শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭

দেশের সকল ভাস্কর্য অপসারন এবং শরিয়া আইন চাই

মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এবং ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের চাপের মুখে পরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গত রাত ২৫ মে ন্যায় বিচারে প্রতীক গ্রীক দেবী থেমিসের অনুকরনে তৈরী করা ভাস্কর্য মৃণাল হকের উপস্থিতে সরানো হয়।মৃণাল হকই এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন।সেই থেকে চলছিলো প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক লোকদের মাঝে নানা আলোচনা এবং সমালোচনা।

আবার এরই মধ্যে,আজ শুক্রবার ২৬ মে দেশে স্থাপিত সব ‘মূর্তি’ অপসারণ করার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। শুক্রবার দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক শুকরিয়া আদায় মিছিলে এ দাবি জানান ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী।

এনিয়ে এখন আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে মৌলবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং সেই সাথে চিন্তিত বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল থেকে অসাম্প্রদায়িক সাধারণ মানুষদের মাঝেও মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং ক্ষমতাশীল দল আওয়ামী-লীগকে নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা এবং চুলছেড়া বিশ্লেষন ভবিষ্যৎ’র কথা চিন্তা করে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে থাকা ভাস্কর্য যদি ধর্মানুভুতিতে আঘাত করে তাহলে দেশের সকল ভাস্কর্য অপসারনের দাবিতেও কোন ভুল নাই।এখন আমিও চাই,দেশের সকল ভাস্কর্য অপসারণ করে ধর্মানুভূতি থেকে আঘাত হানা বন্ধ করা হোক।একটা দেশের সাথে ভাস্কর্য মূর্তির কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না।দেশতো দেশই,সেখানে ভাস্কর্য মূর্তি স্থাপন করা সেটা একদিকে যেমন বিশেষ ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের দেশে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানাও অন্যায় এবং জোর করে অবিচার করার সমতুল্য।ন্যায় বিচার যদি মনে না থাকে,তাহলে ভাস্কর্যকে ন্যায় বিচারের প্রতীক ভাবাও এক ধরণের ভণ্ডামি।কারণ দেশে এখন ন্যায় বিচার বলতে যা আছে তা কেবল স্বজনপ্রিতী এবং ক্ষমতার অপব্যবহার।

সেই সাথে এই দাবিও জানাই,সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের দেশে গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাও ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক।সেহেতু খৎনা করা নামেমাত্র অসাম্প্রদায়িক ধ্বজভঙ্গ গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দেশ থাকার থেকে শরিয়া আইন থাকাই ভালো।কারণ এদেশ কখনো অসাম্প্রদায়িক না যেমন,তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের দেশে গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থাকাও অন্যায়।সেহেতু অতিশীঘ্রই শরীয়া আইন প্রতিষ্ঠত করার জন্য আন্দোলনের ডাক দেওয়া হোক এবং নারীনেত্রীত্ব হারাম বলে ফতোয়া জারি করা হোক।আমিও সেই আন্দোলনের সাথেই থাকবো একজন অবিশ্বাসী এবং জন্মসূত্রে বিধর্মী হওয়া সত্বেও।কারণ,অবশ্যই আমাদের মত মোট জনসংখ্যার ৭-৮% এর জন্য ৯২-৯৩% সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের সাথে ধর্মীয় সাংঘর্ষিক এমন কোন অপ্রীতিকর কিছু না হোক তা সংখ্যালঘুদের অবশ্যই বুঝা উচিত।আমার একার জন্য পাশের ১০ জন লোকের অসুবিধা হোক বা তারা সুবিধা বঞ্চিত হোক তা অবশ্যই আমি চাইবো না।এবং এটাও স্বাভাবিক যে,একজন মানুষের দিক চেয়ে ১০ জন মানুষের মনের বিরুদ্ধে কোন কাজ হচ্ছে তা মেনে নেওয়াও অস্বাভাবিক।সেহেতু আমি সংখ্যাগরিষ্ঠদের লোকের কথা ভেবেই বলবো,এদেশে শরীয়া আইন চালু করা হোক এবং সকল ধরনের বিশেষ ধর্মের ধর্মীয় সাংঘর্ষিক হয় এমন ধরনের সকল প্রচার বন্ধ করা হোক কঠোর ভাবে।

আর হ্যা,সকল সংখ্যালঘু অবিশ্বাসী এবং ভিন্ন ধর্মালম্বীদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো,আপনার আমার জন্য গুটিকয়েক লোকের জন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোন সমস্যা বা কোন ধরনের অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কোন কিছু অবশ্যই একজন বিবেকবান মানুষ করতে পারে না।সেহেতু আমরা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীরা এই কথা ভেবে এবং চিন্তা করে অবশ্যই বৃহত্তর গোষ্ঠীর জন্য আমাদের ত্যাগ স্বীকার করা উচিত।সেই সাথে শরিয়া আইন মেনে জিজিয়া কর দিয়েই থাকা উচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষ ধর্মের লোকদের দেশে।অন্যথায় এদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান।তার থেকে বড় কথা এই ধ্বজভঙ্গ খৎনা করা নামেমাত্র অসাম্প্রাদায়িক গনতান্ত্রিক দেশের থেকে শরিয়া আইনের বেশ কিছু সুবিধা এবং সুনির্দিষ্ট বিধান আছে।যা আপনাকে মেনে চলতে হবে অন্যথায় শরিয়া আইনে আপনার শাস্তি হবে।কিন্তু এই ধ্বজভঙ্গ খৎনা করা নামেমাত্র অসাম্প্রাদায়িক গনতান্ত্রিক দেশে সেরকম কিছু নাই কিন্তু বাস্তবিত হচ্ছে শরিয়া আইনের অনুকরনে।যদিও সেটা হাইলেও না আবার জাইলেও না।কারণ আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলছে বিশেষ ধর্মের লোকদের চাওয়া এবং আন্দোলনের উপর নির্ভর করে আবার সাংবিধানের উপর নির্ভর করেও।মানে সাপও যেন না মরে আবার লাঠিও যেন না ভাংগে।কিন্তু সাধারণ অসাম্প্রদায়িক এবং প্রগতিশীলরা পরছে চিপায়।কারণ তারা চুপ করেও থাকতে পারে না আবার কথা বললেও বিপদ।মানে একজন মানুষের দুই পা দুই নৌকায় রাখলে যা হয়।সেই হিসাব বিবেচনা করেই,আমাদের সকলের শরিয়া আইন চাওয়া উচিত এবং ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের সাথে সমর্থন দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।যেমনটা করছে,অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীলদের আস্থা বৃহত্তর রাজনৈতিক দল আওয়ামী-লীগ।

শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য

মূর্তি বলতে দেবতার প্রতিমাকে বোঝায়। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “অবয়ব”। মূর্তি দেবতার প্রতিনিধি। সাধারণত পাথর, কাঠ, ধাতু অথবা মাটি দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করা হয়।হিন্দুরা মূর্তির মাধ্যমে দেবতার পূজা করে থাকেন। মূর্তিতে দেবতার আবাহন ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পরই হিন্দুরা সেই মূর্তিকে পূজার যোগ্য মনে করেন। ধর্মীয় সংস্কার বা শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট দেবতার মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে।অর্থাৎ প্রতিমা হল মানুষ যার প্রতিকীকে সামনে রেখে আরাধনা উপাসনা করে, ইহকালে-পরকালে মঙ্গল চায়, ধর্মীয় বিধি মেনে পূজা করে ইত্যাদি।

ভাস্কর্য (ইংরেজি ভাষায়: Sculpture) ত্রি-মাত্রিক শিল্পকর্মকে ভাস্কর্য বলে।অর্থাৎ, জ্যামিতিশাস্ত্রের ঘণকের ন্যায় ভাস্কর্যকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা সহ ত্রি-মাত্রিক হতে হবে। ভারত, বাংলাদেশ এবং চীনের ন্যায় বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন ধরনের, বহুমূখী আকৃতির ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়। রেনেসাঁ এবং আধুনিককালে এটি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। পুতুল, মুখোশ, মাটির জিনিসপত্র ভাস্কর্যের উদাহরণ। কিন্তু প্রায় চারশত বছর পূর্বে তুরস্কে ইসলামপন্থী দলের বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে সেখানে ভাস্কর্য শিল্পকলার তেমন উন্মেষ ঘটেনি।

মূর্তি আর ভাস্কর্যের মূল পার্থক্য হচ্ছে, ভাস্কর্যের সামনে উপাসনা কিংবা পূজা করা যায় না কেবল মাত্র সেটাকে একটা প্রতিকী হিসাবেই মেনে টিকেয়ে রাখা হয় এবং কোন ধর্মের কোন ঈশ্বরের প্রতি ভাস্কর্য নিবেদিত নয়।অন্যদিকে,মূর্তি কেবলমাত্র প্রতিকী না এটাকে বিধি অনুযায়ী পূজাও করা হয়।

ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে কোর’আনে কোথাও নিষেধ নাই,যা আছে তা মূর্তি পূজার বিপক্ষে এবং মূর্তি পূজা শেরক।তাই ভাস্কর্য কে মূর্তি হিসাবে গুলিয়ে শরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলার কোন মানেই হয় না এবং অবৈধ ফতোয়া দেওয়ার কোন যুক্তি নেই। একটি সরল সত্য হলো, ইসলামের বৈধ-অবৈধ নির্দ্ধারণের বেলায় মানদণ্ড হচ্ছে কোর’আন।অথচ আজ আল্লামা ,পীর আরো ইসলামিক টাইটেল লেবাস ধারী ধর্ম ব্যবসায়ীরাই অন্যায় ভাবে ফতোয়া জারি করে।আর তাতে সাধারন ইসলাম ধর্মের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তাদের কথা সায় দিয়ে মাথায় তুলে রাখে নিজেরা নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে না ঘেটে।আর যখনই কেও এসব ভুল ব্যাখ্যার প্রতিবাদ করে সত্যতা যাচাই করে বলবে তখনই তাকে নাস্তিক,ইহুদীদের পেইড এজেন্ট,ইসলাম বিদ্বেষী ইত্যাদি বলে ট্যাগ দেওয়া শুরু করবে এবং তার কল্লার মূল্য নির্ধারণ করে চাপাতি নিয়ে পিছন থেকে আঘাত করে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে না।আসল কথা এবং অপ্রিয় সত্য হলো বৃহত্তর মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী ধর্ম ইজারা দিয়ে রাখছে লেবাসধারী ধর্ম ব্যবসায়ীদের মগজের নিকট।আজ আমি বিধর্মী/নাস্তিক/মূরতাদ হয়েও লিখতে হচ্ছে সাধারন ইসলাম ধর্মের মানুষের পক্ষ নিয়ে।এর থেকে বড় ব্যার্থতা আপনাদের জন্য আর কিছু হতে পারেনা!

যাই হোক,লেবাস ধারী ধর্ম ব্যবসায়ীরা যেভাবে সাধারন মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বোকা বানিয়ে নিজেদের সার্থ সফল করে এবং যে রেফারেন্স ব্যবহার করে সেই দিক থেকেই আগে প্রমান হোক করা হোক মূর্তি এবং ভাস্কর্য একই না ভিন্ন।কিন্তু সেই কথায় আসতে হলে নবীর মক্কা বিজয় থেকেই আলোচনা আসতে হবে বলে আমার ধারনা।কারন মক্কা বিজয়ের পর থেকে মূলত মূর্তি বিরোধীতা পাওয়া যায় কোরআন এবং হাদীস থেকে।তাই নিজের ব্যক্তিগত মতামত দীর্ঘায়িত না করে মূল প্রসঙ্গে চলে আসে এবার,-

হুবাল মক্কা নগরীতে পূজিত দেবতা ছিলেন। কাবা শরীফের হুবালের একটি ছবিকে পূজা করা হতো। কারেন আর্মস্ট্রংয়ের মতানুসারে, উপাসনাগৃহটি হুবালের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ছিলো এবং কাবা শরীফে রক্ষিত ৩৬০ টি মূর্তির মধ্যে হুবালকে প্রধান দেবতা হিসেবে পূজা করা হতো।

হুবালের উপাসনা এবং রক্ষনাবেক্ষণের ভার ছিলো মক্কার কুরাইশ বংশের উপর্। কাবা ঘরের দেয়ালে যে কাল পাথর আছে , যার নাম হজরে আসওয়াদ , সেটাকে প্রাক ইসলামী যুগ থেকে কুরাইশরা অতি পবিত্র জ্ঞান করত। কাবা ঘরে যে ৩৬০ টা মুর্তি ছিল , সেগুলো ছিল কুরাইশদের দেব দেবী।তাদের মধ্যে অন্যতম আরো ৩টা বেদবতার নাম পাওয়া যায় যা,কোরানেও উল্লেখ রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান দেবী ছিল তিনটা – লাত, উজ্জা আর মানাত।

# তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে। (সূরা আন নাজম-৫৩ঃ১৯)

# এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? (সূরা আন নাজম-৫৩ঃ২০)

কুরাইশ ও অন্যান্য প্যাগানরা যখন কাবা ঘরে আসত , প্রথমেই তারা কাবা ঘরকে ঘিরে সাতটা পাক খেত, তারপর কাল পাথরকে চুম্বন করত। তারা বিশ্বাস করত , কাল পাথরকে চুম্বন করলে তাদের সব পাপ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। অর্থাৎ কুরাইশদের কাছে উক্ত কাল পাথর ছিল তাদের ঈশ্বরের মত, যে আসলে কাল পাথরের অবয়বে কাবায় অবস্থান করত।

৬২৪ খিস্টাব্দে বদরের যুদ্ধে মূর্তিপূজারীগণ মুহাম্মদ (সঃ) এর অনুসারী দের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ৬৩০ খিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মদ (সঃ) কাবাঘরের রক্ষিত হুবাল সহ ৩৬০টি মূর্তি সরিয়ে ফেলেন।কারণ,এই মূর্তিগুলিকে তারা দেবতার আসনে বসিয়েছিল এবং এই বিশ্বাস স্থাপন করেছিল যে, এই মূর্তিগুলি তাদেরকে স্রষ্টার সান্নিধ্য এনে দেবে, স্রষ্টার কাছে সুপারিশ করবে এবং ভাগ্য বদলে দেবে তাদের বিশ্বাস ছিলো।

আচ্ছা এবার দেখা যাক,হাদিস কোরআনে এসম্পর্কে কি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে,

অতঃপর তিনি মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন এবং হাতের মাথা বাঁকানো লাঠি দ্বারা হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করেন। অতঃপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন।[2] এ সময় কা‘বাগৃহের ভিতরে ও বাইরে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাতের লাঠি দ্বারা এগুলি ভাঙতে থাকেন এবং কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়তে থাকেন। وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوْقًا ‘তুমি বল, হক এসে গেছে, বাতিল দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই বাতিল দূরীভূত হয়েই থাকে’ (বনু ইসরাঈল ১৭/৮১)। তিনি আরও পড়েন, قُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ وَمَا يُعِيْدُ ‘তুমি বল হক এসে গেছে এবং বাতিল আর না শুরু হবে, না ফিরে আসবে’ (সাবা ৩৪/৪৯)। অর্থাৎ সত্যের মুকাবিলায় মিথ্যা এমনভাবে পর্যুদস্ত হয় যে, তা কোন বিষয়ের সূচনা বা পুনরাবৃত্তির যোগ্য থাকে না।’ (বুখারী হা/৪২৮৭)

ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা অনুযায়ী অতঃপর তিনি ওছমান বিন ত্বালহাকে ডেকে তাকে ভিতর থেকে সমস্ত মূর্তি-প্রতিকৃতি বের করার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি তার মধ্যে ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর দু’টি প্রতিকৃতি দেখেন। যাদের হাতে ভাগ্য নির্ধারণী তীর দেখে তিনি বলে ওঠেন, قَاتَلَهُمُ اللهُ لَقَدْ عَلِمُوا مَا اسْتَقْسَمَا بِهَا قَطُّ ‘মুশরিকদের আল্লাহ ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম! তারা জানে যে, তাঁরা কখনোই এ ধরনের ভাগ্যতীর ব্যবহার করেননি’। তিনি বলেন,مَا كانَ إِبْراهِيمُ يَهُودِيًّا وَلا نَصْرانِيًّا، وَلكِنْ كانَ حَنِيفاً مُسْلِماً، وَما كانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ‘ইবরাহীম কখনো ইহূদী বা নাছারা ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’ (আলে ইমরান ৩/৬৭)। ইবনু আববাসের অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, সেখানে মারিয়ামের ছবিও ছিল (বুখারী হা/৩৩৫১)। এভাবে সমস্ত ছবি-মূর্তি দূর হওয়ার পর তিনি কা‘বাগৃহে প্রবেশ করেন ও ঘরের চারিদিকে তাকবীর দেন। (বুখারী হা/৪২৮৮)

আচ্ছা এখন দেখা যাক,নবী মুহাম্মদ কেন মূর্তিগুলা ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছিলো তা কোরআনে স্পষ্ট করেই বলা আছে।

# ‘স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বললেন, তুমি কি প্রতিমা সমূহকে উপাস্য মনে কর? আমি দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি ও তোমার সম্প্রদায় স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছ।’ (আন‘আম-৬/৭৪)

# ‘তুমি এই কিতাবে ইবরাহীমের কথা বর্ণনা কর। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও নবী’। ‘যখন তিনি তার পিতাকে বললেন, হে আমার পিতা! তুমি তার পূজা কেন কর, যে শোনে না, দেখে না এবং তোমার কোন উপকারে আসে না?। ‘হে আমার পিতা! আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে, যা তোমার কাছে আসেনি। অতএব তুমি আমার অনুসরণ কর। আমি তোমাকে সরল পথ দেখাব’। ‘হে আমার পিতা! শয়তানের পূজা করো না। নিশ্চয়ই শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য’। ‘হে আমার পিতা! আমি আশংকা করছি যে, দয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর তুমি শয়তানের বন্ধু হয়ে যাবে।’ (মারিয়াম-১৯/৪১-৪৫)

# ‘তোমার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক! আমি আমার পালনকর্তার নিকটে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয়ই তিনি আমার প্রতি মেহেরবান’। ‘আমি পরিত্যাগ করছি তোমাদেরকে এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের তোমরা পূজা কর তাদেরকে। আমি আমার পালনকর্তাকে আহবান করব। আশা করি আমার পালনকর্তাকে আহবান করে আমি বঞ্চিত হব না।’ (মারিয়াম ১৯/৪৭-৪৮)

# ’ ইবরাহীম স্বীয় পিতা ও সম্প্রদায়কে বলল, ‘এই মূর্তিগুলি কী যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ’? ‘তারা বলল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এরূপ পূজা করতে দেখেছি’।‘সে বলল, তোমরা প্রকাশ্য গুমরাহীতে লিপ্ত আছ এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও’ । ‘তারা বলল, তুমি কি আমাদের কাছে সত্যসহ এসেছ, না কেবল কৌতুক করছ’? ‘সে বলল, না। তিনিই তোমাদের পালনকর্তা, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং আমি এ বিষয়ে তোমাদের উপর অন্যতম সাক্ষ্যদাতা’। ‘আল্লাহর কসম! যখন তোমরা ফিরে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা কিছু করে ফেলব।’ (আম্বিয়া-২১/৫২-৫৭)

# ‘এটা শ্রবনযোগ্য।আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্য উত্তম।উল্লেখিত ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া তোমাদের জন্য চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে।সুতরাং তোমরা মূর্তিদের থেকে বেচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক।‘ (হাজ্জ্ব-২২/৩০)

# ‘আর তাদেরকে ইবরাহীমের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন’। ‘যখন সে স্বীয় পিতা ও সম্প্রদায়কে ডেকে বলল, তোমরা কিসের পূজা কর’। তারা বলল, আমরা প্রতিমার পূজা করি এবং সর্বদা এদেরকেই নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে থাকি’।‘সে বলল, তোমরা যখন আহবান কর, তখন তারা শোনে কি’? ‘অথবা তারা তোমাদের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে কি’? ‘তারা বলল, না। তবে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি, তারা এরূপই করত’।‘ইবরাহীম বলল, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, যাদের তোমরা পূজা করে আসছ’?‘তোমরা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষেরা’। ‘তারা সবাই আমার শত্রু, বিশ্ব পালনকর্তা ব্যতীত’। ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আমাকে পথ প্রদর্শন করেছেন’ । ‘যিনি আমাকে আহার দেশ ও পানীয় দান করেন’ । ‘যখন আমি পীড়িত হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন’। ‘যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন’ । ‘আশা করি শেষ বিচারের দিন তিনি আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিবেন’ । ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর’। ‘এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী কর’ । ‘তুমি আমাকে নে‘মতপূর্ণ জান্নাতের উত্তরাধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর’। (হে প্রভু) ‘তুমি আমার পিতাকে ক্ষমা কর। তিনি তো পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত’। (হে আল্লাহ) ‘পুনরুত্থান দিবসে তুমি আমাকে লাঞ্ছিত কর না’ । ‘যে দিনে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না’। ‘কিন্তু যে ব্যক্তি সরল হৃদয় নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে’ ।‘জান্নাত আল্লাহভীরুদের নিকটবর্তী করা হবে’। ‘এবং জাহান্নাম বিপথগামীদের সামনে উন্মোচিত করা হবে’।‘তাদেরকে বলা হবে, তারা কোথায় যাদেরকে তোমরা পূজা করতে’? ‘আল্লাহর পরিবর্তে তারা কি (আজ) তোমাদের সাহায্য করতে পারে কিংবা তারা কি কোনরূপ প্রতিশোধ নিতে পারে’? । ‘অতঃপর তাদেরকে এবং (তাদের মাধ্যমে) পথভ্রষ্টদেরকে অধোমুখী করে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে’। ‘এবং ইবলীস বাহিনীর সকলকে’ । ‘তারা সেখানে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে বলবে’। ‘আল্লাহর কসম! আমরা প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে ছিলাম’। ‘যখন আমরা তোমাদেরকে (অর্থাৎ কথিত উপাস্যদেরকে) বিশ্বপালকের সমতুল্য গণ্য করতাম’।‘আসলে আমাদেরকে পাপাচারীরাই পথভ্রষ্ট করেছিল’ । ‘ফলে (আজ) আমাদের কোন সুফারিশকারী নেই’ । ‘এবং কোন সহৃদয় বন্ধুও নেই’। ‘হায়! যদি কোনরূপে আমরা পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ পেতাম, তাহ’লে আমরা ঈমানদারগণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম’।‘নিশ্চয়ই এ ঘটনার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে। বস্ত্ততঃ তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী ছিল না’ ।‘নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা পরাক্রান্ত ও দয়ালু।’ (শো‘আরা-২৬/৬৯-১০৪)

# ‘স্মরণ কর ইবরাহীমকে, যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ’। ‘তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর নিকটে রিযিক তালাশ কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই নিকটে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (আনকাবূত-২৯/১৬-১৭)

# ‘তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে।’ (সূরা নূহ-৭১/২৩)

উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তিগুলো সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, এগুলো হচ্ছে নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু পুণ্যবান লোকের নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করেছে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রনা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হল। -সহীহ বুখারী হাদীস : ৪৯২০

# ‘আর তারা বলেছিল, তোমরা পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদের এবং পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ সুওয়াকে, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে। অথচ এগুলো অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।’ (সূরা নূহ- ৭১/২৩-২৪)

আসুন দেখি তাহলে হাদিস কি বলে,

হাদীস শরীফেও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ সম্পর্কে পরিষ্কার বিধান দান করেছেন।

১. হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ‘আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। -সহীহ মুসলিম হা. ৮৩২

২. আবুল হাইয়াজ আসাদী বলেন, আলী ইবনে আবী তালেব রা. আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে ওই কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা এই যে, তুমি সকল প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং সকল সমাধি-সৌধ ভূমিসাৎ করে দিবে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে,... এবং সকল চিত্র মুছে ফেলবে।’ -সহীহ মুসলিম হা. ৯৬৯

৩. আলী ইবনে আবী তালেব রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোনো প্রাণীর মূর্তি পাবে তা ভেঙ্গে ফেলবে, যেখানেই কোনো সমাধি-সৌধ পাবে তা ভূমিসাৎ করে দিবে এবং যেখানেই কোনো চিত্র পাবে তা মুছে দিবে?’ আলী রা. এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্ত্তত হলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ পুনরায় উপরোক্ত কোনো কিছু তৈরী করতে প্রবৃত্ত হবে সে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি নাযিলকৃত দ্বীনকে অস্বীকারকারী।’ -মুসনাদে আহমাদ হা. ৬৫৭

এবার আসুন তাহলে দেখি,নবী মুহাম্মদ কেন মূর্তিগুলা ভেঙ্গে ফেলতে বলছেন,

‘তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর নিকটে রিযিক তালাশ কর। তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই নিকটে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আনকাবুত-২৯/১৭)

উপরের এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে সহজেই বলা যায় ইসলামে মূর্তি পুজা নিষেধ রয়েছে যা কিনা স্পষ্টভাবে বলাও আছে।

হে মুমিনগণ,এই যে মদ,জুয়া,প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়।অতএব,এগুলা থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমার কল্যাণপ্রাপ্ত হও।(সুরা আল মায়িদাহ-৫/৯০)

# জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত।যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহন করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি,যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।নিশ্চয় তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন।আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (আল-যুমার-৩৯/৩)

অর্থাৎ কোরানের নিষেধ মূর্তিপূজা, উপাসনা-আরাধনা-ইবাদত সম্পর্কে। কারণ, মূর্তি স্রষ্টার অংশীদার অর্থাৎ শরিক হয়ে দাঁড়ায়। এটাই মানুষকে মুশরিক বানায়। তাহলে যে ভাস্কর্যকে আরাধনা বা আল্লাহর সাথে শরীক করে না সে সম্পর্কে কোরআনে সুস্পষ্টভাবে কি বলা আছে এবার তাই দেখা যাক,

# তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ। (সুরা সাবা-৩৪/১৩)

# আপনি বলুনঃ আল্লাহ সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্রবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে? আপনি বলুনঃ এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে।(আ’রাফ-৭/৩২)

সহি মুসলিম – বুক ০০৮, নং ৩৩১১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁহাকে সাত বৎসর বয়সে বিবাহ করিয়াছিলেন (যদিও অন্য রেওয়াতে আমরা পাই ছয় বছর: হাসান মাহমুদ) এবং তাঁহাকে নয় বৎসর বয়সে কনে হিসেবে তাঁহার বাসায় লইয়া যাওয়া হয়, এবং তাঁহার পুতুলগুলি তাঁহার সাথে ছিল এবং যখন তিনি দেহত্যাগ করিলেন তখন তাঁহার বয়স ছিল আঠারো।

সহি মুসলিম – বুক ০৩১ নং ৫৯৮১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে তিনি আল্লাহর রাসুলের (সা.) উপস্থিতিতে পুতুল লইয়া খেলিতেন এবং যখন তাঁহার সঙ্গিনীরা তাঁহার কাছে আসিত তখন তাহারা চলিয়া যাইত। কারণ তাহারা আল্লাহর রাসুলের (সা.) জন্য লজ্জা পাইত। যদিও আল্লাহর রাসুল (সা.) তাহাদিগকে তাঁহার কাছে পাঠাইয়া দিতেন।

অর্থাৎ, এথেকেও বুঝা যায় যে,নবী মুহাম্মদ মূর্তি পূজারী নিষেধ করেছে ঠিকই কিন্তু ভাস্কর্যকে নিষেধ করলে অবশ্যই নিজের ঘরের স্ত্রী আয়েশাকে পুতুল খেলতে এবং পুতুল গুলোকে সাথে রাখতে দিতো না।

আজ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়,এই আলেম-ওলামারা জঙ্গিবাদ নিয়ে কোন প্রতিবাদ না করে, সুপ্রিম কোর্টের সামনের গ্রীক দেবীর ভাস্কর্যসহ এখন দেশের সকল ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে,সরকার পতনের ডাক দেয়, রাস্তায় নির্মিত স্থাপনার বিরুদ্ধে মিছিল, ওয়াজ-নসীহত, বিক্ষোভ ইত্যাদি কত বড় মূর্খতা, কত বড় অজ্ঞতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ জন্যই এই বিকৃত ইসলামের আলেমদের প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষকে বোঝান মুশকিল যে তোমরা এই ধর্ম ব্যবসায়ী না নিজের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে,জানো,চিন্তা করতে শিখেন এবং এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন।

উল্লিখিত কোরান-হাদিসের এই নির্দেশে পরিষ্কার বোঝা গেল যে, আল্লাহ ঈশ্বরত্ব আরোপ করার উদ্দেশ্যে, উপাসনা করার উদ্দেশ্যে যে কোন মূর্তি নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞা গুলির কারণে মানুষ ধরেই নিয়েছে যে, ভাস্কর্য নিষিদ্ধ এবং এই লেবাসধারী টাইটেল যুক্ত ধর্মব্যবসায়ীরা যা করছে তাই ঠিক আর যারা ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে তারাই ইহুদী নাসারাদের পেইড এজেন্ট/নাস্তিক/ইসলাম বিদ্বেষী ইত্যাদি ইত্যাদি।তারপরেও আবার বলবো,দয়া করে অন্ধতা থেকে বের হয়ে আসুন এবং দেশকে এবং নিজেরা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাচান আপনাদের মতই সহজ সরল ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের।আপনাদের এরকম অন্যায় আবদারের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকা দেখে আপনাদের প্রতি আমার করুনা হচ্ছে যে, এইভেবে আমার মত একজন ধর্মবিরুধী/প্রথা বিরুধী/নাস্তিকেরও আপনাদের পক্ষে সাফাই গেয়ে লিখতে হয় ধর্ম ব্যবসায়ীদের ধান্ধা দেখিয়ে দিবার জন্য।জানি,তারপরেও আপনাদের হয়তো বিশ্বাস হবে না যে,এই গুলাই অপ্রিয় সত্য কথা এবং ধর্ম ব্যবসায়ীরা নিজেদের পকেটভারী করার জন্যই এসব ফয়দা লুটে।বিশ্বাস না হলে তাদের আয়ের উৎস এবং সম্পত্তির পরিমান দেখুন উত্তর পেয়ে যাবেন।

রেফারেন্সঃ
উইকিপিডিয়া
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মক্কায় প্রবেশ
ইসলামে মূর্তি ও ভাস্কর্য
মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক

বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭

হেফাজতের সাথে প্রেমের সম্পর্কের দায় কি শুধুই শেখ হাসিনার !!!

এখন প্রায়ই একটা কথা শুনা যায় চায়ের স্টল থেকে শুরু করে হাটে,বিলে,খাটে,ঘাটে,মঞ্চে,লঞ্চে,ট্রেনে,বাসে,নীল সাদার দুনিয়াসহ সব জাগায় যে,নেত্রী (শেখ হাসিন) যা করছে তা ভালোর জন্যই করছে এবং তা সমালোচনার উর্ধ্বে।আর যারা সমালোচনা করবে তাদের উদ্দেশ্যে চাটুকারীরা (নেতা-কর্মী) একধাপ এগিয়ে বলবে,নেত্রীর থেকে বড় দেশপ্রেম আর কারো নাই।সেহেতু সমালোচনা করা যাবে না।আরে ভাই,নেত্রী কি দেশপ্রেমের ইজারা নিছে নাকি!এখানে দেশ প্রেম কম আর বেশী কোথায় থেকে আসে।আর নেত্রী যা করছে তাই যদি ঠিক হয়,তাহলে তাকে এবার সৃষ্টিকর্তাই মেনে ফেলুন না।

কি মনে হচ্ছে,কথাটা একটু বেশী বলে ফেললাম!হুম বেশী বলছি,তা আপনাদের কারণেই।নেত্রী যা করছে তা ভালোর জন্য করছে এটা আমিও বিশ্বাস করি।কিন্তু তার থেকে বড় কথা সমালোচনা করা কোন ভুল না।আর আপনারা যে,অন্ধ সাপোর্ট দিয়ে যান এখানে আমার একটু কথা আছে।আর এই কারণেই নেত্রী কিছু ভুল পথে হাটছে।এর জন্য দায়ভার এবং দোষ আপনাদেরই।কারণ আপনারা এক সমালোচনা করতে দেন না এবং আপনারা নিজেদের উদ্যোগে কোন কাজ করেন না।নেত্রী যখন বলবে তখনই করবেন,তাও আবার তখন গ্রুপিং শুরু করে দেন।

এখন আসি সাম্প্রতিক আলোচনা তেতুল হুজুর মানে শফী হুজুর এবং মৌলবাদীদের সাথে সমঝোতা করে দলের আদর্শভুলে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার কথায়।হুম,শেখ হাসিনার এখন মূল উদ্দেশ্য ক্ষমতায় থাকা এবং তার মিশন কমপ্লিট করা।যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা।কিন্তু এই মিশন কমপ্লিট করায় একমাত্র বাধা হয়ে দাড়াইছে এই হেফাজত এবং কিছু মৌলবাদী দল যারা হেফাজতের সাথে তাল মিলায়।শেখ হাসিনা এখন আর বিএনপি কিংবা জামাত শিবিরকে না,শেখ হাসিনা ভয় করে হেফাজতকে।কারণ এই হেফাজতই এখন পারে পোগ্রাম,মিছিল,মিটিং করে বিভিন্ন নৈতিক অনৈতিক দাবি করার ধর্মকে ব্যবহার করে।আর এসব দেখেও আপনারা চুপ করে বসে থাকেন।কারণ নেত্রী কখন বলবে আর তখন প্রতিরোধ করবেন।কিন্তু সত্যিটা কি জানেন,কিছু কিছু বিষয় প্রকাশ্যে বলতে হয় না,নিজেদের বুঝে নিতে হয়।কারণ শেখ হাসিনা যখনই জামাত শিবির এবং বিএনপির বিপক্ষে গেছে এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করেছে তখনই দেশের মানুষকে আওয়ামী নাস্তিক এবং ধর্মবিরোধী দল বলে ট্যাগ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আওয়াজ পৌছে দিছে।এবং অনেক সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাসও করে।

অন্যদিকে,আপনারা সেসব কথার কোন প্রতিবাদ করে অবস্থান নেন নাই।আপনাদের নিরবতা দেখে শেখ হাসিনা হয়তো নিজেও ভেবেছে,আপনারা ধর্মনিরপেক্ষতা চান না।মুসলিম দেশ হিসাবেই পরিচয় দিতে চান এবং দেন।সত্যি তাই,আপনারা ধর্ম নিরপেক্ষতার থেকে মুসলিমদেশ পরিচয় দিতেই গর্ভবোধ করেন।

তাই নেত্রী বুঝে গেছে,কিভাবে ক্ষমতায় থাকতে হয়।এখন যদি সে একাই জামাত শিবিরদের যেভাবে কোপকাত করেছে ঠিক সেভাবেই যদি হেফাজতকে করতে যায় তাহলে তখন দেশের প্রতিটা মানুষই ধরে নিবে হাসিনা ধর্মবিরোধী এবং নাস্তিক দল।তার ক্ষমতায় দুইদিন থাকাও কষ্ট হয়ে যাবে।কারণ বিপক্ষের দলগুলা সাধারণ মানুষকে সহজেই উস্কিয়ে দিতে পারবে ধর্ম বিরোধী নাস্তিক দল বলে।আর যদি আপনারা নিজ দায়িত্বে এসবের প্রতিবাদ করে যেতেন,নেত্রীর নির্দেশ পাবার অপেক্ষা না করে এবং নিজেদের অবস্থান ক্লিয়ার করতে পারতেন যে আপনারা ধর্মবিরোধী দল না ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষেরদল তাহলে আজ হেফাজত আজ সুই থেকে কুঠার হতে পারতো না।এখন বানরকে রায় দিয়ে দিয়ে গাছে তুলেছেন,সেহেতু নেত্রী যখন কোন নামানোর পথ না পাইছে তখনই তাদের সাথে সমঝোতা করে যাচ্ছে একের পর এক।আর আপনারা চুপ করে থাকবেন তারপরেও।বুঝতেছেন না,আপনারাই নেত্রীকে কোণঠাসা এবং দলের আদর্শচুত করার জন্যদায়ী।আর আপনাদের,এই নষ্ট বস্তা পচা কথা শুনলে আমার হাসি পায়,নেত্রী যা করছেন তা দলের ভালোর জন্যই করছেন।যেমনটা ধার্মিকরা বলে আল্লাহ যা করছেন তা ভালোর জন্যই করছেন!আবার বলেন,নেত্রীর থেকে বড় কোন দেশ প্রেমিক নাই।এটা এমন কথা হয়ে গেল না,আপনি আপনার মাকে যতটা ভালো না বাসেন তার থেকে আমি আমার মাকে বেশী ভালোবাসি!এখানে কম আর বেশী পরিমাপ করা যায় না।তবে প্রকাশের ভঙ্গী ভিন্ন হতে পারে।আর যদি নেত্রীর থেকে বড় দেশ প্রেমিক না থাকতো তাহলে, জীবনের বাজী রেখে কেও ভাষার জন্য জীবন কিংবা দেশের জন্য ঝাপিয়ে পরতো না।আর সে সকল বীরদের মাঝে অনেকেই বেচে আছে এখনো।জানি ভালোবাসা কিংবা দেশপ্রেম,অনুভূতি এসব তুলনা করে মাপা যায় না আমার মতে।তবে আপনাদের লুলামীর কারণেই তুলনা করা।আর একটা কথা না বললেই না হয়,আসলে আপনাদের মাঝে কোন দেশপ্রেম নাই,যেটা আছে দলপ্রেম।তাও আবার স্বার্থের জন্য।আজ লীগ ক্ষমতা থেকে চলে যাক,আপনাদের লাইট দিয়েও খুজে পাওয়া যাবে না এবং তরী ফেরাবেন ক্ষমতাসীন দলের দিকেই।আর এজন্যই নিজের দিক বিবেচনা এবং নিজের দূর্বলতা থেকে বলেন,নেত্রী যা করে তাই সঠিক এবং সেই বড় দেশ প্রেমিক।

ওহ হ্যা! আরেকটা কথা,নেত্রী কিন্তু মানুষ,কোন সুপার কম্পিউটার না যে,তার কোন ভুল হবে না সফটওয়্যার থাকার কারণে।তবে হ্যা,যদি আপনারা সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতেন তাহলে ভুল হতো না এবং আজ হেফাজতের সাথে মিশে গিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াই করতে হতো না।তাই এখনো সময় আছে,নেত্রীর পাশে দাঁড়ান এবং দলের হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করুন দেশকে ভালোবেসে।
জয় বাংলা।

সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭

ধর্মান্ধ বিদ্বেষী

কেও যখন আমাকে বলে তুমি ধর্ম বিদ্বেষী?
--অবশ্যই না।
তাহলে হিন্দু বিদ্বেষী?
--কখনোই না।
তাহলে মুসলিম বিদ্বেষী?
--কল্পনাই করতে পারি না।
তাহলে খ্রিষ্টান বিদ্বেষী?
--তাও না।
তাহলে ইহুদী বিদ্বেষী?
--জীবনেও না।
তাহলে বৌদ্ধ বিদ্বেষ?
--জ্বী না।
তাহলে ধর্ম নিয়ে লিখ কেন?কোন কিছুই বিদ্বেষী না অথচ ধর্ম নিয়ে লিখে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রান মানুষের সাথে সম্পর্ক খারাপ করার কোন মানে হয়?
--কারণ আমি ধর্মান্ধ বিদ্বেষী।

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

লাশের উপর দাঁড়িয়ে নৃত্য

গত দুই বছর আগে যখন ওয়াশিকুর বাবুকে হত্যা করা হলো,তখন কত জনই কত কিছু বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মায়া কান্না শুরু করলো।মনে হয়েছিলো,বাবুর মৃত্যুতে শুধু তার পরিবার বা অতি নিকট আত্মীয়রাও না, তার থেকেও অনেক বেশী কষ্ট পেয়েছিলো বাবুর ফেসবুক বন্ধুরা।সবাই আবেগ তাড়িত হয়ে নানা ভাবেই তাদের আবেগ প্রকাশ করেছে।এবং কি অনেকেই এমনই আবেগে আবেগান্বিত হয়েছিলো যে (কয়েকজন মেয়ে),বাবুকে নিজের বিএফ বলে পরিচয় দিলো,তারপর তাদের কিভাবে পরিচয়,কোথায় দেখা ইত্যাদি ইত্যাদি।এসব দেখে যে কেও আরো বেশী আবেগান্বিত হয়ে মেয়েগুলোকে কি স্বান্তনাবানী ফেসবুক বন্ধুদের এবং অনেকেই সান্তনা দিয়ে বলে "আপু আপনাকে রিকু দেওয়া হয়েছে দয়া করে এড করে নিবেন"।আবার অনেকের সাথে ইনবক্সে কথা হয়েছে,দেখা করতে চেয়েছে,কার সাথে কি নিয়ে কথা হয়েছে লাস্ট ইত্যাদির স্ক্রীনশট ফেসবুকে পোস্ট করেও অনেকেই নিজের আবেগ ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলো।তবে সবথেকে বেশী ভালো লেগেছিলো একটি মেয়ের গল্প এবং বাবু আর তার মাঝের প্রেম কাহিনী।

তাদের প্রেম কাহিনীর ধরণটা এমন ছিলো অনেকটাই যে, বাবু আর মেয়েটার মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হতো,তারা একে অপরের নানা কথা শেয়ার করতো মানে ফেসবুকে চ্যাট করতে করতে যেভাবে ভালো পরিচয় বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। যাই হোক মূল কথায় ফিরে আসি,মেয়েটি তখন সবে মাত্র ইন্টার পরীক্ষা দিছে বা ২য় বার বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশনের চেষ্টা করছে।কিন্তু মেয়েটা খুব হতাশায় ভোগে কারণে বা অকারণে।একদিন মায়ের উপর রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে টিএসসিতে চলে যায় আর বাসায় না ফিরার চিন্তা করে।তারপর সেখানে বসে বসে বাবুকে ফোন দিয়ে বলে সে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরছে আর বাড়িতে ফিরতে চায় না।বাবুকে ওকে ফোনে শান্ত করার চেষ্টা করে এবং অফিস শেষ করে তার সাথে দেখা করবে এবং কিছু একটা ব্যবস্থা করবে বলে জানায়।এবং এক সময় বাবু তার কাজ শেষ করে মেয়ের কাছে ছুটে আসে।তারপর তারা এক সাথে আড্ডা এবং মেয়েকে বুঝিয়ে রাতে তার বাড়িতে দিয়ে আসে।মেয়ের মা খুব খুশী তার মেয়ে ফিরে এসেছে এবং মেয়ে ছেলেটির সব কথা খুলে বলে।তখন মেয়ের মা বলে,এই ছেলে না হয়ে যদি অন্য ছেলে হতো মানে একটু অন্য টাইপের তাহলেই একটা দূর্ঘনা ঘটে যেত পারতো বলে আশংকা প্রকাশ করে।এ দিক দিয়েও ,মেয়ের মনে হালকা প্রেমের বাতাস লাগে এবং তারা এক সময় প্রেমে ঝড়ায়।তাদের খুব ভালো সম্পর্ক চলতে চলতেই ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হয় বাবুকে।আর তখন সেই মেয়ের থেকে কে বেশী শোকে থাকতে পারে বলে মনে হয় না।তারমধ্যে বয়সটাও তখন আবেগময় ছিলো মেয়ের জন্য।

কিন্তু হায়! সেই আবেগ! সেই ভালোবাসা!......!

সবই ধান্ধারে ভাই, এতক্ষন যা বলছিলাম এখন তার বিপরীত বিবেচনা করতে গেলে।এখন আর তার বাবুর কথা মনে নাই,বাবুকে নিয়ে কোন মায়া কান্নাও নাই,বাবুকে নিয়ে কোন গল্পও নাই।সবই ছিলো এক ধরনের ধান্ধা এবং বাবুর নাম বেচে নিজে জাতে উঠার চেষ্টা।মেয়েটার সেই সময়ে এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ৩০০০ হাজার ফলোয়ার হয়ে যায়।তারপর একদিন দেখি মেয়েটা একটা পোস্ট দিছে এখন তার ফলোয়ার সংখ্যাও ৫০০০ ছাড়াইছে।এখন আর যা ইচ্ছা তাই লিখে মনের ভাব প্রকাশ করা যাবে না,সব কিছুই ভেবে চিনতে করতে হবে।হুম মেয়েটা এখন সবকিছু ভেবে চিনতে করে এখন তার ফলোয়ার ৮০০০+। ভেবে চিনতে করা মানে এই না যে,আগের মত সারাদিন স্ট্যাটাস দিবে তা না কিন্তু।হয়তো অন্য কিছু চিন্তা এবং যা তা লিখবেনা।আগে পোস্টে চুদানী,খাঙ্কির পোলা এসব থাকতো এখন আর তা থাকে না।অনেকটা ভদ্র মেয়ে,ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো বিষয় নিয়ে পড়তেও আছে ।তার সব কিছুই ঠিক থাকলেও আজ হয়তো আর তার বাবুর জন্য মায়া কান্না করার সু্যোগ নাই।বাবু নামে কেও ছিলো এটাই হয়তো তার এখন স্মৃতিতে নাই।কারণ তখন বাবুর জন্য দীর্ঘদিন হ্যাশট্যাগ, নো জাস্টিস ইন বিডি,কলম চলবে কত কিছু লিখে পোস্ট করতো আর কান্নার ইমো ব্যবহার করে ফেসবুকে চোখের জল দিয়ে বন্যা করে ফেলতো।সেই মেয়ের ফেসবুক মায়া কান্নার কথা মনে পরলো আমার বাবুর মৃত্যু দুই বছরপূর্ত্তির দিনে।তাই সেই খেয়াল বশত আজ আবার সেই মেয়ের টাইম লাইনে গেলাম,সকাল থেকে এ পর্যন্ত তার ওয়ালে প্রচুর আমপাতা,কাঠাল পাতা শেয়ার হলেও কলম চলবে বলে যে ধরণের লিখা চালিয়ে যাবার কথা ছিলো তা অনেক আগ থেকেই হারিয়ে গেছে অতীত হয়ে।শুধু তাই না,আজ বাবুর জন্য কোন পোস্ট দেখতে পেলাম না তার ওয়ালে।কোথায় হারিয়ে গেল সেই কান্নামাখা ফেসবুক।মাত্র দুই বছর আগে এতো কান্না আর এখন আমপাতা ,কাঠালপাতা শেয়ার করে!

সবই ছিলো ভাই নিজের পরিচিতি এবং একটা প্লাটফর্ম নেবার ধান্ধা বাবুর লাশের উপর দাড়িয়ে।আর মেয়েটা সফল।হেরে গেছে শুধু মুক্তচিন্তার মানুষগুলো,যাদের লাশের উপর দাঁড়িয়ে সুযোগ সন্ধানীরা নৃত্য করে আজ জাতে উঠে গেছে।
#NO_JUSTICE_IN_BD.

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

নারী খেকো ফেসবুক সেলিব্রেটি

মেয়েদের যদি কোন সাধারণ ছেলে ইনবক্স করে তাহলে তারা বিরক্ত হয়।--উফ অসহ্য

আর যখন সেলিব্রেটি নক করে,ভাইয়া...আমার যে কি ভালো লাগছে।--উফ অসাম

যখন কোন সাধারণ ছেলে ইনবক্সে কথা বলার পর নাম্বার চায় তখন ছেলে হয়ে যায় লুচ্চা।--উফ বিরক্তিকর

আর যখন সেলিব্রেটি ইনবক্সে কথা বলার পর নাম্বার চায় তখন, ভাইয়া আপনার নাম্বার দেন আমি ফোন দিচ্ছি।--উফ ফ্যান্টাসটিক

যখন কোন সাধারণ ছেলে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দেয় তখন ছেলে হয়ে যায় ইতর,বদামাইশ,ধান্ধাবাজ,নারীখেকো ইত্যাদি ইত্যাদি।--উফ ছাগলামী

যখন কোন সেলিব্রেটি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মেয়েদের ভিডিও ফোন দেয়,হুম ভাইয়া কেমন আছেন,জানো ভাইয়া আমি তোমার অনেক বড় ফ্যান,তোমাকে যে আমার কি ভালো লাগে বলে বুঝাতে পারবো না।ভাইয়া তোমার ওই লিখাটা,কবিতাটা,ছবিটা,গানটা আরো কত্তকি যে আমাকে কাছে টানে।উফ ভাইয়া,বুঝাতে পারবো না তোমাকে।তারপর সেলিব্রেটি পুরুষ-আচ্ছা আপু তোমার মুখটা একটু দেখি।

-না ভাইয়া!

-আরে দেখাও না।

-হুম,দেখছ?

-হুম,এবার একটু মাফলার সড়াও।

-হুম,সড়াইছি, দেখা যায়?

-হুম,এবার উড়নাটা সড়াও।

-হুম,সড়াইছি।

-এবার তোমার জামাটা একটু নিচে নামাও।😘

-না!

-না,নামাও একটু প্লিজ লক্ষীটি।

-না,ছি: ভাইয়া তুমি এমন!

-ওকে নামাতে হবে না,টুট টুট।

তারপর আবার ইনবক্সে,সেলিব্রেটি,

-স্যরি,আসলে আমি ড্রাংক ছিলাম।

-তাই বলে এমন!

-আরে বাবা বললামতো স্যরি।আর জীবনেও এমন হবে না।

-ওকে,ঠিক আছে।সত্যি আর যেন না হয়।

-হুম,গড প্রমিজ হবে না।

-মনে রেখ কিন্তু কথাটা।

-ঠিক আছে।

দুইদিন পর আবার অন্য মেয়ের সাথে....

ধরা না খাইলে এভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকে আর যখন ধরা খায় জায়গা মত তখন.....সেলিব্রেটি,

আমার মা/বাবা অসুস্থ,আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র,আমাকে ফাসিয়ে মাফ চাওয়ানো হচ্ছে,আমি মরে যাব,সুইসাইড করবো,আমার এম্বিশন সব ধুলিসাৎ হয়ে যাবে বলে না বাহনা শুরু।কিন্তু কে শুনে কার কথা,স্ক্রীনশট বেরিয়ে পরে।কিন্তু সমস্যা হলো গিয়ে সমস্যা না,দুইদিন পর সব ভুলে সেলিব্রেটিকে আবার মাথায় তুলে নাচাবো আর তাকে সাপোর্ট দিবো।আর বাদ দেন ভাই,কে কেমন তা জানা আছে,মেয়ে সাড়া না দিলে সেতো আর এমন বলার সাহস পেতো না।অত:পর ভক্তকুলের ব্যাপার বুঝে আবার অনলাইনে বিচরন অত:পর নতুন মাইয়াকে ফাদে ফালিয়ে আবার নাটক শুরু ধরা পরলে আর না পরলেতো বাদশাই।তবে কথায় আছে না,চোরের দশদিন আর গীরস্থের একদিন।

সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭

একটি ভাষন একটি জাতির ইতিহাস ।

বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস “মার্চ মাস”।কারণ ’১৯৭১’ সালের এই মার্চ মাসেরই ২৫ তারিখ গভীর রাতে, মানে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছিলো।শুধু তাই না, ২৫ মার্চ গভীর রাতে, এদেশের নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী।আরও একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আছে এই মাসে। সেটি হচ্ছে- ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।

কিন্তু ৭ মার্চের প্রেক্ষাপট হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি।যদি অন্তত ১৯৪৭ সালের পর দেশ বিভাগের পর থেকে পাকিস্তান শাসনকাল ধরি, তাতেও প্রায় দুই যুগের ইতিহাস।পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর থেকেই, পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের বাঙালিদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছিলো। যেন আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো দামই ছিলোনা তাদের কাছে।১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়, কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান।পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক থেকে পার্থক্য ছিল প্রচুর।১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগণের মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি করে।দীর্ঘ প্রায় চার বছর আন্দোলনের ফসল হিসেবে ১৯৫২ সালে সেটি পরিণতি লাভ করে শেষ পর্যন্ত এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।কিন্তু তার জন্য যথারীতি রাজপথে দিতে হয়েছিল অনেক রক্ত।

১৯৫৪ সালে ১০ই মার্চ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে।কিন্তু পাকিস্তান শাষকগোষ্ঠী বাঙালির এই আধিপত্য মেনে নিতে পারেনি।মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ৩০শে মে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।

১৯৫৯ সালে সমগ্র পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে আসলে বাঙালিদের মধ্যে বিপুল সাড়া দেখা দেয়।অতএব এই নির্বাচনের ফলাফল চিন্তা করে কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।একই সময়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের কৌশলে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যেও বিরোধ সৃষ্টি করে।এই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করে।১৯৬২ সালে সামরিক শাসন তুলে নেওয়ার পর ছাত্র সমাজ পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে এই সময় দেশব্যাপী শাসন তুলে নেয়ার পর ছাত্রদের এই আন্দোলন নতুন করে গণ-আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।

১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা ‘কপ’-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম অবহেলা ও ঔদাসীন্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোচ্চার হন। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় রাজনীতির গতিধারা নিরূপণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন।ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেলরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই ফেডারেলরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ন স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয়দফা কর্মসূচীর ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব।পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয়।

১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বুঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে ৮ মে, ১৯৬৬ সালে দেশ রক্ষা আইন অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়। এরপর ৭ জুন, ১৯৬৬ এ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সারা দেশে ধর্মঘট ডাকে। ৭ জুন যে ধর্মঘট ডাকে সেই আন্দোলনকারীদের উপর পাকিস্তানী সরকার নির্মম ও নিষ্ঠুর অত্যাচার চালায়। এই দিন প্রায় ১০ জন নিহত হয়। এরপর কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের প্রায় ৯৩৩০ জন কর্মী গ্রেফাতার হন।

শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর ১৮ জানুয়ারি, ১৯৬৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হলেও ঐদিন তার বিরুদ্বে আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করা হয়। এই মামলার জন্য তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুসহ মোট ৩৫ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়। এদের ভিতর প্রায় সকলে বাঙ্গালী সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। এতে করে পূর্ব পাকিস্তানের সকল প্রভাবশালী লোকদের পাকিস্তান শাষকগোষ্ঠী আটক করে বাঙ্গালীদের একদম নিস্তেজ করে ফেলে।

১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রকৃষ্ট হতে শুরু করে। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকাস্তানকে বিচ্চিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দায়ের করা হয়। ১৯৬৯-এ আইয়ুব খানের পতন হয় তবে সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে।সামরিক সরকারের অধীনে ১৯৭০-এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনেঅংশ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জ্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনৈতিকদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে বিরত থাকন।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবেরকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু’জন প্রধানমন্ত্রী। “এক ইউনিট কাঠামো” নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং কেন্দ্রের সামরিক-বেসামরিক আমলাচক্র চঞ্চল হয়ে ওঠে। তাদের দুরভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষও উদাসীন ছিল না। বঙ্গবন্ধুও বুঝতে পারছিলেন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কুচক্রী মনোভাব। ইয়াহিয়া-ভুট্টো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে সমস্ত জানুয়ারি মাসটিকে কাজে লাগান। ১২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে। তিনি ছয় দফার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চান। অতি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি সন্তুষ্ট হন না। এরপর জানুয়ারির শেষ সপ্তায় ভুট্টো আসেন তাঁর দলের নেতাদের নিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে ছয় দফা বিষয়ে আলোচনার জন্য। তাঁর কাছে ছয় দফা বিচ্ছিন্নতাবাদী এজেন্ডা। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া-ভুট্টো দীর্ঘ আলোচনা করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া এক ঘোষণায় ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।কিন্তু ১ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেল এই সিদ্ধান্ত। সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয় এবং ডাক দেওয়া হয় হরতালের। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।

২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ. স. ম আবদুর রব। সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফারেল আহমদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং নূরে আলম সিদ্দিকী। বিশাল এই সভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়।

৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে- আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দিবেন। তাদেরও যদি হত্যা করা হয়, যিনি জীবিত থাকবেন, তিনিই নেতৃত্ব দিবেন। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে- অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” বঙ্গবন্ধু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ৭ মার্চ রোববার রেসকোর্স ময়দানে তিনি পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন।এবং ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালনের আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে তাঁরই নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে ইতিপূর্বে বেতন দেয়া হয়নি সেসব অফিস বেতন প্রদানের জন্য খোলা থাকে।

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে মুক্তির বাণী শোনার জন্য (৭ মার্চ,১৯৭১) সেদিন সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ দলে দলে রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষের রেসকোর্স ময়দান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, রমনা পার্কসহ আশপাশের এলাকা ছিল পূর্ণ। মঞ্চের সামনে নারীদের বসার জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে বাঁশ। পোস্টার, ফেস্টুন, ফানুস সঙ্গে ‘জাগো জাগো-বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল সেদিনকার রেসকোর্স।বঙ্গবন্ধু বিকাল আনুমানিক ৩টা ২০ মিনিটে মঞ্চে উঠেছিলেন।৫ দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।একাত্তরের ৭ মার্চ ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি মাহেন্দ্রক্ষণ।আন্দোলন-সংগ্রামের পরিণত ফসল। বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, যখন বাঙালি জাতি পরাধীনতার দীর্ঘ প্রহর শেষে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল তখনই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন তার ঐতিহাসিক ভাষণে।এ ভাষণের স্তরে স্তরে ছিল এদেশে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের পরিসমাপ্তির ঘোষণা ও বিবরণ।সেই সঙ্গে ছিল পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন দেশের স্বাধীনতা অভ্যুদয়ের বার্তা।পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন এই বলে, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।“
জয় বাংলা।