোৎসব চলে, যে দেশে সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো সুসম্পর্ক নেই, জাতীয় সংসদ বছরের পর বছর অকার্যকর থাকে, আইনের শাসন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়, শিল্পবিকাশ বিরোধী নীতির কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় না, সে দেশে জনস্বার্থ উপেক্ষিত থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। প্রতিটি স্বাধীন দেশের মানুষ দেশের উন্নয়ন চাই । আজকের যুগে উন্নয়ন হলো রাজনীতির মূল হাতিয়ার । উন্নয়ন ছাড়া রাজনীতি অচল । উন্নয়ন চাই ,চাকরি চাই ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চাই । রুজি রুটির বন্দোবস্ত চাই মানুষের।তাই সমাজের প্রতিটি মানুষের দাবি হলো উন্নয়ন । সুতরাং প্রতিটি সরকার ও দলের প্রধান লক্ষ্য হলো উন্নয়ন । উন্নয়ন ছাড়া সরকার ও দল চলতে পারেনা । আমাদের দেশে উন্নয়ন নিয়ে চলে নোংরা রাজনীতি । এই নোংরা রাজনীতির কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আশানারূপ দেশে শিল্পের উন্নয়ন আটকে যাচ্ছে । যা খুবই দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য।


গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিতে বিরোধী দল থাকবে এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিতে যদি পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই একটি দেশে শান্তি বিরাজ করবে না। আর শান্তি বিরাজ না করলে একটি দেশ তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। দেশটি সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে সমস্যার দিকে ধাবিত হতে থাকবে। বাংলাদেশে তাই পরিলক্ষিত হচ্ছে।


অপরদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা দেশে ব্যাপকভাবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, দখলদারি এবং ব্যাপক অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেদিকে সরকার মোটেই দৃষ্টিপাত করছে না বরং আশ্রয়-প্রশ্রয় ও উস্কানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। একথা অনস্বীকার্য যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্রের ভীতকে মজবুত করতে হলে চাই গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।


গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থায় বিরোধী দল বা দলসমূহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সংসদীয় বিরোধী দলের ভূমিকা অপরিসীম। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি দলের ভূমিকা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বলতে গেলে উভয়ের ভূমিকা প্রায় সমগুরুত্বসম্পন্ন। কারণ আজকে যিনি বিরোধী দলে আছেন কাল তাকে সরকারি দলে দেখা যেতে পারে। এটাই গণতন্ত্র।

দূর্গা পূজার ইতিবৃত্ত



সনাতন ধর্মালম্বীদের নিয়ে ১২ মাসে ১৩ পূজার উল্লেখ থাকলেও দূর্গা পূজাই সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব সনাতনীদের নিকট। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়।আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজাএবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "মহাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত।


কৈলাস পর্বতে জন্ম নেয়া অতি প্রেমভক্তির আদুরে মেয়ে দক্ষ তনয়া প্রয়োজনের নিরীক্ষে কালের আবর্তে মোষের ছদ্মবেশধারী প্রবল পরাক্রমশালী অসুর নিধনের নিমিত্তে রূপান্তর ঘটে দেবী দুর্গায়। উচ্ছ্বিষ্ট অপশক্তির অসুর দলনে রণরঙ্গিনী দেবী দুর্গাকে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছিল। রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়ে পরাক্রমশালী অসুর অপশক্তিকে পরাস্ত করে দেবকুল তথা বিপদাকুল সমাজকে চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিলেন।দেবী দূর্গা হলেন শক্তির রূপ।অনান্য দেব দেবী মানুষের মঙ্গলার্থে তাঁর বিভিন্ন রূপের প্রকাশ মাত্র। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে দেবী দূর্গা সকল দুঃখ দুর্দশার বিনাশকারিনী। পুরাকালে দেবতারা মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর’র শরীর থেকে আগুনের মত তেজরশ্মি একত্রিত হয়ে বিশাল এক আলোক পূঞ্জে পরিণত হয়। ঐ আলোক পুঞ্জ থেকে আর্বিভূত এক দেবী মূর্তি। এই দেবীই হলেন দূর্গা। মহাশক্তি শ্রীদুর্গা দেহ দুর্গের মূল শক্তি। আধ্যাত্মিক ভাবনা দুর্গা কাঠামোতে অন্তর্নিহিত। দুর্গার দশহাত দশ দিক রক্ষা করার প্রতীক, দশ প্রহরন এক দেবতার সাধনালব্ধ বিভূতি। দেবী ত্রিভঙ্গা-ত্রিগুণাত্মিকা শক্তির প্রতীক অর্থাৎ সত্ত্ব,রজঃ তমঃ গুণের প্রতীক। দেবী ত্রিনয়নী-একটি নয়ন চন্দ্রস্বরুপ, একটি সূর্যস্বরুপ এবং তৃতীয়টি অগ্নিস্বরুপ।

দুর্গা ও দুর্গাপূজা সংক্রান্ত কাহিনীগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও লোকমান্য হল দেবীমাহাত্ম্যম্-এ বর্ণিত কাহিনীটি। দেবীমাহাত্ম্যম্ প্রকৃতপক্ষে ‘মার্কন্ডেয় পুরাণ’-এর একটি নির্বাচিত অংশ। সাতশত শ্লোকবিশিষ্ট এই দেবীমাহাত্ম্যম্-ই শ্রীশ্রী চন্ডি গ্রন্থ। চন্ডি পাঠ দুর্গোৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও বটে। দেবীমাহাত্ম্যম্-এর কাহিনী অনুসারে পুরাকালে মহিষাসুর দেবগণকে একশ বছর ব্যাপি এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল । অসুরদের অত্যাচারে পৃথিবী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। শান্তিপুরী স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনী শ্রবণ করে তারা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন। সেই ক্রোধে তাদের মুখমন্ডল ভীষণাকার ধারণ করে। ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হয়। সুউচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল।আর এই নারী মূর্তিকেই বলা হয় দেবী দূর্গা।

দূর্গা পূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তা জানা যায় না।ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, সৃষ্টির আদিতে গোলকস্থ আদি বৃন্দাবনক্ষেত্রের মহারাসমন্ডলে কৃষ্ণ সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা করেন। দ্বিতীয়বার দুর্গার আরাধনা করেন ব্রহ্মা। মধু ও কৈটভ দ্বৈত্যদ্বয়ের নিধনে তিনি শরণাপন্ন হন দেবীর। ত্রিপুরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধকালে সংকটাপন্ন মহাদেব তৃতীয়বার দুর্গাপূজা করেছিলেন। এরপর দুর্বাসা মুনির শাপে শ্রীভষ্ট হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র যে দুর্গাপূজা করেন। এটা চতুর্থ দুর্গোৎসব। দেবী ভাগবত অনুসারে ব্রহ্মা ও ইন্দ্রের ন্যায় ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু পৃথিবীর শাসনভার পেয়ে ক্ষীরোদসাগরের তীরে মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মান করে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। জাগতিক মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে ঋষি মান্ডব্য, হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারে সুরথ রাজা ও বৈরাগ্য লাভের জন্য সামাধি বৈশ্য, কার্তাবির্জাজুন বধের জন্য বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম দুর্গার আরাধনা করেন।ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। সিন্ধু সভ্যতায় (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা) দেবীমাতা, ত্রিমস্তক দেবতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। দূর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী সে হিসাবে অথবা দেবী মাতা হিসাবে পূজা হতে পারে। তবে কৃত্তিবাসের রামায়নে আছে, শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ সাগর (বগুড়ার) থেকে ১০১ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে সাগর কূলে বসে বসন্তকালে সীতা উদ্ধারের জন্য সর্বপ্রথম শক্তি তথা দুর্গোৎসবের (বাসন্তি পূজা বা অকাল বোধন) আয়োজন করেছিলেন।আর এ জন্যেই দুই বঙ্গতে দূর্গা পূজার আমেজটা শুধু সনাতনীদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে সকল বাঙ্গালীর সংস্কৃতি স্বরুপ সৃজন হয়েছিল মনে।তবে বৈদিক যুগ থেকেই দুর্গা নাম প্রচলিত। ঋকবেদে বিশ্বদুর্গা, সিন্ধু দুর্গা, অগ্নিদুর্গা- এ তিনটি নাম পাওয়া যায়। দুর্গাপূজা কেবল শাক্ত সমাজেই নয়, প্রাচীন বৈষ্ণব সমাজেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহাপ্রভু চৈতন্যদেব চণ্ডীম-পেই চতুষ্পঠী চালু করেন। বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস, বৈষ্ণবাচার্য্য নিত্যান্দজীও দুর্গা দেবীর ভক্ত ছিলেন। মার্কেয় পুরাণ মতে, সত্যযুগে রাজা সুরথ, সমাধি বৈশ্য দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে পূজা আরম্ভ করেছিলেন। কৃত্তিবাস রামায়ণ থেকে জানা যায়, ত্রেতা যুগে লঙ্কার রাজা রাবণ দেবী পূজার আয়োজন করে দেবীর আশীর্বাদ ধন্য হয়েছিলেন। অন্যদিকে রাবণ-বধ এবং জানকীকে উদ্ধার করার জন্য শ্রী রামচন্দ্র বসন্তকালের আগে শরৎকালে দেবী পূজা করেছিলেন। উল্লেখ্য, শ্রী রামচন্দ্র দেবী ভগবতীকে অকালে বোধন করেছিলেন। মূলত দেবী পূজা বসন্তকালে হয়ে থাকে। সেই থেকে শরতে দেবী পূজা অকাল বোধন নামে পরিচিত। শরতের এই পূজাই আমাদের দুর্গোৎসব। জানা যায়, প্রথম শতকে কুষান যুগে, পঞ্চম শতকে গুপ্ত যুগে, সপ্তম শতকে পল্লব যুগে এবং ১১-১২ শতকে সেন বংশের আমলে দেবী মহিষমর্দিনী রূপে পূজিত হয়েছেন। কুষান যুগে দুর্গা ছিলেন লাল পাথরের তৈরি। পাল যুগে অর্থাৎ ১২৮৯ সালে দেবী ত্রিনয়নী এবং চার হাতবিশিষ্ট। দশভুজা দুর্গার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৮ শতকে।


বি.দ্রঃসকল ধর্মীয় উৎসবে যে বিপুল পরিমান অর্থের ব্যয় করা হয় এই নিয়ে যাদের চুলকানি আছে তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথা,সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্টি লাভের আশায় যদি মানুষের গায়ে একটু রঙ্গীন পোশাক আসে, ভালো খাবার আসে মুখে, সে সৃষ্টিকর্তাকে খারাপ বলতে যাব কোন দুঃখে!আপনি আস্তিক হোন আর নাস্তিক হোন আপনার মাঝে যদি সত্যিকারের মানবতাবোধ না থাকে তাহলে আপনিও যে,দুপায়ী পশু বলে বিবেচ্য হবেন।তাই সবার খুশির দিনে নিজেকে খুশি রাখেন এবং অন্যের বিশ্বাসের উপর সহমর্মিতা প্রকাশ করুন।ধর্ম যার যার, উৎসব সবার!

আমি কোন জাত-ভেদ,ধর্মের দুনিয়া চাই না,আমি মানুষের দুনিয়া চাই।আমার বড় পরিচয় আমি মানুষ এবং আপনারাও মানুষ।

হিন্দু/সনাতনী ধর্মের ঈশ্বর এবং মূর্তি পূজার পক্ষে-বিপক্ষে কিছু হদিস



মূর্তি পূজার স্বরূপ জানতে হলে প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে ঈশ্বর ও দেবতা বলতে সনাতন দর্শনে কি বলা হয়েছে।ঈশ্বর ও দেবতা।প্রথমেই বলে রাখা দরকার সনাতন দর্শনে বহু ঈশ্বরবাদের স্থান নাই বরং সনাতনীরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী।সনাতন ধর্মাবলম্বি হিন্দুরা অনেক দেব দেবির পুজা করলেও সমাতন ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে কেবল মাত্র এক জন ইশ্বরের উপাসনা করতে বলা হয়েছে॥


বেদের ‘ব্রহ্ম সুত্র’ তে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ইশ্বর এক তাঁর মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই।আরও আছে “তিনি একজন তাঁরই উপাসনা কর” (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬)। “একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ তিনি একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ ১;২;৩)। “এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩)।


সনাতন দর্শন বলে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন স্রষ্টা নাই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা।আমাদের প্রাচীন ঋষিগন বলে গিয়েছেন, ঈশ্বরের কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই(নিরাকার ব্রহ্ম) তাই তিনি অরূপ, তবে তিনি যে কোন রূপ ধারন করতে পারেন কারণ তিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।ঋকবেদে বলা আছে, ঈশ্বর ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’- ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।ঈশ্বর বা ব্রহ্ম (ব্রহ্মা নন) সম্পর্কে আরও বলা হয়,‘অবাংমনসগোচর’ অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা(বাক), মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না,তিনি বাহ্য জগতের অতীত । ঈশ্বর সম্পর্কে ঋকবেদে বলা আছে-‘একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি (ঋক-১/৬৪/৪৬) অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বহু নামে বলে থাকেন।‘একং সন্তং বহুধন কল্পায়ন্তি’ (ঋক-১/১১৪/৫) অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে।‘দেবানাং পূর্বে যুগে হসতঃ সদাজায়ত’ (ঋক-১০/৭২/৭) অর্থাৎ দেবতারও পূর্বে সেই অব্যাক্ত (ঈশ্বর) হতে ব্যক্ত জগত উৎপন্ন হয়েছে।ঈশ্বর এক কিন্তু দেবদেবী অনেক।তাহলে দেব দেবী কারা? ঈশ্বরকে বলা হয় নির্গুণ অর্থাৎ জগতের সব গুনের আধার তিনি। আবার ঈশ্বর সগুনও কারণ সর্ব শক্তিমান ।ঈশ্বর চাইলেই যে কোন গুনের অধিকারী হতে পারেন এবং সেই গুনের প্রকাশ তিনি ঘটাতে পারেন ।দেব দেবীগন ঈশ্বরের এই সগুনের প্রকাশ বলে সনাতনীদের দাবি।


হিন্দু ধর্মে মুর্তি পুজা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তা জেনে নেইঃ-
ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২০ -
[যাদের বোধশক্তি পার্থিব আকাঙক্ষার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধু তারাই উপদেবতার নিকটে উপাসনা করে। ]
যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ –
[ অন্ধতম প্রভিশান্তি ইয়ে অশম্ভুতি মুপাস্তে – যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারা অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় শাম মুর্তির পুজা করে । অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিক বস্তু যেমন- বাতাস,পানি,আগুন । শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন - চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি ইত্যাদি।]
যেহেতু হিন্দু ধর্ম প্রাচীন ধর্ম, এবং সবার বেদ,গীতা পড়ার অধিকার ছিল না তাই সেই সময়কার কিছু ঋষি মুনির কারনে মুর্তি পুজোর উদ্ভব হয়েছে । ডা. চমনলাল গৌতম তাঁর বিষ্ণুরহস্য বই এর ১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘ঋষিগন মুর্তি পুজার প্রচলন করেছেন॥ খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দী হতে বাংলায় কিছু কিছু অঞ্চলে কালী পূজা শুরু হয়॥১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। [তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া]
"তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়।
( তথ্যসূত্রঃ হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য,কলকাতা, ২০০৭, পৃ.২৮৫-৮৭)।"


আবার,
যো যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামের বিদধাম্যহম।।
"অর্থ-পরমাত্মারুপে আমি সকলের হৃদয় বিরাজ করি। যখন কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে আমি তাদের শ্রদ্ধানুসারে সেই সেই দেবতাদের প্রতি ভক্তি বিধান করি ।" [ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২১]


স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান হি তান।।
"অর্থ-সেই ভক্ত শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন কিন্তু সেই দেবতার কাছ থেকে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তুলাভ করে।"[ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২২]


মূর্তি পূজা সম্পর্কে উপরিউক্ত আলোচনা থেকে মূর্তি পূজার পক্ষে এবং বিপক্ষে দুইটাতে যাওয়া যায়।তবে ইদানিং দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে মানুষের মনে বিভ্রান্তি এবং মূর্তি পূজার নিষেধ সম্পর্কে বয়ান দিয়ে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে।বিশেষ করে ছদ্মবেশী উন্মাদরা এ প্ররোচনায় বেশী মেতে উঠেছে।তবে এটাও ঠিক যে,মূর্তি পূজা কখন কিভাবে চালু হয়েছে তার কোন নির্দিষ্ট হদিস নাই।সেই দিক দিয়ে মূর্তি পূজার বিপক্ষেই জোড়ালো কথা বলা গেলেও মূর্তি পূজা বিশ্বাসীদের কথা চিন্তা করে তাদের হদিস একবারে নিষেধাজ্ঞা হিসাবে গন্য করা যায় না।আপনি আস্তিক,নাস্তিক,স্যাকুলার যাই হোন না কেন;সামনে দূর্গা পূজাকে রেখে একপাক্ষিক যুক্তি দিয়ে কোন কিছু বলা মানেই মানুষের মনে সাম্প্রদায়িক সৃষ্টি করা ব্যতীত বা আপনি অন্য কোন উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যই এমন আচরন করছেন সেটা যে কেও সহজে বুঝতে পারবে।তবে এর মানে এই বুঝাতে চাইছিনা যে,আপনি হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করতে পারবেন না।কিন্তু সমালোচনা করার আগে আপনাকে অবশ্যই সামাজিক এবং ভৌগলিক দুই অবস্থা ভেবেই কথা বলতে হবে।কারন আমদের দেশ যতই সাংবিধানিক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে দাবি করা হোক না কেন,প্রকৃত পক্ষে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ন একটা দেশ।


বি.দ্রঃআমি কোন জাত-ভেদ,ধর্মের দুনিয়া চাই না,আমি মানুষের দুনিয়া চাই।আমার বড় পরিচয় আমি মানুষ এবং আপনারাও মানুষ।

পাকিস্তানিদের সাথে খেলার মাঠেও রাজনিতী মিশানোর কারন



কিছু নোংরা মনের রাজনীতিকের কল্যানে পাকিস্তানের সেনা বাহিনী আমাদের নিজেদের কিছু লোকের সহায়তায় ৭১-এ যেটা করেছে তার দায়পাকিস্তানি গোটা জাতির উপর চাপিয়ে দেয়াটা কতটা যৌক্তিক বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় কিছু পাকিস্তান অনুসারী বাংলার জারজ পাকিস্তানি দালালেরা।যে সব বাংলাদেশী নাগরিক বাংলাদেশের চেয়েও পাকিস্তানকে বেশী ভালবাসেন। যারা মনে করেন যে দেশটা বাংলাদেশ না হয়ে পাকিস্তান থাকলেই বেশী ভালো হতো।একাত্তরে কোন যুদ্ধাপরাধ হয় নাই।সামান্য গণ্ডগোল হয়েছিলো।তাদের জন্য মুখে থুথু দেওয়া ছাড়া আমার আর কোন ঘৃনা প্রকাশ করার মত তেমন শক্তি নাই।তাদের কথার উত্তর দিতেও আমার রুচিতে বাধে।যারা বাংলা মায়ের শহীদের রক্ত,মা-বোনের উপর অমানবিক নির্যাতনকে অস্বীকার করে পাকিস্তানির দালালি করে,পাকিস্তানি ক্রিকেট টিমকে স্বাগতম জানিয়ে ম্যারি আফ্রিদি আফ্রিদি চুদায় তাদের জন্ম নিয়ে সন্দীহান হয় খুব গভীর ভাবেই।
খেলার সাথে, সমর্থনের সাথে মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্কটা কি বুঝিনা? আপনি বলেন খেলোয়াররা তো ধর্ষণ/হামলা করেনি?তাদের বলতে চাই,পাকিস্তানিরা খেলছে কি কারনে?তাদের দেশের জন্য,তাদের পতাকার জন্য অবশ্যই।যেমন আমাদের বাংলার ১১ জন দামাল খেলে দেশের জন্য,আমাদের লাল-সবুজ পতাকার জন্য,এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।অপরদিকে পাকিস্তান নাম,পতাকা,জাতিটাই আমাদের জন্মগত ভাবে শত্রু।তাহলে আমরা তাদের কিভাবে সমর্থন করি বলে বুঝাবেন কি!যারা স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আমাদের কাছে ক্ষমা চাইনি,যারা এখনো যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে অমানবিক বলে দাবি করে বাঁচাতে চায় তাদের দূসরদের।তারপরেও কেন আমরা খেলার সাথে রাজনিতী মিশাবো না আপনারাই বলেন পাকিস্তানি জারজরা। একটি দেশের জাতীয় দল সেই দেশের প্রতিনিধিত্ত করে।দেশের জাতীয় পতাকা বহন করে।দেশের জাতীয় দল যেখানে যাবে,দেশের পতাকা তুলে ধরবে।এই দলের সাফল্য-ব্যর্থতার সাথে পুরো জাতির হাসি কান্না জড়িয়ে থাকে।এইকারনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোন ম্যাচ জিতলে আমাদের পুরো জাতি জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে।হারলে দলের খেলোয়াড়দের মত পুরো জাতি শোকাচ্ছন্ন থাকে।দলের খেলোয়াড়েরাও যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামে তখন আর সে শুধুই একজন খেলোয়াড় থাকেনা,হয়ে যায় নিজ দেশের রাষ্ট্রদূত।নিজের দেশের জাতীয় দলের বিরুদ্ধে,জাতীয় পতাকার বিরদ্ধে,পুরো জাতির বিরদ্ধে যে সমর্থন করে সে কি রাজাকার নয়?
আচ্ছা এখন পাকিস্তানি প্লেয়ারদের আমাদের দেশের প্রতি আমাদের জাতির প্রতি মনোভাব দেখি কেমন- তাদের সবচেয়ে ভদ্র প্লেয়ার মিসবাহ উল হক আমাদের দেশে বিজয়ের মাসে অভিনন্দন জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
শহীদ খান বাংলাদেশ সফরে বলেছিলেন,"আমাদের সাথে বাংলাদেশের হিসেবটা পুরোনো।"
আব্দুর রাজ্জাক (ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম ভদ্রলোক) খোঁচা মেরে বলেছিল,নিজ দেশে খেললে দর্শকরা তাদের দলকে সমর্থন দেবেন এটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমাদের খেলা হলেও গ্যালারি থেকে আমাদের পতাকা উড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়।‘
কিছুদিন আগেই সালমারা পাকিস্তান সিরিজ খেলতে গিয়েছিল। পরোক্ষভাবে তাদের দেশে খেলা ফেরানোই ছিল লক্ষ।অথচ তারা সেই সালমাদেরই রীতিমত অপমান করেছিল জিও টিভি ফান শোতে।০৭অক্টোবর রাত ১১টায় এক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে পাকিস্তানের জিও টিভি। যেনতেন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জার্সি পরিয়ে দুই মহিলাকে উপস্থিত করা হয়। উপস্থাপক বাংলাদেশের জার্সি পরিহিতকে সালমা খাতুন (বাংলাদেশের অধিনায়ক) হিসেবে মঞ্চে ডাকেন। সেখানে দেখা যায়, ওই সালমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে মঞ্চে আসেন। উপস্থাপক তখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, খেলায় তো হার-জিত থাকেই। এতে কান্নার কী আছে? ওই নারীশিল্পী উত্তর দেন, শুধু হেরে যাওয়ার জন্য কাঁদছি না। তোমরা আমাদের ডেকে এনে কেন হারালে সেজন্য কাঁদছি। উপস্থাপক এবার উপহাস করে বলেন, আমরা ভিআইপি নিরাপত্তা দিয়ে তোমাদের নিয়ে এসেছি। অথচ তোমাকে দেখলে মনে হয় তোমার সামাজিক নিরাপত্তা নেই।
উপস্থাপক বাংলাদেশের জার্সি পরিহিত আরেক শিল্পীর সানগ্রাস দেখিয়ে বলেন, তোমার সানগ্লাস দেখলে মনে হয় তুমি বাংলাদেশ থেকে হাওয়াই জাহাজে (বিমান) করে আসোনি। বাইক চালিয়ে এসেছ। এরপর আবার জিজ্ঞেস করেন, তুমি এত ভালো উর্দু বল কীভাবে? উত্তরে সালমা খাতুনের অভিনয়কারী শিল্পী বলেন, ফেসবুকে আমার অনেক পাকিস্তানি বন্ধু আছে তো, তাই। এ সময় পাশের পাকিস্তানি অধিনায়কের ভূমিকায় অভিনয়কারী শিল্পী দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বলেন, উনি ফেসবুকে তার ছবি দেননি। এ ঠাট্টার অর্থ ফেসবুকে ছবি থাকলে পাকিস্তানি ছেলেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হতো না। এভাবেই নানা অপমানজনক কথায় পূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানের এ অংশটি।
ভিডিও দেখতে-
https://www.facebook.com/bdcricvideos/videos/vb.1590441024536126/1683448...
এরপরেও কি আপনি বলবেন আমরা কেন খেলার সাথে রাজনিতী মিশাই?আর তার উত্তর হুমায়ুন আজাদ স্যারের ভাষায় বলতে গেলে,“পাকিস্তানিরা যখন ফুল নিয়ে আসে আমি তখনও তাদের অবিশ্বাস করি।”এরপরেও যদি আমার কথা না বুঝেন,পাকিস্তানি সাপোর্ট করেন তাহলে আপনি একটা পাকিস্তানি জারজ বলেই আমার কাছে প্রসিদ্ধ লাভ করবেন। বাংলাদেশের বেলায় আমি অন্ধ। যে জাত আমাদের ৩০ লাখ মানুষের রক্তে দেশকে অবলীলায় রাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়, এক আঙ্গুলের ইশারায় অপারেশন সার্চলাইটের মত ঘৃন্য অভিযান চালায়, তাদেরকে আবার সমর্থন!যে মাটিতে দাড়িয়ে আছি, সেই মাটিতেও লেগে আছে অনেক শহীদের গায়ের “রক্ত” অথবা কোন হাড়গোড়ের স্পর্শ।তাদের আর্তচিৎকার।সেই ১৯৭১ না দেখা কান্না, মা-বোনের চিৎকার কানে বাজে,রক্তের ছাপ চোখে ভেসে উঠে।ভালোবাসি বাংলাদেশ,আর নিস্বার্থ ভাবেই সারা জীবন বাংলাদেশের পথেই থাকতে চাই।আর যতদিন বাঁচি এই দু-দিনের দুনিয়ায়,ততদিন পাকিস্তানিদের দু-চোখ ভরে ঘৃনা আর থুথু ছুড়ে দিতে চাই।
জয় বাংলা

বিষয় যখন নারীর পিরিয়ড



পিরিয়ড প্রত্যেক সুস্থ স্বাভাবিক নারীর জীবনে একটি অতি স্বভাবিক ব্যাপার এবং নারী স্বাস্থ্যের ভীষন গুরুত্বপূর্ন একটি দিক। পিরিয়ড,ব্যাপারটা প্রকৃতি প্রদত্ত। প্রত্যেকটা মানব সন্তানের জন্ম হওয়ার প্রথম এবং প্রধান সোপান এটা। কিন্তু এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছি না। পিরিয়ড নামক শব্দটা কারো মুখে শোনা মাত্রই তার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে ভুল করিনা।যেন এটা খুব লজ্জার কথা।যদি কোন মেয়ের আকস্মিক ভাবে পিরিয়ড হয়,এবং তার কাপড়ে কোন রক্তের দাগ দেখতে পাই তাহলে বড়রা থেকে শুরু করে ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত সেই কাপড়ে লেগে থাকা রক্ত নিয়ে মেয়েকে ইঙ্গিত করে চোখ টিপাটিপি করি।সত্যি কথা বলতে,আমিও করছি আমার কোন বন্ধুর কাপড়ে লেগে থাকা তাজা রক্তের দাগ নিয়ে এবং সাথে আমার সকল বন্ধুরা।সেই দিনটা ঐ মেয়েকে নিয়ে আমরা হাসাহাসি করে যে কত মজা পাইছিলাম তা বলে শেষ করা যাবে না।তবে আমাদের সারাদিনের টপিক ছিল ঐ মেয়ে বন্ধুর কাপড়ে তাজা রক্তের দাগ লাগা নিয়ে।যাকে কাছে পাইছি তাকেই বলছি অধীর আগ্রহ নিয়ে আজ অমুকের পিরিয়ড হইছে।জামা,ব্রেঞ্চে রক্তের দাগ দেখছি আমরা।কারন আমাদের সমাজটাই শিখাইছে এরকম।কিন্তু এখন দিন বদলাইছে,সময় বদলাইছে। তারপরেও দোকানে ন্যাপকিন কিনতে যাওয়ার পর দোকানীর বাঁকা চাহনি,চাপা হাসি,অতি উৎসাহী মুখ,চুপিসারে ক্রেতার হাতে গুঁজে দেয়া প্রভৃতি ঘটনার সম্মুখীন প্রায় সব মেয়েকেই হতে হয়।

রেনেসাঁ যুগে নারীর ঋতুস্রাবের রক্তের প্রতি মানুষের ঘৃণা এবং ভয় এতো বেশি ছিলো যে একে বিষ বলে ধারণা করা হতো। বলা হতো এই বিষ থেকে তৈরি হয় বিষাক্ত বাষ্প এবং তা নারীর মাঝে হিস্টেরিয়ার উদ্রেক করে। বিংশ শতাব্দীতে এসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এখনো পর্যন্ত ইন্ডিয়ার কিছু জায়গায় ঋতুস্রাবের প্রতি আছে ভীষণ ট্যাবু। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে কোনো নারী রান্না করলে সেই খাবার খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় এমনও নিয়ম আছে যে এই সময়টা নারীকে কাটাতে হবে গোয়ালঘরে।এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে নানা কথা।তবে গ্রন্থ গুলোর একটা কমন তসবি হচ্ছে পিরিয়ড চলা কালীন মেয়ে অপবিত্র থাকে এবং সেই সময় তারে দিয়ে কিছু করা বা ধর্মীয় কোন কাজ করানো যাবে না।এই শতাব্দীতে একটি ভয়াবহ কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে,নারীর পিরিয়ড চলাকালীন সময় যদি কোন পুরুষ ঐ নারীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হয় তাহলে সেই পুরুষের লিঙ্গ ছোট হয়ে যাবে।অথচ বিজ্ঞান সম্মত ভাবে কথাটা কেবল উদ্ভটই হিসাবে প্রমানিত হয়।

নারী হয়ে জন্ম নেবার কারণে জীবনে একবার হলেও নিজেকে অভিশাপ দেননি, এমন নারী হয়তো বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে খুব কম।নারীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়েই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত ছিল ভয়াবহ সব কুসংস্কার যা এখনো বজায় আছে বহাল তবিয়তে। দেখুন কালের সাথে সাথে কী করে বদলেছে এসব কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। বদলে গেলেও মানুষের মধ্য থেকে পিরিয়ড নিয়ে ভয় ও ঘৃণা দূর হয়নি মোটেই। আপনার আশেপাশে এমনকি আপনার পরিবারের পুরুষ এমনকি নারীদের মাঝেও রয়েছে এমনই সব কুসংস্কার। আজ থেকে দু-হাজার বছর আগে, যাকে বলা হতো Biblical Times, এ ঋতু চলাকালীন সময়ে সেই নারীকে এতোটাই অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য মনে করা হতো যে এই পুরো সময়টা তাকে পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হবে।পিরিয়ড ঋতুচক্র নারী জীবনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পূর্বে ধারণা করা হতো পিরিয়ড অনেক অপবিত্র একটি বিষয়। কিন্তু বর্তমানে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। কোনো নারীর নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার অর্থ তিনি স্বাভাবিকভাবে সন্তান ধারণে সক্ষম।

একটা মেয়ের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চলতে হয় এবং কমবেশী নানা দূর্ভোগ পোহাতে হয়।এই সময় মেয়েদের জরায়ু দিয়ে অনেক রক্তপাত হয়,অনেকের মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায়,পেটে ব্যাথা অনুভব করে,মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে ইত্যাদি ইত্যাদি।পিরিয়ড সম্পর্কে নানা ভুল ধারনা থাকার কারনে দেখা দেয় নানা রকম স্বাস্থ্য এবং অনেক সময় দেখা যায় দাম্পত্য জীবনেও কলহের সৃষ্টি হয় নানা রকম কুসংস্কারের কারনে।কিন্তু আমার জানামতে খুব কম বাবা-মা কিংবা পরিবারই আছেন মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে উদারচিত্তের ব্যবহার।যেখানে শিক্ষিত সমাজেই রয়েছে এই পিরিয়ড নিয়ে নানা বিভ্রান্তি,সেখানে অল্পশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত লোকের কথা একবার ভাবুন তারা কত পিছিয়ে আছে সামাজিক প্রতিবন্ধিকতায়।পিরিয়ড মেয়েদের লোকানোর জিনিস না বরং গর্ভ করার বিষয় তার প্রথম ঋতুচক্রে।কারন এই পিরিয়ডের কারনেই সে মা হওয়ার অধিকার রাখে।

তবে হ্যাঁ,আমি বিশ্বাস করি যে, একটা সময় আসবে যখন আর কোন জড়তা থাকবে না মানুষের মনে পিরিয়ড নিয়ে।কিন্তু কবে,কোথায়,কখন পিরিয়ড নিয়ে জড়তা কাটবে তা শুধু অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকা সেই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে।তবে হয়তো জড়তা মুছে যাওয়া দিনকাল বেশীদিন নাই।কারন আজকাল শহুরে শিক্ষিত সমাজ এবং গ্রামেও বিভিন্ন গ্রামো কমিউনিটি হেলথ সেন্টার কিংবা ক্লিনিকে পিরিয়ড নিয়ে নানা রকম খোলামেলা কথা এবং নানা ধরনের কুসংস্কার দূরীকরনে কাজ করে যাচ্ছে সরকার এবং সমাজ সচেতন জ্ঞানী লোকেরা।

নারীর সমঅধিকার ব্যর্থতার কারন নারী নিজেই



নারীদের অধিকার আদায় করা, নারী নির্যাতন বন্ধ করা সমাজের সবার মানসিকতা না বদলানো পর্যন্ত প্রায় অসম্ভব।নারীর অধিকারের প্রশ্নে সাংবিধানিক ও আইনগত জোড়ালো সমর্থন থাকা সত্ত্বেও পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিদ্যমান থাকার কারণে আমাদের সমাজে নারীদের এখনো সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।আমাদের দেশে নারীদের অধিকার সচেতনতার অভাবে নারীরা একদিকে যেমন তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ এবং আইনী সহায়তা থেকে বঞ্চিত,  অন্যদিকে বৈষম্যমূলক আইনের কারণে তাদের নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।যদিও নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের শ্রমে-ঘামে, মেধা-মননে আজকের সভ্যতা এ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।কিন্তু আমরা নারীদের প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিতে অক্ষম।আর তার জন্য মেয়েদেরও কিছু যে দোষ আছে!আমরা যদি একটু পিছনে গিরে তাকাই তাহলেই বুঝতে পারব নারীদের কি আদো কোন দোষ আছে কিনা?তবে আমি পিছনে ফিরে না গিয়ে সরাসরি বলছি কিভাবে মেয়েদের কিঞ্চিত হলেও দোষ রয়ে যায় তাদের অধিকার আদায় করে নেওয়ার ক্ষেত্রে। আমাদের দেশের নারী আন্দোলনে শিক্ষিত মানুষেরা, বিশেষ করে নারীরা অংশগ্রহণ করছেন না। দেখা যায়, তারা নিজেরা শিক্ষা পাচ্ছেন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন, তাই অন্যের অধিকার, বিশেষ করে সাধারণ দরিদ্র বা গ্রামীণ নারী বা কিশোরীর অধিকার লঙ্ঘন হলে তারা কিছু বলছেন না। এমনকি, যতক্ষণ না এই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির কোনো নারী নিজে আক্রান্ত হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত নিরব থাকছেন তারা।আর এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এবং ধর্মের কুসংস্কারের মাধ্যমে মেয়েদের যে, বেড়াজালে আটক করে রাখা হইছে তার জন্য প্রয়োজন মেয়েদের মধ্যে ঐক্যতার।ঐক্য ছাড়া নারী কখনো ধর্মীয় বেড়াজাল কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না তেমনি তাদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না।আমরা সবাই বেগম রোকেয়ার কথা জানি। বেগম রোকেয়া নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন। সে সময় বলতে গেলে নারীর কোনো স্বাধীনতাই ছিল না। বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা, বাড়িতে মেহমান এলেও তাকে লুকিয়ে রাখা হতো। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করে গেছেন। এ জন্য তাকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয়। বেগম রোকেয়ার মতো অনেক সম্মানিত ব্যক্তি আছেন, যারা নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করছেন।

কিছু কিছু ব্যাপারে মেয়েদেরও দোষ থাকে। তারাও মাঝেমাঝে ভুল করে ফেলে। এমন কিছু করে, যাতে তার পরিবারকে লজ্জায় পড়তে হয়। নারী সম্পর্কে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি পান্টাতে হবে। এখনও গ্রামে কোনো নারী পুরুষ কর্তৃক নির্যাতিত হলে নারীরাও নির্যাতিত নারীর বিভিন্ন দোষ তুলে ধরার চেষ্টা করে যা গ্রাম্য সমাজে খুব ভালোভাবেই চোখে পড়ে। নারীর প্রধান শত্রু আরেক নারী। একজন নারী আরেক নারীর প্রতি হিংসান্বিত হয়ে অত্যাচারের চুড়ন্তে যেতে পারে। নারীকে আক্রমণের জন্য একজন নারীর মুখেই অবলীলায় উচ্চারিত হয় বেশ্যার মতো অপমানকর হিংষাত্বক শব্দ। এখানে শিক্ষিত-অশিক্ষত নারীর মধ্যে কোনো তফাত নেই। একজন পুরুষ ক্রোধ বা হিংসার বশবর্তী হলেও কখনও আরেক পুরুষকে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করে অপমান করে না।

বেশিরভাগ ঘটনায় দেখা গেছে যে, কোনো নারীর ওপর নিপীড়ন চালানোর ঘটনায় একজন বা তার অধিক নারী জড়িত। শুধু জড়িত নয়, কখনও কখনও এরাই নারীর ওপর অত্যাচার চালাতে মূল ভূমিকা পালন করেন। নারীমুক্তির কথা যদি আসে তবে নারীকে প্রথম নারীর কাছ থেকেই মুক্তি নিতে হবে।