শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

একের পর এক ব্লগার হত্যার কারণ প্রশাসন এবং সরকারের নিরবতা

একবিংশ শতাব্দী যাকে বলা হছে ডিজিটাল যুগ,এই যুগ কে কেন্দ্র করে মানুষ অগ্রসর হচ্ছে নতুন এর দিকে।আর এই নতুন সময় চলছে ইন্টারনেট ভিত্তিক। ইন্টারনেট এ কোনো প্রকার কাজে শারীরিক ভাবে থাকার ও প্রয়োজন নেই, তাই এই মাধ্যমকে বলা হয়ে থাকে সেফ জোন। কিন্তু এখন এই সেফ জোন হচ্ছে মৃত্যুর প্রধান কারণ।গত কয়েক বছরে হয়েছে একাধিক ব্লগার হত্যা। এই ব্লগার হত্যার সব কারনই প্রায় একই ছিল।

ব্লগার ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনসহ ৫ ব্লগার খুন হয়েছেন চলতি বছরে এবং দুই বছরে প্রকাশ্যে ও গোপনে নয়জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে।হামলা হয়েছে বেশ কয়েকজনের ওপর। প্রতিটি ঘটনার পর মামলা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে একটি মামলার বিচারও শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত একাধিক মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। ব্লগারদের ওপর হামলা হচ্ছে কিন্তু বিচার হচ্ছে না। মূলত বিচারহীনতার কারণে একের পর এক মুক্তমনা ব্লগার খুন হচ্ছেন।

হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক বা টুইটারে হত্যাকারীরা হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাসও দিয়েছে। এসব স্ট্যাটাসে প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি অথবা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগ দেখানো হয়েছে।ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যে কয়েকজনকে আটক করা গেছে তাদের বেশিরভাগের সঙ্গে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।আড়াই বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ৭ জন মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক ও ব্লগার মুসলিম জঙ্গীদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন।ঘাতকচক্রও খুনের পর বীরদর্পে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়ও স্বীকার করেছে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটক করতে পারছে না। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ আসছে ভুক্তভোগী পরিবার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট এবং সাধারন সুশীল মানুষের কাছ থেকে।

ব্লগার খুনিরা যে বেপরোয়া, একের পর এক হত্যাকা- তারই বহিঃপ্রকাশ। একটি খুনের পর খুনিচক্র ধরা না পড়ায় তারা আরেকটি খুনের সাহস পাচ্ছে। খুনিদের ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মুক্তমত প্রকাশে মানুষের মধ্যে অনীহা সৃষ্টি হবে। রাজনীতিতে ধর্মের জোরালো প্রভাবের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। যে কারণে একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করা হলেও বিচারের বিষয়টি সরকারের দিক থেকে তেমন কোন গুরুত্ব পাচ্ছে না।

সারাদেশে একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটছে কিন্তু সরকার নির্বিকার, হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনছে না। এতে মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষদের উপর ক্রমান্বয়ে আক্রমন বাড়ছে যা হত্যাকারীদের মদদ দেওয়ার সামিল। সরকার যদি পূর্বে ব্লগার হত্যার সাথে জড়িত মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির বিচারের আওতায় এনে অপরাধীদের শাস্তি দিত তাহলে দেশে একের পর এক বর্বর হত্যাকান্ড ঘটতো না।

ব্লগার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি। আর বাংলাদেশে হত্যাকারীরা পার পেয়ে যায়- বৈশ্বিকভাবে দেশটি এভাবে চিহ্নিত হওয়াটা যথার্য। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষগুলো ব্লগারদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কয়েকজন ব্লগার নির্মমভাবে হত্যার শিকার হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে মামলাগুলো তদন্তও করছে না। এটা এখন সকলের জানা হয়ে গেছে খুব ভালো করেই। একের পর এক ব্লগার হত্যার মধ্য দিয়ে এ প্রজন্মের মেধাবীদের যে লাশের মিছিল তৈরি হয়েছে তা অচিরেই বন্ধ করার জন্য সরকারকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।দেশের প্রগতিশীল শিক্ষক, লেখক, ব্লগার হত্যার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তা দিন দিন ভয়ঙ্কর থেকে আরো ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিজ্ঞান ভিত্তিক মতামত, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রগঠনে নতুন প্রজন্মের পক্ষে যারাই লেখা লেখি করছে, তারাই লাশ হচ্ছে।

একটা সংগঠন, যার নাম ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’, তারা একের পর এক হত্যার কৃতিত্ব দাবি করছে৷।ব্লগারকে একইভাবে হত্যা করা হলেও ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এর জড়িত থাকার ‘সন্দেহ’ আর ‘ধারণা’ করা ছাড়া ঘটনা তদন্তে তেমন কোন সফলতাই দেখাতে পারেনি পুলিশ।

সন্ত্রাস কিংবা যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রেই সত্যনিষ্ঠ তদন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাতে প্রকৃত অপরাধীই যেন শাস্তি পায়। কিন্তু এর পরিবর্তে যদি অনুরাগ-বিরাগ কিংবা অন্য কোন বিষয় প্রভাব ফেলার সুযোগ পায়, তাহলে প্রকৃত অপরাধীর বদলে নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তির আওতায় চলে যেতে পারে।কারণ এখন রাজনৈতিক দলগুলোও একে অপরের দোষারুপে ব্যাস্ত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন