শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

ব্লগ,ব্লগের ইতিহাস,ব্লগিং এবং ব্লগার



আপনারা সবাই ব্লগের উৎপত্তি,ব্লগ এবং ব্লগার মানে ভালোভাবে জানেন বুঝেন।কিন্তু আসলে আমি আপনাদের ব্লগ কাকে বলে আর ব্লগারই বা কারা এসব বিষয়ে জানানোর জন্য লিখছিনা। তাই কিছু মনে করবেন না। আমি ব্লগিং জগতে আসা আমার মত নবীন এবং যারা ব্লগিং করতে চাইছেন কিন্তু এখনো ব্লগিং করেনি তাদেরকে কিছু বলার উদ্দেশ্যে লিখছি। আরও লিখছি তাদের উদ্দেশ্যে যাদের ব্লগ এবং ব্লগার শব্দ নিয়ে খানিক চুলকানি আছে। নিয়মিত ব্লগ পাঠকরা শুধু পড়ে যান এবং আপনার মতামত জানিয়ে চলে যান। আর নতুনরা দয়া করে পড়ুন, বুঝুন, ধারনা পাল্টান।


ব্লগ: ব্লগ হচ্ছে এমন একটা ওয়েব সাইট যা দৈন্দিন দিন লিপি হিসাবে ডাইরীর মত করেই একজন ব্যক্তি তার মতামত লিখে ব্যবহার করতে পারে শুধু মাত্র নির্দিষ্ট ব্লগ ওয়েব সাইট গুলাতে রেজিষ্ট্রেশন করে বা নিজস্ব ব্লগ ওয়েব সাইট খুলে।ব্লগে সাধারনত ব্যক্তিগত বিষয় অভিজ্ঞতা থেকে যে কোন কিছু লিখে তা অন্যের সাথে শেয়ার করা।এখানে আপনি ফেইসবুকের মত বরং আরো সুন্দর করে পোস্ট দেয়া তো বটেই আরো মিডিয়া ফাইল এখানে আপলোড দিতে পারবেন। এর জন্যে আপনাকে ওয়েব কোডিং যেমন – HTML, CSS, Javascript, Php জানতে হবে না।
অর্থাৎ ব্লগ হচ্ছে এমন এক উন্মুক্ত প্লাটফর্ম যেখানে আপনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা শেয়ার করতে পারবেন এবং সেখানে সকলে মতামতও প্রকাশ করতে পারবে।
এই উন্মুক্ত প্লাটফর্মে কেউ লিখছেন দেশ নিয়ে, কেউবা লিখছেন দেশের বিরুদ্ধে। আর কেউবা লিখছেন ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষে। যে যাই লিখেন না কেন, প্রত্যেকের রয়েছে নিজ নিজ অভিমত। যাই লেখেন না কেন, মানসম্মত আর তথ্যবহুল লেখায় খোরাক পাচ্ছেন তাদের বেশুমার ভক্তবৃন্দ।
ব্লগ হচ্ছে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের মাধ্যম।যেমন আগে মানুষ বিভিন্ন কিছু লিখে বা নোট করে রাখত ডায়রীতে তেমন সভ্যতার বিকাশের ফলে মানুষ এখন তা লিখে বা নোট করে রাখে ব্লগ নামক উন্মুক্ত প্লাটফর্মে যা অন্যের সাথে শেয়ার করার যোগ্য বলে বিবেচিত।


ইতিহাস : ব্লগ শব্দটি ইংরেজি Blog এর বাংলা প্রতিশব্দ, যা এক ধরণের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। ইংরেজি Blog শব্দটি Weblog এরসংক্ষিপ্ত রূপ। ।ওয়েবলগ শব্দটির শব্দটির স্রষ্টা মার্কিন নাগরিক জোম বার্গার যিনি ১৯৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন । ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের মন্তব্য করতে পারেন। ১৯৯৯ সালে পিটার মহোলজ নামে এক ব্যাক্তি weblog শব্দটিকে ভেঙ্গে দু’ভাগ করেন- ‘We Blog’।‘We Blog’ শব্দটার ছোট্ট সংস্করণ "ব্লগ" চালু করেন পিটার মেরহোলজ। ১৯৯৯ এর এপ্রিল বা মে মাসের দিকে পিটার মহোলজ তার ব্লগে ‘Weblog’শব্দটিকে ভাগ করে কৌতুক করে ‘BLOG’বলে সম্বোধন করেন।তার ঠিক পরপরই, পাইরা ল্যাবস-এ ইভান উইলিয়ামস "ব্লগ"শব্দটা বিশেষ্য এবং ক্রিয়া দুটো হিসেবেই ব্যবহার করা শুরু করেন এবং পাইরা ল্যাবের ব্লগার পণ্যের সাথে সম্পর্ক রেখে "ব্লগার" শব্দটা ব্যবহার করেন, জনপ্রিয় করে তোলেন পরিভাষাটি।ব্লগিং-এর ইতিহাসের সবচেয়ে পুরনো ব্লগার হল জাস্টিন হল নামক ব্যাক্তি।১৯৯৮ সালে ব্রুস আবেলসন সর্বপ্রথম ওপেন ডায়রি নামক দিনপুঞ্জিকার মত ব্লগ তৈরি করেন যেখানে খুব দ্রুত হাজারো অনলাইন দিনপত্রী জন্ম নেয় এবং ওপেন ডায়রিকেই সর্বপ্রথম উন্মুক্ত ব্লগ হিসেবে ধরা হয়।আধুনিক ব্লগের উৎপত্তি ঘটে অনলাইন দিনপত্রী থেকে, যেখানে লোকেরা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের বিবরণ রাখতেন। এধরনের বেশিরভাগ লোকেরাই নিজেদের বলতেন ডায়েরিস্টস, জার্নালিস্টস অথবা জুমালারস। সোয়ার্থমোর কলেজ-এ ১৯৯৪-এর দিকে পড়ার সময় ব্যক্তিগত ব্লগিং-করিয়ে জাস্টিন হল-কে অন্যতম আদি ব্লগার হিসেবে ধরা হয়, যেমনটা ধরা হয় জেরি পুমেল-কেও। ডেভ উইনার-এর স্ক্রিপ্টিং নিউজ-এরও সবচাইতে পুরনো আর সবচাইতে বেশি দিন ধরে চালু থাকা ওয়েবলগ হিসেবে খ্যাতি আছে।(তথ্য-উইকিপিডিয়া)


প্রকারভেদ : ব্লগ সাইট যেমন ব্যাক্তিগত হতে পারে তেমনি শুধু আলোচনা আর মতামত নিয়ে প্রফেশনাল ব্লগসাইটও হতে পারে। শুধু তাই না, আজকাল বড় বড় সব কোম্পানী তাদের প্রডাক্ট লাইনেরও ব্লগসাইট তৈরী করেন। ব্লগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।তার উপর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্লগের প্রকার তুলে ধরলাম-
১)ব্যক্তিগত ব্লগ :নিজের ব্যক্তিগত বিষয় যে ব্লগে তুলে ধরে যে ব্লগ তৈরী করা হয় সেটাই ব্যক্তিগত ব্লগ।
২)কোম্পানি/প্রাতিষ্ঠানিক : প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য দিয়ে যে ব্লগ তৈরী করা হয়।যেমন-মাইক্রোসফ্ট, গুগল তাদের নিজস্ব ব্লগ আছে।
৩)সামাজিক ব্লগ : সমাজের বিভিন্ন সাম্প্রতিক বিষয়,সামাজিক উন্নয়ন,অবক্ষয়ের আলোকে যে ব্লগ তৈরী করা হয়।
৪)বিনোদন মূলক ব্লগ : এই ব্লগে ফটো,মুভি,নাটক,ভ্রমন,সাংস্কৃতি বিষয়ের আলোকে তুলে ধরা হয়।
৫)প্রশ্ন ব্লগ : প্রশ্ন ব্লগে ব্লগার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। এই প্রশ্ন কোন ফর্ম বা ই-মেইলের মাধম্যে ব্লগাদের কাছেপৌছানহয়।
৬)খবর ব্লগ : যে সকল ব্লগে বিভিন্ন সাম্প্রতিক খবরের উপর বিশ্লেষন স্থান পায় তাদেরকে খবর ব্লগ বা News Blog বলে। এরকম আরো অনেক ব্লগ সাইট রয়েছে যা খুবই জনপ্রিয়।


ব্লগিং : ব্লগিং জিনিসটা যদি সংক্ষেপে বলি তাহলে বলব বিভিন্ন ব্লগে বা ওয়েভ সাইটে যা লেখা লেখি হয় তাই হল ব্লগিং । এই ছাড়ানিজের প্রত্যাহিক জীবনের কিছু ঘটনা বা একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করাকে ব্লগিং বলে।


ব্লগিং করতে যা প্রয়োজন :
১)ব্লগিং করতে আপনার অবশ্যই যা প্রয়োজন তা হল মোবাইল/পিসি/ট্যাবে ইন্টারনেট কানেকশন।
২)একটা ইমেইল এ্যাকাউন্ট।
৩)নির্দিষ্ট ব্লগের সাইটে আপনার একটা ব্লগ এ্যাকাউন্ট।
৪)টাইপিং সফটয়্যার ইনস্টল থাকতে হবে এবং টাইপিং স্পিড মোটামুটি সন্তোষজনক হতে হবে।
৫)ব্লগ সাইটের সাথে পরিচিত হতে হবে এবং ব্লগের নীতিমালা গুলো জানা থাকতে হবে।


ব্লগার : যারা মুলত ব্লগে লিখে তাদেরই ব্লগার বলার হয়।নামে বেনামে ব্লগে কত শত লেখক নিজের চিন্তা-চেতনার আঙ্গিকে কতকিছু নিয়ে মন্তব্য আর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে থাকেন। হাজারো লেখকের সারিতে লুকিয়ে থাকেন কত শত মুক্তচিন্তার মুক্তবুদ্ধির মহানায়করা।যে যাই লিখেন না কেন, প্রত্যেকের রয়েছে নিজ নিজ অভিমত। যাই লেখেন না কেন, মানসম্মত,যুক্তিগত লেখায় ভরপুর থাকে লেখনীর মাঝে।


পরিশেষে, ব্লগিং হচ্ছে একটি শক্তিশালি মিডিয়া বা গণমাধ্যম।ব্লগিং এর সাহায্যে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। ব্লগিং এর ফলে প্রতিটি দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন ব্যাপারে অভাবনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব।এর সঠিক প্রয়োগ আমাদের সকলের জন্য সুফল বয়ে আনবে ।ব্লগিং সত্যিই এখন অনলাইন লাইফের সবচেয়ে স্মার্ট প্রফেশন। তাই আজই ব্লগিং শুরু করতে পারেন আপনিও! ব্লগিং লাইফে আপনাকে স্বাগতম!
বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রকাশিত লেখা ও মন্তব্যের দায় একান্তই সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারীর, ব্লগ কর্তৃপক্ষ এজন্য কোনভাবেই দায়ী থাকবে না।অর্থাৎ প্রতিটা ব্লগিংয়ের জন্য সম্পুর্ন অপরাধ কিংবা মিথ্যা অপচারের দায় ব্লগারের উপর বর্তাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন