মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

বিচারহীনতায় বাংলাদেশ

যখন একটি রাষ্ট্রে বিচারহীনতার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, অযাচিত রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পায় তখনই সমাজের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে থাকে। আর তখনই রাজনৈতিক প্রভাবে অপরাধরীরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে। গোটা দেশটাই হয়ে উঠে অপরাধ রাজ্য।

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে সমাজের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি। ঘটনার বিশ্লেষণ বা তরজমা এখন আর জনমানসে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কোপাকুপির আতঙ্ক। কে কখন সন্ত্রাসীদের চাপাতির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন এই ভয় পেয়ে বসে আছে দেশের সকল শ্রেনীর কিংবা বিশেষ কিছু লোকের মনে।কারণ কে কোথায়,কিভাবে এই টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন তা আমাদের কারো জানা নাই। আর কী অপরাধে মানুষ একের পর এক খুন হচ্ছেন বা তাও কেউ জানছে না।তবে ব্লগার,মুক্তমনা,লেখক,শিক্ষক,প্রগতিশীল,সংস্কৃতিমনারাই খুনীদের টার্গেট তা বিগত হত্যাকান্ড এবং একই কায়দায় হত্যার কৌশল থেকে মোটামোটি সুস্পষ্টভাবেই বলা যায়।আর খুনীদের হত্যার মূল হাতিয়ার হচ্ছে চাপাতির ব্যবহার।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারনা দিতে পারছে না। বিগত কয়েক বছর ধরে সংঘটিত হত্যাকান্ডগুলো দেশের স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিফল ঘটায় না ৷ সরকার সেইসব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিধায় একের পর এক হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে ৷ ফলস্বরূপ আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ৷

সরকারের বিভিন্ন তদন্তে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সক্ষমতা এবং পেশাদারীত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ৷ তদন্তে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সাগর-রুনী হত্যা, নাস্তিক,ব্লগার,প্রকাশক,অধ্যাপক, মুয়াজ্জিন,পুরোহি ত,সাধু,বিদেশী পুলিশ হত্যার সঠিক কারন এবং হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বিধায় খুনীরা এখন কাউকে হত্যা করতে দ্বিতীয়বার ভাবছে না ৷ খুনীরা খুন করে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে খুন করেও।অন্যদিকে সাধারণ মানুষ অনিরাপত্তায় ভোগছে।

ইদানিং শুধু চাপাতির ব্যবহার করেই খুনিরা আর সন্তুষ্ট থাকছে না। এর সঙ্গে তারা যুক্ত করে নিয়েছে গুলি। টার্গেট করা ব্যক্তির মৃত্যু দ্রুত নিশ্চিত করতেই খুনিরা গুলির ব্যবহার করছে। কুপিয়ে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যাচ্ছে। অথবা মোটরসাইকেলে করে এসে খুন করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য একসাথে সবাইকে অনিরাপদ করে ফেলেছে।গত বছর পর্যন্ত চাপাতি হত্যা হতো মাসিক হিসাবে। কিন্তু গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পর, বর্তমানে তা দৈনিক হিসাবেই শুরু হয়েছে।কারণ চাপাতিবাদীরা জেনে গেছে, দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তাদের কিছু করতে পারবে না।নাস্তিক,ব্লগার ,প্রকাশক,অধ্যাপক, মুয়াজ্জিন,পুরোহি ত,সাধু,বিদেশী দুতাবাসের কর্মকর্তার পর এবার মন্ত্রী মিনিষ্টারদের আত্মীয়-স্বজনদের গর্দান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে চাপাতি। এভাবে চলতে থাকলে অল্পদিনের ভেতরেই মন্ত্রীদের গর্দানেও আঘাত হানবে চাপাতি। বাসায়, অফিসে, রাস্তায়, বাজারে যে কোন জায়গায় আমাকে-আপনাকে কুপিয়ে মারবে।

যাকে হত্যা করা হোল তার পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তিনি বিশ্বাসী কি অবিশ্বাসী তাতে কোন হত্যা জায়েজ হয়না। রাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। কোন হত্যারই সুরাহা হচ্ছে না। কারণ যা-ই হোক না কেন "হত্যা" প্রচলিত আইনেই অপরাধ। কিন্তু আমরা দেখছি প্রতিটি হত্যার পর, বিভিন্ন মহল থেকে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।“ এই হত্যাকান্ডে বি এন পি জামায়াত জড়িত”-প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর কলাবাগানে দুর্বিত্তকতৃক দুজনকে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যার পর বিরোধীদলকে ফাঁসানোর জন্য তিনি একটি রাজনৈতিক মন্তব্য করে ফেললেন। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী কতটা নিন্মমানের হতে পারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে শিক্ষনীয়।কিন্তু কেনো? হত্যাকারী নিজ দলের হতে পারে না নাকি ?খুনি, ধর্ষক, লুটেরা, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। তারা দেশের শত্রু। তারা জাতির শত্রু,বিবেকের শ্ত্রু। ফলে হত্যার তদন্ত ও বিচার অন্ধকারে হারিয়ে যায়।সেই খুনের বিচার করার সাহস এই নাজুক অনুভূতিপ্রবণ রাষ্ট্রের নেই। এই হত্যাযজ্ঞ চলবেই, আমরা যা করতে পারি তা হলো, মৃত্যুচিন্তা মাথায় না নিয়ে যতদিন বেঁচে আছি সময়টাকে উপভোগ করতে পারি। এর বেশি কিছু আমাদের সক্ষমতার সীমায় নেই।

কিন্তু সাধারণ মানুষ আজ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। কিন্তু সুরক্ষিত কারাগার অঞ্চল ও অরক্ষিত, চাপাতি শিল্পের অগ্রযাত্রায় গত কয়েকটি বছরের ব্যাপক সফল্যে আজ উদ্ভাসিত বাংলাদেশ।

আহামদ ছফা যথার্থই বলেছিলেন- “আওয়ামি-লীগ হেরে গেলে হেরে যায় সমগ্র বাংলাদেশ ,জিতে গেলে পুরুবাংলাদেশ জিতে না”।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

বেখায়ালী

যোজন যোজন দূরে হারিয়ে গেছ তুমি
ফিরে পাবার নেইকো কোন আশা
তবুও কেন এতো মিছে মায়ায়
বেখায়ালি জীবন কাটছে ভবের পাড়ে।


আখি খুলে চেয়ে দেখ ঐ নীল আকাশের বুকে
উঠেছে নতুন সূর্য,পাখিরা করছে কলরব।
নগরী হয়ে উঠেছে ক্রমশ ব্যস্তময়
একা মনে বসে আছি জানালার পাশে।


বেলা শেষে রাত এসে জানালার প্রানে কড়া নাড়ে
পাখিরা নীড়ে ফিরেছে,চাঁদ মামা আলো ছড়াচ্ছে।
রাতের সংগী হয়েছে নতুন করে নিকোটিনের ধোয়া
আর গিটারের টুং টাং কর্কশ শব্দ
বেখায়ালী সবকিছুতেই তবু জীবনটা কাটছে বেশ।

শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৬

বিধর্মী/নাস্তিক হত্যা কি ইসলাম স্বীকার করে???

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।নাজিমুদ্দিন সামাদের ওপর আক্রমণের সময় তার সঙ্গে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ ইস্টের শিক্ষার্থী নাজিবের ওপরও আক্রমণ হয়। সৌভাগ্যক্রমে নাজিব বেঁচে যান।রাত নয়টার দিকে ঢাকার পুরনো অংশ সূত্রাপুরের একরামপুর ট্রাফিক মোড়ে কয়েকজন যুবক সামাদের গতিরোধ করে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে তাকে গুলি করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই সময় হত্যাকারীরা 'আল্লাহু আকবার' স্লোগান দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

নাজিমউদ্দীনকে যে বা যারা খুন করেছে তারা একটা ভিন্ন মতবাদ,ভিন্ন দর্শন,ভিন্ন চিন্তার পার্থক্যের ভিত্তিতেই খুন করেছে। আর এই ভিন্ন পার্থক্যটা হচ্ছে প্রগতিশীলতা,নাস্তিকতা,ধর্মান্ধদের সমালোচনা কিংবা বিশেষ কোন ধর্মকে সমালোচনা করা। আর অনেকগুলো ধর্মের মধ্যে সেই বিশেষ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম ধর্ম এবং নবীর সমালোচনা করা। ইসলামী মতবাদ বলে নবী ও ইসলাম সমালোচনাকারীর একমাত্র শাস্তি হচ্ছে তাদেরকে হত্যা করে ফেলা। তাই ইসলাম যে তার সমালোচনাকারীকে হত্যা করতে বলে এটি যাতে প্রকাশিত হয়ে না পড়ে তার জন্য সব রকম চেষ্টা মডারেট মুসলিরা। তাদের প্রচারের মূল লক্ষ্য হলো, ইসলামী নিদের্শে হওয়া খুনগুলোকে প্রচার করা যে, ইসলামের এই ধরণের খুনকে কোনভাবেই সমর্থন করে না। কিন্তু আসুন তাহলে এবার একটু জেনে নিই ইসলাম এ ধরনের হত্যাকে সমর্থন করে কি করে না,তা কোরআনের মাধ্যমেই একটু পর্যালোচনা করা যাক।কারণ হাদিসের কথা বললে সেটাতো আবার জাল হাদিস হয়ে যায় আপনাদের চোখে।তবে আমারও এতো সুভাগ্য হইনি এখনো এত বড় হাদিসের বই ধৈর্য ধরে পড়ার।তবে কোরআনটা পড়া হইছিল এই ইহুদীদের তৈরী স্মার্টফোনের কল্যানে।আচ্ছা ফালতু কথা না বলে এখন একটু নিচের দিকে নজর রাখা যাক,-

# আর তাদের কে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে।বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষন তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে।এ হল কাফেরদের শাস্তি।(২:১৯১)

# খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো।কারণ,ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্ক কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি।আরা ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন।বস্তুতঃ জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।(৩:১৫১)

# যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।(৫:৩৩)

# যখন নির্দেশদান করেন ফেরেশতাদিগকে তমাদ্র পরওয়ারদেগার যে,আমি সাথে রয়েছি তোমাদের,সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমুহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।(৮:১২)

# যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।(৯:১৪)

# তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম।(৯:২৯)

# হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন।(৯:৭৩)

আর একটা হাদিসের কথা না বললেই না হয়।যেখানে বিভিন্ন সময় ওয়াজ মাহফিলে ইহুদী বৃদ্ধ কবি আবু আফাক এবং আসমা-বিনতে মারওয়ান যখন তার সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছিলেন তখন কিভাবে হত্যা করেছিল নবীর এক অনুসারী এবং হত্যার পর নবী ইবনে আব্দুলার সাথে নামাজ আদায়ের কথা বর্নণা করা হয় খুব গর্ভ সহকারেই।

এরপরেও যদি কোন মডারেট মুসলি বলে ইসলাম নাস্তিক/বিধর্মী কিংবা ইসলাম সমালোচনাকারী হত্যা সাপোর্ট করে না তাহলে এখনো আপনি বোকার রাজ্যে বাস করছেন।আর এপনি যখন কোরআনের আল্লাহর বানী অস্বীকার করবেন তখন আপনিও মুনাফিক।আর মুনাফিকের পরকাল জাহান্নামের আগুন।এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেছে,-

‘‘আল্লাহ মুনাফেক নর-নারী ও অবিশ্বাসীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাহান্নামের আগুনের যেখানে ওরা থাকবে চিরকাল, এই ওদের জন্য হিসেব। ওদের ওপর রয়েছে আল্লাহর অভিশাপ, ওদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।’’(৯:৬৮)

‘‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ করেছেন তা ছিন্ন করে আর পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদেরই জন্য রয়েছে অভিশাপ এবং তাদের জন্য নিকৃষ্ট বাসস্থান।’’(১৩:২৫)

এখন আপনি বলেন ইসলাম এ হত্যা স্বীকার করে কি করে না?

রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬

পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০৩ (বৌদ্ধ ধর্ম)

কোন সৎ, চিন্তা ব্যক্তি নারীর প্রতি কোনো ধর্মের স্থূল নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ও বর্বরতার উপেক্ষা করতে পারে না ।শক্তিশালী সৃষ্টিকর্তা দেবতা পুরুষ শাসিত, উপজাতীয়, সহিংস, অসহিষ্ণু সমাজের পণ্য ছিল। সমাজ জীবনে নারীর তুলনামূলক অনুপস্থিতি এবং নারীর উপর ধর্ষবাদী পুরুষদের যৌন আগ্রাসন ও ধর্ষণের আধিক্য যে কোনও মানুষের চোখে পড়বে।

আমরা জানি যে, নারীর হাত দিয়েই প্রধানত মানুষের সভ্যতার সূচনা হয়। কৃষি, পশুপালন, বস্ত্র, মৃৎ পাত্র নির্মাণ এগুলো মূলত নারীদের উদ্ভাবন এবং অনেক কাল পর্যন্ত এগুলো মূলত তাদেরই কাজ ছিল।কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে যুদ্ধ বা সমরবাদের শক্তিবৃদ্ধি নারীর অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটায়।

বৌদ্ব ধর্মের অনুসারীগণ মনে করে নারীসংগ নির্বান লাভে অন্তরায়।বৌদ্ব ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বোদ্ধ বলেছেন, “নারীদের সাথে কোনরুপ মেলামেশা কর না এবং তাদের প্রতি অনুরাগ রেখ না।তাদের সাথে কথা-বার্তাও বলবে না।কারণ পুরুষের পক্ষে নারী ভয়ংকরস্বরুপ।নারী থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।”

বৌদ্ধ ধর্মে নারীরা শুধু সামাজিকভাবে নিগৃহীত হয়নি ধর্মীয়ভাবেও তাদের মর্যাদা ছিল অতিনগন্য যা বৈদিক ধর্মীয় গ্রন্থ 'মনুস্মৃতি'র শ্লোক উদাহরণ স্বরূপ প্রদত্ত হল।
নাস্তি স্ত্রীনাম পৃথগ্ যজ্ঞো ন ব্রতম্ নাপ্যুপোষথম্
পতিম্ শুশ্রুষতে যেন তেন স্বর্গে মহীয়তে। - শ্লোক ১৫৩

অর্থাৎ, প্রয়োজন নেই পৃথক কোন যজ্ঞ কিংবা উপোসনালয়ের,
পতি সেবায় স্বর্গ লাভ হবে স্ত্রীদের।

বৌদ্ধশাস্ত্রের ৫৩৬ নম্বর জাতক - নাম কুণাল জাতক। এই জাতকের প্রধান চরিত্র হল কুণাল যার মুখ নিঃসৃত বানী থেকে আমরা নারীদের সম্পর্কে জানতে পারি । কুণাল বলেন নারী কখনই বিশ্বাসযোগ্য নয়, নারী স্বভাবতই বিশ্বাস ঘাতিনী। নারী কোন ভাবেই প্রশংসার যোগ্য নয় এবং কি নারী কামাচারে পাত্রাপাত্র বিচার করে না।

এ নিয়ে বিদূরপণ্ডিত জাতকে আছে,
“নারীর চরিত্র হায়, কে বুঝিতে পারে?
অসতী প্রগলভা বলি জানি সবাকারে।
কামিনী কামাগ্নি তাপে জবে দগ্ধো হয়
উচ্চে নীচে সমভাবে বিতরে প্রণয়।
খাবার প্রস্তুতে বিচার নাই আগুনের ঠাই
নারীর প্রেমে পাত্রাপাত্র ভেদ জ্ঞান নাই।
অতএব ত্যাজি হেন জঘন্য সংসার
সন্ন্যাসী হইবো এই সংকল্প আমার।”

কুণালের মুখে উচ্চারিত হয় নীতি গাথা-
“সদা রক্ত মাংস প্রিয়, কঠোর হৃদয়,
পঞ্চায়ুধ, ক্রূরমতি সিংহ দুরাশয়।
অতিলোভী, নিত্য প্রতিহিংসা পরায়ণ,
বধি অন্যে করে নিজ উদর পূরণ।
স্ত্রীজাতি তেমতি সর্বপাপের আবাস,
চরিত্রে তাহাদের কভু করো না বিশ্বাস।”

তার মানে, পুরুষের কখনোই নারীর চরিত্রে বিশ্বাস করা উচিত নয়।

নারীরা যে মলের মতো দুর্গন্ধময়, এ সম্পর্কে কুণাল বলেন,
“নারী হল উন্মুক্ত মলভাণ্ডের ন্যায়। উন্মুক্ত মলভাণ্ড দেখিলে মাছি সেখানে ঝাপ দিবেই তাকে রোহিত করা কষ্টকর। কিন্তু একজন জ্ঞানী মানুষ সব সময় এই মলভাণ্ডের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করে তা এড়িয়ে চলে। তদ্রূপ নারীরূপ মলভাণ্ডে মাছিরূপ পুরুষ ঝাপ দিবেই, কিন্তু একজন জ্ঞানী ভিক্ষু এই উন্মুক্ত মলভাণ্ডরূপ নারীদের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করিয়া তাদের সদাই পরিত্যাগ করেন।“

কুণাল তার নীতিগাথায় আরো বলেন,
“চৌর, বিষদিগ্ধসুরা, বিকত্থি বণিক
কুটিল হরিণ শৃঙ্গ, দ্বিজিহ্বা সর্পিণী
প্রভেদ এদের সঙ্গে নেই রমণীর।
প্রতিচ্ছন্ন মলকুপ, দুষ্কর পাতাল
দুস্তোস্যা রাক্ষসী, যম সর্বসংহারক
প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।
অগ্নি, নদী বায়ু, মেরু কিংবা বিষবৃক্ষ নিত্যফল
প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।”

বোধিসত্ত্ব এক রাজা ছিলেন, এবং তাঁর পুরোহিতের সঙ্গে নিয়মিত পাশা খেলতেন। খেলার সময় একটি গান গেয়ে চাল দিতেন, এবং গানটির সত্যতা-বলে প্রতিবারই জিততেন। সেটির অংশবিশেষ,

“পাপাচার পরায়ণ জানিবে রমণীগণ,
স্বভাব তাদের এই নাহিক সংশয়;
যখনই সুবিধা পায়, কুপথে ছুটিয়া যায়,
ধর্ম্মে মতি তাহাদের কভু নাহি হয়।”
অর্থাৎ,নারীদের এতোই জঘন্য স্বভাব যে এখানে সেখানে তারা ঘুরাফেরা করে।

দুরাজান (দুর্জ্ঞেয়)-জাতক এর একটি কবিতা আছে ,
“ভাল যদি বাসে নারী, হইও না হৃষ্ট তায়;
যদি ভাল নাহি বাসে, তাতেই কি আসে যায়?
নারীর চরিত্র বুঝে হেন সাধ্য আছে কার?
বারিমাঝে চলে মাছ, কে দেখিবে পথ তার?”

অর্থাৎ, নারীরা সব সময় প্রেমালাপে পুরুষদের বস করে যদিও মনের মধ্যে তাদের থাকে খারাপ অভিলাস।

অনভিরতি-জাতক গল্পের কবিতায় বলা হয়েছে,
“নদী, রাজপথ, পানের আগার উৎস, সভাস্থল আর,
এই পঞ্চস্থানে অবাধে সকলে ভুঞ্জে সম অধিকার।
তেমনি রমণী ভোগ্যা সকলের, কুপথে তাহার মন;
চরিত্রস্খলন দেখিলে তাহার, রোধে না পণ্ডিত জন।”

অর্থাৎ, সুযোগ পেলেই অসতীরা পুরুষের সম্মান নষ্ট করে।
(পর্ব আকারে লেখা হচ্ছে, চলতে থাকবে)

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ড.অভিজিৎ রায়'কে স্মরনে

প্রগতিশীল সমাজ ব্যাবস্থা নিয়ে কথা বলা মানে কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা না,তবে ধর্মের গোড়ামি অন্ধতা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসা।কারন ধর্মের উপর অন্ধ বিশ্বাস করে অন্যকে অপমান করা বা ছোট করে দেখা কিংবা ভয় দেখিয়ে অন্যকে দমিয়ে রাখা এবং ধর্মের উপর অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে কোন জাতি বা ব্যাক্তির প্রান নাশ কিংবা ধ্বংষ লিলা কখনো কোন ধর্ম হতে পারেনা।এটাকে একথায় সন্ত্রাসবাদ ছাড়া অন্য কিছু বলে দাবি করা যায় না।যদি কেও সেটা দাবি করে বলে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য যাই করা হবে সেটাই ঠিক।তাহলে আমি তাকে বলব তোমার এমন ধর্মের কপালে আমি লাথি মারি।যেখানে কোন মানবতা নাই সেখানে কোন সৃষ্টিকর্তাও থাকতে পারেনা।জয় যদি হতেই হয় তবে মানবতার জয় হোক ।

ও হ্যাঁ, উপরের এই কথা গুলো বলার কারণ বিজ্ঞান মনষ্ক লেখক,মুক্তমনা ব্লগ প্রতিষ্ঠাতা, ব্লগার প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় কে স্মরণে।"যারা ভাবেন বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হয়ে যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মত জিনিস নিয়ে যখন আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালেখি করছি।"-অভিজিৎ রায় নিজেই নিজের কথার পরিনত হয়েছেন। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারীর এই দিনে ইসলামী জংগীদের চাপাতির নিচে জীবন দিতে হয় ড. অভিজিৎ রায়কে এবং গুরুতর আহত হয়ে প্রানে বেচে যান তার জীবন সঙ্গী বন্যা আহম্মেদ।গত বছর বইমেলার শেষের দিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি নিহত হলেও এবারের আরেকটি বইমেলা প্রায় শেষের দিকে। এখনো তার হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই।কিন্তু বিচারের নামে যেটা হয়েছে সেটা তদন্ত।যার আজও কোন মূল সূরাহ হয়নি।তার কারণ হয়তো,যদি অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের বিচার করা হয় তাহলে হয়তো এদেশে হাজার হাজার অভির জন্ম হবে এদেশের ধর্মান্ধ সুশিলদের ধারণা।তাই তারা বিচারের নামে তদন্ত নামের এক ফাদে ফেলে এদেশের মৌলবাদ,উগ্রবাদী ধর্মান্ধ বিরোধী মানুষকে শান্তনা দেওয়া হচ্ছে।ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীরা ভেবেছিল কুপিয়ে সব স্তব্ধ করে দিবে অভিজিৎদের।কিন্তু দেখ আজ এক অভিজিতের বদলে হাজারটা অভির কলম চলে,কলম চলবে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, উগ্রবাদী, মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে।ওহে,মূর্খের দল তোমারা শুনে রাখ,একজন মানুষকে হত্যা করে তাকে এবং তার নিজের হাতে সাজানো অসমাপ্ত কাজটা তার দ্বারা নিঃশেষ হয় না।কিন্তু তার রেখে যাওয়া সম্পদ বা অসমাপ্ত কাজগুলো কেও না কেও তা নিজ দায়িত্বে নিজের কাধে তুলে অসভ্য সমাজকে আলোর পথ দেখায়। কারণ বেচে থাকা সভ্য মানুষদের চিন্তা শক্তিও নষ্ট করা যায় না একজন আলোর দিশারীকে হত্যা করে।হয়তো সাময়িকের জন্য কারো কারো চিন্তা শক্তি থমকে যায়,আবার অনেকের চিন্তা শক্তি তোমাদের হিংস্রতার কারণে বেড়ে যায়।সেটা হোক প্রকাশ্যে কিংবা ভিন্ন পথ অবলম্বন করে।অভির আগেও এই সভ্যতার জন্য কুসংস্কার বাদীদের হাতে জীবন দিতে হয়েছে অনেক স্বপ্নদ্রষ্টাকে,তা আমরা সকলেই কম বেশী জানি।কিন্তু এ সভ্যতাকে আটকানো বা পায়ে শিকল বেধে আটকানো যায় নি তবে সাময়িক বাধাগ্রস্ত হয়তো করা যায়।তবে একজনের অসমাপ্ত কাজ অন্যজন নিজের মনে করেই গুরুত্বসহকারে কাধে তুলে নেয়।সত্য, সৎ, ন্যায়পরায়ন,চরিত্রবান, যারা সৃষ্টিশীল তাদের মুল্য এখনো এসমাজে পরিলক্ষিত। এদের সম্মান কেহ কোন দিন চাইলেও বিনিষ্ট করতে পারেনি আর কোনদিন পারবেও না।যুগে যুগে যাহারা সত্যর পথে ধাবিত হইয়াছে, তাহাদের উপর প্রতিনিয়ত এই অন্ধ সমাজ বিভিন্নভাবে আঘাত করিয়াছে। তাহা শারীরিক ভাবেই হউক কিম্বা মানসিকভাবেও হোক। তথাপি কোনমতেই এই অন্ধ সমাজ তাহাদিগের মতবাদকে অস্বীকার করিতে পারে নাই। আর পারে নাই বলিয়া পৃথিবী আস্তে আস্তে সভ্যতার দিকে ধাবিত হইয়াছে।ঠিক তেমনই আমাদের এই সমাজের স্বপ্ন দ্রষ্টা ছিল অভিজিৎ রায়।
আমরা একজন অভিজিৎ রায়কে হারাইনি; আমরা হারিয়েছি এক স্বপ্নের মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এক আলোর দিশারী পথিক; অন্ধ বর্বরদের দেশে এক অনন্য সৃষ্টিশীল মুক্ত মনের মানুষ।যিনি চেয়েছিলেন,ধর্ম কুসংস্কার মুক্ত একটা সভ্য সমাজের অস্তিত্ব।

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ফেসবুক দুনিয়ায় এই শব্দগুলো আপনি না জানলে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন

এখন সব কিছু শর্টে বলার যুগ। ধরুন আপনি এ যুগে আপনি কাউকে বললেন, তাড়াতাড়ি কর। তাহলে আপনার বলা উচিত, ASAP (As soon as possible)-কর। কিংবা কোনও কিছুতে আপনার খুব হাসি পেল। এবার সেটা আপনি টেক্সটে লিখবেন, হয় আপনাকে স্মাইলি পাঠাতে হবে। অথবা খুব জোরে হাসি পেলে আপনার লেখা উচিত LOL (laugh out loud)। এরকমই চলছে ফেসবুক, টুইটার, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে। এগুলোকে নেট দুনিয়ার পরিভাষায় বলা হয় Internet Slang Words বা Computer Slang।
এমনই কিছু Internet Slang Words-এর কথা বলা হল যেগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে। কখন কীভাবে ব্যবহার করা যায়, পুরো মানেটাই বা কী হয়।
খুব উপভোগ করার পরামর্শ দিতে
YOLO - You Only Live Once
----------------
সত্যি কথা বলার আগে
TBH - To Be Honest
----------------
আপনি সত্যিই জানি না বলতে
IONO - I Don't Know
-------------
আর দরকার নেই বলতে
SNM - Say No More
-----------
কথা বলতে চাইলে
TTY - Talk To You
------------
মনের মিল হলে
H2H - Heart To Heart
----------
ইয়ার্কি মারার পর
IJK - I'm Just Kidding
-------
শুভেচ্ছা জানাতে
GL - Good Luck
-------------
দ্বিধা কাটাতে
DBA-- Don't Bother Asking
---------
তাড়াতাড়ি করার কথা বললে
QAP - Quick As Possible
------
কোনও কিছুর খুব গুরুত্ব বোঝাতে
VBD-- Very Big Deal
----------
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময়
FHO-- Friends Hanging Out
----------
কাউকে কোনও কিছু জানাতে হলে
INCYDK-In Case You Didn't Know
---------
কোনও কিছু বলতে বা দেখাতে না চাইলে
403-Deny Access To
----------
কাউকে ধন্যবাদ জানাতে হলে
YSVW---You're So Very Welcome
------------
কোনও বড় লেখার অনিচ্ছা প্রকাশ করলে
TLTR Too Long To Read
-------------
জানি না বলতে
IONO - I Don't Know
-------
কোনও কিছু স্বীকার করতে
TBH - To Be Honest
মূল লিখা 

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভাষা আন্দোলনে শহীদ সূর্য সন্তানদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যক্তিগত তথ্য

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আমরা সকলই কম বেশি জানি।যে ইতিহাস পড়তে গেলেই আসে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই”(২১ শে ফেব্রুয়ারি)।রাষ্ট্র ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা করার দাবিতে সেদিন জলে উঠেছিল বাঙ্গালীদের বুক।নিজের জীবন লুটিয়ে দিতে রাজপথে নেমেছিল সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত এর মত আরো অনেক পবিত্র আত্মাগুলো। নিজের জীবনের বিনিময়ে অর্জন করে নিল মায়ের ভাষার অধিকার।তারই অব্যাহত ধারায় ২৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান জাতীয় সংসদে বাংলা এবং উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান পাশ করে । ৩ মার্চ ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানকারী পাকিস্তানের সংবিধান এইদিন থেকে কার্যকর হয় এবং ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে তমদ্দুন মজলিশের মাধ্যমে মায়ের ভাষায় কথা বলার যে আন্দোলনের শুরু হয়েছিল তার সাফল্য অর্জিত হয় ।
ভাষা আন্দোলনে অনেকেই শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিলো তাদের মধ্যে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার , শফিউর ,এর নামই বেশী শোনা বা পাঠ করা যায়। বাংলা উইকিপিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শহীদের তথ্য এখানে যুক্ত একত্রিত করলাম।

# শহীদ আব্দুস সালাম
শহীদ আব্দুস সালাম ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর জন্মগ্রহন করেন। গ্রাম- লক্ষনপুর, উপজেলা-দাগনভূঁইয়া, জেলা- ফেনী। পিতার নাম- মোঃ ফাজিল মিয়া, মাতার নাম- দৌলতুন্নেসা। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে আব্দুস সালাম ছিলেন সবার বড়। তিনি দাগন ভুঁইয়ার করিমউল্লাহপুর হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর কামাল আতাতুর্ক বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হলেও পারিবারিক কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেন নি। অতঃপর চাচাতো ভাই আবদুল হালিমের সহায়তায় ঢাকা চলে আসেন। ৮৫ দিলকুশাস্থ "ডাইরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রুজ" এ করনিক পদে চাকুরী নেন। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নোর ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন। পরে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ এলোপাথাড়িভাবে গুলি চালালে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল, ১৯৫২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

# শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ
শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ এর জন্ম ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর। গ্রামের নাম-পারিল (বতর্মানে যার নামকরন করা হয়েছে রফিকনগর) থানা- সিংগাইর, জেলা- মানিকগঞ্জ। তার পিতার নাম- আব্দুল লতিফ, মাতার নাম- রাফিজা খাতুন। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে রফিক উদ্দিন আহমদ ছিলেন ভাইদের মধ্যে সবার বড়। শৈশবে গ্রামের স্কুলেই তিনি লেখাপড়া করেন। মরহুম আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী ও বীরেন্দ্রমোহন দত্তগুপ্ত শিক্ষকদ্বয়ের সুযোগ্য ছাত্র হিসাবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন।
রফিক বাল্যকালে কিছুটা ডানপিটে ছিলেন। তাই গাছ থেকে পড়ে তার হাত ভেঙ্গে চিকিৎসার জন্য কোলকাতা যান। কোলকাতা আবস্থানের সময়মিত্র ইনিস্টিটিউশনে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রফিকউদ্দিনের পিতা ঢাকায় চলে আসেন। এখানে বাবুবাজারে আকমল খাঁ রোডে পারিল প্রিন্টিং প্রেস নামে ছাপাখানা চালু করেন। এখানে রফিক বায়রা স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৪৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বায়রা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে রফিকউদ্দিন মানিকগঞ্জ 'দেবেন্দ্রনাথ কলেজে' বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। আই.কম. ক্লাস পর্যন্ত পড়লেও পরে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় এসে পিতার সঙ্গে প্রেস পরিচালনা করতে শুরু করেন। পরে ১৯৫২ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ( বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।
শহীদ রফিক সাহিত্যাঙ্গনে ছড়া রচনায় পটু ছিলেন এবং সেলাই ও সূচী শিল্পেও বেশ দক্ষ ছিলেন। সমাজকল্যানেও তিনি গভীর আগ্রহী ছিলেন। কোলকাতা থাকাকালীন পারিল বলধারা যুবক সমিতি’র কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। শহীদ রফিকের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণআন্দোলনে নিজেদের গভীরভাবে যুক্ত করেছেন এবং নিজেদের জীবনকে কখনোই দেশের স্বার্থের চেয়ে বড় মনে করেননি। তাইতো ১৬৬৯ এর গণআন্দোলনেও জীবন দিয়েছেন এই পরিবারের সদস্য জনাব ইসহাক। রফিকের ভাই আবদুস সালাম ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দুর্ভাগ্যের বিষয় তিনি গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন।
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে রফিক অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গনে পুলিশ গুলি চালালে সেই গুলি রফিকউদ্দিনের মাথায় লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়ে ছিল। ছয় সাত জন ধরাধরি করে তার লাশ এনাটমি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন। তাদের মাঝে ডাঃ মশাররফুর রহমান খান রফিকের গুলিতে ছিটকে পড়া মগজ হাতে করে নিয়ে যান।
সম্ভবত ২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম শহীদ হওয়ার মর্যাদা রফিক উদ্দিন আহমদই লাভ করেন। তাকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। তবে দুঃখজনকভাবে পরবর্তীতে তার কবর চিহ্নিত করা সম্ভব হয় নি।

# শহীদ আবুল বরকত
শহীদ আবুল বরকত ১৯২৭ সালের ১৬ জুন ভারতীয় উপমহাদেশের (অবিভক্ত) মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন মৌলবী শামসুদ্দীন সাহেবের জ্যেষ্ঠপুত্র। ১৯৪৫ সালে তালেবপুর হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশের পর তিনি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হয়ে ১৯৫১ সালে অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে চতুর্থ স্থান লাভ করেন। এরপরে তিনি একই বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। ভালো ছাত্রের পাশাপাশি তিনি স্বভাব-চরিত্র ও ব্যবহারে ছিলেন অমায়িক। ২১শে ফেব্রুয়ারীর দিন আবুল বরকত মেডিকেল কলেজের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় দাড়িয়ে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতাকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন।এ সময় মিছিলে ছোড়া পুলিশের একটি গুলি তার গায়ে এসে লাগে ও তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কয়েকজন ছাত্র গুরুতর আহত আবুল বরকতকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি অবস্থায় রাত আটটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।। সেদিনই গভীর রাতে পুলিশের কড়া প্রহরায় শহীদ বরকতের লাশ আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। পরে বরকতের পারিবারিক খরচে তার কবর পাকা করা হয়।

# শহীদ আব্দুল জব্বার
শহীদ আব্দুল জব্বার ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহন করেন। গ্রাম- পাঁচুয়া, থানা- গফরগাঁও, জেলা- ময়মনসিংহ। তার পিতার নাম- মোঃ হাসেম আলী শেখ, মাতার নাম- সাফিয়া খাতুন। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করার পরে পারিবারিক কারনে লেখাপড়া ত্যাগ করে পিতার কৃষিকাজে সাহায্য করা শুরু করেন। ১৫/১৬ বছর বয়সে তিনি খেয়ালের বশবর্তী হয়ে সকলের অজান্তে একদিন গৃহত্যাগ করে ট্রেনে চেড়পে নারায়নগঞ্জ আসেন। সেখানে জাহাজ ঘাটে এক ইংরেজ সাহেবের সান্নিধ্য লাভ করেন। সাহেবের অনুগ্রহে একটি চাকরি লাভ করে বার্মায় গমন করেন। ১০/১২ বছর বার্মায় থাকার পরে তিনি দেশে চলে আসেন। দেশে এসে নিজ গ্রামে তিনি দৈনন্দিন জিনিসপত্রের ছোটখাট একটি দোকান দেন। এরপর তিনি আমেনা খাতুন নামে এক মেয়েকে বিবাহ করেন ও এক পুত্র সন্তানের পিতা হন। সন্তানের নাম রাখেন নুরুল ইসলাম। আবদুল জব্বারের পুত্র জন্ম হওয়ার কিছুকাল পরে তার শাশুড়ি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। শাশুড়িকে নিয়ে ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী ঢাকায় আসেন। হাসপাতালে রোগী ভর্তি করে আবদুল জব্বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদের আবাসস্থল (ছাত্র ব্যারাক) গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে (২০/৮) উঠেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে, কি হয়েছে দেখবার জন্য তিনি রুম থেকে বের হয়ে আসেন। তখনই পুলিশ গুলি শুরু করে এবং জব্বার আহত হন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জব্বারকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের মধ্যে ছিলেন ২০/৯ নম্বর কক্ষের সিরাজুল ।সারাদিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে রাতে তিনি মারা যান। তাকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।

# শহীদ শফিউর রহমান
শহীদ শফিউর রহমান অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশের হুগলী জেলার কোন্নগর গ্রামে ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৌলবী মাহবুবুর রহমান। তিনি কলকাতা গভর্ণমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আই কম পাশ করেন। পারিবারিক কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেন নি। পরে ঢাকায় তিনি হাইকোর্টে করনিক পদে চাকুরী নেন। ১৯৫২‌-র ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে চড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন শফিউর। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নওয়াবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্বদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুণরায় গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে। ১৯৫৪ সালের শহীদ সংখ্যা সাপ্তাহিক সৈনিকে তাঁর সম্পর্কে প্রকাশিত বিবরণ থেকে জানা যায়, ঐদিন সকাল ১০টায় তিনি সাইকেলে চড়ে নবাবপুর রোড হয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি রাইফেলের গুলি তাঁরপৃষ্ঠভেদ করে বের হয়েছে এবং এতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সরকারি এ্যাম্বুলেন্স যোগে তাঁকেহাসপাতালে নেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ডা. এ্যালিনসন অপারেশন করেন। ঐদিন সন্ধ্যা সাড়ে৬টার সময় তিনি মারা যান। গুলিতে শহীদ শফিউরের কলিজা ছিঁড়ে গিয়েছিল। অপারেশনের সময় সফিউরের বৃদ্ধা মা, বাবা, স্ত্রী, মেয়ে শাহনাজ হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। মারা যাওয়ার পর পুলিশ আত্মীয়দের কাছে লাশ হস্তান্তর করেনি। ১৪ মার্চ ১৯৫২ তারিখের দৈনিক আজাদে প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণী অনুসারে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর জানাজা পড়ান। জানাজায় তাঁর বাবা ও ভাই উপস্থিত ছিলেন। তারপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। শফিউর রহমানের মৃত্যুর ৩ মাস পরে তিনি একটি পুত্র সন্তানের বাবা হন।



বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত একটি নাম, শহীদ অহিউল্লাহ।
১৯৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান ছাড়াও ২২শে ফেব্রুয়ারীতে রথখোলা, নবাবপুরে নিহত হয়েছিলেন আরও দুজন। এরা হলেন ---
১. আব্দুল আউয়াল। একজন রিক্সা চালক, বয়স ২৬ বছর।
২. অহিউল্লাহ, পিতা রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমান, বয়স:-৯ বছর।

# শহীদ অহিউল্লাহ
ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের তালিকায় একজন নয় বছরের নাবালক ছেলে রয়েছে, যার নাম হলো অহিউল্লাহ। তিনি ছিলেন জনাব হাবিবুর রহমানের ছেলে। হাবিবুর রহমান পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী ছিলেন। শহীদ অহিউল্লাহ ভালোবাসত ছবি আঁকতে, সময় পেলেই কাগজ, পেনসিল নিয়ে বসে পড়ত আকাআকি করতে। ২২শে ফেব্রুয়ারী নবাবপুর রোডে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে পুলিশ গুলীবর্ষন করে। নবাবপুর রোডের খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে দাড়ানো অহিউল্লাহর মাথায় সরাসরি গুলী আঘাত হানে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অহিউল্লাহ। রক্তে ভেসে গেল চারপাশ। এরপর সরকারি অ্যাম্বুলেন্স এসে অহিউল্লাহর লাশ নিয়ে গেল ঢাকা মেডিকেল কলেজে।
অহিউল্লাহর বাবা-মা খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে গেলেন হাসপাতালে। তারা হাসপাতালে থাকা পুলিশের কর্তাব্যক্তিকে বললেন, 'আমাদের ছেলেটার লাশ দিন। আমরা তাকে দাফন করতে চাই।' কিন্তু পুলিশ নানা বাহানা করে বিভিন্ন কথা বলে অহিউল্লাহর বাবা-মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল জোর করে। পুলিশ নিজেদের মতো করে অহিউল্লাহর লাশ দাফন করল, নাকি মাটিচাপা দিয়ে দিল, সে তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে অহিউল্লাহর পকেটে পাওয়া গেল একটি রঙিন কাগজের টুকরো। সেখানে বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু আর প্রজাপতির ছবি আকা ছিল। খুব ভালোবেসে এ ছবিগুলো এঁকেছিল সে।২৩শে ফেব্রুয়ারীর ১৯৫২ তারিখের দৈনিক আজাদে অহিউল্লাহর শহীদ হওয়ার খবর ছাপানো হয়। পুলিশ তার লাশ গুম করে ফেলায় তার কবরের কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।

# শহীদ আব্দুল আউয়াল
শহীদ আবদুল আউয়াল পেশায় একজন রিকশাচালক। তিনি শহীদ হন ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যখন ছাত্র বিক্ষোভ চলছিল, তখন আবদুল আউয়ালও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর বয়স ২৬ বছর। পিতা মোহাম্মদ হাশিম। শহীদ আউয়ালের ঢাকার ঠিকানা ছিল ১৯, হাফিজুল্লাহ রোড। শহীদ আউয়াল সম্পর্কে এর বেশি তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি।
তথ্য সমূহঃউইকিপিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট