শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

দূর্গা পূজার ইতিবৃত্ত



সনাতন ধর্মালম্বীদের নিয়ে ১২ মাসে ১৩ পূজার উল্লেখ থাকলেও দূর্গা পূজাই সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব সনাতনীদের নিকট। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়।আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজাএবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "মহাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত।


কৈলাস পর্বতে জন্ম নেয়া অতি প্রেমভক্তির আদুরে মেয়ে দক্ষ তনয়া প্রয়োজনের নিরীক্ষে কালের আবর্তে মোষের ছদ্মবেশধারী প্রবল পরাক্রমশালী অসুর নিধনের নিমিত্তে রূপান্তর ঘটে দেবী দুর্গায়। উচ্ছ্বিষ্ট অপশক্তির অসুর দলনে রণরঙ্গিনী দেবী দুর্গাকে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছিল। রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়ে পরাক্রমশালী অসুর অপশক্তিকে পরাস্ত করে দেবকুল তথা বিপদাকুল সমাজকে চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিলেন।দেবী দূর্গা হলেন শক্তির রূপ।অনান্য দেব দেবী মানুষের মঙ্গলার্থে তাঁর বিভিন্ন রূপের প্রকাশ মাত্র। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে দেবী দূর্গা সকল দুঃখ দুর্দশার বিনাশকারিনী। পুরাকালে দেবতারা মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর’র শরীর থেকে আগুনের মত তেজরশ্মি একত্রিত হয়ে বিশাল এক আলোক পূঞ্জে পরিণত হয়। ঐ আলোক পুঞ্জ থেকে আর্বিভূত এক দেবী মূর্তি। এই দেবীই হলেন দূর্গা। মহাশক্তি শ্রীদুর্গা দেহ দুর্গের মূল শক্তি। আধ্যাত্মিক ভাবনা দুর্গা কাঠামোতে অন্তর্নিহিত। দুর্গার দশহাত দশ দিক রক্ষা করার প্রতীক, দশ প্রহরন এক দেবতার সাধনালব্ধ বিভূতি। দেবী ত্রিভঙ্গা-ত্রিগুণাত্মিকা শক্তির প্রতীক অর্থাৎ সত্ত্ব,রজঃ তমঃ গুণের প্রতীক। দেবী ত্রিনয়নী-একটি নয়ন চন্দ্রস্বরুপ, একটি সূর্যস্বরুপ এবং তৃতীয়টি অগ্নিস্বরুপ।

দুর্গা ও দুর্গাপূজা সংক্রান্ত কাহিনীগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও লোকমান্য হল দেবীমাহাত্ম্যম্-এ বর্ণিত কাহিনীটি। দেবীমাহাত্ম্যম্ প্রকৃতপক্ষে ‘মার্কন্ডেয় পুরাণ’-এর একটি নির্বাচিত অংশ। সাতশত শ্লোকবিশিষ্ট এই দেবীমাহাত্ম্যম্-ই শ্রীশ্রী চন্ডি গ্রন্থ। চন্ডি পাঠ দুর্গোৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও বটে। দেবীমাহাত্ম্যম্-এর কাহিনী অনুসারে পুরাকালে মহিষাসুর দেবগণকে একশ বছর ব্যাপি এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল । অসুরদের অত্যাচারে পৃথিবী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। শান্তিপুরী স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনী শ্রবণ করে তারা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন। সেই ক্রোধে তাদের মুখমন্ডল ভীষণাকার ধারণ করে। ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হয়। সুউচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল।আর এই নারী মূর্তিকেই বলা হয় দেবী দূর্গা।

দূর্গা পূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তা জানা যায় না।ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, সৃষ্টির আদিতে গোলকস্থ আদি বৃন্দাবনক্ষেত্রের মহারাসমন্ডলে কৃষ্ণ সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা করেন। দ্বিতীয়বার দুর্গার আরাধনা করেন ব্রহ্মা। মধু ও কৈটভ দ্বৈত্যদ্বয়ের নিধনে তিনি শরণাপন্ন হন দেবীর। ত্রিপুরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধকালে সংকটাপন্ন মহাদেব তৃতীয়বার দুর্গাপূজা করেছিলেন। এরপর দুর্বাসা মুনির শাপে শ্রীভষ্ট হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র যে দুর্গাপূজা করেন। এটা চতুর্থ দুর্গোৎসব। দেবী ভাগবত অনুসারে ব্রহ্মা ও ইন্দ্রের ন্যায় ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু পৃথিবীর শাসনভার পেয়ে ক্ষীরোদসাগরের তীরে মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মান করে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। জাগতিক মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে ঋষি মান্ডব্য, হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারে সুরথ রাজা ও বৈরাগ্য লাভের জন্য সামাধি বৈশ্য, কার্তাবির্জাজুন বধের জন্য বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম দুর্গার আরাধনা করেন।ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। সিন্ধু সভ্যতায় (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা) দেবীমাতা, ত্রিমস্তক দেবতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। দূর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী সে হিসাবে অথবা দেবী মাতা হিসাবে পূজা হতে পারে। তবে কৃত্তিবাসের রামায়নে আছে, শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ সাগর (বগুড়ার) থেকে ১০১ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে সাগর কূলে বসে বসন্তকালে সীতা উদ্ধারের জন্য সর্বপ্রথম শক্তি তথা দুর্গোৎসবের (বাসন্তি পূজা বা অকাল বোধন) আয়োজন করেছিলেন।আর এ জন্যেই দুই বঙ্গতে দূর্গা পূজার আমেজটা শুধু সনাতনীদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে সকল বাঙ্গালীর সংস্কৃতি স্বরুপ সৃজন হয়েছিল মনে।তবে বৈদিক যুগ থেকেই দুর্গা নাম প্রচলিত। ঋকবেদে বিশ্বদুর্গা, সিন্ধু দুর্গা, অগ্নিদুর্গা- এ তিনটি নাম পাওয়া যায়। দুর্গাপূজা কেবল শাক্ত সমাজেই নয়, প্রাচীন বৈষ্ণব সমাজেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহাপ্রভু চৈতন্যদেব চণ্ডীম-পেই চতুষ্পঠী চালু করেন। বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস, বৈষ্ণবাচার্য্য নিত্যান্দজীও দুর্গা দেবীর ভক্ত ছিলেন। মার্কেয় পুরাণ মতে, সত্যযুগে রাজা সুরথ, সমাধি বৈশ্য দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে পূজা আরম্ভ করেছিলেন। কৃত্তিবাস রামায়ণ থেকে জানা যায়, ত্রেতা যুগে লঙ্কার রাজা রাবণ দেবী পূজার আয়োজন করে দেবীর আশীর্বাদ ধন্য হয়েছিলেন। অন্যদিকে রাবণ-বধ এবং জানকীকে উদ্ধার করার জন্য শ্রী রামচন্দ্র বসন্তকালের আগে শরৎকালে দেবী পূজা করেছিলেন। উল্লেখ্য, শ্রী রামচন্দ্র দেবী ভগবতীকে অকালে বোধন করেছিলেন। মূলত দেবী পূজা বসন্তকালে হয়ে থাকে। সেই থেকে শরতে দেবী পূজা অকাল বোধন নামে পরিচিত। শরতের এই পূজাই আমাদের দুর্গোৎসব। জানা যায়, প্রথম শতকে কুষান যুগে, পঞ্চম শতকে গুপ্ত যুগে, সপ্তম শতকে পল্লব যুগে এবং ১১-১২ শতকে সেন বংশের আমলে দেবী মহিষমর্দিনী রূপে পূজিত হয়েছেন। কুষান যুগে দুর্গা ছিলেন লাল পাথরের তৈরি। পাল যুগে অর্থাৎ ১২৮৯ সালে দেবী ত্রিনয়নী এবং চার হাতবিশিষ্ট। দশভুজা দুর্গার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৮ শতকে।


বি.দ্রঃসকল ধর্মীয় উৎসবে যে বিপুল পরিমান অর্থের ব্যয় করা হয় এই নিয়ে যাদের চুলকানি আছে তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথা,সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্টি লাভের আশায় যদি মানুষের গায়ে একটু রঙ্গীন পোশাক আসে, ভালো খাবার আসে মুখে, সে সৃষ্টিকর্তাকে খারাপ বলতে যাব কোন দুঃখে!আপনি আস্তিক হোন আর নাস্তিক হোন আপনার মাঝে যদি সত্যিকারের মানবতাবোধ না থাকে তাহলে আপনিও যে,দুপায়ী পশু বলে বিবেচ্য হবেন।তাই সবার খুশির দিনে নিজেকে খুশি রাখেন এবং অন্যের বিশ্বাসের উপর সহমর্মিতা প্রকাশ করুন।ধর্ম যার যার, উৎসব সবার!

আমি কোন জাত-ভেদ,ধর্মের দুনিয়া চাই না,আমি মানুষের দুনিয়া চাই।আমার বড় পরিচয় আমি মানুষ এবং আপনারাও মানুষ।

হিন্দু/সনাতনী ধর্মের ঈশ্বর এবং মূর্তি পূজার পক্ষে-বিপক্ষে কিছু হদিস



মূর্তি পূজার স্বরূপ জানতে হলে প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে ঈশ্বর ও দেবতা বলতে সনাতন দর্শনে কি বলা হয়েছে।ঈশ্বর ও দেবতা।প্রথমেই বলে রাখা দরকার সনাতন দর্শনে বহু ঈশ্বরবাদের স্থান নাই বরং সনাতনীরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী।সনাতন ধর্মাবলম্বি হিন্দুরা অনেক দেব দেবির পুজা করলেও সমাতন ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে কেবল মাত্র এক জন ইশ্বরের উপাসনা করতে বলা হয়েছে॥


বেদের ‘ব্রহ্ম সুত্র’ তে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ইশ্বর এক তাঁর মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই।আরও আছে “তিনি একজন তাঁরই উপাসনা কর” (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬)। “একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ তিনি একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ ১;২;৩)। “এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩)।


সনাতন দর্শন বলে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন স্রষ্টা নাই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা।আমাদের প্রাচীন ঋষিগন বলে গিয়েছেন, ঈশ্বরের কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই(নিরাকার ব্রহ্ম) তাই তিনি অরূপ, তবে তিনি যে কোন রূপ ধারন করতে পারেন কারণ তিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।ঋকবেদে বলা আছে, ঈশ্বর ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’- ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।ঈশ্বর বা ব্রহ্ম (ব্রহ্মা নন) সম্পর্কে আরও বলা হয়,‘অবাংমনসগোচর’ অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা(বাক), মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না,তিনি বাহ্য জগতের অতীত । ঈশ্বর সম্পর্কে ঋকবেদে বলা আছে-‘একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি (ঋক-১/৬৪/৪৬) অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বহু নামে বলে থাকেন।‘একং সন্তং বহুধন কল্পায়ন্তি’ (ঋক-১/১১৪/৫) অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে।‘দেবানাং পূর্বে যুগে হসতঃ সদাজায়ত’ (ঋক-১০/৭২/৭) অর্থাৎ দেবতারও পূর্বে সেই অব্যাক্ত (ঈশ্বর) হতে ব্যক্ত জগত উৎপন্ন হয়েছে।ঈশ্বর এক কিন্তু দেবদেবী অনেক।তাহলে দেব দেবী কারা? ঈশ্বরকে বলা হয় নির্গুণ অর্থাৎ জগতের সব গুনের আধার তিনি। আবার ঈশ্বর সগুনও কারণ সর্ব শক্তিমান ।ঈশ্বর চাইলেই যে কোন গুনের অধিকারী হতে পারেন এবং সেই গুনের প্রকাশ তিনি ঘটাতে পারেন ।দেব দেবীগন ঈশ্বরের এই সগুনের প্রকাশ বলে সনাতনীদের দাবি।


হিন্দু ধর্মে মুর্তি পুজা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তা জেনে নেইঃ-
ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২০ -
[যাদের বোধশক্তি পার্থিব আকাঙক্ষার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধু তারাই উপদেবতার নিকটে উপাসনা করে। ]
যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ –
[ অন্ধতম প্রভিশান্তি ইয়ে অশম্ভুতি মুপাস্তে – যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারা অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় শাম মুর্তির পুজা করে । অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিক বস্তু যেমন- বাতাস,পানি,আগুন । শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন - চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি ইত্যাদি।]
যেহেতু হিন্দু ধর্ম প্রাচীন ধর্ম, এবং সবার বেদ,গীতা পড়ার অধিকার ছিল না তাই সেই সময়কার কিছু ঋষি মুনির কারনে মুর্তি পুজোর উদ্ভব হয়েছে । ডা. চমনলাল গৌতম তাঁর বিষ্ণুরহস্য বই এর ১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘ঋষিগন মুর্তি পুজার প্রচলন করেছেন॥ খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দী হতে বাংলায় কিছু কিছু অঞ্চলে কালী পূজা শুরু হয়॥১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। [তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া]
"তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়।
( তথ্যসূত্রঃ হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য,কলকাতা, ২০০৭, পৃ.২৮৫-৮৭)।"


আবার,
যো যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামের বিদধাম্যহম।।
"অর্থ-পরমাত্মারুপে আমি সকলের হৃদয় বিরাজ করি। যখন কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে আমি তাদের শ্রদ্ধানুসারে সেই সেই দেবতাদের প্রতি ভক্তি বিধান করি ।" [ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২১]


স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান হি তান।।
"অর্থ-সেই ভক্ত শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন কিন্তু সেই দেবতার কাছ থেকে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তুলাভ করে।"[ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২২]


মূর্তি পূজা সম্পর্কে উপরিউক্ত আলোচনা থেকে মূর্তি পূজার পক্ষে এবং বিপক্ষে দুইটাতে যাওয়া যায়।তবে ইদানিং দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে মানুষের মনে বিভ্রান্তি এবং মূর্তি পূজার নিষেধ সম্পর্কে বয়ান দিয়ে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে।বিশেষ করে ছদ্মবেশী উন্মাদরা এ প্ররোচনায় বেশী মেতে উঠেছে।তবে এটাও ঠিক যে,মূর্তি পূজা কখন কিভাবে চালু হয়েছে তার কোন নির্দিষ্ট হদিস নাই।সেই দিক দিয়ে মূর্তি পূজার বিপক্ষেই জোড়ালো কথা বলা গেলেও মূর্তি পূজা বিশ্বাসীদের কথা চিন্তা করে তাদের হদিস একবারে নিষেধাজ্ঞা হিসাবে গন্য করা যায় না।আপনি আস্তিক,নাস্তিক,স্যাকুলার যাই হোন না কেন;সামনে দূর্গা পূজাকে রেখে একপাক্ষিক যুক্তি দিয়ে কোন কিছু বলা মানেই মানুষের মনে সাম্প্রদায়িক সৃষ্টি করা ব্যতীত বা আপনি অন্য কোন উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যই এমন আচরন করছেন সেটা যে কেও সহজে বুঝতে পারবে।তবে এর মানে এই বুঝাতে চাইছিনা যে,আপনি হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করতে পারবেন না।কিন্তু সমালোচনা করার আগে আপনাকে অবশ্যই সামাজিক এবং ভৌগলিক দুই অবস্থা ভেবেই কথা বলতে হবে।কারন আমদের দেশ যতই সাংবিধানিক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে দাবি করা হোক না কেন,প্রকৃত পক্ষে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ন একটা দেশ।


বি.দ্রঃআমি কোন জাত-ভেদ,ধর্মের দুনিয়া চাই না,আমি মানুষের দুনিয়া চাই।আমার বড় পরিচয় আমি মানুষ এবং আপনারাও মানুষ।

পাকিস্তানিদের সাথে খেলার মাঠেও রাজনিতী মিশানোর কারন



কিছু নোংরা মনের রাজনীতিকের কল্যানে পাকিস্তানের সেনা বাহিনী আমাদের নিজেদের কিছু লোকের সহায়তায় ৭১-এ যেটা করেছে তার দায়পাকিস্তানি গোটা জাতির উপর চাপিয়ে দেয়াটা কতটা যৌক্তিক বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় কিছু পাকিস্তান অনুসারী বাংলার জারজ পাকিস্তানি দালালেরা।যে সব বাংলাদেশী নাগরিক বাংলাদেশের চেয়েও পাকিস্তানকে বেশী ভালবাসেন। যারা মনে করেন যে দেশটা বাংলাদেশ না হয়ে পাকিস্তান থাকলেই বেশী ভালো হতো।একাত্তরে কোন যুদ্ধাপরাধ হয় নাই।সামান্য গণ্ডগোল হয়েছিলো।তাদের জন্য মুখে থুথু দেওয়া ছাড়া আমার আর কোন ঘৃনা প্রকাশ করার মত তেমন শক্তি নাই।তাদের কথার উত্তর দিতেও আমার রুচিতে বাধে।যারা বাংলা মায়ের শহীদের রক্ত,মা-বোনের উপর অমানবিক নির্যাতনকে অস্বীকার করে পাকিস্তানির দালালি করে,পাকিস্তানি ক্রিকেট টিমকে স্বাগতম জানিয়ে ম্যারি আফ্রিদি আফ্রিদি চুদায় তাদের জন্ম নিয়ে সন্দীহান হয় খুব গভীর ভাবেই।
খেলার সাথে, সমর্থনের সাথে মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্কটা কি বুঝিনা? আপনি বলেন খেলোয়াররা তো ধর্ষণ/হামলা করেনি?তাদের বলতে চাই,পাকিস্তানিরা খেলছে কি কারনে?তাদের দেশের জন্য,তাদের পতাকার জন্য অবশ্যই।যেমন আমাদের বাংলার ১১ জন দামাল খেলে দেশের জন্য,আমাদের লাল-সবুজ পতাকার জন্য,এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।অপরদিকে পাকিস্তান নাম,পতাকা,জাতিটাই আমাদের জন্মগত ভাবে শত্রু।তাহলে আমরা তাদের কিভাবে সমর্থন করি বলে বুঝাবেন কি!যারা স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আমাদের কাছে ক্ষমা চাইনি,যারা এখনো যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে অমানবিক বলে দাবি করে বাঁচাতে চায় তাদের দূসরদের।তারপরেও কেন আমরা খেলার সাথে রাজনিতী মিশাবো না আপনারাই বলেন পাকিস্তানি জারজরা। একটি দেশের জাতীয় দল সেই দেশের প্রতিনিধিত্ত করে।দেশের জাতীয় পতাকা বহন করে।দেশের জাতীয় দল যেখানে যাবে,দেশের পতাকা তুলে ধরবে।এই দলের সাফল্য-ব্যর্থতার সাথে পুরো জাতির হাসি কান্না জড়িয়ে থাকে।এইকারনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোন ম্যাচ জিতলে আমাদের পুরো জাতি জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে।হারলে দলের খেলোয়াড়দের মত পুরো জাতি শোকাচ্ছন্ন থাকে।দলের খেলোয়াড়েরাও যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামে তখন আর সে শুধুই একজন খেলোয়াড় থাকেনা,হয়ে যায় নিজ দেশের রাষ্ট্রদূত।নিজের দেশের জাতীয় দলের বিরুদ্ধে,জাতীয় পতাকার বিরদ্ধে,পুরো জাতির বিরদ্ধে যে সমর্থন করে সে কি রাজাকার নয়?
আচ্ছা এখন পাকিস্তানি প্লেয়ারদের আমাদের দেশের প্রতি আমাদের জাতির প্রতি মনোভাব দেখি কেমন- তাদের সবচেয়ে ভদ্র প্লেয়ার মিসবাহ উল হক আমাদের দেশে বিজয়ের মাসে অভিনন্দন জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
শহীদ খান বাংলাদেশ সফরে বলেছিলেন,"আমাদের সাথে বাংলাদেশের হিসেবটা পুরোনো।"
আব্দুর রাজ্জাক (ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম ভদ্রলোক) খোঁচা মেরে বলেছিল,নিজ দেশে খেললে দর্শকরা তাদের দলকে সমর্থন দেবেন এটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমাদের খেলা হলেও গ্যালারি থেকে আমাদের পতাকা উড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়।‘
কিছুদিন আগেই সালমারা পাকিস্তান সিরিজ খেলতে গিয়েছিল। পরোক্ষভাবে তাদের দেশে খেলা ফেরানোই ছিল লক্ষ।অথচ তারা সেই সালমাদেরই রীতিমত অপমান করেছিল জিও টিভি ফান শোতে।০৭অক্টোবর রাত ১১টায় এক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে পাকিস্তানের জিও টিভি। যেনতেন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জার্সি পরিয়ে দুই মহিলাকে উপস্থিত করা হয়। উপস্থাপক বাংলাদেশের জার্সি পরিহিতকে সালমা খাতুন (বাংলাদেশের অধিনায়ক) হিসেবে মঞ্চে ডাকেন। সেখানে দেখা যায়, ওই সালমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে মঞ্চে আসেন। উপস্থাপক তখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, খেলায় তো হার-জিত থাকেই। এতে কান্নার কী আছে? ওই নারীশিল্পী উত্তর দেন, শুধু হেরে যাওয়ার জন্য কাঁদছি না। তোমরা আমাদের ডেকে এনে কেন হারালে সেজন্য কাঁদছি। উপস্থাপক এবার উপহাস করে বলেন, আমরা ভিআইপি নিরাপত্তা দিয়ে তোমাদের নিয়ে এসেছি। অথচ তোমাকে দেখলে মনে হয় তোমার সামাজিক নিরাপত্তা নেই।
উপস্থাপক বাংলাদেশের জার্সি পরিহিত আরেক শিল্পীর সানগ্রাস দেখিয়ে বলেন, তোমার সানগ্লাস দেখলে মনে হয় তুমি বাংলাদেশ থেকে হাওয়াই জাহাজে (বিমান) করে আসোনি। বাইক চালিয়ে এসেছ। এরপর আবার জিজ্ঞেস করেন, তুমি এত ভালো উর্দু বল কীভাবে? উত্তরে সালমা খাতুনের অভিনয়কারী শিল্পী বলেন, ফেসবুকে আমার অনেক পাকিস্তানি বন্ধু আছে তো, তাই। এ সময় পাশের পাকিস্তানি অধিনায়কের ভূমিকায় অভিনয়কারী শিল্পী দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বলেন, উনি ফেসবুকে তার ছবি দেননি। এ ঠাট্টার অর্থ ফেসবুকে ছবি থাকলে পাকিস্তানি ছেলেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হতো না। এভাবেই নানা অপমানজনক কথায় পূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানের এ অংশটি।
ভিডিও দেখতে-
https://www.facebook.com/bdcricvideos/videos/vb.1590441024536126/1683448...
এরপরেও কি আপনি বলবেন আমরা কেন খেলার সাথে রাজনিতী মিশাই?আর তার উত্তর হুমায়ুন আজাদ স্যারের ভাষায় বলতে গেলে,“পাকিস্তানিরা যখন ফুল নিয়ে আসে আমি তখনও তাদের অবিশ্বাস করি।”এরপরেও যদি আমার কথা না বুঝেন,পাকিস্তানি সাপোর্ট করেন তাহলে আপনি একটা পাকিস্তানি জারজ বলেই আমার কাছে প্রসিদ্ধ লাভ করবেন। বাংলাদেশের বেলায় আমি অন্ধ। যে জাত আমাদের ৩০ লাখ মানুষের রক্তে দেশকে অবলীলায় রাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়, এক আঙ্গুলের ইশারায় অপারেশন সার্চলাইটের মত ঘৃন্য অভিযান চালায়, তাদেরকে আবার সমর্থন!যে মাটিতে দাড়িয়ে আছি, সেই মাটিতেও লেগে আছে অনেক শহীদের গায়ের “রক্ত” অথবা কোন হাড়গোড়ের স্পর্শ।তাদের আর্তচিৎকার।সেই ১৯৭১ না দেখা কান্না, মা-বোনের চিৎকার কানে বাজে,রক্তের ছাপ চোখে ভেসে উঠে।ভালোবাসি বাংলাদেশ,আর নিস্বার্থ ভাবেই সারা জীবন বাংলাদেশের পথেই থাকতে চাই।আর যতদিন বাঁচি এই দু-দিনের দুনিয়ায়,ততদিন পাকিস্তানিদের দু-চোখ ভরে ঘৃনা আর থুথু ছুড়ে দিতে চাই।
জয় বাংলা

বিষয় যখন নারীর পিরিয়ড



পিরিয়ড প্রত্যেক সুস্থ স্বাভাবিক নারীর জীবনে একটি অতি স্বভাবিক ব্যাপার এবং নারী স্বাস্থ্যের ভীষন গুরুত্বপূর্ন একটি দিক। পিরিয়ড,ব্যাপারটা প্রকৃতি প্রদত্ত। প্রত্যেকটা মানব সন্তানের জন্ম হওয়ার প্রথম এবং প্রধান সোপান এটা। কিন্তু এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছি না। পিরিয়ড নামক শব্দটা কারো মুখে শোনা মাত্রই তার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে ভুল করিনা।যেন এটা খুব লজ্জার কথা।যদি কোন মেয়ের আকস্মিক ভাবে পিরিয়ড হয়,এবং তার কাপড়ে কোন রক্তের দাগ দেখতে পাই তাহলে বড়রা থেকে শুরু করে ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত সেই কাপড়ে লেগে থাকা রক্ত নিয়ে মেয়েকে ইঙ্গিত করে চোখ টিপাটিপি করি।সত্যি কথা বলতে,আমিও করছি আমার কোন বন্ধুর কাপড়ে লেগে থাকা তাজা রক্তের দাগ নিয়ে এবং সাথে আমার সকল বন্ধুরা।সেই দিনটা ঐ মেয়েকে নিয়ে আমরা হাসাহাসি করে যে কত মজা পাইছিলাম তা বলে শেষ করা যাবে না।তবে আমাদের সারাদিনের টপিক ছিল ঐ মেয়ে বন্ধুর কাপড়ে তাজা রক্তের দাগ লাগা নিয়ে।যাকে কাছে পাইছি তাকেই বলছি অধীর আগ্রহ নিয়ে আজ অমুকের পিরিয়ড হইছে।জামা,ব্রেঞ্চে রক্তের দাগ দেখছি আমরা।কারন আমাদের সমাজটাই শিখাইছে এরকম।কিন্তু এখন দিন বদলাইছে,সময় বদলাইছে। তারপরেও দোকানে ন্যাপকিন কিনতে যাওয়ার পর দোকানীর বাঁকা চাহনি,চাপা হাসি,অতি উৎসাহী মুখ,চুপিসারে ক্রেতার হাতে গুঁজে দেয়া প্রভৃতি ঘটনার সম্মুখীন প্রায় সব মেয়েকেই হতে হয়।

রেনেসাঁ যুগে নারীর ঋতুস্রাবের রক্তের প্রতি মানুষের ঘৃণা এবং ভয় এতো বেশি ছিলো যে একে বিষ বলে ধারণা করা হতো। বলা হতো এই বিষ থেকে তৈরি হয় বিষাক্ত বাষ্প এবং তা নারীর মাঝে হিস্টেরিয়ার উদ্রেক করে। বিংশ শতাব্দীতে এসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এখনো পর্যন্ত ইন্ডিয়ার কিছু জায়গায় ঋতুস্রাবের প্রতি আছে ভীষণ ট্যাবু। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে কোনো নারী রান্না করলে সেই খাবার খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় এমনও নিয়ম আছে যে এই সময়টা নারীকে কাটাতে হবে গোয়ালঘরে।এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে নানা কথা।তবে গ্রন্থ গুলোর একটা কমন তসবি হচ্ছে পিরিয়ড চলা কালীন মেয়ে অপবিত্র থাকে এবং সেই সময় তারে দিয়ে কিছু করা বা ধর্মীয় কোন কাজ করানো যাবে না।এই শতাব্দীতে একটি ভয়াবহ কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে,নারীর পিরিয়ড চলাকালীন সময় যদি কোন পুরুষ ঐ নারীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হয় তাহলে সেই পুরুষের লিঙ্গ ছোট হয়ে যাবে।অথচ বিজ্ঞান সম্মত ভাবে কথাটা কেবল উদ্ভটই হিসাবে প্রমানিত হয়।

নারী হয়ে জন্ম নেবার কারণে জীবনে একবার হলেও নিজেকে অভিশাপ দেননি, এমন নারী হয়তো বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে খুব কম।নারীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়েই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত ছিল ভয়াবহ সব কুসংস্কার যা এখনো বজায় আছে বহাল তবিয়তে। দেখুন কালের সাথে সাথে কী করে বদলেছে এসব কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। বদলে গেলেও মানুষের মধ্য থেকে পিরিয়ড নিয়ে ভয় ও ঘৃণা দূর হয়নি মোটেই। আপনার আশেপাশে এমনকি আপনার পরিবারের পুরুষ এমনকি নারীদের মাঝেও রয়েছে এমনই সব কুসংস্কার। আজ থেকে দু-হাজার বছর আগে, যাকে বলা হতো Biblical Times, এ ঋতু চলাকালীন সময়ে সেই নারীকে এতোটাই অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য মনে করা হতো যে এই পুরো সময়টা তাকে পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হবে।পিরিয়ড ঋতুচক্র নারী জীবনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পূর্বে ধারণা করা হতো পিরিয়ড অনেক অপবিত্র একটি বিষয়। কিন্তু বর্তমানে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। কোনো নারীর নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার অর্থ তিনি স্বাভাবিকভাবে সন্তান ধারণে সক্ষম।

একটা মেয়ের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চলতে হয় এবং কমবেশী নানা দূর্ভোগ পোহাতে হয়।এই সময় মেয়েদের জরায়ু দিয়ে অনেক রক্তপাত হয়,অনেকের মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায়,পেটে ব্যাথা অনুভব করে,মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে ইত্যাদি ইত্যাদি।পিরিয়ড সম্পর্কে নানা ভুল ধারনা থাকার কারনে দেখা দেয় নানা রকম স্বাস্থ্য এবং অনেক সময় দেখা যায় দাম্পত্য জীবনেও কলহের সৃষ্টি হয় নানা রকম কুসংস্কারের কারনে।কিন্তু আমার জানামতে খুব কম বাবা-মা কিংবা পরিবারই আছেন মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে উদারচিত্তের ব্যবহার।যেখানে শিক্ষিত সমাজেই রয়েছে এই পিরিয়ড নিয়ে নানা বিভ্রান্তি,সেখানে অল্পশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত লোকের কথা একবার ভাবুন তারা কত পিছিয়ে আছে সামাজিক প্রতিবন্ধিকতায়।পিরিয়ড মেয়েদের লোকানোর জিনিস না বরং গর্ভ করার বিষয় তার প্রথম ঋতুচক্রে।কারন এই পিরিয়ডের কারনেই সে মা হওয়ার অধিকার রাখে।

তবে হ্যাঁ,আমি বিশ্বাস করি যে, একটা সময় আসবে যখন আর কোন জড়তা থাকবে না মানুষের মনে পিরিয়ড নিয়ে।কিন্তু কবে,কোথায়,কখন পিরিয়ড নিয়ে জড়তা কাটবে তা শুধু অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকা সেই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে।তবে হয়তো জড়তা মুছে যাওয়া দিনকাল বেশীদিন নাই।কারন আজকাল শহুরে শিক্ষিত সমাজ এবং গ্রামেও বিভিন্ন গ্রামো কমিউনিটি হেলথ সেন্টার কিংবা ক্লিনিকে পিরিয়ড নিয়ে নানা রকম খোলামেলা কথা এবং নানা ধরনের কুসংস্কার দূরীকরনে কাজ করে যাচ্ছে সরকার এবং সমাজ সচেতন জ্ঞানী লোকেরা।

নারীর সমঅধিকার ব্যর্থতার কারন নারী নিজেই



নারীদের অধিকার আদায় করা, নারী নির্যাতন বন্ধ করা সমাজের সবার মানসিকতা না বদলানো পর্যন্ত প্রায় অসম্ভব।নারীর অধিকারের প্রশ্নে সাংবিধানিক ও আইনগত জোড়ালো সমর্থন থাকা সত্ত্বেও পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিদ্যমান থাকার কারণে আমাদের সমাজে নারীদের এখনো সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।আমাদের দেশে নারীদের অধিকার সচেতনতার অভাবে নারীরা একদিকে যেমন তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ এবং আইনী সহায়তা থেকে বঞ্চিত,  অন্যদিকে বৈষম্যমূলক আইনের কারণে তাদের নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।যদিও নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের শ্রমে-ঘামে, মেধা-মননে আজকের সভ্যতা এ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।কিন্তু আমরা নারীদের প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিতে অক্ষম।আর তার জন্য মেয়েদেরও কিছু যে দোষ আছে!আমরা যদি একটু পিছনে গিরে তাকাই তাহলেই বুঝতে পারব নারীদের কি আদো কোন দোষ আছে কিনা?তবে আমি পিছনে ফিরে না গিয়ে সরাসরি বলছি কিভাবে মেয়েদের কিঞ্চিত হলেও দোষ রয়ে যায় তাদের অধিকার আদায় করে নেওয়ার ক্ষেত্রে। আমাদের দেশের নারী আন্দোলনে শিক্ষিত মানুষেরা, বিশেষ করে নারীরা অংশগ্রহণ করছেন না। দেখা যায়, তারা নিজেরা শিক্ষা পাচ্ছেন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন, তাই অন্যের অধিকার, বিশেষ করে সাধারণ দরিদ্র বা গ্রামীণ নারী বা কিশোরীর অধিকার লঙ্ঘন হলে তারা কিছু বলছেন না। এমনকি, যতক্ষণ না এই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির কোনো নারী নিজে আক্রান্ত হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত নিরব থাকছেন তারা।আর এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এবং ধর্মের কুসংস্কারের মাধ্যমে মেয়েদের যে, বেড়াজালে আটক করে রাখা হইছে তার জন্য প্রয়োজন মেয়েদের মধ্যে ঐক্যতার।ঐক্য ছাড়া নারী কখনো ধর্মীয় বেড়াজাল কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না তেমনি তাদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না।আমরা সবাই বেগম রোকেয়ার কথা জানি। বেগম রোকেয়া নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন। সে সময় বলতে গেলে নারীর কোনো স্বাধীনতাই ছিল না। বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা, বাড়িতে মেহমান এলেও তাকে লুকিয়ে রাখা হতো। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করে গেছেন। এ জন্য তাকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয়। বেগম রোকেয়ার মতো অনেক সম্মানিত ব্যক্তি আছেন, যারা নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করছেন।

কিছু কিছু ব্যাপারে মেয়েদেরও দোষ থাকে। তারাও মাঝেমাঝে ভুল করে ফেলে। এমন কিছু করে, যাতে তার পরিবারকে লজ্জায় পড়তে হয়। নারী সম্পর্কে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি পান্টাতে হবে। এখনও গ্রামে কোনো নারী পুরুষ কর্তৃক নির্যাতিত হলে নারীরাও নির্যাতিত নারীর বিভিন্ন দোষ তুলে ধরার চেষ্টা করে যা গ্রাম্য সমাজে খুব ভালোভাবেই চোখে পড়ে। নারীর প্রধান শত্রু আরেক নারী। একজন নারী আরেক নারীর প্রতি হিংসান্বিত হয়ে অত্যাচারের চুড়ন্তে যেতে পারে। নারীকে আক্রমণের জন্য একজন নারীর মুখেই অবলীলায় উচ্চারিত হয় বেশ্যার মতো অপমানকর হিংষাত্বক শব্দ। এখানে শিক্ষিত-অশিক্ষত নারীর মধ্যে কোনো তফাত নেই। একজন পুরুষ ক্রোধ বা হিংসার বশবর্তী হলেও কখনও আরেক পুরুষকে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করে অপমান করে না।

বেশিরভাগ ঘটনায় দেখা গেছে যে, কোনো নারীর ওপর নিপীড়ন চালানোর ঘটনায় একজন বা তার অধিক নারী জড়িত। শুধু জড়িত নয়, কখনও কখনও এরাই নারীর ওপর অত্যাচার চালাতে মূল ভূমিকা পালন করেন। নারীমুক্তির কথা যদি আসে তবে নারীকে প্রথম নারীর কাছ থেকেই মুক্তি নিতে হবে।

ব্লগ,ব্লগের ইতিহাস,ব্লগিং এবং ব্লগার



আপনারা সবাই ব্লগের উৎপত্তি,ব্লগ এবং ব্লগার মানে ভালোভাবে জানেন বুঝেন।কিন্তু আসলে আমি আপনাদের ব্লগ কাকে বলে আর ব্লগারই বা কারা এসব বিষয়ে জানানোর জন্য লিখছিনা। তাই কিছু মনে করবেন না। আমি ব্লগিং জগতে আসা আমার মত নবীন এবং যারা ব্লগিং করতে চাইছেন কিন্তু এখনো ব্লগিং করেনি তাদেরকে কিছু বলার উদ্দেশ্যে লিখছি। আরও লিখছি তাদের উদ্দেশ্যে যাদের ব্লগ এবং ব্লগার শব্দ নিয়ে খানিক চুলকানি আছে। নিয়মিত ব্লগ পাঠকরা শুধু পড়ে যান এবং আপনার মতামত জানিয়ে চলে যান। আর নতুনরা দয়া করে পড়ুন, বুঝুন, ধারনা পাল্টান।


ব্লগ: ব্লগ হচ্ছে এমন একটা ওয়েব সাইট যা দৈন্দিন দিন লিপি হিসাবে ডাইরীর মত করেই একজন ব্যক্তি তার মতামত লিখে ব্যবহার করতে পারে শুধু মাত্র নির্দিষ্ট ব্লগ ওয়েব সাইট গুলাতে রেজিষ্ট্রেশন করে বা নিজস্ব ব্লগ ওয়েব সাইট খুলে।ব্লগে সাধারনত ব্যক্তিগত বিষয় অভিজ্ঞতা থেকে যে কোন কিছু লিখে তা অন্যের সাথে শেয়ার করা।এখানে আপনি ফেইসবুকের মত বরং আরো সুন্দর করে পোস্ট দেয়া তো বটেই আরো মিডিয়া ফাইল এখানে আপলোড দিতে পারবেন। এর জন্যে আপনাকে ওয়েব কোডিং যেমন – HTML, CSS, Javascript, Php জানতে হবে না।
অর্থাৎ ব্লগ হচ্ছে এমন এক উন্মুক্ত প্লাটফর্ম যেখানে আপনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা শেয়ার করতে পারবেন এবং সেখানে সকলে মতামতও প্রকাশ করতে পারবে।
এই উন্মুক্ত প্লাটফর্মে কেউ লিখছেন দেশ নিয়ে, কেউবা লিখছেন দেশের বিরুদ্ধে। আর কেউবা লিখছেন ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষে। যে যাই লিখেন না কেন, প্রত্যেকের রয়েছে নিজ নিজ অভিমত। যাই লেখেন না কেন, মানসম্মত আর তথ্যবহুল লেখায় খোরাক পাচ্ছেন তাদের বেশুমার ভক্তবৃন্দ।
ব্লগ হচ্ছে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের মাধ্যম।যেমন আগে মানুষ বিভিন্ন কিছু লিখে বা নোট করে রাখত ডায়রীতে তেমন সভ্যতার বিকাশের ফলে মানুষ এখন তা লিখে বা নোট করে রাখে ব্লগ নামক উন্মুক্ত প্লাটফর্মে যা অন্যের সাথে শেয়ার করার যোগ্য বলে বিবেচিত।


ইতিহাস : ব্লগ শব্দটি ইংরেজি Blog এর বাংলা প্রতিশব্দ, যা এক ধরণের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। ইংরেজি Blog শব্দটি Weblog এরসংক্ষিপ্ত রূপ। ।ওয়েবলগ শব্দটির শব্দটির স্রষ্টা মার্কিন নাগরিক জোম বার্গার যিনি ১৯৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন । ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের মন্তব্য করতে পারেন। ১৯৯৯ সালে পিটার মহোলজ নামে এক ব্যাক্তি weblog শব্দটিকে ভেঙ্গে দু’ভাগ করেন- ‘We Blog’।‘We Blog’ শব্দটার ছোট্ট সংস্করণ "ব্লগ" চালু করেন পিটার মেরহোলজ। ১৯৯৯ এর এপ্রিল বা মে মাসের দিকে পিটার মহোলজ তার ব্লগে ‘Weblog’শব্দটিকে ভাগ করে কৌতুক করে ‘BLOG’বলে সম্বোধন করেন।তার ঠিক পরপরই, পাইরা ল্যাবস-এ ইভান উইলিয়ামস "ব্লগ"শব্দটা বিশেষ্য এবং ক্রিয়া দুটো হিসেবেই ব্যবহার করা শুরু করেন এবং পাইরা ল্যাবের ব্লগার পণ্যের সাথে সম্পর্ক রেখে "ব্লগার" শব্দটা ব্যবহার করেন, জনপ্রিয় করে তোলেন পরিভাষাটি।ব্লগিং-এর ইতিহাসের সবচেয়ে পুরনো ব্লগার হল জাস্টিন হল নামক ব্যাক্তি।১৯৯৮ সালে ব্রুস আবেলসন সর্বপ্রথম ওপেন ডায়রি নামক দিনপুঞ্জিকার মত ব্লগ তৈরি করেন যেখানে খুব দ্রুত হাজারো অনলাইন দিনপত্রী জন্ম নেয় এবং ওপেন ডায়রিকেই সর্বপ্রথম উন্মুক্ত ব্লগ হিসেবে ধরা হয়।আধুনিক ব্লগের উৎপত্তি ঘটে অনলাইন দিনপত্রী থেকে, যেখানে লোকেরা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের বিবরণ রাখতেন। এধরনের বেশিরভাগ লোকেরাই নিজেদের বলতেন ডায়েরিস্টস, জার্নালিস্টস অথবা জুমালারস। সোয়ার্থমোর কলেজ-এ ১৯৯৪-এর দিকে পড়ার সময় ব্যক্তিগত ব্লগিং-করিয়ে জাস্টিন হল-কে অন্যতম আদি ব্লগার হিসেবে ধরা হয়, যেমনটা ধরা হয় জেরি পুমেল-কেও। ডেভ উইনার-এর স্ক্রিপ্টিং নিউজ-এরও সবচাইতে পুরনো আর সবচাইতে বেশি দিন ধরে চালু থাকা ওয়েবলগ হিসেবে খ্যাতি আছে।(তথ্য-উইকিপিডিয়া)


প্রকারভেদ : ব্লগ সাইট যেমন ব্যাক্তিগত হতে পারে তেমনি শুধু আলোচনা আর মতামত নিয়ে প্রফেশনাল ব্লগসাইটও হতে পারে। শুধু তাই না, আজকাল বড় বড় সব কোম্পানী তাদের প্রডাক্ট লাইনেরও ব্লগসাইট তৈরী করেন। ব্লগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।তার উপর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্লগের প্রকার তুলে ধরলাম-
১)ব্যক্তিগত ব্লগ :নিজের ব্যক্তিগত বিষয় যে ব্লগে তুলে ধরে যে ব্লগ তৈরী করা হয় সেটাই ব্যক্তিগত ব্লগ।
২)কোম্পানি/প্রাতিষ্ঠানিক : প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য দিয়ে যে ব্লগ তৈরী করা হয়।যেমন-মাইক্রোসফ্ট, গুগল তাদের নিজস্ব ব্লগ আছে।
৩)সামাজিক ব্লগ : সমাজের বিভিন্ন সাম্প্রতিক বিষয়,সামাজিক উন্নয়ন,অবক্ষয়ের আলোকে যে ব্লগ তৈরী করা হয়।
৪)বিনোদন মূলক ব্লগ : এই ব্লগে ফটো,মুভি,নাটক,ভ্রমন,সাংস্কৃতি বিষয়ের আলোকে তুলে ধরা হয়।
৫)প্রশ্ন ব্লগ : প্রশ্ন ব্লগে ব্লগার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। এই প্রশ্ন কোন ফর্ম বা ই-মেইলের মাধম্যে ব্লগাদের কাছেপৌছানহয়।
৬)খবর ব্লগ : যে সকল ব্লগে বিভিন্ন সাম্প্রতিক খবরের উপর বিশ্লেষন স্থান পায় তাদেরকে খবর ব্লগ বা News Blog বলে। এরকম আরো অনেক ব্লগ সাইট রয়েছে যা খুবই জনপ্রিয়।


ব্লগিং : ব্লগিং জিনিসটা যদি সংক্ষেপে বলি তাহলে বলব বিভিন্ন ব্লগে বা ওয়েভ সাইটে যা লেখা লেখি হয় তাই হল ব্লগিং । এই ছাড়ানিজের প্রত্যাহিক জীবনের কিছু ঘটনা বা একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করাকে ব্লগিং বলে।


ব্লগিং করতে যা প্রয়োজন :
১)ব্লগিং করতে আপনার অবশ্যই যা প্রয়োজন তা হল মোবাইল/পিসি/ট্যাবে ইন্টারনেট কানেকশন।
২)একটা ইমেইল এ্যাকাউন্ট।
৩)নির্দিষ্ট ব্লগের সাইটে আপনার একটা ব্লগ এ্যাকাউন্ট।
৪)টাইপিং সফটয়্যার ইনস্টল থাকতে হবে এবং টাইপিং স্পিড মোটামুটি সন্তোষজনক হতে হবে।
৫)ব্লগ সাইটের সাথে পরিচিত হতে হবে এবং ব্লগের নীতিমালা গুলো জানা থাকতে হবে।


ব্লগার : যারা মুলত ব্লগে লিখে তাদেরই ব্লগার বলার হয়।নামে বেনামে ব্লগে কত শত লেখক নিজের চিন্তা-চেতনার আঙ্গিকে কতকিছু নিয়ে মন্তব্য আর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে থাকেন। হাজারো লেখকের সারিতে লুকিয়ে থাকেন কত শত মুক্তচিন্তার মুক্তবুদ্ধির মহানায়করা।যে যাই লিখেন না কেন, প্রত্যেকের রয়েছে নিজ নিজ অভিমত। যাই লেখেন না কেন, মানসম্মত,যুক্তিগত লেখায় ভরপুর থাকে লেখনীর মাঝে।


পরিশেষে, ব্লগিং হচ্ছে একটি শক্তিশালি মিডিয়া বা গণমাধ্যম।ব্লগিং এর সাহায্যে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। ব্লগিং এর ফলে প্রতিটি দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন ব্যাপারে অভাবনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব।এর সঠিক প্রয়োগ আমাদের সকলের জন্য সুফল বয়ে আনবে ।ব্লগিং সত্যিই এখন অনলাইন লাইফের সবচেয়ে স্মার্ট প্রফেশন। তাই আজই ব্লগিং শুরু করতে পারেন আপনিও! ব্লগিং লাইফে আপনাকে স্বাগতম!
বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রকাশিত লেখা ও মন্তব্যের দায় একান্তই সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারীর, ব্লগ কর্তৃপক্ষ এজন্য কোনভাবেই দায়ী থাকবে না।অর্থাৎ প্রতিটা ব্লগিংয়ের জন্য সম্পুর্ন অপরাধ কিংবা মিথ্যা অপচারের দায় ব্লগারের উপর বর্তাবে।

সনাতন/হিন্দু ধর্মের বর্ণ প্রথা সম্পর্কে সবিশেষ



সনাতন বা হিন্দু ধর্মের ভয়াবহ অভিশপ্ত অন্যতম প্রথা হলো বর্ণ প্রথা।যা মানুষকে উচুস্তর এবং নিম্নস্তরে বিভক্ত করা হয়েছে।অর্থাৎ হিন্দু ধর্ম অনুসারে সব মানুষ সমান নয় এবং এটি একটি জাত ধর্ম অর্থাৎ আপনি জন্মের সময় যে অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন আপনার বর্ন পরিচয়ও তাই হবে।এই বর্ণ প্রথা মূলত বিভক্ত করা হয়েছে কর্মের ভিত্তিতে।আধুনিক সংস্কারক হিন্দুরা যদিও এখন এসব জাত-পাত মানেন না, কিন্তু মধ্যবিত্ত ও মধ্য-শিক্ষিত সমাজে এর প্রভাব এখনো রয়ে গেছে।সাম্প্রদায়িকতাই এ ধর্মে বর্ণভেদের একমাত্র কারণ। নৈতিক আচরণভেদ, গায়ের রঙ ও পেশার ভিত্তিতে হিন্দু ধর্মে বর্ণভেদের সৃষ্টি হয়েছে।উচুবর্ণের হিন্দুরা তাদের দৃষ্টিতে যারা নিচুবর্ণ তাদেরকে নিয়ে প্রতিনিয়ত তুচ্ছ তাচ্ছিল,হাসি তামাশা করে এবং নিম্ন বর্ণদের বিভিন্ন নামে সম্বোধন করে থাকে।যেমন-মুচি,মেথর,পোদ,চাড়াল ইত্যাদি।এছাড়া উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের হিন্দুর হাতের রান্না কিংবা একসাথে কখনও খেতে পারবেনা।কাপড় পরিধানের ক্ষেত্রেও বর্ণবাদ প্রথায় ব্রাহ্মণদের জন্য সাদা, ক্ষত্রিয়দের জন্য লাল,বৈশ্যদের জন্য হলুদ আর শুদ্রদের জন্য কালো রঙয়ের কাপড় পরিধান নির্ধারিত ছিল।ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করত ব্রাহ্মণগণ,রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিত ক্ষত্রিয়গণ আর বৈশ্যগণ ক্ষমতায় একেবার হীন আর শুদ্রগণ ছিল তাদের সকলের সেবক।এবং পৈতা পরিধান করা ব্রাক্ষণ ছাড়া আর কারও জন্য অনুমোদিত ছিল না।ব্রাহ্মনরা আরো প্রচার করে যে,ব্রাহ্মনদের সৃষ্টি হয়েছে ভগবানের মস্তক থেকে, ক্ষৈত্রীয়র সৃষ্টি হয়েছে ভগবানের বুক থেকে, বৈশ্যের সৃষ্টি হয়েছে ভগবানের পেট থেকে আর শুদ্রের সৃষ্টি হয়েছে ভগবানের পা থেকে।সুতরাং,ব্রাহ্মনরা উচু জাতী আর শুদ্র সর্বনীচু জাতী।


সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে এখনও বর্ণ প্রথা প্রবল।এদেশে এখনও ব্রাহ্মণের ছেলের বিয়ের জন্য ব্রাহ্মণ মেয়ে ,দত্ত ছেলের জন্য দত্ত মেয়ে,কর্মকারের ছেলের বিয়ের জন্য কর্মকারের মেয়ে লাগবেই।কারন অন্য জাতের মেয়ে হলে নাকি আবার জাতকূল ধুয়ে এক হয়ে যায়।এমনই অনেক হিন্দু পরিবার আছে,যেখানে অভিভাবকরা তাদের ছেলেদের/মেয়েদের বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে দিতে পারছে না শুধুমাত্র একই বর্ণের সুযোগ্য ছেলে/মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না বলে।দুঃখের কথা কি বলব,আমার মামা বিয়ে করতে পারছেনা সুযোগ্য ভালো মেয়ে পাওয়া সত্যেও।তার কারন হচ্ছে জাতের সাথে জাতের মিল হচ্ছে না।তাহলে আপনারাই বুঝোন এই জাত প্রথাটা কতটা ভাইরাস হিসাবে এখনো আমাদের সমাজে যুগের পর যুগ টিকে আছে।বর্ণ প্রথার প্রভাব সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে কেমন তার সম্পর্কে আশা করি কিছু হলেও ধারনা পেলেন।এখন মূল কথায় আসা যাক-

প্রথমেই বলে নিই, হিন্দু সমাজে চারটি বর্ণ প্রচলিত আছে।যেমন- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্র। আমরা মনে করি যে, একজন ব্রাহ্মণের পুত্রই ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়ের পুত্রই ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের পুত্রই বৈশ্য, শূদ্রের পুত্রই শূদ্র। আসলে ঘটনাটি সঠিক নয়।বেদে স্পষ্ট বলা আছে, যার যার কার্যকারণে তার বর্ণ নির্ধারণ করবে। এবং সকলেই সকলের উপর নির্ভরশীল।

তাহলে আসুন এবার দেখি সনাতন ধর্মে বর্ণ প্রথা সম্পর্কে ‘বেদ’ এ কি বলা আছে—

ঋগবেদ ১.১১৩.৬

"একজন জ্ঞানের উচ্চ পথে(ব্রাহ্মন) ,অপরজন বীরত্বের গৌরবে(ক্ষত্রিয়) , একজন তার নির্দিষ্ট পেশাভিত্তিক(বৈশ্য), আরেকজন সেবার পরিশ্রমে(শূদ্র)। সকলেই তার ইচ্ছামাফিক পেশায়,সকলের জন্যই ঈশ্বর জাগ্রত।

ঋগবেদ ৯.১১২.১

একেকজনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা একেক রকম আর সে অনুসারে কেউ ব্রাক্ষ্মন কেউ ক্ষত্রিয় কেউ বেশ্য কেউ শূদ্র।

ব্রাক্ষ্মন কে? ঋগবেদ ৭.১০৩.৮

যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত, অহিংস,সত্য,নিষ্ঠাবান, সুশৃঙ্খল,বেদ প্রচারকারী, বেদ জ্ঞানী সে ব্রাহ্মন।

ক্ষত্রিয় কে?

ঋগবেদ ১০.৬৬.৮

দৃঢ়ভাবে আচার পালনকারী, সত্‍কর্মের দ্বারা শূদ্ধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন,অহিংস,ঈশ্বর সাধক,সত্যের ধারক ন্যায়পরায়ন,বিদ্বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা,অসত্‍ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়।

বৈশ্য কে?

অথর্ববেদ ৩.১৫.১

“দক্ষ ব্যবসায়ী দানশীল চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী।”

শূদ্র কে?

ঋগবেদ ১০.৯৪.১১

“যে অদম্য,পরিশ্রমী, ­ অক্লান্ত জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা,লোভমুক্ত ­ কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।”

এজন্যেই পবিত্র বেদ ঘোষনা করেছে সাম্যের বানী-“অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায় যুবা পিতা স্বপা রুদ্র এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ।”(ঋগবেদ ৫.৬০.৫)

অর্থাৎ,কর্ম ও গুনভেদে কেউ ব্রাহ্মন,কেউ ক্ষত্রিয়,কেউ বৈশ্য,কেউ শুদ্র।তাদের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয়।ইহারা ভাই ভাই । সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে ।ইহাদের পিতা তরুন শুভকর্ম ঈশ্বর এবং জননীরুপ প্রকৃতি।পুরুষার্থী সন্তানই সৌভাগ্য প্রাপ্ত হন।

বেদের কোথাও বলা নেই এক বর্ণের মানুষ আরেক বর্ণের পার্থক্য।কিন্তু উচ্চ বর্ণের মানুষরা নীচু বর্ণের মানুষদের মানুষ মনে করে কিনা সন্দেহ।

আশা করি বর্ণ প্রথা সম্পর্কে সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের আদি অন্ত পরিষ্কার করতে পেরেছি।আর এখনও যদি কেও ভাবেন সনাতন ধর্মে ব্রাহ্মনরাই উচুস্তরের তাহলে আপনাকে আমার আর বুঝানোর ক্ষমতা নাই।কারন ব্রাহ্মন সেই হওয়ার যোগ্য রাখে যে পাণ্ডিত দিক দিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।হোক সে বৈশ্য,ক্ষত্রিয় অথবা শূদ্র।বর্তমান সমাজে যেহেতু শিক্ষা ও পেশা সবার জন্য উন্মুক্ত তাই এ প্রথা আজ অপপ্রথায় পরিণত হয়েছে।বরং সমাজে বর্ণ ভেদের কারনে বিভাজন দৃশ্যমান, অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দারিয়েছে।এ কারনে চূড়ান্ত রুপে এ প্রথাকে বর্জন করাই মঙ্গলজনক।

বি.দ্রঃআমি কোন জাত-ভেদ,ধর্মের দুনিয়া চাই না,আমি মানুষের দুনিয়া চাই।আমার বড় পরিচয় আমি মানুষ এবং আপনারাও মানুষ।