রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

নারী খেকো ফেসবুক সেলিব্রেটি

মেয়েদের যদি কোন সাধারণ ছেলে ইনবক্স করে তাহলে তারা বিরক্ত হয়।--উফ অসহ্য

আর যখন সেলিব্রেটি নক করে,ভাইয়া...আমার যে কি ভালো লাগছে।--উফ অসাম

যখন কোন সাধারণ ছেলে ইনবক্সে কথা বলার পর নাম্বার চায় তখন ছেলে হয়ে যায় লুচ্চা।--উফ বিরক্তিকর

আর যখন সেলিব্রেটি ইনবক্সে কথা বলার পর নাম্বার চায় তখন, ভাইয়া আপনার নাম্বার দেন আমি ফোন দিচ্ছি।--উফ ফ্যান্টাসটিক

যখন কোন সাধারণ ছেলে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দেয় তখন ছেলে হয়ে যায় ইতর,বদামাইশ,ধান্ধাবাজ,নারীখেকো ইত্যাদি ইত্যাদি।--উফ ছাগলামী

যখন কোন সেলিব্রেটি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মেয়েদের ভিডিও ফোন দেয়,হুম ভাইয়া কেমন আছেন,জানো ভাইয়া আমি তোমার অনেক বড় ফ্যান,তোমাকে যে আমার কি ভালো লাগে বলে বুঝাতে পারবো না।ভাইয়া তোমার ওই লিখাটা,কবিতাটা,ছবিটা,গানটা আরো কত্তকি যে আমাকে কাছে টানে।উফ ভাইয়া,বুঝাতে পারবো না তোমাকে।তারপর সেলিব্রেটি পুরুষ-আচ্ছা আপু তোমার মুখটা একটু দেখি।

-না ভাইয়া!

-আরে দেখাও না।

-হুম,দেখছ?

-হুম,এবার একটু মাফলার সড়াও।

-হুম,সড়াইছি, দেখা যায়?

-হুম,এবার উড়নাটা সড়াও।

-হুম,সড়াইছি।

-এবার তোমার জামাটা একটু নিচে নামাও।😘

-না!

-না,নামাও একটু প্লিজ লক্ষীটি।

-না,ছি: ভাইয়া তুমি এমন!

-ওকে নামাতে হবে না,টুট টুট।

তারপর আবার ইনবক্সে,সেলিব্রেটি,

-স্যরি,আসলে আমি ড্রাংক ছিলাম।

-তাই বলে এমন!

-আরে বাবা বললামতো স্যরি।আর জীবনেও এমন হবে না।

-ওকে,ঠিক আছে।সত্যি আর যেন না হয়।

-হুম,গড প্রমিজ হবে না।

-মনে রেখ কিন্তু কথাটা।

-ঠিক আছে।

দুইদিন পর আবার অন্য মেয়ের সাথে....

ধরা না খাইলে এভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকে আর যখন ধরা খায় জায়গা মত তখন.....সেলিব্রেটি,

আমার মা/বাবা অসুস্থ,আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র,আমাকে ফাসিয়ে মাফ চাওয়ানো হচ্ছে,আমি মরে যাব,সুইসাইড করবো,আমার এম্বিশন সব ধুলিসাৎ হয়ে যাবে বলে না বাহনা শুরু।কিন্তু কে শুনে কার কথা,স্ক্রীনশট বেরিয়ে পরে।কিন্তু সমস্যা হলো গিয়ে সমস্যা না,দুইদিন পর সব ভুলে সেলিব্রেটিকে আবার মাথায় তুলে নাচাবো আর তাকে সাপোর্ট দিবো।আর বাদ দেন ভাই,কে কেমন তা জানা আছে,মেয়ে সাড়া না দিলে সেতো আর এমন বলার সাহস পেতো না।অত:পর ভক্তকুলের ব্যাপার বুঝে আবার অনলাইনে বিচরন অত:পর নতুন মাইয়াকে ফাদে ফালিয়ে আবার নাটক শুরু ধরা পরলে আর না পরলেতো বাদশাই।তবে কথায় আছে না,চোরের দশদিন আর গীরস্থের একদিন।

সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭

একটি ভাষন একটি জাতির ইতিহাস ।

বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস “মার্চ মাস”।কারণ ’১৯৭১’ সালের এই মার্চ মাসেরই ২৫ তারিখ গভীর রাতে, মানে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছিলো।শুধু তাই না, ২৫ মার্চ গভীর রাতে, এদেশের নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী।আরও একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আছে এই মাসে। সেটি হচ্ছে- ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।

কিন্তু ৭ মার্চের প্রেক্ষাপট হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি।যদি অন্তত ১৯৪৭ সালের পর দেশ বিভাগের পর থেকে পাকিস্তান শাসনকাল ধরি, তাতেও প্রায় দুই যুগের ইতিহাস।পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর থেকেই, পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের বাঙালিদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছিলো। যেন আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো দামই ছিলোনা তাদের কাছে।১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়, কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান।পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক থেকে পার্থক্য ছিল প্রচুর।১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগণের মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি করে।দীর্ঘ প্রায় চার বছর আন্দোলনের ফসল হিসেবে ১৯৫২ সালে সেটি পরিণতি লাভ করে শেষ পর্যন্ত এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।কিন্তু তার জন্য যথারীতি রাজপথে দিতে হয়েছিল অনেক রক্ত।

১৯৫৪ সালে ১০ই মার্চ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে।কিন্তু পাকিস্তান শাষকগোষ্ঠী বাঙালির এই আধিপত্য মেনে নিতে পারেনি।মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ৩০শে মে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।

১৯৫৯ সালে সমগ্র পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে আসলে বাঙালিদের মধ্যে বিপুল সাড়া দেখা দেয়।অতএব এই নির্বাচনের ফলাফল চিন্তা করে কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।একই সময়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের কৌশলে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যেও বিরোধ সৃষ্টি করে।এই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করে।১৯৬২ সালে সামরিক শাসন তুলে নেওয়ার পর ছাত্র সমাজ পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে এই সময় দেশব্যাপী শাসন তুলে নেয়ার পর ছাত্রদের এই আন্দোলন নতুন করে গণ-আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।

১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা ‘কপ’-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম অবহেলা ও ঔদাসীন্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোচ্চার হন। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় রাজনীতির গতিধারা নিরূপণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন।ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেলরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই ফেডারেলরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ন স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয়দফা কর্মসূচীর ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব।পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয়।

১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বুঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে ৮ মে, ১৯৬৬ সালে দেশ রক্ষা আইন অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়। এরপর ৭ জুন, ১৯৬৬ এ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সারা দেশে ধর্মঘট ডাকে। ৭ জুন যে ধর্মঘট ডাকে সেই আন্দোলনকারীদের উপর পাকিস্তানী সরকার নির্মম ও নিষ্ঠুর অত্যাচার চালায়। এই দিন প্রায় ১০ জন নিহত হয়। এরপর কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের প্রায় ৯৩৩০ জন কর্মী গ্রেফাতার হন।

শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর ১৮ জানুয়ারি, ১৯৬৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হলেও ঐদিন তার বিরুদ্বে আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করা হয়। এই মামলার জন্য তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুসহ মোট ৩৫ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়। এদের ভিতর প্রায় সকলে বাঙ্গালী সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। এতে করে পূর্ব পাকিস্তানের সকল প্রভাবশালী লোকদের পাকিস্তান শাষকগোষ্ঠী আটক করে বাঙ্গালীদের একদম নিস্তেজ করে ফেলে।

১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রকৃষ্ট হতে শুরু করে। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকাস্তানকে বিচ্চিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দায়ের করা হয়। ১৯৬৯-এ আইয়ুব খানের পতন হয় তবে সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে।সামরিক সরকারের অধীনে ১৯৭০-এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনেঅংশ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জ্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনৈতিকদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে বিরত থাকন।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবেরকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু’জন প্রধানমন্ত্রী। “এক ইউনিট কাঠামো” নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং কেন্দ্রের সামরিক-বেসামরিক আমলাচক্র চঞ্চল হয়ে ওঠে। তাদের দুরভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষও উদাসীন ছিল না। বঙ্গবন্ধুও বুঝতে পারছিলেন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কুচক্রী মনোভাব। ইয়াহিয়া-ভুট্টো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে সমস্ত জানুয়ারি মাসটিকে কাজে লাগান। ১২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে। তিনি ছয় দফার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চান। অতি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি সন্তুষ্ট হন না। এরপর জানুয়ারির শেষ সপ্তায় ভুট্টো আসেন তাঁর দলের নেতাদের নিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে ছয় দফা বিষয়ে আলোচনার জন্য। তাঁর কাছে ছয় দফা বিচ্ছিন্নতাবাদী এজেন্ডা। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া-ভুট্টো দীর্ঘ আলোচনা করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া এক ঘোষণায় ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।কিন্তু ১ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেল এই সিদ্ধান্ত। সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয় এবং ডাক দেওয়া হয় হরতালের। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।

২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ. স. ম আবদুর রব। সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফারেল আহমদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং নূরে আলম সিদ্দিকী। বিশাল এই সভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়।

৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে- আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দিবেন। তাদেরও যদি হত্যা করা হয়, যিনি জীবিত থাকবেন, তিনিই নেতৃত্ব দিবেন। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে- অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” বঙ্গবন্ধু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ৭ মার্চ রোববার রেসকোর্স ময়দানে তিনি পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন।এবং ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালনের আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে তাঁরই নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে ইতিপূর্বে বেতন দেয়া হয়নি সেসব অফিস বেতন প্রদানের জন্য খোলা থাকে।

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে মুক্তির বাণী শোনার জন্য (৭ মার্চ,১৯৭১) সেদিন সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ দলে দলে রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষের রেসকোর্স ময়দান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, রমনা পার্কসহ আশপাশের এলাকা ছিল পূর্ণ। মঞ্চের সামনে নারীদের বসার জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে বাঁশ। পোস্টার, ফেস্টুন, ফানুস সঙ্গে ‘জাগো জাগো-বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল সেদিনকার রেসকোর্স।বঙ্গবন্ধু বিকাল আনুমানিক ৩টা ২০ মিনিটে মঞ্চে উঠেছিলেন।৫ দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।একাত্তরের ৭ মার্চ ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি মাহেন্দ্রক্ষণ।আন্দোলন-সংগ্রামের পরিণত ফসল। বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, যখন বাঙালি জাতি পরাধীনতার দীর্ঘ প্রহর শেষে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল তখনই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন তার ঐতিহাসিক ভাষণে।এ ভাষণের স্তরে স্তরে ছিল এদেশে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের পরিসমাপ্তির ঘোষণা ও বিবরণ।সেই সঙ্গে ছিল পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন দেশের স্বাধীনতা অভ্যুদয়ের বার্তা।পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন এই বলে, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।“
জয় বাংলা।

রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্টপতি আব্দুল হামিদের ভাষনকে কেন্দ্র করে মিথ্যা গুজব

সকাল থেকেই “প্রথম আলো” নিউজ লিঙ্কের কিছু অংশ অনলাইনে কিংবা ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে নিয়ে এবং কিছু অতি উৎসুক ফেসবুকাররা তা বিতর্কিতভাবে ভাবে বিভিন্ন অনলাইন পেইজ অথবা ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট করে নিজেকে জ্ঞানীর ভাণ্ডার হিসাবে দাবিতেই ব্যস্ত।যাই হোক,যে কথাটি নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা সরাসরি তুলে ধরি।তারপর না হয় এক লাইনে উত্তরটা দেওয়া যাবে। "মনে ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। ভর্তিও হয়ে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। ভর্তির কাজকর্ম শেষে গেলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। বঙ্গবন্ধু সব শুনলেন। তারপর জানিয়ে দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পড়তে হবে সেন্ট্রাল ল কলেজে। আর রাজনীতি করতে হবে কিশোরগঞ্জে। সেন্ট্রাল ল কলেজে যেহেতু নিয়মিত ক্লাস না করলেও পরীক্ষা দেওয়া যায়, সে কারণেই এ বিকল্প চিন্তা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিপুল আগ্রহ তাঁর। তাই নেতাকে একটু মিথ্যার আশ্রয় নিয়েই বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সব টাকা শেষ। কীভাবে আবার সেন্ট্রাল ল কলেজে ভর্তি হবেন। বঙ্গবন্ধু ডাকলেন পাশের রুমে থাকা তোফায়েল আহমেদকে। পাঞ্জাবির পকেট থেকে তিনটি ১০০ টাকার নোট বের করে তোফায়েলের হাতে দিয়ে বললেন, ‘ওকে সেন্ট্রাল ল কলেজে ভর্তি করিয়ে, বইপুস্তক কিনে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দে।’ নেতার ইচ্ছাই নিজের ইচ্ছা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে আবদুল হামিদ সেন্ট্রাল ল কলেজের ছাত্র হলেন।"

কিন্তু যে বিষয় টুকু খুব সতর্কভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে তা তুলে দেওয়া হলো, “কোনোরকমে ম্যাট্রিক পরীক্ষার বৈতরণী পার হলেন, তৃতীয় বিভাগ নিয়ে। এইচএসসিও পার হয়ে গেলেন কীভাবে কীভাবে। বিএ পরীক্ষায় পেলেন রেফার্ড। কিন্তু বিএ পাস না করলে মান-ইজ্জত থাকে না। ইজ্জত রক্ষার জন্য জনসভায় একদিন ঘোষণা দিয়ে ফেললেন, যত দিন আইয়ুব সরকারের পতন হবে না, তত দিন তিনি পরীক্ষা দেবেন না, বিএ পাস করবেন না। এর মধ্যে আইয়ুব খানের বিরোধিতা করার দায়ে জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে তাঁর। রাজনীতিতেই ঢেলেছিলেন মন-প্রাণ। কীভাবে ঢেলেছিলেন তার একটা প্রমাণ দেওয়া যেতে পারে। পরে অবশ্য বিএ পাস করেন আইয়ুবের পতনের পরই। “

এখন কথা হলো,আমরা এতোটাই শিক্ষিত হয়ে গেছি যে, কথায় কথায় ভুল ধরা এবং একজন আরেকজনের পিছনে লেগে নিজের দাবিকে সত্য বলে প্রমানিত করতেই ব্যস্ত।একটু মাথা খাটালেই যে,নিজেই নিজের উত্তর পাওয়ার সম্ভবনা থাকে তা কখনো ভেবে দেখার চেষ্টা করবে না।বরং এক প্রকার জোর করেই অনৈতিক মিথ্যাকে সত্য বলে প্রমান করতে ব্যস্ত।আর একজন যখন এই ভুল করে, বিশেষ করে ফেসবুকে তা যখন অন্যএকজন উৎসুক ফেসবুকার দেখবে তখনই সেও চিন্তা না করে সরাসরি কপিপেস্ট মেরে কিংবা শেয়ার করে ভাইরাল করে দিবে।যাই হোক এতো কথা না বলে এবার আসল কথাটাই বলে ফেলি, “যোগ্যতা না থাকায় ঢাবিতে পড়তে পারি নাই ,কিন্ত আজ আমি ঢাবির চ্যান্সেলর , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে ৫০তম সমাবর্তনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি ফরম না পাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।“
প্রথম আলোর যে নিউজ লিঙ্কটা শেয়ার হচ্ছে এবং ৫০তম সমাবর্তনে বক্তব্য দিতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি ফরম না পাওয়ার যে গল্প শুনিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেটাও যেমন সত্য,ঠিক তেমনি সত্য হতে পারে প্রথম আলোর শেয়ার লিঙ্ক।কারণ, তিনি বিএ ভর্তি হওয়ার জন্য কিংবা ভর্তি ফরম উঠানোর যোগ্য ছিলেন না, আর তিনি বিএ পাস করে আইনে ভর্তি হওয়ার কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।আপনি যদি নিউজ লিঙ্ক দুইটাই পড়ে থাকেন তাহলে সহজেই উত্তর পেয়ে যাবেন।তবে অনলাইনে যেভাবে ভাইরাল করা হচ্ছে তা শুধু প্রথম আলো নিউজ লিঙ্কের ৬ নম্বর প্যারাটুকু।এতে সহজেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে সাধারণ মানুষদের মাঝে।কিন্তু এই বিভ্রান্তিটা মূলত উদ্দ্যেশ্যপ্রনোদীত এবং একজন মানুষকে মিথ্যার গুজব ছড়িয়ে ছোট করে উপস্থাপন করার জন্যই করা হচ্ছে।আপনার যদি সাধারণ জ্ঞানও থাকে তাহলে যে দুইটাই ভিন্ন জিনিস এবং ভিন্নভাবে বুঝানো হয়েছে তা আপনি অতি সহজেই বুঝতে পারবেন এবং যদি আপনি প্রথম আলোর আর্টিকেলটা পড়ে থাকেন।সেহেতু এটাকে মিথ্যা বলেছে বলে দাবিটা পুরাই বোকামী। আবার অনেকেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে রাষ্ট্রপতির কথার তাল মিলিয়ে ঘুলপাক খাইয়া নিজে নিজেই চন্দ্রজয় করেছেন।

বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শিবলিঙ্গ এবং শিবরাত্রি কথন ।

সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বী দের বিশেষ একটি রাত্রির নাম শিব রাত্রি । এদিন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শিবের মাথায় ফুল বেল পাতা সমেত দুধ গঁঙ্গা জল ঢেলে ও ভোগ হিসেবে বেল চড়িয়ে দিনটি পালন করবে। শিবের প্রনাম মন্ত্র-

ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর।।

শিব হলেন হিন্দুধর্মের প্রধান তিন দেবতার (ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব) অন্যতম। তিনি সমসাময়িক হিন্দুধর্মের তিনটি সর্বাধিক প্রভাবশালী সম্প্রদায়ের অন্যতম শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা। এছাড়া শিব স্মার্ত সম্প্রদায়ে পূজিত ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের (গণেশ, শিব, সূর্য, বিষ্ণু ও দুর্গা) একটি রূপ। তিনি ধ্বংস, সংহার ও প্রলয়ের দেবতা। শিবমূর্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল তাঁর তৃতীয় নয়ন, গলায় বাসুকী নাগ, জটায় অর্ধচন্দ্র, জটার উপর থেকে প্রবাহিত গঙ্গা, অস্ত্র ত্রিশূল ও বাদ্য ডমরু। শিবকে সাধারণত ‘শিবলিঙ্গ’ নামক বিমূর্ত প্রতীকে পূজা করা হয়।

শিব আক্ষরিক অর্থে "শুভ" বা "মঙ্গল"।এই শিবলিঙ্গের "লিঙ্গ" শব্দের অর্থ বিশ্লেষণে অনেকেই অনেকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, কেও বলেন লিঙ্গ শব্দের অর্থ "বাস" মানে বাসস্থান। অর্থাৎ শিবঠাকুর যেখানে বাস করেন বা বিরাজ করেন সেটাই আসলে শিবলিঙ্গ।আবার ব্যাকরণে লিঙ্গ শব্দের আভিধানিক অর্থ চিহ্ন বা প্রতীক।তবে সনাতনীরা লিঙ্গ অর্থ চিহ্ন বা প্রতীকই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।তবে তারা এই মানতে রাজি না যে, লিঙ্গ অর্থ “নুনু/যোনী”।এখন সনাতনীরা যদি প্রতিকই মানে আর আমি তাই ধরে নিই,তবেও কিন্তু লিঙ্গ মানে “নুনু/যোনী” বলেই প্রমানিত হবে।যেমন, ব্যাকরণে লিঙ্গ শব্দ হচ্ছে স্ত্রী ও পুরুষ ক্লীব ভেদ।এর মানে লিঙ্গটাকে নির্দিষ্ট করে বুঝানো হয়নি।কিন্তু একটু খেয়াল করেন এখানে কিন্তু “শিবলিঙ্গ” বলে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।আরো যদি স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই তবে দ্বারায়, স্ত্রী লিঙ্গ বা যোনী হচ্ছে স্ত্রীর প্রতীক, পুংলিঙ্গ বা নুনু হচ্ছে পুরুষের প্রতীক, তেমনি শিবলিঙ্গ হচ্ছে শিবের প্রতীক।তবে হিন্দু ধর্মে শিবলিঙ্গ কে অনেক ক্ষেত্রে পু লিঙ্গই বুঝানো হয়েছে অথবা হিন্দু দেবতা শিবের একটি প্রতীকচিহ্ন কে বুঝানো হয়েছে।কিন্তু শিব লিঙ্গকে খুঁটিয়ে দেখলে তার দুটো ভাগ পাওয়া পায়। উপরের অংশকে বলা হয় লিঙ্গ। নিচের অংশ যোনিপীঠ।আর এ যোনীপীঠ হচ্ছে আদিমাতা পার্বতীর।

কথিত আছে, ঋষিরা একদা এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন সরস্বতী নদীর তটে। এখন, যজ্ঞ করলে তার ফল অর্পণ করতে হয় কোনও এক দেবতাকে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু না শিব- কাকে অর্পণ করা হবে এই যজ্ঞের ফল, তাই নিয়েই সমস্যায় পড়েন ঋষিরা। তখন তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন ভৃগু। তিন দেবতাকে পরীক্ষা করার জন্য তিনি হাজির হন কৈলাসে।

কৈলাসে গিয়ে ভৃগু দেখেন, শিবের কোলে বসে রয়েছেন পার্বতী। অন্তরঙ্গ অবস্থায় আদিপিতা আর আদিমাতাকে দেখে তিনি লজ্জা পান। কিন্তু, শিবের কোনও বিকার ছিল না। ভৃগুর সামনেই তিনি সঙ্গম করছিলো পার্বতীকে। তখন ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন ভৃগু। তাঁর যুক্তি ছিল, মহাযোগী হয়েও শিব যখন কামনা সংযত করেননি, তখন পৃথিবীতে তাঁর লিঙ্গেরই পূজা হওয়া উচিত। ভৃগুর কথা ব্যর্থ হয়নি। তার পর থেকেই পুরাণ মতে পৃথিবীতে শিবের লিঙ্গ পূজা হয়।



আরো কথিত আছে, কথিত আছে, একদা দূর্গার সাথে সঙ্গমকালে শিব এত বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন যে, তাতে দুর্গার প্রাননাশের উপক্রম হয়। দুর্গা মনে মনে শ্রীকৃষ্ণকে স্বরন করতে থাকেন, এমন সময় শ্রীকৃষ্ণ আর্ভিভূত হয়ে নিজ হস্তস্থিত সুদর্শন চক্রধারা আঘাত করল উভয়ের সংযুক্ত যৌনাংঙ্গ কেটে আসে। ঐ সংযুক্ত যৌনাঙ্গের মিলিত সংস্করনের নাম বানলিঙ্গ বা শিবলিঙ্গ যা হিন্দু সমাজের একটি প্রধান পূজ্য বস্তু এবং ঐ শিবলিঙ্গের পুজার জন্য বহু বড় বড় শিব মন্দির গড়ে উঠেছে। সেন রাজবংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন লক্ষ্মণ সেন। তিনি শিব ভক্ত পরায়ণ নৃপতি ছিলেন। রাজা লক্ষ্মণ সেন কর্তৃক বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে যশোর জেলার মুরলী গ্রামের জোড়া শিব মন্দির দুটি খুবই মনোরম।

হিন্দুরা শিবলিঙ্গ সৃষ্টির পিছনে নারী ও পুরুষ উভয়ের অবদানের কথা স্মরণ করেই শিবলিঙ্গের পূজা করেন । একটি সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী শিবলিঙ্গ শিবের আদি অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক এক আদি এবং অন্তহীন স্তম্ভের রূপবিশেষ।

কেউ কেউ মনে করেন, লিঙ্গপূজা ভারতীয় আদিবাসী ধর্মগুলি থেকে হিন্দুধর্মে গৃহীত হয়েছে। অথর্ববেদে একটি স্তম্ভের স্তব করা হয়েছে। এটিই সম্ভবত লিঙ্গপূজার উৎস। কারোর কারোর মতে যূপস্তম্ভ বা হাঁড়িকাঠের সঙ্গে শিবলিঙ্গের যোগ রয়েছে। উক্ত স্তবটিকে আদি-অন্তহীন এক স্তম্ভ বা স্কম্ভ-এর কথা বলা হয়েছে; এই স্কম্ভ চিরন্তন ব্রহ্মের স্থলে স্থাপিত। যজ্ঞের আগুন, ধোঁয়া, ছাই, মাদক সোমরস ও যজ্ঞের কাঠ বহন করার ষাঁড় ইত্যাদির সঙ্গে শিবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির যোগ লক্ষিত হয়। মনে করা হয়, কালক্রমে যূপস্তম্ভ শিবলিঙ্গের রূপ নিয়েছিল।

শিবমহাপুরাণের বিদ্যেশ্বরসংহিতা ভাগের তৃতীয় অধ্যায়ের পঁচিশতম শ্লোক,

উক্তং ত্বয়া মহাভাগ লিঙ্গ-বেরপ্রচারণম্‌।

শিবস্য চ তদন্যেষাৎ বিভজ্য পরমার্থতঃ।।

এখানে ব্রহ্মপুত্র সনৎকুমার ব্যাসদেবের শিষ্য সূতর কাছে শিবের লিঙ্গশরীর আবির্ভাবের কারণ এবং কিভাবে তা আবির্ভূত হয়েছে--তা জানতে চান।

তখন সূত বলে,

পুরাকল্পে মহাকালে প্রপন্নে লোকবিশ্রুতে।
অযুধ্যেতাং মহাত্মানৌ ব্রহ্ম-বিষ্ণু পরস্পরম্‌।।২৮
তয়োর্মানং নিরাকর্ত্তুং তন্মধ্যে পরমেশ্বরঃ।
নিষ্কলস্তম্ভরূপেণ স্বরূপং সমদর্শয়ৎ।।২৯
ততঃ স্বলিঙ্গচিহ্নত্বাৎ স্তম্ভতো নিষ্কলং শিবঃ।
স্বলিঙ্গ দর্শয়ামাস জগতাং হিতকাম্যয়া।।৩০

অর্থাৎ লোকবিখ্যাত পূর্ব্বকল্পের বহুকাল অতীত হইলে একদা ব্রহ্মা ও বিষ্ণু পরস্পর সমরাসক্ত হওয়ায় তাঁহাদিগের অভিমান দূরীকরণার্থ ত্রিগুণাতীর ভগবান্‌ মহেশ্বর, উভয় যোদ্ধার মধ্যস্থলে স্তম্ভরূপে আবির্ভূত হইলেন। পরে সেই স্তম্ভে স্বীয় লিঙ্গচিহ্ন নিবন্ধন জগত্রয়ের হিতকামনায় তাহা হইতে নির্গুণ নিজলিঙ্গ প্রকাশ করিলেন।

আবার সপ্তম অধ্যায়,

তুষ্টোহহমদ্য বাং বৎসৌ পূজয়াস্মিন্‌ মহাদিনে
দিনমেতং ততং পূণ্যং ভবিষ্যতি মহত্তরম্‌।
শিবরাত্রিরিতি খ্যাতা তিথিরেষা মম প্রিয়াং।।১০

অর্থাৎ অদ্য আমি এই মহৎ দিনে তোমাদিগের পূজায় পরম প্রীতিলাভ করিলাম, অতএব চিরকাল এই পবিত্র দিন শ্রেষ্ঠতম বলিয়া সমাদৃত হইবে এবং মৎপ্রিয় এই তিথি 'শিবরাত্রি' নামে জগতে খ্যাতিলাভ করিবে।সূত্র

বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সরস্বতী পূজার ইতিবৃত্ত !!


হিন্দু ধর্মমতে সরস্বতী বিদ্যার দেবী। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথিতে জ্ঞানপিপাসু বিদ্যার্থীরা সরস্বতী দেবীর অর্চনা করে থাকে দেবীর পুণ্য দৃষ্টি লাভের প্রত্যাশায়।

বাঙালির ঘরে ঘরে সারা বছর যে নানারকমের পালাপার্বণ লেগেই থাকে, তার মধ্যে অন্যতম এক অনুষ্ঠান। সরস্বতী পুজো আবার যত না বড়দের পুজো, তার থেকে অনেক বেশি ছোটদেরই পুজো। সরস্বতীকে আমরা বিদ্যার দেবী বলে জানি। সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের আশাভরসা তিনি, কারণ তিনি তুষ্ট থাকলেই ছাত্ররা ভালোভাবে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো ফল করবে, এটাই বিশ্বাস। তাই বেশিরভাগ স্কুলে, অনেকের নিজেদের বাড়িতেই সবাই ধূমধাম করে সরস্বতী পূজা করে।

শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা হয় সাধারণ পূজার আচারাদি মেনে। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপাচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়, যেমন অভ্র-আবির, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিষ, বাসন্তী রঙের গাঁদা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির উপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা বিংশ শতাব্দীতেও প্রচলিত ছিল। শহরে ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সরস্বতীর প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করতেন। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে সরস্বতী দেবী হলেও মেয়েরা অঞ্জলি দিতে পারত না। পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেত বস্ত্র পরিধান করে থাকে যা পবিত্রতার নিদর্শন। দেবীর আসন কে পুষ্পশোভামন্ডিত করে রাখা হয়। পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগ পর্যন্ত দেবীর মুখমন্ডল ঢাকা থাকে।লোকাচার অনুসারে ছাত্রছাত্রীরা পূজার আগ পর্যন্ত কূল খেতে পারে না। দেবীকে নতুন বছরের কূল দিয়ে তবেই কূল খায় ছাত্রছাত্রীরা।পূজার আগের দিন সংযম পালন অর্থাৎ সংযমের দিন মাছ-মাংস পরিহার করে নিরামিষ খাওয়া বাঞ্চনীয়। পূজার দিন লেখাপড়া নিষেধ থাকে। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, লেখনী-মস্যাধার, পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করা হয়। পূজার শেষে পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র-
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।।
এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।

প্রনাম মন্ত্র-
নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।

সরস্বতীর স্তব-
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারব‌ভূষিতা
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।।
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।

পাঠ করে পূজার কার্যাদি শেষ করা হয়। পরদিন সকালে ফের পূজার পর চিড়া ও দই মেশানো দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করে পূজা সমাপ্ত হয় ও সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।তবে সব মিলে এসব আচার-অনুষ্ঠানেও রয়েছে আনন্দ।

সরস্বতী শব্দের দুই অর্থ - একটি ত্রিলোক্য ব্যাপিনী সূর্যাগ্নি, অন্যটি নদী। সরস্‌ + বতী = সরস্বতী, অর্থ জ্যোতির্ময়ী। আবার সৃ ধাতু নিস্পন্ন করে সর শব্দের অর্থ জল। অর্থাৎ যাতে জল আছে তাই সরস্বতী। ঋগ্বেদে আছে ‘অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী', সম্ভবত সরস্বতী নদীর তীরেই বৈদিক এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির উদ্ভব।

সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী। সরস্বতী শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থে সরস+বতু আর স্ত্রী লিঙ্গে ‘ঈ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে সরস্বতী। তিনি বিদ্যাদেবী, জ্ঞানদায়িনী, বীণাপাণি, কুলপ্রিয়া, পলাশপ্রিয়া প্রভৃতি নামে অভিহিতা। তাঁর এক হাতে বীণা অন্য হাতে পুস্তক।

বৃহস্পতি হচ্ছেন জ্ঞানের দেবতা, বৃহস্পতি পত্নী সরস্বতীও জ্ঞানের দেবী। সরস্বতী নদীর তীরে যজ্ঞের আগুন জ্বেলে সেখানেই ঋষি লাভ করেছিলেন বেদ বা ঋগমন্ত্র। সুতরাং সরস্বতী জ্ঞানের দেবী হিসেবেই পরিচিত হয়েছিলেন এ ধরাতে। কালের বিবর্তনে সরস্বতী তাঁর অন্য বৈশিষ্ট্যগুলো হারিয়ে কেবল বিদ্যাদেবী অর্থাৎ জ্ঞান ও ললিতকলার দেবীতে পরিণত হলেন। সরস্বতী জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী। ঋগবেদে তিনি বৈদিক সরস্বতী নদীর অভিন্ন এক রূপ।

ঋগ্বেদে বাগ্দেবী ত্রয়ীমূর্তি - ভূ: ভুব: স্ব:, জ্ঞানময়ীরূপে সর্বত্রব্যাপিনী। বিশ্বভূবন প্রকাশ তারই জ্যোতিতে। হৃদয়ে সে আলোকবর্তিকা যখন প্রজ্বলিত হয়, তখন জমাট বাধা অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার যায় দূর হয়ে। অন্তরে, বাইরে সর্বত্র তখন জ্বলতে থাকে জ্ঞানের পুণ্য জ্যোতি।এই সবই সনাতনীদের বিশ্বাস কেবলমাত্র।

কেউ কেউ বলেন, মর্ত্য ধামে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে প্রথম বারের মতো শ্রীশ্রী সরস্বতী দেবী পূজার প্রচলন করেন।

নানা পূরান মতে বর্ণনা-

স্কন্দপুরাণে, ব্রহ্মা তাঁর কন্যা সরস্বতীর প্রতি দুর্ব্যবহার করলে শিব তাঁকে শরবিদ্ধ করে হত্যা করেন। তখন ব্রহ্মার পত্নী গায়ত্রী কন্যা সরস্বতীকে নিয়ে স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য গন্ধমাদন পর্বতে তপস্যা শুরু করেন। তাঁদের দীর্ঘ তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব ব্রহ্মার প্রাণ ফিরিয়ে দেন। সেই থেকে শিবের নির্দেশে গায়ত্রী ও সরস্বতীর তপস্যাস্থলে দুটি প্রসিদ্ধ তীর্থ সৃষ্টি হয়।

দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে, দেবী আদ্য প্রকৃতির তৃতীয় অংশে দেবী সরস্বতীর জন্ম। তিনি কৃষ্ণের জিহ্বাগ্র থেকে উৎপন্ন হয়েছেন। সরস্বতী বাক্য, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী;সকল সংশয় ছেদকারিণী ও সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িনী এবং বিশ্বের উপজীবিকা স্বরূপিনী। ব্রহ্মা প্রথম তাঁকে পূজা করেন। পরে জগতে তাঁর পূজা প্রতিষ্ঠিত হয়। সরস্বতী শুক্লবর্ণা, পীতবস্ত্রধারিণী এবং বীণা ও পুস্তকহস্তা। তিনি নারায়ণের অন্যতম পত্নী হয়েছিলেন। তারপর কৃষ্ণ জগতে তাঁর পূজা প্রবর্তন করেন মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে তাঁর পূজা হয়।

"শুক্ল যজুর্বেদ" অনুসারে, একসময় ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে যাওয়ার ফলে তিনি মেষ আকৃতি গ্রহণ করেন। সেসময় ইন্দ্রের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল স্বর্গের অশ্বিনীদ্বয়ের উপর এবং সেবা-শুশ্রুষার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ইন্দ্র সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ার পর তাকে মেষটি দান করেন।

মার্কণ্ডেয় পুরাণে, শ্রীশ্রীচণ্ডী উত্তরলীলায় শুম্ভ নিশুম্ভ নামক অসুরদ্বয়কে বধ করার সময় দেবীর যে মূর্তির কল্পনা করা হয়েছিল তা ছিল মহাসরস্বতী। এ মূর্তি অষ্টভূজা - বাণ, কার্মূক, শঙ্খ, চক্র, হল,মুষল, শূল ও ঘন্টা ছিল তাঁর অস্ত্র। তাঁর এই সংহারলীলাতেও কিন্তু জ্ঞানের ভাবটি হানি ঘটেনি,কেননা তিনি ‘একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়াকা মমাপরা' বলে মোহদুষ্ট শুম্ভকে অদ্বৈত জ্ঞান দান করেছিলেন।

সরস্বতীর বাহন হাঁস। তিনি এ বাহন ব্রহ্মার কাছ থেকে পেয়েছিলেন।তবে বৈদিক সাক্ষ্য থেকেই জানা যায় সিংহ ও মেষ সরস্বতী দেবীর আদি বাহন ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেবী দুর্গা সরস্বতী দেবীর কাছ থেকে সিংহ কেড়ে নিলেন আর কার্ত্তিক কেড়ে নিলেন ময়ূর। পরবর্তী সময়ে সরস্বতী দেবী হংসকেই তাঁর চিরস্থায়ী বাহনের মর্যাদা দিলেন।আর সরস্বতীর এ বাহন সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে সর্বত্রই তাঁর সমান গতি ঠিক যেমনভাবে জ্ঞানময় পরমাত্মা সব জায়গায় বিদ্যমান। হংস জল ও দুধের পার্থক্য করতে সক্ষম। জল ও দুগ্ধ মিশ্রিত থাকলে হাঁস শুধু সারবস্তু দুগ্ধ বা ক্ষীরটুকুই গ্রহণ করে, জল পড়ে থাকে। জ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রেও হংসের এ স্বভাব তাৎপর্য বহন করে।

শুধু বৈদিক যুগেই নয়, পরবর্তীকালে মহাভারত, পুরাণ, কাব্যে পূতসলিলা সরস্বতীর মহিমা বর্ণিত হয়েছে। সরস্বতী নদীর উৎপত্তিস্থল ছিল হিমালয়ের সিমুর পর্বতে, সেখান থেকে পাঞ্জাবের আম্বালা জেলার আদবদ্রী নামক স্থানে সমভূমিতে অবতরণ করেছিল। যে প্রসবণ থেকে এই নদীর উৎপত্তি তা ছিল প্লক্ষ্ণাবৃক্ষের নিকটে, তাই একে বলা হতো প্লক্ষ্ণাবতরণ। ঋগ্বেদের যুগে গঙ্গা যমুনা ছিল অপ্রধান নদী, সরস্বতী নদীই ছিল সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়। এর তীরে ছিল প্রসিদ্ধ তীর্থভূমি।

বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে তাঁকে 'সকলকলাত্মিকা' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই যখন তাঁর মূর্তি তৈরীর প্রশ্ন আসল, তখন কলাবিদ্যার প্রতীক হিসেবে তাঁকে একটা বীণা দেওয়া হল। বিখ্যাত তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ সমস্ত শাস্ত্র ঘেঁটে সরস্বতীর যে ছয়টি ধ্যানমন্ত্রের উল্লেখ করেছেন, তাতে দেবীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

১) তাঁকে তুলনা করা হয়েছে কুন্দ, চন্দ্র ও তুষার অর্থাৎ বরফের সঙ্গে। মানে তাঁর বর্ণ এদের মত শুভ্র; সঙ্গে তাঁর পোষাক সাদা, তিনি বসে আছেন সাদা পদ্মফুলের উপর। এমনকি তাঁর বাহনও শ্বেতহংস।

২) বেশির ভাগ জায়গায় তিনি চতুর্ভুজা, পদ্ম, বীণা, বই, অক্ষমালা, কমণ্ডলু ও বরাভয় মুদ্রায় তাঁকে সাজানো হয়েছে।

৩) তিনি ত্রিনয়নী। এই তন্ত্রশাস্ত্রেই কোথাও তাঁকে দ্বিভুজা বলেও দেখানো হয়েছে। সরস্বতীর এক নাম সারদা। সাধারণতঃ তাঁর একটাই মুখ হলেও এই নামের পূজাতে তাঁর পাঁচটা মুখ এবং দশটা হাত।

বিভিন্ন পুরাণে সরস্বতীর রূপ বর্ণনায় শিবের মত মাথায় জটা ও কপালে চাঁদ দেখা যায়। আজকাল আমরা যেসব সরস্বতী মূর্তি দেখি তা শিল্পীরা এইসব বর্ণনাকে আশ্রয় করে মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরী করে থাকেন।

বি.দ্রঃ প্রখর জ্ঞানকোষ আইস্টাইন সরস্বতীর পূজা না করেও মেধা-মননে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতমদের একজন হয়ে প্রমান করেছিলেন বিদ্যার্জনে সরস্বতীর ভূমিকা শূন্য।--আরজ আলী মাতু্ববর

সোর্স ঃ ইন্টারনেট 

শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৭

১০০% ফেসবুক নারীবাদী,হুম !!

-ভাই,খুব প্যারায় আছি।
-কেন?
-নারী অধিকার নিয়ে কোন কথা বললেই কিছু লোকের চুলকানী উঠে যায়।
-ও আচ্ছা।
-ভাই,আপনি কি নারীবাদ সাপোর্ট করেন?
-হুম,কেন?
-না এমনি,তাহলে তো মিলেই গেল।
-কী?
-আপনিও নারীবাদে বিশ্বাসী আর আমিও।
-হুম,ভালোই।
-আচ্ছা ভাই, আপনি কিভাবে নারীবাদ সাপোর্ট করেন?আপনাকে না দেখলাম ওইদিন এক নারীবাদীর পোস্টে বিরোধীতা করতে।
-হুম!যাউজ্ঞা,তুমি কিভাবে কর সেটাই আগে জানি।
-ভাই ফেসবুকে করি।আর নারীবাদীরা যা পোস্টায় ওইটাতেই লাইকাই আর সহমত পোষন করি।আর যখন কোন নির্যাতিত নারীর কিছু বিষয় সব থেকে বেশী আলোচিত হয় তখন ধুমধাম পোস্টাই।যেমন,ধর্ষন,শ্লীলতাহানি আরো কত বিষয় আছে না! ভালো লাইকও পাই ভাই।
-ও আচ্ছা,ভালো।চা-বিড়ি খাবা?
-খাওয়া যায়।ভাই মেয়েটা দেখেন,খাসা মাল একটা, পুরাই অস্থির আর পাছাটা দেখছেন পুরাই চল্লিশ!
-হুম,আচ্ছা বাদ দাও।(মামা দুই কাপ চা আর দুইটা সিগারেট দিও)তোমার বোনের কি খবর?শশুড় বাড়ী না তোমাদের বাড়ী?
-ভাই,আর বইলেন না।আপুরে নিয়েই যত চিন্তা আর বিপদ।
-কেন!
-আরে ভাই,ভাইয়া আর ভাইয়ার বাপ-মায় খুব জ্বালায়।আর দুইদিন পরপর টাকার জন্য আপুরে মারে।গতকালকেই শশুড়বাড়ী থেকে রাগ করে চলে আসছে।ও আর যেতে চায় না।
-ওহ আচ্ছা!তোমরা কি ভাবছ এখন?
-ভাই বলেন তো চাইলেই কি এতো সহজে ফিরে আসা যায়।সবে মাত্র নতুন বিয়ে হয়েছে এবং ৫ মাসের অন্ত:সত্ত্বা।এখন আপু ডিভোর্স নিতে চায়।কিন্তু এটা কি এখন সম্ভব?আর নারী হলে এইটুকু সহ্য করতেই হবে।আমার আম্মাও এরকম একটু জ্বালাতনের স্বীকার হয়েছে।তাই বলে কি আম্মা আব্বাকে ছেড়ে চলে গেছে?
-হুম,তা ঠিক!
-আব্বা-আম্মা আমরা সবাই ওকে বুঝাইতাছে।কিন্তু বুঝার চেষ্টাই করে না।অবশেষ আজ রাজী হইছে ভাইয়ার সাথেই সংসার করবে।আর রাজী না হয়ে উপায় আছে,আব্বার মানসম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাড়াইছিলো।আগামীকালই চলে যাবে।
-ওহ আচ্ছা,ভালো।আমার উঠতে হবে একটু।
-আচ্ছা ভাই,ভালো থাকেন।
-তুমিও ভাই।

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৭

সাজু খাদেম প্রসঙ্গ !

সাজু খাদেম ভালো না,সে থার্ড ক্লাস কৌতুক করেছে তিন মেয়ে সেলিব্রেটির সামনে এবং তারা যেহেতু কোন প্রতিবাদ করে নাই তারাও থার্ডক্লাস মেরুদণ্ডহীন বলে দাবি করতাছে অনেক নারীবাদী সেলিব্রেটিরা।ভাইয়া/আপুরা একটু থামেন,সাজু খাদেম খারাপ আর আপনারা ধোয়া তুলসী পাতা!সাজু খাদেম যদি এতোই থার্ড ক্লাস প্রকৃতির হতো তাহলে মিডিয়া জগতের মেয়েরাও তা বিরোদ্ধে লিখতো স্বপক্ষে না এটাই স্বাভাবিক।আর তিলকে তাল বানানো যেন বাংগালীর জাতীয় অধিকার।সাজু খাদেমের সাথে কিংবা তাদের সাথে সাজুর এরকম ভালো বন্ধুসুলভ সম্পর্ক আছে দেখেই সে এমন কৌতুক করেছে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু আপনাদের গবেষণা দেখে মনে হচ্ছে সাজু খাদেম তাদের জোর পূর্বক টিচ করেছে।আমার ধারণা মোটেও না,কৌতুকের মূল রহস্যটাই হলো মানুষকে হাসানো কিংবা বোকা বানানো।আর সাজু খাদেমও তাই করেছে।কৌতুক বা জোকস কেমন হতে হবে তা বেধে দিয়ে কখনো মানুষকে হাসানো বা বোকা বানোটা কোন আর্ট না।
তাছাড়া আরো একটা ব্যাপার হলো,অনেক নারীবাদী পুরুষ এবং নারী দেখা যায় তারা তাদের বন্ধুদের সাথে আড্ডার স্থলে মারা খাওয়া কথা থেকে শুরু করে কত ধরনের ফাজলামোই করে থাকে।কিন্তু এগুলা যদি সিরিয়াস হিসাবে নেওয়া যায় তাহলেতো প্রতিদিন অনেক ভালো ছেলে-মেয়েও চরিত্রহীনা হয়ে যাচ্ছে।না তা হচ্ছে না,কারণ তারা বন্ধু তাই তারা এমন কথা বলছে বলে আমরা সবাই সহজে মেনে নিই।এখন বাকী কথা হলো অনলাইন বা ফেসবুকেই যেহেতু এই নারীবাদীরা বেশী সরব সেহেতু এখানেই দেখা যায় কত পরপুরুষের সাথে একটা নারী বা পুরুষের কমেন্ট বক্সে কত সুড়সুড়ি জাতীয় আলাপ।অন্যের বউ হয়ে অন্যকে জানু বলে ডাকা,পরকীয়া করা, সেক্স করা এসবও নাকী নারীবাদীদের একটা অধিকার।কারো বউ মানেই তার সম্পত্তি না।ভালো কথা,আপনাদের এতো উচ্চ মানসিকতা কিন্তু সাজু খাদেমতো ওইদিক থেকে কিছুই করে নাই।
ও হ্যা,আরো একটা কথা।যখন কোন পর্ণ ভিডিও ফাস হয় কোন ব্যক্তির তখন সেটা নিয়েও আপনাদের খুব চিন্তা দেখা যায়।মেয়েটার মানসম্মানের ক্ষতি,এসব নিয়ে বেশী কথা বলা ঠিক না এতে আরো বেশী ভাইরাল হয় ইত্যাদি ইত্যাদি কথা শোনা যায়।কিন্তু সাজু খাদেমের জোকসটাকে যে আপনারা পর্ণের থেকে বেশী বানিয়ে সাজুর চরিত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করেছেন সেটা কিছু না! জানি আমার এই যুক্তিটা আপনাদের কাছে হাস্যকর হবে।কারণ আপনারা সেলিব্রেটি সাথে নারীবাদীও আর আমরা ভণ্ড।
আবার আপনারাই দাবী করেন যে,প্রেমিক প্রেমিকারা রাস্তায় বা চিপাচাপায় চুমু খেতে পারে না,সেক্সকে ট্যাবু হিসাবে দেখে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা,ছেলে-মেয়েকে একসাথে ঘুরাফেরা,আড্ডা দেওয়াকে ভালোভাবে নেয় না কেও,একজন অবিবাহিত নারী কিংবা অবিবাহিত পুরুষের একরুমে যাওয়াকে চরিত্রহীনা পতিতা বলে সমাজ কত কিছুইতো দাবি করেন।তাহলে সাজুর এই জোকসটাকে যে আপনারা এভাবে নিতাছেন এটা কি আপনাদের ট্যাবু না।না পুরাতন কথাগুলা ভুলে গেছেন সাজুর কথায় যৌনতা খুজে পেয়ে।আগে নিজে ট্যাবু থেকে বের হোন পরে না হয় ট্যাবু ট্যাবু করবেন বা সমাজকে দোষারুপ করবেন।
পরিশেষে বলতে চাই,সাজুর সাথে যারা সময় কাটায় তাদের অনেকেরই দাবি সাজু ব্যক্তি হিসাবে অনেক ভালো এবং সে অনেক বিনোদন প্রিয় মানুষ এবং অন্যকে বিনোদিত করে।অর্থাৎ সাজুর সাথে মিডিয়ার জগতের নারী-পুরুষ সকলের সাথে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।তাহলে এখানে আমাদের এটা ধরে নেওয়াই স্বাভাবিক এটা জোকস ব্যতীত কিছু ছিলো না।নারী নিয়ে অনেক জোকস আছে,তাই বলে জোকসে যৌন সুড়সুড়ি খুজাটা আপনারই ট্যাবু।আর এই বিরতির বাইরে আড্ডার ভিডিও যে ফাস করেছে সে উদ্দ্যেশমূলক ভাবেই করেছে।সেহেতু এখানে এই ব্যক্তিকে খুজে বের করে শাস্তির দাবি করা উচিত।
বি.দ্র: আগে নিজে ট্যাবু থেকে বের হোন,তারপর সমাজ বদলানোর চেষ্টা করেন।