বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০৪ (ইহুদী ধর্ম)

সম্প্রতি নারীদের সামাজিক এবং ধর্মীয় মর্যাদা সম্পর্কে যখন খুব বেশি আলোচনা ও সমালোচনা উঠছে, ঠিক এ সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ইহুদী ধর্মে নারীদের মর্যাদা সম্পর্কে প্রতেক্যকে অবগত হওয়া আবশ্যক।

হে নারী তুমি কি জান তোমাদের ধর্মগ্রন্থ বলে দিয়েছে, তোমার শিক্ষা, তোমার জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রতিভা,তোমার সদাহাস্য চেহারা, মানুষের প্রতি তোমার ভালবাসা, শ্রদ্ধা, তোমার সমুহ মানবিক গুণাবলী থাকা সত্বেও, তুমি একজন নিম্নমানের পুরুষের চেয়ে নিকৃষ্ট। একটিই কারণ -তুমি একজন নারী ।

গ্রীস সভ্যতায় নারী জাতিকে বিশৃঙ্খল ও ভাঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস বলা হতো।চৈনিক সভ্যতায় নারীকে দুঃখের কারন হিসেবে ভাবা হতো। রোম সভ্যতায় নারী ছিল পুরুষেরগৃহ সুসজ্জিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অন্তর্ভুক্ত।জাহেলি যুগে নারী ছিল পুরুষের ভোগের সামগ্রী। তারা ছিল অকল্যাণ অসম্মানের প্রতিক। সে যুগে নারীকে অত্যন্ত ঘৃণা করা হতো। নারীকে অভিশাপ মনে করে শিশু কন্যাকে ঠান্ডা মাথায় জীবন্ত কবর দিত। ঘোড়ার পায়ে বেধে নারীকে হত্যা করা হতো। ইচ্ছামত যত খুশি বিবাহ করা এবং আবার যখন খুশি তালাক দিত। নারী ছিল ভোগ্য পন্যের মত সামগ্রী। মধ্য যুগেও নারীর জাতির মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত ছিল না।আর ইহুদী ধর্মে নারীদের গুণের চেয়ে পুরুষের দোষও ভাল।

ইয়াহূদীগণ মনে করে থাকে যে সর্বপ্রথম নারী জাতি শয়তানের প্ররোচনায় লিপ্ত হয়ে পুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে আর সেই থেকে নারীদের উপর পুরুষেরা সর্বদা কর্তৃত্বশীল হবে এবং নারীদের এর দ্বারা প্রসবের কষ্ট দেওয়া হয়েছে।তাই তারা নারী জাতিকে এভাবে করে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।

আগে ইহুদী সমাজে নারীদেরকে সাক্ষ্যদানের অধিকার দেয়া হত না।ইহুদী পন্ডিতের মতে , বেহেশত থেকে বের হওয়ার পর নারীদের প্রতি যে সমস্ত অভিশাপ এসেছে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য না হওয়া। বর্তমানেও ইসরাইলে ইহুদীদের ধর্মীয় কোর্টে নারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না।এর কারণ হিসেবে ইহুদী পন্ডিতদের ভাষ্য হচ্ছে ইবরাহীম আ. এর স্ত্রী সারাহ মিথ্যা বলেছিলেন। (জেনেসিসঃ১৬/৯-১৮)

আবার,"যদি কোন পুরুষ কোন মহিলাকে বিবাহ করার পর তার নিকটবর্তী হয়ে তাকে অপছন্দ করে এবং সমাজে তার দুর্নাম করে বলে- আমি একে বিবাহ করে কুমারী হিসেবে পাইনি। তখন তার পিতামাতা তাকে নিয়ে যাবে এবং তাদের বাড়ীর সামনে অবস্থানরত সমাজের বয়স্কদের সামনে তার কুমারিত্বের প্রমাণ হাজির করে বলবে, আমি আমার কন্যাকে এই লোকের সাথে বিবাহ দিয়েছি। সে তাকে অপছন্দ করে কুমারী পায়নি বলে সমাজে দুর্নাম ছড়াচ্ছে। এই দেখুন,এটা তার কুমারিত্বের প্রমাণ বলে বয়স্কদেরকে তার কাপড় দেখাবে। তখন সমাজের বয়স্ক ব্যক্তিরা ঐ ছেলেকে ধরে নিয়ে শাসন করবে এবং ১০০ রৌপ্যমুদ্রা জরিমানা করে অপবাদের বিনিময় হিসেবে মেয়ের পিতাকে দেবে। আর ঐ মেয়ে হবে তার আজীবনের জন্য স্ত্রী। তালাক দেয়ার কোন অধিকার তার অবশিষ্ট্য থাকবে না। পক্ষান্তরে, যদি কন্যার কুমারিত্ব না পাওয়া যায় তাহলে, মেয়েকে পিত্রালয়ের সামনে নিয়ে এসে পুরুষেরা তাকে পাথর মেরে হত্যা করবে।কেননা,সে ব্যভিচার করে তার পিত্রালয়কে কলংকৃত করেছে। তাই এ পাপিষ্টকে ওদের থেকে দূর করে ফেলতে হবে। (ডিউটারনমী: ২২/১৩-২১)

ইহুদী বিধি-বিধান ঋতুবতী মহিলাদেরকে কঠোরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।যদি কোন মহিলার শরীরে কোন প্রবাহিত রক্ত থাকে যা গোশতের উপর প্রবাহিত হয়, তাহলে সে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপবিত্র থাকবে। যে তাকে স্পর্শ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাপাক থাকবে। সে যার উপর বসবে বা শয়ন করবে তা নাপাক বলে গণ্য হবে। যে তার বিছানা স্পর্শ করবে তার শরীরের পোশাক ধৌত করতে হবে, গোসল করতে হবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সে নাপাক থাকবে। সে যার উপর বসেছে এমন কোন আসবাব পত্রকে স্পর্শ করলেও অনুরুপ তাকে গোসল ও তার পোশাক ধৌত করতে হবে। এমতাবস্থায় সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাপাক থাকবে। (লেভিটিকাসঃ ১৫/১৯-২৩)

কোন এক জাগায় পড়েছিলাম প্রফেসর ড.মিনাখিম এম.ব্রায়ারের মন্তব্য।ব্রায়ার বলেন,” টান্নাইটিক যুগে যে সমস্ত ইহুদী মহিলা মাথা অনাবৃত রাখত তাদেরকে বেহায়া হিসেবে গণ্য করে ৪০০ দিরহাম করে জরিমানা করা হত”।

অর্থাৎ,উপরিউক্ত আলোচনা থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে,প্রত্যেকটা ধর্মগ্রন্থ নারীদের ক্ষেত্রে কতোটা প্রক্ষর এবং অমানবিক দৃষ্টিকোন রাখে।
(পর্ব আকারে লেখা হচ্ছে, চলতে থাকবে)

বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬

ইস্যু যখন শ্যামল কান্তি স্যার

অনেকেই দেখতাছি স্যার শ্যামল কান্তির ইস্যু নিয়ে মসজিদ এবং মসজিদের মাইক নিয়ে দোষারুপ শুরু করে দিছে।আচ্ছা ভাই,আপনি মসজিদ কিংবা মন্দিরের বা যেকোন ধর্মীয় উপাসনালয়ের দোষ দিয়ে কি কোন লাভ আছে?সেটা হলো সবে মাত্র একটা জড় বস্তু(ঘর)।কারণ,অনেকেই বলা শুরু করছে,আপনি মসজিদের মাইক থেকে আযান দিয়ে দেখুন কয়জন নামাজী উপস্থিতি হয়?কিন্তু সেই মসজিদ থেকে মাইক দিয়ে ধর্ম অবমাননার ভুয়া ঘোষণা দেওয়া হয় তাহলে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে যাবে লাঠি, দা-চাপাতি নিয়ে।যুক্তিটা অবশ্যই ভালো মনে হয়েছে।কিন্তু একটা কথা চিন্তা করে দেখেনতো,রাস্তার পাশে যখন কোন লোক একসিডেন্ট হয় কিংবা বিপদে পড়ে আমরা কয়জন তারপাশে যাই এবং ভীড় জমাই (যদিও একজন দুজন যাবার পর অনেকেই পরে আসে)?কিন্তু যখন রাস্তার পাশে যখন কোন পকেটমার কিংবা চোরকে ধরা হয় তখন হাজার হাজার উৎসুক জনতা চলতি বাস কিংবা রিক্সা কিংবা যানবাহন থেকে নেমে মারা শুরু করে দেয় চোরকে।এই কথার কারন একটাই,আমরা একটু বেশী আবেগ প্রবন তবে সেটার লক্ষন তখনই দেখা যায় যখন কেও বিপদে পরে তখন তাকে ঘাড় ধরে ধাক্কায় কূয়ায় ফেলে মজা নেওয়ার সময়।এখন আপনি একটা কথা বলতে পারেন আমি বক ধার্মিক কিংবা অন্যায়ের পক্ষ নিছি।না ভাই সেটা আপনার ভুল ধারনা।আমরা আজ অনেকেই প্রতিবাদ করতাছি,কিন্তু এখানে যে শ্যামল কান্তির সাথে গত ৫ বছর ধরে চক্রান্ত চলতাছে তা নিয়ে কেও কিছু বলতাছিনা।তাকে তো কেবল মাত্র একটা ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে সাজানো নাটকের দৃশ্যস্থাপনা করা হয়েছে।আজ যখন এলাকাবাসী কিংবা ছাত্র বলছে যে,শ্যামল কান্তি স্যার ধর্ম নিয়ে কোন কথা বলে নাই।
আবার সেই ছাত্রই বলতাছে শিক্ষক ধর্ম নিয়ে অনেক কটুক্তি করছে।
উপরের ভিডিও দুইটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে,সেলিম গং এবং তার সাঙ্গপাংগদের বাচানোর জন্যই পুনরায় আবার পরের ভিডিওটি করা হয় ক্ষমতার জোরে।কারণ ওসমান গঙদের সম্পর্কে সকলই কমবেশী অবগত আছেন।তাহলে এই কাজটা কে করছে সেটাতো অতি সহজেই বুঝা যাচ্ছে শ্যামল কান্তি স্যারের ভিডিও বিবৃতি থেকে।প্রশাসন কিংবা আমজনতা সেটা নিয়ে কেন কোন কথা বলছে না?আর প্রশাসনও সেই ব্যাপারে চুপ কেন?শুধু সেলিম ওসমানের কানে ধরে মাফ চাইলেই কি সেই শিক্ষকের অপমান এবংতার সাথে শত্রুতা শেষ হয়ে যাবে?মোটেও না,তাই সেলিম ওসমানের সাথে তাদেরও খুজে বের করতে হবে যারা এই দৃশ্যায়নের পরিচালক।তবেই শ্যামল কান্তি স্যার কিছুটা হলেও রেহাই পাবে এবং তার জীবনের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করতে হবে।আজ অন্যায়কারীরা ধরেন সবার সামনে কানে ধরেই মাফ চাইলো এ জাতির সামনে কিংবা কোন সাত রাস্তার মোড়ে।কিন্তু কাল যখন খবরের কাগজে নিউজ হবে,শ্যামল কান্তিকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে এবং প্রত্যক্ষ দর্শীদের ভাষ্য মতে,খুনীরা সেই সাথে আল্লাহু স্লোগান দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে।তখন কি তাহলে সেখানে আবার ধর্মীয় ইস্যু টেনে জংগী হামলায় ফেলে দিবেন হত্যা ইস্যুকে?তাই সব কিছু করার আগে,শ্যামল কান্তি স্যার এবং তার পরিবারের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা আগে করতে হবে।তারপরেই না হয় আমরা বিচারের দাবি করতে পারি।তবে এর মানে এই না যে,আমরা প্রতিবাদ করবো না।প্রতিবাদ অবশ্যই হবে।তবে প্রত্যেক ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াটাই আগে ভাবা উচিত এবং সেই সাথে ব্যবস্থা নেওয়া।

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

বিচারহীনতায় বাংলাদেশ

যখন একটি রাষ্ট্রে বিচারহীনতার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, অযাচিত রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পায় তখনই সমাজের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে থাকে। আর তখনই রাজনৈতিক প্রভাবে অপরাধরীরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে। গোটা দেশটাই হয়ে উঠে অপরাধ রাজ্য।

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে সমাজের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি। ঘটনার বিশ্লেষণ বা তরজমা এখন আর জনমানসে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কোপাকুপির আতঙ্ক। কে কখন সন্ত্রাসীদের চাপাতির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন এই ভয় পেয়ে বসে আছে দেশের সকল শ্রেনীর কিংবা বিশেষ কিছু লোকের মনে।কারণ কে কোথায়,কিভাবে এই টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন তা আমাদের কারো জানা নাই। আর কী অপরাধে মানুষ একের পর এক খুন হচ্ছেন বা তাও কেউ জানছে না।তবে ব্লগার,মুক্তমনা,লেখক,শিক্ষক,প্রগতিশীল,সংস্কৃতিমনারাই খুনীদের টার্গেট তা বিগত হত্যাকান্ড এবং একই কায়দায় হত্যার কৌশল থেকে মোটামোটি সুস্পষ্টভাবেই বলা যায়।আর খুনীদের হত্যার মূল হাতিয়ার হচ্ছে চাপাতির ব্যবহার।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারনা দিতে পারছে না। বিগত কয়েক বছর ধরে সংঘটিত হত্যাকান্ডগুলো দেশের স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিফল ঘটায় না ৷ সরকার সেইসব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিধায় একের পর এক হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে ৷ ফলস্বরূপ আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে ৷

সরকারের বিভিন্ন তদন্তে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সক্ষমতা এবং পেশাদারীত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ৷ তদন্তে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সাগর-রুনী হত্যা, নাস্তিক,ব্লগার,প্রকাশক,অধ্যাপক, মুয়াজ্জিন,পুরোহি ত,সাধু,বিদেশী পুলিশ হত্যার সঠিক কারন এবং হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বিধায় খুনীরা এখন কাউকে হত্যা করতে দ্বিতীয়বার ভাবছে না ৷ খুনীরা খুন করে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে খুন করেও।অন্যদিকে সাধারণ মানুষ অনিরাপত্তায় ভোগছে।

ইদানিং শুধু চাপাতির ব্যবহার করেই খুনিরা আর সন্তুষ্ট থাকছে না। এর সঙ্গে তারা যুক্ত করে নিয়েছে গুলি। টার্গেট করা ব্যক্তির মৃত্যু দ্রুত নিশ্চিত করতেই খুনিরা গুলির ব্যবহার করছে। কুপিয়ে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যাচ্ছে। অথবা মোটরসাইকেলে করে এসে খুন করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য একসাথে সবাইকে অনিরাপদ করে ফেলেছে।গত বছর পর্যন্ত চাপাতি হত্যা হতো মাসিক হিসাবে। কিন্তু গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পর, বর্তমানে তা দৈনিক হিসাবেই শুরু হয়েছে।কারণ চাপাতিবাদীরা জেনে গেছে, দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তাদের কিছু করতে পারবে না।নাস্তিক,ব্লগার ,প্রকাশক,অধ্যাপক, মুয়াজ্জিন,পুরোহি ত,সাধু,বিদেশী দুতাবাসের কর্মকর্তার পর এবার মন্ত্রী মিনিষ্টারদের আত্মীয়-স্বজনদের গর্দান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে চাপাতি। এভাবে চলতে থাকলে অল্পদিনের ভেতরেই মন্ত্রীদের গর্দানেও আঘাত হানবে চাপাতি। বাসায়, অফিসে, রাস্তায়, বাজারে যে কোন জায়গায় আমাকে-আপনাকে কুপিয়ে মারবে।

যাকে হত্যা করা হোল তার পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তিনি বিশ্বাসী কি অবিশ্বাসী তাতে কোন হত্যা জায়েজ হয়না। রাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। কোন হত্যারই সুরাহা হচ্ছে না। কারণ যা-ই হোক না কেন "হত্যা" প্রচলিত আইনেই অপরাধ। কিন্তু আমরা দেখছি প্রতিটি হত্যার পর, বিভিন্ন মহল থেকে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।“ এই হত্যাকান্ডে বি এন পি জামায়াত জড়িত”-প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর কলাবাগানে দুর্বিত্তকতৃক দুজনকে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যার পর বিরোধীদলকে ফাঁসানোর জন্য তিনি একটি রাজনৈতিক মন্তব্য করে ফেললেন। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী কতটা নিন্মমানের হতে পারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে শিক্ষনীয়।কিন্তু কেনো? হত্যাকারী নিজ দলের হতে পারে না নাকি ?খুনি, ধর্ষক, লুটেরা, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। তারা দেশের শত্রু। তারা জাতির শত্রু,বিবেকের শ্ত্রু। ফলে হত্যার তদন্ত ও বিচার অন্ধকারে হারিয়ে যায়।সেই খুনের বিচার করার সাহস এই নাজুক অনুভূতিপ্রবণ রাষ্ট্রের নেই। এই হত্যাযজ্ঞ চলবেই, আমরা যা করতে পারি তা হলো, মৃত্যুচিন্তা মাথায় না নিয়ে যতদিন বেঁচে আছি সময়টাকে উপভোগ করতে পারি। এর বেশি কিছু আমাদের সক্ষমতার সীমায় নেই।

কিন্তু সাধারণ মানুষ আজ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। কিন্তু সুরক্ষিত কারাগার অঞ্চল ও অরক্ষিত, চাপাতি শিল্পের অগ্রযাত্রায় গত কয়েকটি বছরের ব্যাপক সফল্যে আজ উদ্ভাসিত বাংলাদেশ।

আহামদ ছফা যথার্থই বলেছিলেন- “আওয়ামি-লীগ হেরে গেলে হেরে যায় সমগ্র বাংলাদেশ ,জিতে গেলে পুরুবাংলাদেশ জিতে না”।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

বেখায়ালী

যোজন যোজন দূরে হারিয়ে গেছ তুমি
ফিরে পাবার নেইকো কোন আশা
তবুও কেন এতো মিছে মায়ায়
বেখায়ালি জীবন কাটছে ভবের পাড়ে।


আখি খুলে চেয়ে দেখ ঐ নীল আকাশের বুকে
উঠেছে নতুন সূর্য,পাখিরা করছে কলরব।
নগরী হয়ে উঠেছে ক্রমশ ব্যস্তময়
একা মনে বসে আছি জানালার পাশে।


বেলা শেষে রাত এসে জানালার প্রানে কড়া নাড়ে
পাখিরা নীড়ে ফিরেছে,চাঁদ মামা আলো ছড়াচ্ছে।
রাতের সংগী হয়েছে নতুন করে নিকোটিনের ধোয়া
আর গিটারের টুং টাং কর্কশ শব্দ
বেখায়ালী সবকিছুতেই তবু জীবনটা কাটছে বেশ।

শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৬

বিধর্মী/নাস্তিক হত্যা কি ইসলাম স্বীকার করে???

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।নাজিমুদ্দিন সামাদের ওপর আক্রমণের সময় তার সঙ্গে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ ইস্টের শিক্ষার্থী নাজিবের ওপরও আক্রমণ হয়। সৌভাগ্যক্রমে নাজিব বেঁচে যান।রাত নয়টার দিকে ঢাকার পুরনো অংশ সূত্রাপুরের একরামপুর ট্রাফিক মোড়ে কয়েকজন যুবক সামাদের গতিরোধ করে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে তাকে গুলি করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই সময় হত্যাকারীরা 'আল্লাহু আকবার' স্লোগান দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

নাজিমউদ্দীনকে যে বা যারা খুন করেছে তারা একটা ভিন্ন মতবাদ,ভিন্ন দর্শন,ভিন্ন চিন্তার পার্থক্যের ভিত্তিতেই খুন করেছে। আর এই ভিন্ন পার্থক্যটা হচ্ছে প্রগতিশীলতা,নাস্তিকতা,ধর্মান্ধদের সমালোচনা কিংবা বিশেষ কোন ধর্মকে সমালোচনা করা। আর অনেকগুলো ধর্মের মধ্যে সেই বিশেষ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম ধর্ম এবং নবীর সমালোচনা করা। ইসলামী মতবাদ বলে নবী ও ইসলাম সমালোচনাকারীর একমাত্র শাস্তি হচ্ছে তাদেরকে হত্যা করে ফেলা। তাই ইসলাম যে তার সমালোচনাকারীকে হত্যা করতে বলে এটি যাতে প্রকাশিত হয়ে না পড়ে তার জন্য সব রকম চেষ্টা মডারেট মুসলিরা। তাদের প্রচারের মূল লক্ষ্য হলো, ইসলামী নিদের্শে হওয়া খুনগুলোকে প্রচার করা যে, ইসলামের এই ধরণের খুনকে কোনভাবেই সমর্থন করে না। কিন্তু আসুন তাহলে এবার একটু জেনে নিই ইসলাম এ ধরনের হত্যাকে সমর্থন করে কি করে না,তা কোরআনের মাধ্যমেই একটু পর্যালোচনা করা যাক।কারণ হাদিসের কথা বললে সেটাতো আবার জাল হাদিস হয়ে যায় আপনাদের চোখে।তবে আমারও এতো সুভাগ্য হইনি এখনো এত বড় হাদিসের বই ধৈর্য ধরে পড়ার।তবে কোরআনটা পড়া হইছিল এই ইহুদীদের তৈরী স্মার্টফোনের কল্যানে।আচ্ছা ফালতু কথা না বলে এখন একটু নিচের দিকে নজর রাখা যাক,-

# আর তাদের কে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে।বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষন তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে।এ হল কাফেরদের শাস্তি।(২:১৯১)

# খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো।কারণ,ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্ক কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি।আরা ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন।বস্তুতঃ জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।(৩:১৫১)

# যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।(৫:৩৩)

# যখন নির্দেশদান করেন ফেরেশতাদিগকে তমাদ্র পরওয়ারদেগার যে,আমি সাথে রয়েছি তোমাদের,সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমুহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।(৮:১২)

# যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।(৯:১৪)

# তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম।(৯:২৯)

# হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন।(৯:৭৩)

আর একটা হাদিসের কথা না বললেই না হয়।যেখানে বিভিন্ন সময় ওয়াজ মাহফিলে ইহুদী বৃদ্ধ কবি আবু আফাক এবং আসমা-বিনতে মারওয়ান যখন তার সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছিলেন তখন কিভাবে হত্যা করেছিল নবীর এক অনুসারী এবং হত্যার পর নবী ইবনে আব্দুলার সাথে নামাজ আদায়ের কথা বর্নণা করা হয় খুব গর্ভ সহকারেই।

এরপরেও যদি কোন মডারেট মুসলি বলে ইসলাম নাস্তিক/বিধর্মী কিংবা ইসলাম সমালোচনাকারী হত্যা সাপোর্ট করে না তাহলে এখনো আপনি বোকার রাজ্যে বাস করছেন।আর এপনি যখন কোরআনের আল্লাহর বানী অস্বীকার করবেন তখন আপনিও মুনাফিক।আর মুনাফিকের পরকাল জাহান্নামের আগুন।এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেছে,-

‘‘আল্লাহ মুনাফেক নর-নারী ও অবিশ্বাসীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাহান্নামের আগুনের যেখানে ওরা থাকবে চিরকাল, এই ওদের জন্য হিসেব। ওদের ওপর রয়েছে আল্লাহর অভিশাপ, ওদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।’’(৯:৬৮)

‘‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ করেছেন তা ছিন্ন করে আর পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদেরই জন্য রয়েছে অভিশাপ এবং তাদের জন্য নিকৃষ্ট বাসস্থান।’’(১৩:২৫)

এখন আপনি বলেন ইসলাম এ হত্যা স্বীকার করে কি করে না?

রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬

পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০৩ (বৌদ্ধ ধর্ম)

কোন সৎ, চিন্তা ব্যক্তি নারীর প্রতি কোনো ধর্মের স্থূল নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ও বর্বরতার উপেক্ষা করতে পারে না ।শক্তিশালী সৃষ্টিকর্তা দেবতা পুরুষ শাসিত, উপজাতীয়, সহিংস, অসহিষ্ণু সমাজের পণ্য ছিল। সমাজ জীবনে নারীর তুলনামূলক অনুপস্থিতি এবং নারীর উপর ধর্ষবাদী পুরুষদের যৌন আগ্রাসন ও ধর্ষণের আধিক্য যে কোনও মানুষের চোখে পড়বে।

আমরা জানি যে, নারীর হাত দিয়েই প্রধানত মানুষের সভ্যতার সূচনা হয়। কৃষি, পশুপালন, বস্ত্র, মৃৎ পাত্র নির্মাণ এগুলো মূলত নারীদের উদ্ভাবন এবং অনেক কাল পর্যন্ত এগুলো মূলত তাদেরই কাজ ছিল।কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে যুদ্ধ বা সমরবাদের শক্তিবৃদ্ধি নারীর অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটায়।

বৌদ্ব ধর্মের অনুসারীগণ মনে করে নারীসংগ নির্বান লাভে অন্তরায়।বৌদ্ব ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বোদ্ধ বলেছেন, “নারীদের সাথে কোনরুপ মেলামেশা কর না এবং তাদের প্রতি অনুরাগ রেখ না।তাদের সাথে কথা-বার্তাও বলবে না।কারণ পুরুষের পক্ষে নারী ভয়ংকরস্বরুপ।নারী থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।”

বৌদ্ধ ধর্মে নারীরা শুধু সামাজিকভাবে নিগৃহীত হয়নি ধর্মীয়ভাবেও তাদের মর্যাদা ছিল অতিনগন্য যা বৈদিক ধর্মীয় গ্রন্থ 'মনুস্মৃতি'র শ্লোক উদাহরণ স্বরূপ প্রদত্ত হল।
নাস্তি স্ত্রীনাম পৃথগ্ যজ্ঞো ন ব্রতম্ নাপ্যুপোষথম্
পতিম্ শুশ্রুষতে যেন তেন স্বর্গে মহীয়তে। - শ্লোক ১৫৩

অর্থাৎ, প্রয়োজন নেই পৃথক কোন যজ্ঞ কিংবা উপোসনালয়ের,
পতি সেবায় স্বর্গ লাভ হবে স্ত্রীদের।

বৌদ্ধশাস্ত্রের ৫৩৬ নম্বর জাতক - নাম কুণাল জাতক। এই জাতকের প্রধান চরিত্র হল কুণাল যার মুখ নিঃসৃত বানী থেকে আমরা নারীদের সম্পর্কে জানতে পারি । কুণাল বলেন নারী কখনই বিশ্বাসযোগ্য নয়, নারী স্বভাবতই বিশ্বাস ঘাতিনী। নারী কোন ভাবেই প্রশংসার যোগ্য নয় এবং কি নারী কামাচারে পাত্রাপাত্র বিচার করে না।

এ নিয়ে বিদূরপণ্ডিত জাতকে আছে,
“নারীর চরিত্র হায়, কে বুঝিতে পারে?
অসতী প্রগলভা বলি জানি সবাকারে।
কামিনী কামাগ্নি তাপে জবে দগ্ধো হয়
উচ্চে নীচে সমভাবে বিতরে প্রণয়।
খাবার প্রস্তুতে বিচার নাই আগুনের ঠাই
নারীর প্রেমে পাত্রাপাত্র ভেদ জ্ঞান নাই।
অতএব ত্যাজি হেন জঘন্য সংসার
সন্ন্যাসী হইবো এই সংকল্প আমার।”

কুণালের মুখে উচ্চারিত হয় নীতি গাথা-
“সদা রক্ত মাংস প্রিয়, কঠোর হৃদয়,
পঞ্চায়ুধ, ক্রূরমতি সিংহ দুরাশয়।
অতিলোভী, নিত্য প্রতিহিংসা পরায়ণ,
বধি অন্যে করে নিজ উদর পূরণ।
স্ত্রীজাতি তেমতি সর্বপাপের আবাস,
চরিত্রে তাহাদের কভু করো না বিশ্বাস।”

তার মানে, পুরুষের কখনোই নারীর চরিত্রে বিশ্বাস করা উচিত নয়।

নারীরা যে মলের মতো দুর্গন্ধময়, এ সম্পর্কে কুণাল বলেন,
“নারী হল উন্মুক্ত মলভাণ্ডের ন্যায়। উন্মুক্ত মলভাণ্ড দেখিলে মাছি সেখানে ঝাপ দিবেই তাকে রোহিত করা কষ্টকর। কিন্তু একজন জ্ঞানী মানুষ সব সময় এই মলভাণ্ডের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করে তা এড়িয়ে চলে। তদ্রূপ নারীরূপ মলভাণ্ডে মাছিরূপ পুরুষ ঝাপ দিবেই, কিন্তু একজন জ্ঞানী ভিক্ষু এই উন্মুক্ত মলভাণ্ডরূপ নারীদের দুর্গন্ধ উপলব্ধি করিয়া তাদের সদাই পরিত্যাগ করেন।“

কুণাল তার নীতিগাথায় আরো বলেন,
“চৌর, বিষদিগ্ধসুরা, বিকত্থি বণিক
কুটিল হরিণ শৃঙ্গ, দ্বিজিহ্বা সর্পিণী
প্রভেদ এদের সঙ্গে নেই রমণীর।
প্রতিচ্ছন্ন মলকুপ, দুষ্কর পাতাল
দুস্তোস্যা রাক্ষসী, যম সর্বসংহারক
প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।
অগ্নি, নদী বায়ু, মেরু কিংবা বিষবৃক্ষ নিত্যফল
প্রভেদ এদের সঙ্গে নাই রমণীর।”

বোধিসত্ত্ব এক রাজা ছিলেন, এবং তাঁর পুরোহিতের সঙ্গে নিয়মিত পাশা খেলতেন। খেলার সময় একটি গান গেয়ে চাল দিতেন, এবং গানটির সত্যতা-বলে প্রতিবারই জিততেন। সেটির অংশবিশেষ,

“পাপাচার পরায়ণ জানিবে রমণীগণ,
স্বভাব তাদের এই নাহিক সংশয়;
যখনই সুবিধা পায়, কুপথে ছুটিয়া যায়,
ধর্ম্মে মতি তাহাদের কভু নাহি হয়।”
অর্থাৎ,নারীদের এতোই জঘন্য স্বভাব যে এখানে সেখানে তারা ঘুরাফেরা করে।

দুরাজান (দুর্জ্ঞেয়)-জাতক এর একটি কবিতা আছে ,
“ভাল যদি বাসে নারী, হইও না হৃষ্ট তায়;
যদি ভাল নাহি বাসে, তাতেই কি আসে যায়?
নারীর চরিত্র বুঝে হেন সাধ্য আছে কার?
বারিমাঝে চলে মাছ, কে দেখিবে পথ তার?”

অর্থাৎ, নারীরা সব সময় প্রেমালাপে পুরুষদের বস করে যদিও মনের মধ্যে তাদের থাকে খারাপ অভিলাস।

অনভিরতি-জাতক গল্পের কবিতায় বলা হয়েছে,
“নদী, রাজপথ, পানের আগার উৎস, সভাস্থল আর,
এই পঞ্চস্থানে অবাধে সকলে ভুঞ্জে সম অধিকার।
তেমনি রমণী ভোগ্যা সকলের, কুপথে তাহার মন;
চরিত্রস্খলন দেখিলে তাহার, রোধে না পণ্ডিত জন।”

অর্থাৎ, সুযোগ পেলেই অসতীরা পুরুষের সম্মান নষ্ট করে।
(পর্ব আকারে লেখা হচ্ছে, চলতে থাকবে)

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ড.অভিজিৎ রায়'কে স্মরনে

প্রগতিশীল সমাজ ব্যাবস্থা নিয়ে কথা বলা মানে কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা না,তবে ধর্মের গোড়ামি অন্ধতা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসা।কারন ধর্মের উপর অন্ধ বিশ্বাস করে অন্যকে অপমান করা বা ছোট করে দেখা কিংবা ভয় দেখিয়ে অন্যকে দমিয়ে রাখা এবং ধর্মের উপর অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে কোন জাতি বা ব্যাক্তির প্রান নাশ কিংবা ধ্বংষ লিলা কখনো কোন ধর্ম হতে পারেনা।এটাকে একথায় সন্ত্রাসবাদ ছাড়া অন্য কিছু বলে দাবি করা যায় না।যদি কেও সেটা দাবি করে বলে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য যাই করা হবে সেটাই ঠিক।তাহলে আমি তাকে বলব তোমার এমন ধর্মের কপালে আমি লাথি মারি।যেখানে কোন মানবতা নাই সেখানে কোন সৃষ্টিকর্তাও থাকতে পারেনা।জয় যদি হতেই হয় তবে মানবতার জয় হোক ।

ও হ্যাঁ, উপরের এই কথা গুলো বলার কারণ বিজ্ঞান মনষ্ক লেখক,মুক্তমনা ব্লগ প্রতিষ্ঠাতা, ব্লগার প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় কে স্মরণে।"যারা ভাবেন বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হয়ে যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মত জিনিস নিয়ে যখন আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালেখি করছি।"-অভিজিৎ রায় নিজেই নিজের কথার পরিনত হয়েছেন। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারীর এই দিনে ইসলামী জংগীদের চাপাতির নিচে জীবন দিতে হয় ড. অভিজিৎ রায়কে এবং গুরুতর আহত হয়ে প্রানে বেচে যান তার জীবন সঙ্গী বন্যা আহম্মেদ।গত বছর বইমেলার শেষের দিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি নিহত হলেও এবারের আরেকটি বইমেলা প্রায় শেষের দিকে। এখনো তার হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই।কিন্তু বিচারের নামে যেটা হয়েছে সেটা তদন্ত।যার আজও কোন মূল সূরাহ হয়নি।তার কারণ হয়তো,যদি অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের বিচার করা হয় তাহলে হয়তো এদেশে হাজার হাজার অভির জন্ম হবে এদেশের ধর্মান্ধ সুশিলদের ধারণা।তাই তারা বিচারের নামে তদন্ত নামের এক ফাদে ফেলে এদেশের মৌলবাদ,উগ্রবাদী ধর্মান্ধ বিরোধী মানুষকে শান্তনা দেওয়া হচ্ছে।ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীরা ভেবেছিল কুপিয়ে সব স্তব্ধ করে দিবে অভিজিৎদের।কিন্তু দেখ আজ এক অভিজিতের বদলে হাজারটা অভির কলম চলে,কলম চলবে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, উগ্রবাদী, মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে।ওহে,মূর্খের দল তোমারা শুনে রাখ,একজন মানুষকে হত্যা করে তাকে এবং তার নিজের হাতে সাজানো অসমাপ্ত কাজটা তার দ্বারা নিঃশেষ হয় না।কিন্তু তার রেখে যাওয়া সম্পদ বা অসমাপ্ত কাজগুলো কেও না কেও তা নিজ দায়িত্বে নিজের কাধে তুলে অসভ্য সমাজকে আলোর পথ দেখায়। কারণ বেচে থাকা সভ্য মানুষদের চিন্তা শক্তিও নষ্ট করা যায় না একজন আলোর দিশারীকে হত্যা করে।হয়তো সাময়িকের জন্য কারো কারো চিন্তা শক্তি থমকে যায়,আবার অনেকের চিন্তা শক্তি তোমাদের হিংস্রতার কারণে বেড়ে যায়।সেটা হোক প্রকাশ্যে কিংবা ভিন্ন পথ অবলম্বন করে।অভির আগেও এই সভ্যতার জন্য কুসংস্কার বাদীদের হাতে জীবন দিতে হয়েছে অনেক স্বপ্নদ্রষ্টাকে,তা আমরা সকলেই কম বেশী জানি।কিন্তু এ সভ্যতাকে আটকানো বা পায়ে শিকল বেধে আটকানো যায় নি তবে সাময়িক বাধাগ্রস্ত হয়তো করা যায়।তবে একজনের অসমাপ্ত কাজ অন্যজন নিজের মনে করেই গুরুত্বসহকারে কাধে তুলে নেয়।সত্য, সৎ, ন্যায়পরায়ন,চরিত্রবান, যারা সৃষ্টিশীল তাদের মুল্য এখনো এসমাজে পরিলক্ষিত। এদের সম্মান কেহ কোন দিন চাইলেও বিনিষ্ট করতে পারেনি আর কোনদিন পারবেও না।যুগে যুগে যাহারা সত্যর পথে ধাবিত হইয়াছে, তাহাদের উপর প্রতিনিয়ত এই অন্ধ সমাজ বিভিন্নভাবে আঘাত করিয়াছে। তাহা শারীরিক ভাবেই হউক কিম্বা মানসিকভাবেও হোক। তথাপি কোনমতেই এই অন্ধ সমাজ তাহাদিগের মতবাদকে অস্বীকার করিতে পারে নাই। আর পারে নাই বলিয়া পৃথিবী আস্তে আস্তে সভ্যতার দিকে ধাবিত হইয়াছে।ঠিক তেমনই আমাদের এই সমাজের স্বপ্ন দ্রষ্টা ছিল অভিজিৎ রায়।
আমরা একজন অভিজিৎ রায়কে হারাইনি; আমরা হারিয়েছি এক স্বপ্নের মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এক আলোর দিশারী পথিক; অন্ধ বর্বরদের দেশে এক অনন্য সৃষ্টিশীল মুক্ত মনের মানুষ।যিনি চেয়েছিলেন,ধর্ম কুসংস্কার মুক্ত একটা সভ্য সমাজের অস্তিত্ব।