শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভাষা আন্দোলনে শহীদ সূর্য সন্তানদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যক্তিগত তথ্য

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আমরা সকলই কম বেশি জানি।যে ইতিহাস পড়তে গেলেই আসে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই”(২১ শে ফেব্রুয়ারি)।রাষ্ট্র ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা করার দাবিতে সেদিন জলে উঠেছিল বাঙ্গালীদের বুক।নিজের জীবন লুটিয়ে দিতে রাজপথে নেমেছিল সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত এর মত আরো অনেক পবিত্র আত্মাগুলো। নিজের জীবনের বিনিময়ে অর্জন করে নিল মায়ের ভাষার অধিকার।তারই অব্যাহত ধারায় ২৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান জাতীয় সংসদে বাংলা এবং উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান পাশ করে । ৩ মার্চ ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানকারী পাকিস্তানের সংবিধান এইদিন থেকে কার্যকর হয় এবং ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে তমদ্দুন মজলিশের মাধ্যমে মায়ের ভাষায় কথা বলার যে আন্দোলনের শুরু হয়েছিল তার সাফল্য অর্জিত হয় ।
ভাষা আন্দোলনে অনেকেই শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিলো তাদের মধ্যে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার , শফিউর ,এর নামই বেশী শোনা বা পাঠ করা যায়। বাংলা উইকিপিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শহীদের তথ্য এখানে যুক্ত একত্রিত করলাম।

# শহীদ আব্দুস সালাম
শহীদ আব্দুস সালাম ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর জন্মগ্রহন করেন। গ্রাম- লক্ষনপুর, উপজেলা-দাগনভূঁইয়া, জেলা- ফেনী। পিতার নাম- মোঃ ফাজিল মিয়া, মাতার নাম- দৌলতুন্নেসা। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে আব্দুস সালাম ছিলেন সবার বড়। তিনি দাগন ভুঁইয়ার করিমউল্লাহপুর হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর কামাল আতাতুর্ক বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হলেও পারিবারিক কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেন নি। অতঃপর চাচাতো ভাই আবদুল হালিমের সহায়তায় ঢাকা চলে আসেন। ৮৫ দিলকুশাস্থ "ডাইরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রুজ" এ করনিক পদে চাকুরী নেন। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নোর ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন। পরে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ এলোপাথাড়িভাবে গুলি চালালে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল, ১৯৫২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

# শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ
শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ এর জন্ম ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর। গ্রামের নাম-পারিল (বতর্মানে যার নামকরন করা হয়েছে রফিকনগর) থানা- সিংগাইর, জেলা- মানিকগঞ্জ। তার পিতার নাম- আব্দুল লতিফ, মাতার নাম- রাফিজা খাতুন। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে রফিক উদ্দিন আহমদ ছিলেন ভাইদের মধ্যে সবার বড়। শৈশবে গ্রামের স্কুলেই তিনি লেখাপড়া করেন। মরহুম আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী ও বীরেন্দ্রমোহন দত্তগুপ্ত শিক্ষকদ্বয়ের সুযোগ্য ছাত্র হিসাবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন।
রফিক বাল্যকালে কিছুটা ডানপিটে ছিলেন। তাই গাছ থেকে পড়ে তার হাত ভেঙ্গে চিকিৎসার জন্য কোলকাতা যান। কোলকাতা আবস্থানের সময়মিত্র ইনিস্টিটিউশনে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রফিকউদ্দিনের পিতা ঢাকায় চলে আসেন। এখানে বাবুবাজারে আকমল খাঁ রোডে পারিল প্রিন্টিং প্রেস নামে ছাপাখানা চালু করেন। এখানে রফিক বায়রা স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৪৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বায়রা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে রফিকউদ্দিন মানিকগঞ্জ 'দেবেন্দ্রনাথ কলেজে' বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। আই.কম. ক্লাস পর্যন্ত পড়লেও পরে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় এসে পিতার সঙ্গে প্রেস পরিচালনা করতে শুরু করেন। পরে ১৯৫২ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ( বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।
শহীদ রফিক সাহিত্যাঙ্গনে ছড়া রচনায় পটু ছিলেন এবং সেলাই ও সূচী শিল্পেও বেশ দক্ষ ছিলেন। সমাজকল্যানেও তিনি গভীর আগ্রহী ছিলেন। কোলকাতা থাকাকালীন পারিল বলধারা যুবক সমিতি’র কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। শহীদ রফিকের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণআন্দোলনে নিজেদের গভীরভাবে যুক্ত করেছেন এবং নিজেদের জীবনকে কখনোই দেশের স্বার্থের চেয়ে বড় মনে করেননি। তাইতো ১৬৬৯ এর গণআন্দোলনেও জীবন দিয়েছেন এই পরিবারের সদস্য জনাব ইসহাক। রফিকের ভাই আবদুস সালাম ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দুর্ভাগ্যের বিষয় তিনি গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন।
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে রফিক অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গনে পুলিশ গুলি চালালে সেই গুলি রফিকউদ্দিনের মাথায় লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়ে ছিল। ছয় সাত জন ধরাধরি করে তার লাশ এনাটমি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন। তাদের মাঝে ডাঃ মশাররফুর রহমান খান রফিকের গুলিতে ছিটকে পড়া মগজ হাতে করে নিয়ে যান।
সম্ভবত ২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম শহীদ হওয়ার মর্যাদা রফিক উদ্দিন আহমদই লাভ করেন। তাকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। তবে দুঃখজনকভাবে পরবর্তীতে তার কবর চিহ্নিত করা সম্ভব হয় নি।

# শহীদ আবুল বরকত
শহীদ আবুল বরকত ১৯২৭ সালের ১৬ জুন ভারতীয় উপমহাদেশের (অবিভক্ত) মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন মৌলবী শামসুদ্দীন সাহেবের জ্যেষ্ঠপুত্র। ১৯৪৫ সালে তালেবপুর হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশের পর তিনি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হয়ে ১৯৫১ সালে অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে চতুর্থ স্থান লাভ করেন। এরপরে তিনি একই বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। ভালো ছাত্রের পাশাপাশি তিনি স্বভাব-চরিত্র ও ব্যবহারে ছিলেন অমায়িক। ২১শে ফেব্রুয়ারীর দিন আবুল বরকত মেডিকেল কলেজের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় দাড়িয়ে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতাকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন।এ সময় মিছিলে ছোড়া পুলিশের একটি গুলি তার গায়ে এসে লাগে ও তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কয়েকজন ছাত্র গুরুতর আহত আবুল বরকতকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি অবস্থায় রাত আটটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।। সেদিনই গভীর রাতে পুলিশের কড়া প্রহরায় শহীদ বরকতের লাশ আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। পরে বরকতের পারিবারিক খরচে তার কবর পাকা করা হয়।

# শহীদ আব্দুল জব্বার
শহীদ আব্দুল জব্বার ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহন করেন। গ্রাম- পাঁচুয়া, থানা- গফরগাঁও, জেলা- ময়মনসিংহ। তার পিতার নাম- মোঃ হাসেম আলী শেখ, মাতার নাম- সাফিয়া খাতুন। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করার পরে পারিবারিক কারনে লেখাপড়া ত্যাগ করে পিতার কৃষিকাজে সাহায্য করা শুরু করেন। ১৫/১৬ বছর বয়সে তিনি খেয়ালের বশবর্তী হয়ে সকলের অজান্তে একদিন গৃহত্যাগ করে ট্রেনে চেড়পে নারায়নগঞ্জ আসেন। সেখানে জাহাজ ঘাটে এক ইংরেজ সাহেবের সান্নিধ্য লাভ করেন। সাহেবের অনুগ্রহে একটি চাকরি লাভ করে বার্মায় গমন করেন। ১০/১২ বছর বার্মায় থাকার পরে তিনি দেশে চলে আসেন। দেশে এসে নিজ গ্রামে তিনি দৈনন্দিন জিনিসপত্রের ছোটখাট একটি দোকান দেন। এরপর তিনি আমেনা খাতুন নামে এক মেয়েকে বিবাহ করেন ও এক পুত্র সন্তানের পিতা হন। সন্তানের নাম রাখেন নুরুল ইসলাম। আবদুল জব্বারের পুত্র জন্ম হওয়ার কিছুকাল পরে তার শাশুড়ি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। শাশুড়িকে নিয়ে ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী ঢাকায় আসেন। হাসপাতালে রোগী ভর্তি করে আবদুল জব্বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদের আবাসস্থল (ছাত্র ব্যারাক) গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে (২০/৮) উঠেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে, কি হয়েছে দেখবার জন্য তিনি রুম থেকে বের হয়ে আসেন। তখনই পুলিশ গুলি শুরু করে এবং জব্বার আহত হন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জব্বারকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের মধ্যে ছিলেন ২০/৯ নম্বর কক্ষের সিরাজুল ।সারাদিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে রাতে তিনি মারা যান। তাকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।

# শহীদ শফিউর রহমান
শহীদ শফিউর রহমান অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশের হুগলী জেলার কোন্নগর গ্রামে ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৌলবী মাহবুবুর রহমান। তিনি কলকাতা গভর্ণমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আই কম পাশ করেন। পারিবারিক কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেন নি। পরে ঢাকায় তিনি হাইকোর্টে করনিক পদে চাকুরী নেন। ১৯৫২‌-র ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে চড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন শফিউর। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নওয়াবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্বদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুণরায় গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে। ১৯৫৪ সালের শহীদ সংখ্যা সাপ্তাহিক সৈনিকে তাঁর সম্পর্কে প্রকাশিত বিবরণ থেকে জানা যায়, ঐদিন সকাল ১০টায় তিনি সাইকেলে চড়ে নবাবপুর রোড হয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি রাইফেলের গুলি তাঁরপৃষ্ঠভেদ করে বের হয়েছে এবং এতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সরকারি এ্যাম্বুলেন্স যোগে তাঁকেহাসপাতালে নেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ডা. এ্যালিনসন অপারেশন করেন। ঐদিন সন্ধ্যা সাড়ে৬টার সময় তিনি মারা যান। গুলিতে শহীদ শফিউরের কলিজা ছিঁড়ে গিয়েছিল। অপারেশনের সময় সফিউরের বৃদ্ধা মা, বাবা, স্ত্রী, মেয়ে শাহনাজ হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। মারা যাওয়ার পর পুলিশ আত্মীয়দের কাছে লাশ হস্তান্তর করেনি। ১৪ মার্চ ১৯৫২ তারিখের দৈনিক আজাদে প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণী অনুসারে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর জানাজা পড়ান। জানাজায় তাঁর বাবা ও ভাই উপস্থিত ছিলেন। তারপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। শফিউর রহমানের মৃত্যুর ৩ মাস পরে তিনি একটি পুত্র সন্তানের বাবা হন।



বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত একটি নাম, শহীদ অহিউল্লাহ।
১৯৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান ছাড়াও ২২শে ফেব্রুয়ারীতে রথখোলা, নবাবপুরে নিহত হয়েছিলেন আরও দুজন। এরা হলেন ---
১. আব্দুল আউয়াল। একজন রিক্সা চালক, বয়স ২৬ বছর।
২. অহিউল্লাহ, পিতা রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমান, বয়স:-৯ বছর।

# শহীদ অহিউল্লাহ
ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের তালিকায় একজন নয় বছরের নাবালক ছেলে রয়েছে, যার নাম হলো অহিউল্লাহ। তিনি ছিলেন জনাব হাবিবুর রহমানের ছেলে। হাবিবুর রহমান পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী ছিলেন। শহীদ অহিউল্লাহ ভালোবাসত ছবি আঁকতে, সময় পেলেই কাগজ, পেনসিল নিয়ে বসে পড়ত আকাআকি করতে। ২২শে ফেব্রুয়ারী নবাবপুর রোডে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে পুলিশ গুলীবর্ষন করে। নবাবপুর রোডের খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে দাড়ানো অহিউল্লাহর মাথায় সরাসরি গুলী আঘাত হানে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অহিউল্লাহ। রক্তে ভেসে গেল চারপাশ। এরপর সরকারি অ্যাম্বুলেন্স এসে অহিউল্লাহর লাশ নিয়ে গেল ঢাকা মেডিকেল কলেজে।
অহিউল্লাহর বাবা-মা খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে গেলেন হাসপাতালে। তারা হাসপাতালে থাকা পুলিশের কর্তাব্যক্তিকে বললেন, 'আমাদের ছেলেটার লাশ দিন। আমরা তাকে দাফন করতে চাই।' কিন্তু পুলিশ নানা বাহানা করে বিভিন্ন কথা বলে অহিউল্লাহর বাবা-মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল জোর করে। পুলিশ নিজেদের মতো করে অহিউল্লাহর লাশ দাফন করল, নাকি মাটিচাপা দিয়ে দিল, সে তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে অহিউল্লাহর পকেটে পাওয়া গেল একটি রঙিন কাগজের টুকরো। সেখানে বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু আর প্রজাপতির ছবি আকা ছিল। খুব ভালোবেসে এ ছবিগুলো এঁকেছিল সে।২৩শে ফেব্রুয়ারীর ১৯৫২ তারিখের দৈনিক আজাদে অহিউল্লাহর শহীদ হওয়ার খবর ছাপানো হয়। পুলিশ তার লাশ গুম করে ফেলায় তার কবরের কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।

# শহীদ আব্দুল আউয়াল
শহীদ আবদুল আউয়াল পেশায় একজন রিকশাচালক। তিনি শহীদ হন ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যখন ছাত্র বিক্ষোভ চলছিল, তখন আবদুল আউয়ালও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর বয়স ২৬ বছর। পিতা মোহাম্মদ হাশিম। শহীদ আউয়ালের ঢাকার ঠিকানা ছিল ১৯, হাফিজুল্লাহ রোড। শহীদ আউয়াল সম্পর্কে এর বেশি তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি।
তথ্য সমূহঃউইকিপিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন