মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫

শহীদ নূর হোসেন দিবস (‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’)

আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ কখনো মসৃণ ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের আপনজনদের নৃশংসভাবে হত্যা,৩ নভেম্বর জেলের ভিতরেই হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চার স্তম্ভ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতা -তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আ.হ.ম কামরুজ্জামান এবং মনসুর আলীকে।এবং ৩ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মত জগন্যতম ইতিহাস।যার মধ্যদিয়ে এ দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলার জনগণ আন্দোলন করে।
১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাস। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ছিলো অবরোধ দিবস। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন-সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এক দিন। সারা দেশ থেকে দলে দলে মানুষ এসে জড়ো হয়েছিলো ঢাকায়।মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো সেদিন ঢাকা নগরী। দিনটি বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচারী এরশাদ তার ক্ষুদার্ত সৈন্যবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছিল অসহায় বাঙ্গালীর উপর।হাজারো প্রতিবাদী যুবকের সঙ্গে জীবন্ত পোস্টার হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন যুবলীগের কর্মী নূর হোসেন।শহীদ নূর হোসেন খালি গায়ে বের হয়েছিল কারফিউ ভঙ্গ করে। তার বুকে সাদা হরফে লিখা ছিল "স্বৈরাচার নিপাত যাক" আর পিঠে লিখা ছিল "গনতন্ত্র মুক্তি পাক"। হাজারো প্রতিবাদী যুবকের সঙ্গে জীবন্ত পোস্টার হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন যুবলীগের কর্মী নূর হোসেন।
গুলিস্তান-বংগবন্ধু এভিনিউ-বায়তুল মোকারম এলাকায় জনতার ভিড়ে,সমস্ত জনতাকে ছাপিয়ে বারবার একটি মুখই উদয় হচ্ছিলো। আর সেটি নূর হোসেনের খালি গা,জিন্সের প্যান্ট পরনে। নূর হোসেন তাঁর বুকে ও পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান উৎকীর্ণ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫-দলীয় ঐক্যজোটের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন।সে ছুটছিলো এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।থামছিলো না সে খানিকক্ষণের জন্যেও।ডিউটিরত পুলিশদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হচ্ছিলো তার কর্মকান্ডে।এক পর্যায়ে সেই পথ দিয়ে আওয়ামী-লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে যাচ্ছিলো।যুবকটিকে দেখে গাড়ি থামিয়ে তিনি তাকে ডাকলেন। বললেন,শিগগির জামা গায়ে দাও, পুলিশ তো তোমাকে গুলি করবে।উদোম-উদ্দাম বুকে পিঠে স্লোগান লেখা সেই যুবক তার প্রিয় নেত্রিকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। তারপর স্লোগান দিতে দিতে হারিয়ে গেলো জনতার ভেতরে।
এর কিছুক্ষণ পরেই গুলির শব্দ। মিছিলটি যখন জিরো পয়েন্টে পৌঁছে, তখন স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিল লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়। বুলেট নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়।নূর হোসেনের সঙ্গে আরও আত্মাহুতি দেন যুবলীগের নেতা নুরুল হুদা ও কিশোরগঞ্জ বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা।তাঁর এই আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলকে বেগবান করে।গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই সংগ্রামে বাবুল, ফাত্তাহসহ অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ ফিরে পায় ভোট ও ভাতের অধিকার।
বায়তুল মোকারম গেইটের কাছে পুলিশের গুলিতে ঢলে পড়লো সেই যুবক।জনতা কিছুটা ছত্রভংগ।এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই পুনরায় সংগঠিত।আবারো গুলির শব্দ।নূর হোসেনের লাশ ছিনিয়ে নিয়েছিলো পুলিশ। নূর হোসেনের লাশ তার গরিব বাবা মাকে একটিবার দেখতেও দেয়া হয় নি। গোপনে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে তাকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।জীবন্ত নূর হোসেনকে স্বৈরাচার এরশাদ যতোটা ভয় পেয়েছিলো তার চেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলো তাঁর লাশকে। আর তাই দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো তাঁর সমাধিকে।কিন্তু এরশাদ জানতো না—এ লাশ মাটির তলায় থাকবে না।জেগে উঠবেই।এরশাদ কি জানতো যে নূর হোসেনরা কখনো মরে না।নূর হোসেনরা চলে যাবার আগে বলে যায়—‘আমরা সহস্র হবো অজস্র মৃত্যুতে।
নূর হোসেনের মা বলেছিলেন,”কত থানায় গিয়া তার বাপে কান্নাকাটি করছে, পোলার লাশ দেখতে চাইছে। কেউ তার কথা শোনে নাই।সে যে শহীদ হইছে এইটা পরথম জানবার পারি পেপারে ফটো দেখার পর। রাইতে বিবিসির খবরে তার কথা কয়। আমার অবস্থা তো তখন বুঝেন। হায় হায় কইরা বুক চাপড়াইলাম। কিন্তু কেউ লাশটার খোঁজ দিলো না। আমি নামাজ পইড়া আল্লার কাছে কইলাম, যে জালিম আমার পোলার লাশ পর্যন্ত দেখতে দিলো না, তার উপর য্যান গজব নাজিল হয়।“
মিছিলের পুরোভাগে থাকা এই অকুতোভয় যোদ্ধা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছেন। নূর হোসেনের এ আত্মদান স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। তাঁর আত্মাহুতির ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ এর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। সেদিনের সেই ২৬ বছরের যুবক আবার ফিরে আসুক অন্য কোন বেশে, অন্য কোন নূর হয়ে। জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে এই হোক আমাদের কামনা।

এর পর থেকে প্রতিবছর দিনটি শহীদ নূর হোসেন দিবস বা গণতন্ত্র মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।







সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

একজন হিটলারের গল্প



অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ অ্যাডলফ হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল জার্মানির সীমান্তবর্তী ব্রাউনাউ-আম-ইন গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম ছিল Alois ও মায়ের নাম ছিল Klaaraa.ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যতা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ।হিটলার যিনি জার্মানিতে জন্মগ্রহণ না করেও জার্মানির চ্যান্সেলর হয়েছিলেন অথচ তিনি জন্ম নিয়েছিলেন অস্ট্রিয়ায়।যতটুকু জানা যায়, আলোইসের মা মারিয়া আন্না ও সিকেলগ্রাবার প্রতিবেশি মিলশ্রমিক জোয়ান জর্জ হিটলারের মিলিত ফসল এই আলোইস হিটলার। সে হিসেবে হিটলারের দাদা ছিলেন একজন ইহুদি। হিটলারের বাবার কোনো জাত ছিল না। সোজা বাংলায় বললে বলা যায় হিটলার ছিলেন একজন জারজ সন্তান। তিনি জীবনের অনেকটা সময় শেষ নাম হিসেবে তার মায়ের নাম ব্যবহার করেছিলেন। ১৯১৬ সালেই প্রথম হিটলার নামটি গ্রহণ করেন। সৎ বাবা সরকারি কাস্টমস থেকে অবসর গ্রহণের পর সপরিবারে অস্ট্রিয়ার লিনৎসে শহরে চলে আসেন। এখানেই হিটলারের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। এ কারণে সারাজীবন তিনি লিনৎসকে ভালোবেসে গেছেন, কোনো শহরকে এর ওপরে স্থান দিতে পারেননি। বাবাকে তিনি পছন্দ করতেন না বরং ভয় করতেন। কিন্তু মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। ১৯০৩ সালে বাবা মারা যান। বাবার রেখে যাওয়া পেনশন ও সঞ্চয়ের অর্থ দিয়েই তাদের সংসার কোনোমতে চলতে থাকে। অনেক ভোগান্তির পর ১৯০৭ সালে মাও মারা যান। হিটলার নিঃস্ব হয়ে পড়েন।ছোটবেলায় হিটলার ধর্মযাজক ও চিত্রশিল্পী হতে চেয়েছিলেন।হিটলারের মায়ের মৃত্যুর পর ও আর্ট স্কুল থেকে দ্বিতীয়বারের মত বিতাড়িত হওয়ার পর হিটলার ছিল একেবারেই গৃহহীন, আশ্রয়হীন।পড়াশোনায় সুবিধা করতে না পেরে ভিয়েনায় গিয়ে চিত্রশিল্পী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন নিজের পুরনো শহরে। পরবর্তী বেশ কয়েক বছর কেটেছে হতাশা আর গ্লানিতে।



১৯১৩ সালে হিটলার চলে আসেন মিউনিখ শহরে। তখনো চলছিল তার এলোমেলো জীবন। এখানে আসার পরের বছর ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অস্ট্রিয়ান মিলিটারি সার্ভিসে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেও শারীরিক অযোগ্যতায় ব্যর্থই হচ্ছিলেন বলা চলে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে জার্মান সেনাবাহিনী এত কিছু আর যাচাই-বাছাই করেনি। জার্মানির ১৬তম ব্যারাভিয়ান রিজার্ভ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টের ভলান্টিয়ার সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে যুদ্ধে গুরুতর আহত হন হিটলার। দুই বছর পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যখন সমাপ্তি ঘটে তিনি তখন পর্যন্ত হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। যুদ্ধে বীরত্ব দেখানোর জন্য তাকে বিভিন্ন পদক ও সম্মাননা দেওয়া হয়। কিন্তু যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় হিটলার মেনে নিতে পারেননি। এর মধ্যেই হিটলারের জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়। ১৯১৯ সালে হিটলার মিউনিখের ছোটখাটো একটি ডানপন্থি দলে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই দলটি হিটলারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এর মধ্যেই পার্টির নাম পাল্টে রাখা হয় নাৎসি।



হিটলারের নাৎসি পার্টির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। হিটলার চেয়েছিলেন জার্মানিতে যেন আর কোন রাজনৈতিক দল না থাকে। কিন্তু তার এ ষড়যন্ত্র ধরা পড়লে কারাবন্দি হন হিটলার।এরপর কারাগার থেকেই হিটলার লিখেছিলেন বিখ্যাত বই ‘মেইন ক্যাম্প’।

এক বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদি বিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্র বিরোধিতা ছড়াতে থাকেন। এভাবেই একসময় জনপ্রিয় নেতায় পরিনত হন হিটলার। এক বছরের মধ্যেই পুরো জার্মানি তিনি নিজের নিয়ন্ত্রনে নেন।




নাৎসিরা তাদের বিরোধীপক্ষের অনেককেই হত্যা করেছিল, দেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিল, সামরিক বাহিনীকে নতুন নতুন অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত করেছিল এবং সর্বোপরি একটি সমগ্রতাবাদি ও ফ্যাসিবাদি একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। হিটলার এমন একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহন করেছিলেন যাতে সকল জীবন্ত অঞ্চলকে দখল করে নেয়ার কথা বলা হয়।

বুদ্ধিজীবী, উন্নত সংস্কৃতি এবং শ্রমিক আন্দোলনকে মনেপ্রাণে ঘৃণাকারী ব্যাক্তি ছিলেন হিটলার। ছোটবেলা থেকেই হিটলার ছিলেন ভীষণ রগচাটা, একগুঁয়ে ও জেদি। মা মারা যাওয়ার পর সংসারের সব বন্ধন ছিন্ন করে হিটলার চলে যান ভিয়েনায়। ভিয়েনায় থাকাকালিন সময়েই তার মনের মধ্যে প্রথম জেগে উঠে ইহুদিবিদ্বেষ।ইতোমধ্যে জার্মানির পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জার্মানির সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ১৯৩৩ সালের জানুয়ারি মাসেই জার্মানির শাসন ক্ষমতায় চলে আসে নাৎসিরা। আর হিটলার হয়ে যান জার্মানির চ্যান্সেলর। তার বয়স তখন ৪৪ বছর। চ্যান্সেলর হয়েই হিটলার খুব দ্রুত একনায়কত্ব কায়েম করতে শুরু করেন। তার প্রথম নীতিই ছিল বিরোধী এবং ইহুদি নিধন

১৯৩৪ সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৩৫ সালে নতুন আইন চালু করে দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে বিভক্ত করেন। এ আইনে ইহুদিরা জার্মানিতে বসবাসের অধিকার পেলেও নাগরিকত্ব হারান।




বিশ্বজয়ের স্বপ্নে মত্ত হয়ে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমন করে। এই দিন থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ব মানচিত্রকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত জার্মানির ওপর বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেয় ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে। সন্ধির শর্ত সম্পর্কে জার্মান প্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করে তাদের সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই একতরফা চুক্তিকে জার্মানরা কখনোই মেনে নেয়নি।

জার্মানির জনগণের সেই জনরোষকে কাজে লাগিয়ে তাই মাত্র বিশ বছরের মধ্যেই অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি জার্মানি ভার্সাই চুক্তি ভেঙে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য এককভাবে একজন ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়। কেবলমাত্র তার উচ্চাভিলাষ ও একগুঁয়েমির কারণেই গোটা বিশ্ব একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তিনি আর কেউ নন। অ্যাডলফ হিটলার। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একজন ঘৃণিত ব্যক্তি। তার বিস্ময়কর উত্থান যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। এই ছবিটি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একজন সাধারণ সৈনিক ছিলেন তিনি। হাজারও মানুষের ভিড়ে দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক হিটলারকে।ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম যুদ্ধটির মাত্র ২৫-৩০ বছর না পেরোতেই আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের খড়গ নেমে আসে শান্তিপ্রিয় পৃথিবীবাসীর কপালে। গোটা পৃথিবী বিস্ময় আর বিহ্বল চোখে তাকিয়ে দেখল আরও একটি ধ্বংসযজ্ঞ। দেখল আরও একটি বিশ্বযুদ্ধ।




এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে সভ্য সমাজের সবচেয়ে বড় আর ধ্বংসাত্দক যুদ্ধ বলা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধে গোটা পৃাথবী লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে। জার্মানির সঙ্গে মিত্রপক্ষের যুদ্ধের মাধ্যমে এর সূচনা ঘটে। মিত্রপক্ষে প্রথমদিকে ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং পোল্যান্ড। জার্মানির সঙ্গে পরবর্তীতে ইতালি যুক্ত হয়ে অক্ষশক্তি হিসেবে আত্দপ্রকাশ করে। জার্মানি কর্তৃক দখলকৃত কিছু দেশ হতেও অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সৈন্যবাহিনী প্রেরিত হয়। বিশেষত পূর্ব সীমান্তের যুদ্ধে এসব দেশের সৈন্যরা অংশগ্রহণ করে; অন্যান্য জাতিসমূহ মিত্রশক্তির সঙ্গে যোগ দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানির সঙ্গে যে কোনো ধরনের আক্রমণ থেকে বিরত থাকার মর্মে অনাক্রমণ চুক্তি নামে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছিল। কিন্তু ১৯৪১ সালের ২২ জুন জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে এবং এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তির সঙ্গে যোগ দেয়। মূলত জার্মানি এবং জাপান দুই অক্ষশক্তিই যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করার মাধ্যমে একে যুদ্ধে ডেকে আনে। অপরদিকে চীনের সঙ্গে জাপানের ছিল পুরাতন শত্রুতা; ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিল। এর ফলে চীনও মিত্রপক্ষে যোগদান করে। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্দসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ভয়াবহ এই যুদ্ধে আনুমানিক ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার নাগরিক। নিহতের এই বিশাল সংখ্যার মূল কারণ ছিল গণহত্যা আর অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার। আধুনিক সময়ে সংঘটিত এই যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবেও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার এই যুদ্ধের ভয়াবহতাকে কয়েক হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে একজন ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়। তিনি অ্যাডলফ হিটলার। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।



বিশ্বজুড়ে গণহত্যার মধ্য দিয়ে একের পর এক দেশ দখল করতে থাকেন হিটলার। ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালে হিটলার বাহিনী রাশিয়া আক্রমন করে। প্রথমদিকে জার্মান বাহিনী সর্বত্র জয়লাভ করলেও মিত্রশক্তি যখন সম্মিলিতভাবে অগ্রসর হতে শুরু করে তখন হিটলার বাহিনী ধীরে ধীরে পিছু হটতে থাকে।অবশেষে মিত্র শক্তি বিজয় লাভ করে। ১৯৪৫ সালের মধ্যে জার্মানি ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়। হিটলারের রাজ্যজয় ও বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রান হারাতে হয়। ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয়।


হিটলার বাহিনী ৬০ লক্ষ ইহুদি ছাড়াও সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, কমিউনিস্ট, রোমানি ভাষাগোষ্ঠীর (যাযাবর) জনগন, অন্যান্য স্লাবিক ভাষাভাষী জনগন, প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষদের উপর এই অমানবিক গণহত্যা পরিচালিত করে। নাৎসি অত্যাচারের সকল ঘটনা আমলে নিলে নিহতের সংখ্যা দাড়াতে পারে নব্বই লক্ষ থেকে এক কোটি দশ লক্ষের মত। ইহুদি নিধনের এই ঘটনা ইতিহাসে "হলোকষ্ট" নামে পরিচিত।




১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ দিনগুলিতে হিটলার বার্লিনে ছিলেন। রেড আর্মি যখন বার্লিন প্রায় দখল করে নিচ্ছিল সে রকম একটা সময়ে হিটলার তার প্রেমিকা ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন। ইভা হিটলারকে গভীরভাবে ভালবাসতেন। বিয়ের পর হিটলার তার সঙ্গীদের সঙ্গে শ্যাম্পেন পান করেন। তারপর দুটি চিঠি লিখেন। একটিতে সবকিছুর জন্য তিনি ইহুদিদের দায়ি করেন এবং অপরটিতে নিজের সব সম্পত্তি তিনি পার্টিকে দান করে দেন।




এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মিত্রশক্তির বিজয় হয়। জাতিসংঘ সৃষ্টি হয়। বৃহৎ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের আত্দপ্রকাশ ঘটে আর রাশিয়া-আমেরিকা স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধের মাধ্যমে সর্বপ্রথম পারমাণবিক বোমার ব্যবহার হয় আর এর শিকার হয় জাপান। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্দসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে আধুনিক সময়ের এই যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে মানুষ একে কখনো ভুলতে পারবে না।



৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সাল। বার্লিনের চারদিক অবরোধ করে ফেলেছে লালফৌজ। হিটলার বুঝতে পারেন যেকোনো মুহূর্তে তিনি লালফৌজ বাহিনীর হাতে বন্দি হতে পারেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি বাঙ্কার থেকে ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে তার সহযোগীদের সাথে শেষবারের মত দেখা করে আসেন।




এসময় তিনি তার সহযোগীদের বলেন, তার মৃত্যুর পর যেন তার লাশ এমনভাবে পোড়ান হয় যাতে তার দেহের অংশের কোন চিহ্ন না থাকে। এর কিছুক্ষন পরেই গুলির শব্দ শোনা যায়। হিটলার নিজের পিস্তল দিয়েই আত্মহত্যা করেন। এর আগে তার সদ্য বিবাহিতা বউ ইভা বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
চারদিক থেকে গোলা পড়ছে। তখন হিটলারের দুই সৈন্য তার মৃতদেহ কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে বাগানে নিয়ে যান এবং এ অবস্থাতেই তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন।

জার্মানির একনায়ক অ্যাডলফ হিটলার তার জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন একটি বাঙ্কারের ভেতর। পৃথিবীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জুড়ে আছেন হিটলার। স্বভাবতই তার শেষ দিনগুলোর সঙ্গী সেই বাঙ্কার সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ থাকবে। সেই আগ্রহ মিটেছে ক'দিন আগেই। সেই বাঙ্কারের অপ্রকাশিত কিছু ছবি প্রকাশ করেছে লাইফ ডট কম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকের ওই সময়টাতে হিটলার তার প্রেমিকা ইভা ব্রাউনকে নিয়ে বার্লিনের এক বাঙ্কারে থাকতেন। যুদ্ধে পরাজয় আসন্ন জেনে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল প্রেমিকাসহ ওই বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেন হিটলার।



প্রকাশিত সাদাকালো ছবিগুলোতে ক্ষমতাধর একজন একনায়কের শেষ জীবনের বেশ অগোছালো ও সাদামাটা জীবনযাপন উঠে এসেছে। বাঙ্কারের যে সোফায় হিটলার ও ইভা ঘুমাতেন যুদ্ধকালীন প্রতিবেদকেরা তা পরীক্ষা করে দেখছেন। সোফার ফেব্রিকে লেগেছিল গুলিতে আত্দহত্যার পর ছিটকে পড়া ছোপ ছোপ রক্ত।গোটা বিশ্বধ্বংসের খেলা শেষ করে নিজেই শেষ হয়ে যান অ্যাডলফ হিটলার।

তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া, দৈনিক যুগান্তর ও কয়েকটি ওয়েবসাইট

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

সিপাহী বিপ্লবের ইতিহাস এবং একজন মেজর জিয়া

১৯৪৭ সালে যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা নির্ধারণ করে ভারত ভাগ হয়েছিল, পাকিস্থান নামের এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, সেই দ্বিজাতি তত্ত্ব যে এদেশের মানুষের কোন মঙ্গল বয়ে আনতে পারেনি তা অচিরেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল। এই তথাকথিত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্থানের মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছিল নানা রকম অসঙ্গতি আর অসন্তোষের।ভাষা আন্দোলন এবং ষাটের দশকের ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিকতায় এলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বাহ্নেই শোষক পাকিস্তানী প্রশাসন বুঝতে পেরেছিল এদেশের সহজ-সরল মানুষগুলোকে আর শাসন-শোষন করা যাবেনা।বাঙ্গালী জেগে উঠেছে। এদেশে পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের পতন অনিবার্য।এটা কেবল কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র।এই পরাজয়কে সহজে মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা।তাই হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসর বিশ্বাসঘাতক স্বাধীনতাবিরোধী চক্র–জামাত,আল বদর, আল শামস, রাজাকারদের নজিরবিহীন নৃশংসতা এবং এক ভয়ংকর নীলনকশা বাস্তবায়নের একটি প্রামাণ্য দলিল করে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসম্বর বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য।১৪ই ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্য বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল।৩০ লাখ শহিদের রক্ত এবং ৪ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন হলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ও মুসলিম লীগের এদেশীয় একশ্রেণীর বাঙালি রাজাকার আলবদর বাহিনী গঠন করে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস বাঙালির বিরুদ্ধে সীমাহীন গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগের মতো নির্মম মানবতাবিরোধী অপরাধ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামায়াত ও মুসলিম লীগের বড় নেতারা পালিয়ে গেল, কেউ কেউ গ্রেফতারও হলো।দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ১০ মাসের মাথায় বিশ্বনন্দিত একটি সংবিধান তৈরি হলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হলো নতুন যাত্রা।

দেশি-বিদেশি পরাজিত শত্রুরা নানা ছদ্মাবরণে সংগঠিত হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতিসত্তার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল স্তম্ভ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ১৫ আগস্টের ওই ঘাতকদের নির্দেশেই জেলের অভ্যন্তরে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে, যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের দর্শনের ওপর বাংলাদেশকে ধরে রাখতে পারতেন। ৩ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় ৭ নভেম্বর।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্ষমতালিপ্সু অফিসারদের ক্ষমতা দখল-পুনর্দখলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের এই দিনে 'সিপাহি-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থান' ঘটেছিল।৭ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাসের একটি অবিস্মরণীয় দিন।সেনাবাহিনীতে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিরোধ তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলছিল, তারই উদগিরণ ঘটে ৭ নভেম্বর এবং একই সঙ্গে জনমনে ও সেনাবাহিনীতে সবকিছু স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। তাই ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস বলে দাবি করা হয়।১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এক ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হবার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন ১৫ই অগাষ্টের ঘটনার মুল নায়কেরা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশারফ এই ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি।বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল মেজরের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য এবং সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ডকে ফিরিয়ে আনার জন্য তৎকালীন চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) এবং ঢাকায় অবস্থিত ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর সম্পূর্ণ রক্তপাতহীন একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান নিজ বাসায় বন্দি হন। খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদচ্যুত হন। বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজররা সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু খালেদ মোশাররফের কিছু অদূরদর্শিতার কারণে মাত্র চার দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর আরেকটি পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে। ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের কারিগর ছিলেন মুলত কর্ণেল তাহের।

কর্নেল (অবঃ) আবু তাহের সে সময় চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। কর্নেল তাহের ছিলেন জিয়াউর রহমানের একজন বিশেষ শুভাকাংখী। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। সৈনিক-অফিসার বৈষম্য তার পছন্দ ছিলনা। তার এই নীতির জন্য তাহের সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকদের মাঝেও দারুন জনপ্রিয় ছিলেন। কর্নেল তাহের বিশ্বাস করতেন জিয়াও তারই আদর্শের লোক।ঢাকাতে তার অনুগত ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহীদের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার নির্দেশ দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রওনা হন, এ সময় তার সফর সঙ্গী ছিল শত শত জাসদ কর্মী। কর্নেল তাহেরের এই পাল্টা অভ্যুত্থান সফল হয় ৭ই নভেম্বর। কর্নেল তাহের, জিয়াউর রহমানকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। ঐ দিনই পাল্টা অভ্যুত্থানে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জেনারেল খালেদ মোশাররফকে হত্যা করে।

কথা ছিল, জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনা হবে। তারপর জাসদের অফিসে তাঁকে এনে তাহেরদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হবে। পরে সিপাহী-জনতার এক সমাবেশ হবে। সেখানে বক্তব্য রাখবেন জিয়া আর তাহের। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। জিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হতে সম্মত হন না। উর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা তাঁকে পরামর্শ দিতে থাকেন। তাহের জিয়াকে ভাষণ দিতে বলেন। জিয়া ভাষণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তাহের বুঝতে পারেন জিয়া তাঁদের সাথে আর থাকছেন না। তিনি পুনরায় সংগঠিত হতে থাকেন। কিন্তু জিয়া বুঝতে পারেন ক্ষমতায় টিকতে হলে তাহেরসহ জাসদকে সরাতে হবে। সেই অনুযায়ী গ্রেফতার হতে থাকেন জাসদের সব নেতারা। তাহেরও গ্রেফতার হন। শুরু হয় এক প্রহসনের এক বিচার। গোপন আদালতের সেই বিচারে ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে আলোকিত উজ্জ্বল সূর্য আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম তা ৭ নভেম্বরের কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। তাই ৭ নভেম্বরকে বিপ্লব বললে প্রকৃত অর্থে বিপ্লব শব্দটিকে অবমাননা ও ছোট করা হয়। কেননা ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে তা একেবারেই বেমানান।

৭ নভেম্বর - সিপাহী বিপ্লবের সত্যি ইতিহাস এবং জিয়াকে কেন মীর জাফর বলা হয় জানতে নিচের লিঙ্ক ক্লিক করুন.....
https://www.facebook.com/NogorBowlJames/videos/648774211932312/

শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

বাংলাদেশ দিন দিন এক আতংক রাষ্ট্রে পরিনত হচ্ছে



বাংলাদেশ দিন দিন এক হিংস্র আতংক রাষ্ট্রে পরিনত হচ্ছে।সমগ্র জাতি আজ স্তব্ধ ও নিস্তব্ধ।কারন সমগ্র জাতিকে আজ,ঘাতকের চাপাতি কিংবা বুলেট তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি দেশের আরাজকতা ভয়ংকর পরিস্হিত তাই প্রমান করে। বছরের শুরু থেকেই প্রকাশ্য দিবা লোকে একে একে বেশ কয়েক জন মুক্তমনা ব্লগার হত্যা দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে এই হিংস্রতা দাঁড়িয়েছে বিদেশী নাগরিক থেকে শুরু করে প্রকাশক,পুলিশ এবং কি সাধারন মানুষ।এ যেন রক্তের হলি খেলা চলছে সাম্প্রতিক কাল ধরে।


দেশে দিন দিন বেড়েই চলছে চাপাতির কোপে হত্যাযজ্ঞ।হত্যার কারণে দেশের মুক্ত-চিন্তক মানুষ,সুশীল সমাজ লেখক,প্রকাশক এবং কি এখন সাধারণ জনগণও চিন্তিত। দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও বাহিনী রয়েছে। এছাড়া অপরাধ তদন্তের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। দিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, রাহাজানিসহ নানা রকম দুষ্কর্ম। রোধ করা যাচ্ছে না দূস্কৃতদের। চাঁদাবাজি, খুনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে দেশের কোথাও না কোথাও।

দুই বিদেশি খুন,গর্ভবতী মায়ের পেটে লাথি মেরে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই শিশুকে বিদায় জানানো পরিবারের বোবা মুখ,রাতের আঁধারে ধর্মীয় উৎসবে বোমা হামলা,উৎকন্ঠাময় কাশেম স্যারের শোকাহত মুখ, দীপনের রক্তাক্ত লাশ, টুটুল, রনপদীপমের রক্তভেজা শরীর আর অস্ফুট গোঙানি,ফুচকা বিক্রেতা পরিবারের আর্তনাদ,১২ বছরের মেয়ে হারানো পরিবারের উৎকণ্ঠা,পুলিশ চেকপোস্ট এর নিরাপত্তা- সেখানে যারা দায়িত্বে থাকেন তাদের প্রস্ততি নিয়ে প্রথম আলোর রিপোর্ট প্রকাশের সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই আশুলিয়ায় আরো একজন পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা দেখে যারা আজ এসবকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করেন তাদের প্রতি আমার অভিযোগ দেওয়ার মত সাহস নাই।অপর দিকে গন মাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারছি হঠাৎ করে বিমান বন্দর ও কারাগার সমুহের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা আশংকা করছে সরকার, কিন্তু এই বিষয়ে ও তাদের নির্লিপ্ত বক্তব্য হচ্ছে এগুলো প্রচলিত ব্যাবস্থারই অংশ।

তবে স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক,পরিকল্পিত ও বিচ্ছিন্ন, এই শব্দ গুলোর অর্থ বোঝার মত বিত্তবান বুদ্ধি আমার বা আমার মতো আমজনতা মার্কা বাংলাদেশের কোটি মানুষের নেই বলে মনে হচ্ছে।

সামাজিক অবক্ষয় আজ সর্বগ্রাসী। সর্বক্ষেত্রে সামাজিক অস্থিরতা প্রতিদিনের জীবন যাপনকে অতিশয় দুর্বিষহ করে তুলছে। সমাজের কর্তা ব্যক্তিরা কখনও চান না সৎ সাহস নিয়ে কথা বলতে। যেখানে লাভ-লোকসানের ব্যাপার আছে সেখানেই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চান। আর যারা দুর্বল, যাদের সামাজিক ও গোষ্ঠীগতভাবে জোর কম তাদের উপর চান সমাজপতিরা শক্তি দেখাতে। অবক্ষয় এতটা গ্রাস করেছে যে, মানুষ বাড়িঘরে ও নিরাপদে থাকতে পারছে না। আইন আছে, কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ নেই। অন্যায়ের বিবেচনাবোধ যেন নির্বাসিত হয়েছে। সমাজে ক্রোধ, প্রতিহিংসা ও ক্ষোভ বেড়ে চলেছে।

যারা দায়িত্তপ্রাপ্তআছেন তারা সাদা কে সাদা কালো কে কালো বলুন, আমরা বাংলাদেশ এর সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আপনাদের সাথে ছিলাম, আছি, থাকবো।দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায়। কিন্তু স্বাধীন দেশে আমরা কতটা নিরাপদে আছি-এই প্রশ্নটি মুখ্য হয়ে উঠেছে।

একের পর এক ব্লগার হত্যার কারণ প্রশাসন এবং সরকারের নিরবতা

একবিংশ শতাব্দী যাকে বলা হছে ডিজিটাল যুগ,এই যুগ কে কেন্দ্র করে মানুষ অগ্রসর হচ্ছে নতুন এর দিকে।আর এই নতুন সময় চলছে ইন্টারনেট ভিত্তিক। ইন্টারনেট এ কোনো প্রকার কাজে শারীরিক ভাবে থাকার ও প্রয়োজন নেই, তাই এই মাধ্যমকে বলা হয়ে থাকে সেফ জোন। কিন্তু এখন এই সেফ জোন হচ্ছে মৃত্যুর প্রধান কারণ।গত কয়েক বছরে হয়েছে একাধিক ব্লগার হত্যা। এই ব্লগার হত্যার সব কারনই প্রায় একই ছিল।

ব্লগার ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনসহ ৫ ব্লগার খুন হয়েছেন চলতি বছরে এবং দুই বছরে প্রকাশ্যে ও গোপনে নয়জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে।হামলা হয়েছে বেশ কয়েকজনের ওপর। প্রতিটি ঘটনার পর মামলা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে একটি মামলার বিচারও শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত একাধিক মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। ব্লগারদের ওপর হামলা হচ্ছে কিন্তু বিচার হচ্ছে না। মূলত বিচারহীনতার কারণে একের পর এক মুক্তমনা ব্লগার খুন হচ্ছেন।

হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক বা টুইটারে হত্যাকারীরা হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাসও দিয়েছে। এসব স্ট্যাটাসে প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি অথবা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগ দেখানো হয়েছে।ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যে কয়েকজনকে আটক করা গেছে তাদের বেশিরভাগের সঙ্গে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।আড়াই বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ৭ জন মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক ও ব্লগার মুসলিম জঙ্গীদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন।ঘাতকচক্রও খুনের পর বীরদর্পে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়ও স্বীকার করেছে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটক করতে পারছে না। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ আসছে ভুক্তভোগী পরিবার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট এবং সাধারন সুশীল মানুষের কাছ থেকে।

ব্লগার খুনিরা যে বেপরোয়া, একের পর এক হত্যাকা- তারই বহিঃপ্রকাশ। একটি খুনের পর খুনিচক্র ধরা না পড়ায় তারা আরেকটি খুনের সাহস পাচ্ছে। খুনিদের ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মুক্তমত প্রকাশে মানুষের মধ্যে অনীহা সৃষ্টি হবে। রাজনীতিতে ধর্মের জোরালো প্রভাবের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। যে কারণে একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করা হলেও বিচারের বিষয়টি সরকারের দিক থেকে তেমন কোন গুরুত্ব পাচ্ছে না।

সারাদেশে একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটছে কিন্তু সরকার নির্বিকার, হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনছে না। এতে মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষদের উপর ক্রমান্বয়ে আক্রমন বাড়ছে যা হত্যাকারীদের মদদ দেওয়ার সামিল। সরকার যদি পূর্বে ব্লগার হত্যার সাথে জড়িত মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির বিচারের আওতায় এনে অপরাধীদের শাস্তি দিত তাহলে দেশে একের পর এক বর্বর হত্যাকান্ড ঘটতো না।

ব্লগার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি। আর বাংলাদেশে হত্যাকারীরা পার পেয়ে যায়- বৈশ্বিকভাবে দেশটি এভাবে চিহ্নিত হওয়াটা যথার্য। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষগুলো ব্লগারদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কয়েকজন ব্লগার নির্মমভাবে হত্যার শিকার হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে মামলাগুলো তদন্তও করছে না। এটা এখন সকলের জানা হয়ে গেছে খুব ভালো করেই। একের পর এক ব্লগার হত্যার মধ্য দিয়ে এ প্রজন্মের মেধাবীদের যে লাশের মিছিল তৈরি হয়েছে তা অচিরেই বন্ধ করার জন্য সরকারকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।দেশের প্রগতিশীল শিক্ষক, লেখক, ব্লগার হত্যার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তা দিন দিন ভয়ঙ্কর থেকে আরো ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিজ্ঞান ভিত্তিক মতামত, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রগঠনে নতুন প্রজন্মের পক্ষে যারাই লেখা লেখি করছে, তারাই লাশ হচ্ছে।

একটা সংগঠন, যার নাম ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’, তারা একের পর এক হত্যার কৃতিত্ব দাবি করছে৷।ব্লগারকে একইভাবে হত্যা করা হলেও ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এর জড়িত থাকার ‘সন্দেহ’ আর ‘ধারণা’ করা ছাড়া ঘটনা তদন্তে তেমন কোন সফলতাই দেখাতে পারেনি পুলিশ।

সন্ত্রাস কিংবা যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রেই সত্যনিষ্ঠ তদন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাতে প্রকৃত অপরাধীই যেন শাস্তি পায়। কিন্তু এর পরিবর্তে যদি অনুরাগ-বিরাগ কিংবা অন্য কোন বিষয় প্রভাব ফেলার সুযোগ পায়, তাহলে প্রকৃত অপরাধীর বদলে নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তির আওতায় চলে যেতে পারে।কারণ এখন রাজনৈতিক দলগুলোও একে অপরের দোষারুপে ব্যাস্ত।

প্রচলিত সমাজ এবং বিভিন্ন প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলো মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে কি বলে আসুন জেনে নিই

প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে।

এর তিনটি অংশ, ১মটি চারদিন স্থায়ী হয় (৪-৭ দিন) এবং একে মিনস্ট্রাল ফেজ, ২য়টি ১০দিন (৮-১০ দিন) একে প্রলিফারেটিভ ফেজ এবং ৩য়টি ১৪ দিন (১০-১৪ দিন) স্থায়ী হয় একে সেক্রেটরি ফেজ বলা হয়।

মিনস্ট্রাল ফেজ এই যোনি পথে রক্ত বের হয়। ৪-৭ দিন স্থায়ী এই রক্তপাতে ভেঙ্গে যাওয়া রক্তকনিকা ছাড়াও এর সাথে শ্বেত কনিকা, জরায়ুমুখের মিউকাস, জরায়ুর নিঃসৃত আবরনি, ব্যাকটেরিয়া, প্লাজমিন, প্রস্টাগ্লানডিন এবং অনিষিক্ত ডিম্বানু থেকে থাকে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের যৌথ ক্রিয়ার এই পর্বটি ঘটে।

পিরিয়ড নিয়ে শুধু এদেশে নয়, সারা পৃথিবার সমাজ ব্যবস্থাতেই অনেক রকম মিথ প্রচলিত। প্রাচীন রোমে, প্লিনি দ্য এল্ডার তাঁর ন্যাচারাল হিস্ট্রি-তে লিখেছিলেন যেসব কুকুর পিরিয়ডের রক্তের স্বাদ পেয়েছে, তারা জলাতঙ্কগ্রস্ত এবং উন্মাদ হয়ে যেত, মাদী ঘোড়ার গর্ভপাত হয়ে যেত এবং শস্যক্ষেতের কাছে ঋতুমতী নারী গেলে নাকি সেই ক্ষেতের সব ফসল নষ্ট হয়ে যেত! ইউরোপে আবার বিশ্বাস করা হতো, ঋতুমতী নারীরা জ্যাম ছুঁলে তা নষ্ট হয়ে যাবে অথবা ওয়াইনে হাত দিলে তা ভিনিগার হয়ে যাবে!

এসময় কোনো মেয়ে গাছে উঠলে সে গাছে ফল ধরে না। এসময় রান্নাঘরে ঢুকতে মানা। পুজার ঘরে ঢুকতে মানা, মন্দিরে ঢুকতে মানা, গির্জায় ঢুকতে মানা, নামাজ পড়তে মানা, রোজা রাখা মানা, ধর্ম গ্রন্থ ধরতে মানা। কারণ একটাই তোমার পিরিয়ড চলছে, তুমি অশুদ্ধ, অপবিত্র! অথচ পিরিয়ড নামক যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটিকে আজও মানুষ অশুদ্ধ, অপরিচ্ছন্ন মনে করেন, তার কারণেই কিন্তু টিকে আছে এই মানবসভ্যতা। রেনেসাঁ যুগে নারীর ঋতুস্রাবের রক্তের প্রতি মানুষের ঘৃণা এবং ভয় এতো বেশি ছিলো যে একে বিষ বলে ধারণা করা হতো। বলা হতো এই বিষ থেকে তৈরি হয় বিষাক্ত বাষ্প এবং তা নারীর মাঝে হিস্টেরিয়ার উদ্রেক করে। বিংশ শতাব্দীতে এসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এখনো পর্যন্ত ইন্ডিয়ার কিছু জায়গায় ঋতুস্রাবের প্রতি আছে ভীষণ ট্যাবু। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে কোনো নারী রান্না করলে সেই খাবার খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় এমনও নিয়ম আছে যে এই সময়টা নারীকে কাটাতে হবে গোয়ালঘরে।এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে নানা কথা।তবে গ্রন্থ গুলোর একটা কমন তসবি হচ্ছে পিরিয়ড চলা কালীন মেয়ে অপবিত্র থাকে এবং সেই সময় তারে দিয়ে কিছু করা বা ধর্মীয় কোন কাজ করানো যাবে না।এই শতাব্দীতে একটি ভয়াবহ কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে,নারীর পিরিয়ড চলাকালীন সময় যদি কোন পুরুষ ঐ নারীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হয় তাহলে সেই পুরুষের লিঙ্গ ছোট হয়ে যাবে।অথচ বিজ্ঞান সম্মত ভাবে কথাটা কেবল উদ্ভটই হিসাবে প্রমানিত হয়।আজ থেকে দু-হাজার বছর আগে, যাকে বলা হতো Biblical Times, এ ঋতু চলাকালীন সময়ে সেই নারীকে এতোটাই অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য মনে করা হতো যে এই পুরো সময়টা তাকে পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হবে।

পিরিয়ড নিয়ে ধর্মও কম কুসংস্কারের জন্ম দেয়নি। ছোটবেলায় অধিকাংশ মেয়েকে বোঝানো হয় পিরিয়ড পাপের ফল, তা ওই ধর্ম থেকেই এসেছে। অ্যাডামকে যখন ইভ নিষিদ্ধ গন্ধম খেতে প্ররোচিত করে এবং খাওয়ায় ঈশ্বর তখন রাগান্বিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে গন্ধমের নিষিদ্ধ রসটাকেই ইভের পাপের স্মারকস্বরুপ তার শরীরে দেন, যাতে বংশ পরম্পরায় এ পাপের কথা তারা স্মরণ রাখতে পারে। ফলে ধর্মগ্রন্থে পিরিয়ডকে অপবিত্র শুধু তাই নয় পিরিয়ডের সময় নারীর পুরো শরীরটাকেই অপবিত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পিরিয়ডের সময় স্ত্রী সঙ্গম থেকে বিরত থাকার জন্য কুরআনে নির্দেশ করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে তো পিরিয়ডের সময় স্ত্রীকে আলাদা ঘরে এক প্রকার বন্দী করে রাখার কথা বলা হয়েছে।

 সনাতন ধর্ম পিরিয়ড বিষয়ে কি নির্দেশ দিয়েছে? উজ্জয়িনীর কামশাস্ত্রের “শিব পার্বতীর কথোপকথন” অধ্যায় থেকে ‘ঋতুকালে নারীর কর্তব্য’ আলোচনা করা হলোঃ

যেদিন প্রথম রজঃদর্শন হবে সেদিন থেকে তিন রাত্রি পর্যন্ত রমণী সবকিছু পরিত্যাগ করে ঘরের মধ্যে সর্বদা আবদ্ধ থাকবে। যাতে অন্য কেউ তাকে না দেখতে পায়। স্নান করবে না, অলংকার পরবে না। এক বস্ত্র পরিধান করবে। দীনাভাবে মুখ নিচু করে বসে থাকবে। কারো সাথে কোন কথা বলবে না। নিজের হাত, পা ও চোখ থাকবে স্থির। দিনের শেষে মাটির হাড়িতে তৈরি করা ভাত সে খাবে এবং ভূমিতে সাধারণভাবে শয্যা করে নিদ্রা যাবে। এইভাবে তিনদিন কেটে যাওয়ার পর চতুর্থ দিনে সূর্য উদিত হওয়ার পর স্নান সেরে কাঁচা কাপড় পড়ে সে শুদ্ধা হবে।

শাস্ত্রে লেখা আছে, যে নারী রজঃস্বলা হবে, সে নারী প্রথম তিন দিন মধু, মাংস ভোজন, গন্ধমাল্যদি ধারণ, দিবাভাগে শয়ন, তামাক সেবন, মুখ শোধন, গন্ধদ্রব্য ব্যবহার, বেশভূষা ধারণ, রোদন, আরোহণ, অগ্নিস্পর্শন – এসব কাজ মোটেও করবে না। কোন কোন শাস্ত্রকার বলেছেন, নারী ঋতুমতী হলে প্রথম তিনদিন চোখে কাজল পরবে না। স্নান, স্থানান্তরে গমন, দন্তধাবন ও গ্রহনক্ষত্রাদির দর্শন করবে না।

মহাদেব বলেন, হে প্রিয়, বর্তমানে শাস্ত্রে যেসব বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে তা সংক্ষেপে তোমাকে বর্ণনা করছি। ঋতুকাল থেকে ষোড়শ দিনের মধ্যে যুগ্ম দিনে নারী গমন করা শ্রেয়। কিন্তু দ্বিতীয় ও চতুর্থ দিনে এটি নিষিদ্ধ।

ঋতুমতী নারী জাতি ৩ দিন অপবিত্র বলে গণ্য হয়। এই সময় তারা কি কি বিধিনিষেধ মেনে চলবে তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করব এখন-রাত্রির প্রথম ও শেষ প্রহরে নারী গমন করা সমীচীন নয়। ঐ দুই প্রহরে শাস্ত্রচর্চা করে কাটানো উচিৎ। এছাড়া বাকি দুটি প্রহরে স্ত্রী সঙ্গ লাভ করলে মোক্ষপ্রাপ্তি ঘটে। এই নিয়মের অন্যথা করলে নরক প্রাপ্তি ঘটে। সেই ব্যাক্তি পশুযোনি লাভ করে। পিতামাতার সহবাসের দোষে তাদের সন্তানাদি দুঃখ কষ্ট লাভ করে।

ঋতুর প্রথম দিন সহবাসের ফলে সন্তান জন্মালে সেই সন্তান দীর্ঘায়ু হয় না। দ্বিতীয় দিনে সহবাসের ফলে সন্তানের জন্ম হলে সেই সন্তান প্রসবাগারেই মারা যায়। তৃতীয় দিনের সহবাসের ফলে বিকলাঙ্গ বা স্বল্পায়ু সন্তান জন্মগ্রহণ করতে পারে। শরীরতত্ত্ব বিষয়ে মহামতি সুশ্রুতের এইসব উপদেশ অত্যান্ত মূল্যবান। মহর্ষি চরক প্রভৃতি আয়ুর্বেদাচার্যগণও এই ধরণের উপদেশ দিয়েছেন।

ঋতুমতী নারীর তিনদিন গায়ে তেল মাখা, নখ কাঁটা, কান্নাকাটি করা, চোখে কাজল দেয়া, দিবা নিদ্রা, স্নান, সুগন্ধি দ্রব্য গায়ে লেপন, অট্টহাসি, অতিরিক্ত কথাবার্তা, কেশবিন্যাস, বিকট আওয়াজ শোনা, অধিক বায়ু সেবন এবং অতিরিক্ত কাজ করা নিষিদ্ধ। কেননা ঐ সব কর্মের ফলে তার রক্ত দুষিত হয়ে নানারকম ব্যধির সঞ্চার হতে পারে।

ইসলামের দৃষ্টিতে এসময় যৌন মিলন হারাম। ইসলামের দৃষ্টিতে মাসিকের সময় যৌন মিলনঃ

পবিত্র কুরআ’ন এ আল্লাহ বলেছেন, “লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারা/আয়াত-২২২)

কিন্তু নিকটবর্তী হয়ো না’র অর্থ হল সঙ্গমের জন্য তাঁদের কাছে যেও না। অর্থাৎ যোনিপথে সঙ্গম হারাম। পায়খানারদ্বারেও সঙ্গম হারাম। আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বলেন,

“আল্লাহ আযযা অজাল্ল (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষের মলদ্বারে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে।” (তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, সহিহুল জামে ৭৮০১ নং)

তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি কোন ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন গনকের কাছে উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।” (অর্থাৎ কুরআনকেই সে অবিশ্বাস অ অমান্য করে। কারণ, কুরআনে এক সব কুকর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।) (আহমাদ ২/৪০৮, ৪৭৬, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)

সুতরাং স্বামীর জন্য জায়েয হবে না স্ত্রী সহবাস করা যতক্ষন না স্ত্রী হায়েয থেকে মুক্ত হয়ে গোসল করে পবিত্র হয়।

ঋতুচলাকালীন সময়ে নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা স্থাপন করা হয় বাইবেলের লেভিটিকাস বইতে।

নারীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়েই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত ছিল ভয়াবহ সব কুসংস্কার যা এখনো বজায় আছে বহাল তবিয়তে। দেখুন কালের সাথে সাথে কী করে বদলেছে এসব কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। বদলে গেলেও মানুষের মধ্য থেকে পিরিয়ড নিয়ে ভয় ও ঘৃণা দূর হয়নি মোটেই।তার মধ্যে রয়েছে আবার বিভিন্ন গ্রন্থের ভয়াবহ ছোবল।আপনার আশেপাশে এমনকি আপনার পরিবারের পুরুষ এমনকি নারীদের মাঝেও রয়েছে এমনই সব কুসংস্কার।

ভালোবাসি ভাবনা



তোকে নিয়ে নতুন একটা স্বপ্ন দেখালাম
জানি না বাস্তব হবে কি না...!!
তবে স্বপ্ন দেখাতো দোষের কিছু না
তাই হয়তো এতো গভীরে চলে গেলাম !!

ভালোবাসা তোমাকে মুক্তি দিলাম
শঙ্খ গাংচিলের মত মুক্ত আকাশে
আমি ছোট্ট খাচায় বন্দী নির্বাক চোখে
ভালোবাসা আমি দেখব তোমায়।

সময় পেলে এসো আমার ছোট্ট খাচায়
তোমাকে আলিঙ্গন করব,আদর করব
সোহাগ করে বলব হৃদয়ের যত না বলা কথা।

ভালোবাসা তোমার জন্য সুপ্রভাত
আমার জন্য তিমির রাত।
ভালোবাসা তোমার জন্য জোছনা
আমার জন্য অমাবস্যার পূর্নিমা।
ভালোবাসা তুমি শান্ত শীতল পাটি
আমি উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরি।
ভালোবাসা তোমার জন্য শান্ত সমুদ্র
আমার জন্য উত্তাল ঢেউ।

তোমার সাথে কতই না অমিল
তবু তোমায় ভালোবাসি।
ইচ্ছে করে তোমায় আলিঙ্গন করি
ভালোবাসা তোমাকে পেতে ইচ্ছা করে
ছুঁতে ইচ্ছা করে কাছে পেতে ইচ্ছা করে।

এটাই কি আমার অপরাধ ভালোবাসা....!!
তোমাকে ভালোবেসে না হয় হলাম অপরাধী

তবু তোমায় যে বড্ড ভালোবাসি ভাবনা তোমায়।।