শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

ভালোবাসি ভাবনা



তোকে নিয়ে নতুন একটা স্বপ্ন দেখালাম
জানি না বাস্তব হবে কি না...!!
তবে স্বপ্ন দেখাতো দোষের কিছু না
তাই হয়তো এতো গভীরে চলে গেলাম !!

ভালোবাসা তোমাকে মুক্তি দিলাম
শঙ্খ গাংচিলের মত মুক্ত আকাশে
আমি ছোট্ট খাচায় বন্দী নির্বাক চোখে
ভালোবাসা আমি দেখব তোমায়।

সময় পেলে এসো আমার ছোট্ট খাচায়
তোমাকে আলিঙ্গন করব,আদর করব
সোহাগ করে বলব হৃদয়ের যত না বলা কথা।

ভালোবাসা তোমার জন্য সুপ্রভাত
আমার জন্য তিমির রাত।
ভালোবাসা তোমার জন্য জোছনা
আমার জন্য অমাবস্যার পূর্নিমা।
ভালোবাসা তুমি শান্ত শীতল পাটি
আমি উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরি।
ভালোবাসা তোমার জন্য শান্ত সমুদ্র
আমার জন্য উত্তাল ঢেউ।

তোমার সাথে কতই না অমিল
তবু তোমায় ভালোবাসি।
ইচ্ছে করে তোমায় আলিঙ্গন করি
ভালোবাসা তোমাকে পেতে ইচ্ছা করে
ছুঁতে ইচ্ছা করে কাছে পেতে ইচ্ছা করে।

এটাই কি আমার অপরাধ ভালোবাসা....!!
তোমাকে ভালোবেসে না হয় হলাম অপরাধী

তবু তোমায় যে বড্ড ভালোবাসি ভাবনা তোমায়।।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক হাল

প্রতিটি গণতন্ত্রের মূলভিত্তি জনগণ। যেখানে জনগণের উপস্থিতি নেই, সেখানে কোনোদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। বিরোধী দল বা শাসক দলের আস্থা বৃদ্ধির একমাত্র হাতিয়ার জনগণ। জনগণের উপর আস্থা থাকলে বিরোধী দলের আন্দোলন কিংবা শাসক দলের শাসন সবসময় গণমুখী হয়। কিন্তু গণতন্ত্রে জনগণের ঘাটতি মানেই রাজনীতিতে মূল্যবোধের অবক্ষয়।দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো উন্নয়ন হবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দু’দলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। তবে বিরোধী দল ছাড়া কখনই পার্লামেন্ট চলে না।“বিরোধী দল” শব্দটি একটি গণতান্ত্রিক শব্দ। আমাদের দেশের মত সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে এই শব্দটির সাথে আমরা খুবই পরিচিত। একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা আয়না স্বরূপ। সরকার যখন কোনক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হয় বিরোধী দল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দূরদর্শী সরকার হলে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার চেষ্টা করে এটাই বাস্তবতা এবং একটি আদর্শবাদী সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


সরকারের কোন অগণতান্ত্রিক, জনগণ ও দেশের জন্য অকল্যাণকর কাজ ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা ও সরকারকে পরামর্শ দেয়াই ও সরকারকে সহযোগিতা করাই হল বিরোধী দলের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর সংজ্ঞা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে দলই সরকারে থাকুক না কেন তাদের অন্যতম এজেন্ডা হয়ে ওঠে বিরোধী দলকে দমন করা। তাদের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। জেল, যুলুম, অযৌক্তিক, রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলা দ্বারা প্রতিহত করা হয় তাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে।


কোন দলের পক্ষে আজও সম্ভব হয়নি বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে দেশের কাজ করা। আজীবনই আমাদের জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারটি খালি থাকে। সরকার তাদের সংসদে যোগ দেবার নামমাত্র আহবান জানায়।আর সেই আহবানের সাড়া দিয়ে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে সংসদের সেই আসনটি ভরাট হয়েছে কিনা তা আমার জানা নাই ঠিক।কিন্তু আবার সেই বিরোধী দলই আবার বলবে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে না,বাজেট ঠিকমত হচ্ছে না,মানুষ নানা রকম দূর্ভোগে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি বলে দেশের মানুষকে পাগল করতে পাঁরে কিন্তু সে এটা জানে না যে,বিরোধী দল থেকে যেমন সমালোচনা করা যায় ঠিক তেমনই দেশের জন্য কাজ করে উন্নয়ন এবং পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের কাছে প্রাধান্যও বৃদ্ধি করা যায়।অপরদিকে আমাদের দেশের বিরোধী দলের কোন পরামর্শও সরকার দল আমলে নেয়।আমাদের দেশে প্রধান দল হচ্ছে আওয়ামি-লীগ এবং বিএনপি।এই দুইটা দলের মাঝেই যেকোন একটা প্রধান বিরোধী দল থাকে।আর বাকী দল যেগুলা আছে সেগুলার কথা না বলাই ভালো।কারন সেগুলার কোমড় এবং হাটু দুইটাই ভাঙ্গা মেরুদণ্ড বিহীন দল।এদের সকালে এক কথা আবার বিকালে এক কথা।সেহেতু এদের কথা না বাড়িয়ে সরকার এবং বিরোধী দল নিয়েই বলা যাক।


আমরা যদি এই সঙ্কীর্ণতা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে না পারি তাহলে নিজেদের উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। কারণ একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিরোধী দল যদি না থাকত তবে সরকারের কোনো ভুলই চোখে পড়ত না এবং কোন কাজ সমালোচনাহীনভাবে সুচারুরূপে শেষ হতো না।নয়তবা, সরকার জনগণ হতে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ হতে বিচ্চিন্ন কোনো দলের পক্ষে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আদৌ সম্ভব নয়।


কিন্তু আমাদের দেশের দুটি প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক ও মানসিক দূরত্ব এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এই দূরত্ব ঘুচে যাওয়ার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই।তারা একদল আরেক দলের পিছনে সাপে নেওলের সম্পর্ক করে আছে।একদিকে বিরোধীদল সাধারন মানুষকে সাথে না নিয়ে বরং জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে জ্বালাও পোড়াওয়ের নামে আন্দোলন করে অন্যদিকে সরকার দল বিরোধীদলকে দমানোর জন্য নেতা কর্মী গ্রেফতার এবং যৌক্তিক অযৌক্তিক মামলা দিয়ে জেলে পুড়ে রাখে।জনগণ আজ উভয় দলের ব্যবহারে ক্ষুব্দ।অথচ এটা তাদের স্মরণে থাকে না যে,দেশের জনগণ তাদের ভোট না দিলে ক্ষমতার মসনদেও বসার সুযোগ হতো না।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপের দিকে যাচ্ছে।দেশে আলোচিত খুন(ব্লগার,বিদেশী),নারী নির্যাতন,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,সংখ্যালঘুদের জমি দখল এবং উৎখাত,স্বাধীনতার বিপক্ষ দল গুলোর অমানবিক তান্ডব,জঙ্গীবাদ,ধর্ষন,ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের উৎপাত চোখে পড়ার মত প্রতিদিন খবরের হেড লাইন(এমপি মন্ত্রী থেকে সাধারন মাঠ পর্যায়ের কর্মী),প্রশাসন দিনদিন ক্ষমতার জালে আটকে পড়ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।এই খারাপ অবস্থার জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। ফলে ক্রমজনিত খারাপ পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। একটি স্বাধীন সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক দেশে এমন অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।একদিকে বিরোধী দল যেমন যৌক্তিক সমালোচনা না করে ক্ষমতা লাভের জন্য বিভিন্ন অযৌক্তিক কথা বলে।যেমন,ঈদের পর সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নামবে,১০ম জাতীয় নির্বাচন কে প্রত্যাখান করে ক্ষমতা লাভের জন্য অপচেষ্টা,দেশের বাইরে কিংবা বিভিন্ন জাগায় সরকারের,দেশের,বিভিন্ন অন্যায়ের কথা উল্লেখ না করেই বলা দেশ অপরিস্থিশীল,৫ জানুয়ারির নির্বাচন অবৈধ বলে নিজের ক্ষমতা লাভের জন্য সমালোচনা করা।কিন্তু কখনো এটা বলে না যে,দেশের মানুষ কি কি সমস্যায় ভুগছে,দেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়,দেশের কোন কোন জাগায় এখনো ঠিকমত উন্নয়নের ছোয়া পাচ্ছে না,সরকারকে কোন সহযোগীতার আশ্বাস না দিয়ে শুধু ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বৈধ না বলেই দাবি করা বিরোধী দলের যেন প্রধান কাজ।সরকারের যদি সঠিকভাবে সমালোচনা করতে পারত বিরোধী দল,দেশের সরকারের যেমন উন্নয়ন করতে সুবিধা হতো,তেমনি বিভিন্ন ভুল ত্রুটি,অনিয়ম সরকারের চোখে পড়ত অন্যদিকে এসবের সমালোচনা করে জনগণের যেমন নজর কারা যেত বিরোধী দলের তেমনি বিরোধী দলের কোন যৌক্তিক আন্দোলনে মানুষের সমর্থন পেত।বিরোধীদলের উচিত বিভিন্ন সরকার দলীয়র অপকান্ড,দূর্নীতির পাশাপাশি উন্নয়নের দিক গুলা তুলে ধরে সাধারন মানুষের কাছে খোলাসা করা।


অবাক ব্যাপার যে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এসব বিষয়ে আন্দোলন না করেই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দিশাহারা হয়ে পড়েছে। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে হলে জনসমর্থন নিয়েই যেতে হবে। জনসমর্থন ছাড়া বাংলাদেশে পেশিশক্তির মাধ্যমে বা বন্দুকের নলের জোরে আর ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং বিরোধী দলের উচিত হবে, প্রথমে নিজের ঘর গোছানো এবং পরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা।তারপর ক্ষমতা যাওয়ার স্বপ্ন দেখা উচিত বিরোধী দলের।তাছাড়া বিরোধী দল সরকার দলীয়র চাপে যেভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এতে করে তাদের আর আগের অবস্থানে ফিরে আসা সম্ভব হবে না বলে আমি মনে করি। এ দেশের খেটে খাওয়া জনগণের মৌলিক চাহিদা যদি কোনো সরকার পূরণ করতে পারে তবে সে জনগণ কেন সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। কোনো সরকারের দ্বারা জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটলে, ওই সরকারকে কেউ ক্ষমতাচ্যুতও করতে পারে না। অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখল সে তো ভিন্ন বিষয়।


দেশের জনগণ যে সীমাহীন সমস্যা ও দুর্ভোগের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে এ থেকে তাদের উদ্ধার করার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের, হোন তিনি সরকারি কিংবা বিরোধী দলের। যারা দেশ পরিচালনা করেন কিংবা দিকনির্দেশনা দেন, তাদের সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা এবং সুনজর ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। জনগণ কেবল পণ্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ঠ হবে এবং যানজটে পড়ে আটকে থাকবে।

বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও কর্মসংস্থান সঙ্কটে পড়বে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা পদে পদে বিঘ্নিত হবে। অপরদিকে সরকার যদি জনগণকে দেয়া অঙ্গীকার ভুলে গিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে দাবিদাওয়া উপেক্ষা করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বিরোধী দল নিহ্নিন করার চক্রান্তে মেতে থাকে এতে যেমন তাদের জন্য আত্মঘাতী তেমনি দেশ চলে যায় সংঘাতের মধ্যে।


রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশপ্রেম থাকলে, জনগণের সমস্যা নিজেদের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা সমাধানে এগিয়ে এলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন হওয়ার কথা নয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। যে দেশে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মহোৎসব চলে, যে দেশে সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো সুসম্পর্ক নেই, জাতীয় সংসদ বছরের পর বছর অকার্যকর থাকে, আইনের শাসন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়, শিল্পবিকাশ বিরোধী নীতির কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় না, সে দেশে জনস্বার্থ উপেক্ষিত থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। প্রতিটি স্বাধীন দেশের মানুষ দেশের উন্নয়ন চাই । আজকের যুগে উন্নয়ন হলো রাজনীতির মূল হাতিয়ার । উন্নয়ন ছাড়া রাজনীতি অচল । উন্নয়ন চাই ,চাকরি চাই ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চাই । রুজি রুটির বন্দোবস্ত চাই মানুষের।তাই সমাজের প্রতিটি মানুষের দাবি হলো উন্নয়ন । সুতরাং প্রতিটি সরকার ও দলের প্রধান লক্ষ্য হলো উন্নয়ন । উন্নয়ন ছাড়া সরকার ও দল চলতে পারেনা । আমাদের দেশে উন্নয়ন নিয়ে চলে নোংরা রাজনীতি । এই নোংরা রাজনীতির কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আশানারূপ দেশে শিল্পের উন্নয়ন আটকে যাচ্ছে । যা খুবই দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য।


গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিতে বিরোধী দল থাকবে এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিতে যদি পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই একটি দেশে শান্তি বিরাজ করবে না। আর শান্তি বিরাজ না করলে একটি দেশ তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। দেশটি সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে সমস্যার দিকে ধাবিত হতে থাকবে। বাংলাদেশে তাই পরিলক্ষিত হচ্ছে।


অপরদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা দেশে ব্যাপকভাবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, দখলদারি এবং ব্যাপক অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেদিকে সরকার মোটেই দৃষ্টিপাত করছে না বরং আশ্রয়-প্রশ্রয় ও উস্কানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। একথা অনস্বীকার্য যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্রের ভীতকে মজবুত করতে হলে চাই গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।


গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থায় বিরোধী দল বা দলসমূহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সংসদীয় বিরোধী দলের ভূমিকা অপরিসীম। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি দলের ভূমিকা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বলতে গেলে উভয়ের ভূমিকা প্রায় সমগুরুত্বসম্পন্ন। কারণ আজকে যিনি বিরোধী দলে আছেন কাল তাকে সরকারি দলে দেখা যেতে পারে। এটাই গণতন্ত্র।

দূর্গা পূজার ইতিবৃত্ত



সনাতন ধর্মালম্বীদের নিয়ে ১২ মাসে ১৩ পূজার উল্লেখ থাকলেও দূর্গা পূজাই সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব সনাতনীদের নিকট। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়।আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজাএবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "মহাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত।


কৈলাস পর্বতে জন্ম নেয়া অতি প্রেমভক্তির আদুরে মেয়ে দক্ষ তনয়া প্রয়োজনের নিরীক্ষে কালের আবর্তে মোষের ছদ্মবেশধারী প্রবল পরাক্রমশালী অসুর নিধনের নিমিত্তে রূপান্তর ঘটে দেবী দুর্গায়। উচ্ছ্বিষ্ট অপশক্তির অসুর দলনে রণরঙ্গিনী দেবী দুর্গাকে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছিল। রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়ে পরাক্রমশালী অসুর অপশক্তিকে পরাস্ত করে দেবকুল তথা বিপদাকুল সমাজকে চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিলেন।দেবী দূর্গা হলেন শক্তির রূপ।অনান্য দেব দেবী মানুষের মঙ্গলার্থে তাঁর বিভিন্ন রূপের প্রকাশ মাত্র। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে দেবী দূর্গা সকল দুঃখ দুর্দশার বিনাশকারিনী। পুরাকালে দেবতারা মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর’র শরীর থেকে আগুনের মত তেজরশ্মি একত্রিত হয়ে বিশাল এক আলোক পূঞ্জে পরিণত হয়। ঐ আলোক পুঞ্জ থেকে আর্বিভূত এক দেবী মূর্তি। এই দেবীই হলেন দূর্গা। মহাশক্তি শ্রীদুর্গা দেহ দুর্গের মূল শক্তি। আধ্যাত্মিক ভাবনা দুর্গা কাঠামোতে অন্তর্নিহিত। দুর্গার দশহাত দশ দিক রক্ষা করার প্রতীক, দশ প্রহরন এক দেবতার সাধনালব্ধ বিভূতি। দেবী ত্রিভঙ্গা-ত্রিগুণাত্মিকা শক্তির প্রতীক অর্থাৎ সত্ত্ব,রজঃ তমঃ গুণের প্রতীক। দেবী ত্রিনয়নী-একটি নয়ন চন্দ্রস্বরুপ, একটি সূর্যস্বরুপ এবং তৃতীয়টি অগ্নিস্বরুপ।

দুর্গা ও দুর্গাপূজা সংক্রান্ত কাহিনীগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও লোকমান্য হল দেবীমাহাত্ম্যম্-এ বর্ণিত কাহিনীটি। দেবীমাহাত্ম্যম্ প্রকৃতপক্ষে ‘মার্কন্ডেয় পুরাণ’-এর একটি নির্বাচিত অংশ। সাতশত শ্লোকবিশিষ্ট এই দেবীমাহাত্ম্যম্-ই শ্রীশ্রী চন্ডি গ্রন্থ। চন্ডি পাঠ দুর্গোৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও বটে। দেবীমাহাত্ম্যম্-এর কাহিনী অনুসারে পুরাকালে মহিষাসুর দেবগণকে একশ বছর ব্যাপি এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল । অসুরদের অত্যাচারে পৃথিবী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। শান্তিপুরী স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনী শ্রবণ করে তারা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন। সেই ক্রোধে তাদের মুখমন্ডল ভীষণাকার ধারণ করে। ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হয়। সুউচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল।আর এই নারী মূর্তিকেই বলা হয় দেবী দূর্গা।

দূর্গা পূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তা জানা যায় না।ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, সৃষ্টির আদিতে গোলকস্থ আদি বৃন্দাবনক্ষেত্রের মহারাসমন্ডলে কৃষ্ণ সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা করেন। দ্বিতীয়বার দুর্গার আরাধনা করেন ব্রহ্মা। মধু ও কৈটভ দ্বৈত্যদ্বয়ের নিধনে তিনি শরণাপন্ন হন দেবীর। ত্রিপুরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধকালে সংকটাপন্ন মহাদেব তৃতীয়বার দুর্গাপূজা করেছিলেন। এরপর দুর্বাসা মুনির শাপে শ্রীভষ্ট হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র যে দুর্গাপূজা করেন। এটা চতুর্থ দুর্গোৎসব। দেবী ভাগবত অনুসারে ব্রহ্মা ও ইন্দ্রের ন্যায় ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু পৃথিবীর শাসনভার পেয়ে ক্ষীরোদসাগরের তীরে মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মান করে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। জাগতিক মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে ঋষি মান্ডব্য, হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারে সুরথ রাজা ও বৈরাগ্য লাভের জন্য সামাধি বৈশ্য, কার্তাবির্জাজুন বধের জন্য বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম দুর্গার আরাধনা করেন।ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। সিন্ধু সভ্যতায় (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা) দেবীমাতা, ত্রিমস্তক দেবতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। দূর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী সে হিসাবে অথবা দেবী মাতা হিসাবে পূজা হতে পারে। তবে কৃত্তিবাসের রামায়নে আছে, শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ সাগর (বগুড়ার) থেকে ১০১ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে সাগর কূলে বসে বসন্তকালে সীতা উদ্ধারের জন্য সর্বপ্রথম শক্তি তথা দুর্গোৎসবের (বাসন্তি পূজা বা অকাল বোধন) আয়োজন করেছিলেন।আর এ জন্যেই দুই বঙ্গতে দূর্গা পূজার আমেজটা শুধু সনাতনীদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে সকল বাঙ্গালীর সংস্কৃতি স্বরুপ সৃজন হয়েছিল মনে।তবে বৈদিক যুগ থেকেই দুর্গা নাম প্রচলিত। ঋকবেদে বিশ্বদুর্গা, সিন্ধু দুর্গা, অগ্নিদুর্গা- এ তিনটি নাম পাওয়া যায়। দুর্গাপূজা কেবল শাক্ত সমাজেই নয়, প্রাচীন বৈষ্ণব সমাজেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহাপ্রভু চৈতন্যদেব চণ্ডীম-পেই চতুষ্পঠী চালু করেন। বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস, বৈষ্ণবাচার্য্য নিত্যান্দজীও দুর্গা দেবীর ভক্ত ছিলেন। মার্কেয় পুরাণ মতে, সত্যযুগে রাজা সুরথ, সমাধি বৈশ্য দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে পূজা আরম্ভ করেছিলেন। কৃত্তিবাস রামায়ণ থেকে জানা যায়, ত্রেতা যুগে লঙ্কার রাজা রাবণ দেবী পূজার আয়োজন করে দেবীর আশীর্বাদ ধন্য হয়েছিলেন। অন্যদিকে রাবণ-বধ এবং জানকীকে উদ্ধার করার জন্য শ্রী রামচন্দ্র বসন্তকালের আগে শরৎকালে দেবী পূজা করেছিলেন। উল্লেখ্য, শ্রী রামচন্দ্র দেবী ভগবতীকে অকালে বোধন করেছিলেন। মূলত দেবী পূজা বসন্তকালে হয়ে থাকে। সেই থেকে শরতে দেবী পূজা অকাল বোধন নামে পরিচিত। শরতের এই পূজাই আমাদের দুর্গোৎসব। জানা যায়, প্রথম শতকে কুষান যুগে, পঞ্চম শতকে গুপ্ত যুগে, সপ্তম শতকে পল্লব যুগে এবং ১১-১২ শতকে সেন বংশের আমলে দেবী মহিষমর্দিনী রূপে পূজিত হয়েছেন। কুষান যুগে দুর্গা ছিলেন লাল পাথরের তৈরি। পাল যুগে অর্থাৎ ১২৮৯ সালে দেবী ত্রিনয়নী এবং চার হাতবিশিষ্ট। দশভুজা দুর্গার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৮ শতকে।


বি.দ্রঃসকল ধর্মীয় উৎসবে যে বিপুল পরিমান অর্থের ব্যয় করা হয় এই নিয়ে যাদের চুলকানি আছে তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথা,সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্টি লাভের আশায় যদি মানুষের গায়ে একটু রঙ্গীন পোশাক আসে, ভালো খাবার আসে মুখে, সে সৃষ্টিকর্তাকে খারাপ বলতে যাব কোন দুঃখে!আপনি আস্তিক হোন আর নাস্তিক হোন আপনার মাঝে যদি সত্যিকারের মানবতাবোধ না থাকে তাহলে আপনিও যে,দুপায়ী পশু বলে বিবেচ্য হবেন।তাই সবার খুশির দিনে নিজেকে খুশি রাখেন এবং অন্যের বিশ্বাসের উপর সহমর্মিতা প্রকাশ করুন।ধর্ম যার যার, উৎসব সবার!

আমি কোন জাত-ভেদ,ধর্মের দুনিয়া চাই না,আমি মানুষের দুনিয়া চাই।আমার বড় পরিচয় আমি মানুষ এবং আপনারাও মানুষ।

হিন্দু/সনাতনী ধর্মের ঈশ্বর এবং মূর্তি পূজার পক্ষে-বিপক্ষে কিছু হদিস



মূর্তি পূজার স্বরূপ জানতে হলে প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে ঈশ্বর ও দেবতা বলতে সনাতন দর্শনে কি বলা হয়েছে।ঈশ্বর ও দেবতা।প্রথমেই বলে রাখা দরকার সনাতন দর্শনে বহু ঈশ্বরবাদের স্থান নাই বরং সনাতনীরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী।সনাতন ধর্মাবলম্বি হিন্দুরা অনেক দেব দেবির পুজা করলেও সমাতন ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে কেবল মাত্র এক জন ইশ্বরের উপাসনা করতে বলা হয়েছে॥


বেদের ‘ব্রহ্ম সুত্র’ তে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ইশ্বর এক তাঁর মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই।আরও আছে “তিনি একজন তাঁরই উপাসনা কর” (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬)। “একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ তিনি একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ ১;২;৩)। “এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩)।


সনাতন দর্শন বলে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন স্রষ্টা নাই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা।আমাদের প্রাচীন ঋষিগন বলে গিয়েছেন, ঈশ্বরের কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই(নিরাকার ব্রহ্ম) তাই তিনি অরূপ, তবে তিনি যে কোন রূপ ধারন করতে পারেন কারণ তিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।ঋকবেদে বলা আছে, ঈশ্বর ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’- ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।ঈশ্বর বা ব্রহ্ম (ব্রহ্মা নন) সম্পর্কে আরও বলা হয়,‘অবাংমনসগোচর’ অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা(বাক), মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না,তিনি বাহ্য জগতের অতীত । ঈশ্বর সম্পর্কে ঋকবেদে বলা আছে-‘একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি (ঋক-১/৬৪/৪৬) অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বহু নামে বলে থাকেন।‘একং সন্তং বহুধন কল্পায়ন্তি’ (ঋক-১/১১৪/৫) অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে।‘দেবানাং পূর্বে যুগে হসতঃ সদাজায়ত’ (ঋক-১০/৭২/৭) অর্থাৎ দেবতারও পূর্বে সেই অব্যাক্ত (ঈশ্বর) হতে ব্যক্ত জগত উৎপন্ন হয়েছে।ঈশ্বর এক কিন্তু দেবদেবী অনেক।তাহলে দেব দেবী কারা? ঈশ্বরকে বলা হয় নির্গুণ অর্থাৎ জগতের সব গুনের আধার তিনি। আবার ঈশ্বর সগুনও কারণ সর্ব শক্তিমান ।ঈশ্বর চাইলেই যে কোন গুনের অধিকারী হতে পারেন এবং সেই গুনের প্রকাশ তিনি ঘটাতে পারেন ।দেব দেবীগন ঈশ্বরের এই সগুনের প্রকাশ বলে সনাতনীদের দাবি।


হিন্দু ধর্মে মুর্তি পুজা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তা জেনে নেইঃ-
ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২০ -
[যাদের বোধশক্তি পার্থিব আকাঙক্ষার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধু তারাই উপদেবতার নিকটে উপাসনা করে। ]
যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ –
[ অন্ধতম প্রভিশান্তি ইয়ে অশম্ভুতি মুপাস্তে – যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারা অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় শাম মুর্তির পুজা করে । অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিক বস্তু যেমন- বাতাস,পানি,আগুন । শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন - চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি ইত্যাদি।]
যেহেতু হিন্দু ধর্ম প্রাচীন ধর্ম, এবং সবার বেদ,গীতা পড়ার অধিকার ছিল না তাই সেই সময়কার কিছু ঋষি মুনির কারনে মুর্তি পুজোর উদ্ভব হয়েছে । ডা. চমনলাল গৌতম তাঁর বিষ্ণুরহস্য বই এর ১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘ঋষিগন মুর্তি পুজার প্রচলন করেছেন॥ খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দী হতে বাংলায় কিছু কিছু অঞ্চলে কালী পূজা শুরু হয়॥১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। [তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া]
"তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়।
( তথ্যসূত্রঃ হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য,কলকাতা, ২০০৭, পৃ.২৮৫-৮৭)।"


আবার,
যো যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামের বিদধাম্যহম।।
"অর্থ-পরমাত্মারুপে আমি সকলের হৃদয় বিরাজ করি। যখন কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে আমি তাদের শ্রদ্ধানুসারে সেই সেই দেবতাদের প্রতি ভক্তি বিধান করি ।" [ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২১]


স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান হি তান।।
"অর্থ-সেই ভক্ত শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন কিন্তু সেই দেবতার কাছ থেকে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তুলাভ করে।"[ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২২]


মূর্তি পূজা সম্পর্কে উপরিউক্ত আলোচনা থেকে মূর্তি পূজার পক্ষে এবং বিপক্ষে দুইটাতে যাওয়া যায়।তবে ইদানিং দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে মানুষের মনে বিভ্রান্তি এবং মূর্তি পূজার নিষেধ সম্পর্কে বয়ান দিয়ে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে।বিশেষ করে ছদ্মবেশী উন্মাদরা এ প্ররোচনায় বেশী মেতে উঠেছে।তবে এটাও ঠিক যে,মূর্তি পূজা কখন কিভাবে চালু হয়েছে তার কোন নির্দিষ্ট হদিস নাই।সেই দিক দিয়ে মূর্তি পূজার বিপক্ষেই জোড়ালো কথা বলা গেলেও মূর্তি পূজা বিশ্বাসীদের কথা চিন্তা করে তাদের হদিস একবারে নিষেধাজ্ঞা হিসাবে গন্য করা যায় না।আপনি আস্তিক,নাস্তিক,স্যাকুলার যাই হোন না কেন;সামনে দূর্গা পূজাকে রেখে একপাক্ষিক যুক্তি দিয়ে কোন কিছু বলা মানেই মানুষের মনে সাম্প্রদায়িক সৃষ্টি করা ব্যতীত বা আপনি অন্য কোন উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যই এমন আচরন করছেন সেটা যে কেও সহজে বুঝতে পারবে।তবে এর মানে এই বুঝাতে চাইছিনা যে,আপনি হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করতে পারবেন না।কিন্তু সমালোচনা করার আগে আপনাকে অবশ্যই সামাজিক এবং ভৌগলিক দুই অবস্থা ভেবেই কথা বলতে হবে।কারন আমদের দেশ যতই সাংবিধানিক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে দাবি করা হোক না কেন,প্রকৃত পক্ষে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ন একটা দেশ।


বি.দ্রঃআমি কোন জাত-ভেদ,ধর্মের দুনিয়া চাই না,আমি মানুষের দুনিয়া চাই।আমার বড় পরিচয় আমি মানুষ এবং আপনারাও মানুষ।

পাকিস্তানিদের সাথে খেলার মাঠেও রাজনিতী মিশানোর কারন



কিছু নোংরা মনের রাজনীতিকের কল্যানে পাকিস্তানের সেনা বাহিনী আমাদের নিজেদের কিছু লোকের সহায়তায় ৭১-এ যেটা করেছে তার দায়পাকিস্তানি গোটা জাতির উপর চাপিয়ে দেয়াটা কতটা যৌক্তিক বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় কিছু পাকিস্তান অনুসারী বাংলার জারজ পাকিস্তানি দালালেরা।যে সব বাংলাদেশী নাগরিক বাংলাদেশের চেয়েও পাকিস্তানকে বেশী ভালবাসেন। যারা মনে করেন যে দেশটা বাংলাদেশ না হয়ে পাকিস্তান থাকলেই বেশী ভালো হতো।একাত্তরে কোন যুদ্ধাপরাধ হয় নাই।সামান্য গণ্ডগোল হয়েছিলো।তাদের জন্য মুখে থুথু দেওয়া ছাড়া আমার আর কোন ঘৃনা প্রকাশ করার মত তেমন শক্তি নাই।তাদের কথার উত্তর দিতেও আমার রুচিতে বাধে।যারা বাংলা মায়ের শহীদের রক্ত,মা-বোনের উপর অমানবিক নির্যাতনকে অস্বীকার করে পাকিস্তানির দালালি করে,পাকিস্তানি ক্রিকেট টিমকে স্বাগতম জানিয়ে ম্যারি আফ্রিদি আফ্রিদি চুদায় তাদের জন্ম নিয়ে সন্দীহান হয় খুব গভীর ভাবেই।
খেলার সাথে, সমর্থনের সাথে মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্কটা কি বুঝিনা? আপনি বলেন খেলোয়াররা তো ধর্ষণ/হামলা করেনি?তাদের বলতে চাই,পাকিস্তানিরা খেলছে কি কারনে?তাদের দেশের জন্য,তাদের পতাকার জন্য অবশ্যই।যেমন আমাদের বাংলার ১১ জন দামাল খেলে দেশের জন্য,আমাদের লাল-সবুজ পতাকার জন্য,এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।অপরদিকে পাকিস্তান নাম,পতাকা,জাতিটাই আমাদের জন্মগত ভাবে শত্রু।তাহলে আমরা তাদের কিভাবে সমর্থন করি বলে বুঝাবেন কি!যারা স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আমাদের কাছে ক্ষমা চাইনি,যারা এখনো যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে অমানবিক বলে দাবি করে বাঁচাতে চায় তাদের দূসরদের।তারপরেও কেন আমরা খেলার সাথে রাজনিতী মিশাবো না আপনারাই বলেন পাকিস্তানি জারজরা। একটি দেশের জাতীয় দল সেই দেশের প্রতিনিধিত্ত করে।দেশের জাতীয় পতাকা বহন করে।দেশের জাতীয় দল যেখানে যাবে,দেশের পতাকা তুলে ধরবে।এই দলের সাফল্য-ব্যর্থতার সাথে পুরো জাতির হাসি কান্না জড়িয়ে থাকে।এইকারনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোন ম্যাচ জিতলে আমাদের পুরো জাতি জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে।হারলে দলের খেলোয়াড়দের মত পুরো জাতি শোকাচ্ছন্ন থাকে।দলের খেলোয়াড়েরাও যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামে তখন আর সে শুধুই একজন খেলোয়াড় থাকেনা,হয়ে যায় নিজ দেশের রাষ্ট্রদূত।নিজের দেশের জাতীয় দলের বিরুদ্ধে,জাতীয় পতাকার বিরদ্ধে,পুরো জাতির বিরদ্ধে যে সমর্থন করে সে কি রাজাকার নয়?
আচ্ছা এখন পাকিস্তানি প্লেয়ারদের আমাদের দেশের প্রতি আমাদের জাতির প্রতি মনোভাব দেখি কেমন- তাদের সবচেয়ে ভদ্র প্লেয়ার মিসবাহ উল হক আমাদের দেশে বিজয়ের মাসে অভিনন্দন জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
শহীদ খান বাংলাদেশ সফরে বলেছিলেন,"আমাদের সাথে বাংলাদেশের হিসেবটা পুরোনো।"
আব্দুর রাজ্জাক (ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম ভদ্রলোক) খোঁচা মেরে বলেছিল,নিজ দেশে খেললে দর্শকরা তাদের দলকে সমর্থন দেবেন এটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমাদের খেলা হলেও গ্যালারি থেকে আমাদের পতাকা উড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়।‘
কিছুদিন আগেই সালমারা পাকিস্তান সিরিজ খেলতে গিয়েছিল। পরোক্ষভাবে তাদের দেশে খেলা ফেরানোই ছিল লক্ষ।অথচ তারা সেই সালমাদেরই রীতিমত অপমান করেছিল জিও টিভি ফান শোতে।০৭অক্টোবর রাত ১১টায় এক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে পাকিস্তানের জিও টিভি। যেনতেন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জার্সি পরিয়ে দুই মহিলাকে উপস্থিত করা হয়। উপস্থাপক বাংলাদেশের জার্সি পরিহিতকে সালমা খাতুন (বাংলাদেশের অধিনায়ক) হিসেবে মঞ্চে ডাকেন। সেখানে দেখা যায়, ওই সালমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে মঞ্চে আসেন। উপস্থাপক তখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, খেলায় তো হার-জিত থাকেই। এতে কান্নার কী আছে? ওই নারীশিল্পী উত্তর দেন, শুধু হেরে যাওয়ার জন্য কাঁদছি না। তোমরা আমাদের ডেকে এনে কেন হারালে সেজন্য কাঁদছি। উপস্থাপক এবার উপহাস করে বলেন, আমরা ভিআইপি নিরাপত্তা দিয়ে তোমাদের নিয়ে এসেছি। অথচ তোমাকে দেখলে মনে হয় তোমার সামাজিক নিরাপত্তা নেই।
উপস্থাপক বাংলাদেশের জার্সি পরিহিত আরেক শিল্পীর সানগ্রাস দেখিয়ে বলেন, তোমার সানগ্লাস দেখলে মনে হয় তুমি বাংলাদেশ থেকে হাওয়াই জাহাজে (বিমান) করে আসোনি। বাইক চালিয়ে এসেছ। এরপর আবার জিজ্ঞেস করেন, তুমি এত ভালো উর্দু বল কীভাবে? উত্তরে সালমা খাতুনের অভিনয়কারী শিল্পী বলেন, ফেসবুকে আমার অনেক পাকিস্তানি বন্ধু আছে তো, তাই। এ সময় পাশের পাকিস্তানি অধিনায়কের ভূমিকায় অভিনয়কারী শিল্পী দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বলেন, উনি ফেসবুকে তার ছবি দেননি। এ ঠাট্টার অর্থ ফেসবুকে ছবি থাকলে পাকিস্তানি ছেলেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হতো না। এভাবেই নানা অপমানজনক কথায় পূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানের এ অংশটি।
ভিডিও দেখতে-
https://www.facebook.com/bdcricvideos/videos/vb.1590441024536126/1683448...
এরপরেও কি আপনি বলবেন আমরা কেন খেলার সাথে রাজনিতী মিশাই?আর তার উত্তর হুমায়ুন আজাদ স্যারের ভাষায় বলতে গেলে,“পাকিস্তানিরা যখন ফুল নিয়ে আসে আমি তখনও তাদের অবিশ্বাস করি।”এরপরেও যদি আমার কথা না বুঝেন,পাকিস্তানি সাপোর্ট করেন তাহলে আপনি একটা পাকিস্তানি জারজ বলেই আমার কাছে প্রসিদ্ধ লাভ করবেন। বাংলাদেশের বেলায় আমি অন্ধ। যে জাত আমাদের ৩০ লাখ মানুষের রক্তে দেশকে অবলীলায় রাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়, এক আঙ্গুলের ইশারায় অপারেশন সার্চলাইটের মত ঘৃন্য অভিযান চালায়, তাদেরকে আবার সমর্থন!যে মাটিতে দাড়িয়ে আছি, সেই মাটিতেও লেগে আছে অনেক শহীদের গায়ের “রক্ত” অথবা কোন হাড়গোড়ের স্পর্শ।তাদের আর্তচিৎকার।সেই ১৯৭১ না দেখা কান্না, মা-বোনের চিৎকার কানে বাজে,রক্তের ছাপ চোখে ভেসে উঠে।ভালোবাসি বাংলাদেশ,আর নিস্বার্থ ভাবেই সারা জীবন বাংলাদেশের পথেই থাকতে চাই।আর যতদিন বাঁচি এই দু-দিনের দুনিয়ায়,ততদিন পাকিস্তানিদের দু-চোখ ভরে ঘৃনা আর থুথু ছুড়ে দিতে চাই।
জয় বাংলা

বিষয় যখন নারীর পিরিয়ড



পিরিয়ড প্রত্যেক সুস্থ স্বাভাবিক নারীর জীবনে একটি অতি স্বভাবিক ব্যাপার এবং নারী স্বাস্থ্যের ভীষন গুরুত্বপূর্ন একটি দিক। পিরিয়ড,ব্যাপারটা প্রকৃতি প্রদত্ত। প্রত্যেকটা মানব সন্তানের জন্ম হওয়ার প্রথম এবং প্রধান সোপান এটা। কিন্তু এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছি না। পিরিয়ড নামক শব্দটা কারো মুখে শোনা মাত্রই তার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে ভুল করিনা।যেন এটা খুব লজ্জার কথা।যদি কোন মেয়ের আকস্মিক ভাবে পিরিয়ড হয়,এবং তার কাপড়ে কোন রক্তের দাগ দেখতে পাই তাহলে বড়রা থেকে শুরু করে ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত সেই কাপড়ে লেগে থাকা রক্ত নিয়ে মেয়েকে ইঙ্গিত করে চোখ টিপাটিপি করি।সত্যি কথা বলতে,আমিও করছি আমার কোন বন্ধুর কাপড়ে লেগে থাকা তাজা রক্তের দাগ নিয়ে এবং সাথে আমার সকল বন্ধুরা।সেই দিনটা ঐ মেয়েকে নিয়ে আমরা হাসাহাসি করে যে কত মজা পাইছিলাম তা বলে শেষ করা যাবে না।তবে আমাদের সারাদিনের টপিক ছিল ঐ মেয়ে বন্ধুর কাপড়ে তাজা রক্তের দাগ লাগা নিয়ে।যাকে কাছে পাইছি তাকেই বলছি অধীর আগ্রহ নিয়ে আজ অমুকের পিরিয়ড হইছে।জামা,ব্রেঞ্চে রক্তের দাগ দেখছি আমরা।কারন আমাদের সমাজটাই শিখাইছে এরকম।কিন্তু এখন দিন বদলাইছে,সময় বদলাইছে। তারপরেও দোকানে ন্যাপকিন কিনতে যাওয়ার পর দোকানীর বাঁকা চাহনি,চাপা হাসি,অতি উৎসাহী মুখ,চুপিসারে ক্রেতার হাতে গুঁজে দেয়া প্রভৃতি ঘটনার সম্মুখীন প্রায় সব মেয়েকেই হতে হয়।

রেনেসাঁ যুগে নারীর ঋতুস্রাবের রক্তের প্রতি মানুষের ঘৃণা এবং ভয় এতো বেশি ছিলো যে একে বিষ বলে ধারণা করা হতো। বলা হতো এই বিষ থেকে তৈরি হয় বিষাক্ত বাষ্প এবং তা নারীর মাঝে হিস্টেরিয়ার উদ্রেক করে। বিংশ শতাব্দীতে এসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এখনো পর্যন্ত ইন্ডিয়ার কিছু জায়গায় ঋতুস্রাবের প্রতি আছে ভীষণ ট্যাবু। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে কোনো নারী রান্না করলে সেই খাবার খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় এমনও নিয়ম আছে যে এই সময়টা নারীকে কাটাতে হবে গোয়ালঘরে।এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে নানা কথা।তবে গ্রন্থ গুলোর একটা কমন তসবি হচ্ছে পিরিয়ড চলা কালীন মেয়ে অপবিত্র থাকে এবং সেই সময় তারে দিয়ে কিছু করা বা ধর্মীয় কোন কাজ করানো যাবে না।এই শতাব্দীতে একটি ভয়াবহ কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে,নারীর পিরিয়ড চলাকালীন সময় যদি কোন পুরুষ ঐ নারীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হয় তাহলে সেই পুরুষের লিঙ্গ ছোট হয়ে যাবে।অথচ বিজ্ঞান সম্মত ভাবে কথাটা কেবল উদ্ভটই হিসাবে প্রমানিত হয়।

নারী হয়ে জন্ম নেবার কারণে জীবনে একবার হলেও নিজেকে অভিশাপ দেননি, এমন নারী হয়তো বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে খুব কম।নারীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়েই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত ছিল ভয়াবহ সব কুসংস্কার যা এখনো বজায় আছে বহাল তবিয়তে। দেখুন কালের সাথে সাথে কী করে বদলেছে এসব কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। বদলে গেলেও মানুষের মধ্য থেকে পিরিয়ড নিয়ে ভয় ও ঘৃণা দূর হয়নি মোটেই। আপনার আশেপাশে এমনকি আপনার পরিবারের পুরুষ এমনকি নারীদের মাঝেও রয়েছে এমনই সব কুসংস্কার। আজ থেকে দু-হাজার বছর আগে, যাকে বলা হতো Biblical Times, এ ঋতু চলাকালীন সময়ে সেই নারীকে এতোটাই অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য মনে করা হতো যে এই পুরো সময়টা তাকে পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হবে।পিরিয়ড ঋতুচক্র নারী জীবনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পূর্বে ধারণা করা হতো পিরিয়ড অনেক অপবিত্র একটি বিষয়। কিন্তু বর্তমানে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। কোনো নারীর নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার অর্থ তিনি স্বাভাবিকভাবে সন্তান ধারণে সক্ষম।

একটা মেয়ের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চলতে হয় এবং কমবেশী নানা দূর্ভোগ পোহাতে হয়।এই সময় মেয়েদের জরায়ু দিয়ে অনেক রক্তপাত হয়,অনেকের মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায়,পেটে ব্যাথা অনুভব করে,মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে ইত্যাদি ইত্যাদি।পিরিয়ড সম্পর্কে নানা ভুল ধারনা থাকার কারনে দেখা দেয় নানা রকম স্বাস্থ্য এবং অনেক সময় দেখা যায় দাম্পত্য জীবনেও কলহের সৃষ্টি হয় নানা রকম কুসংস্কারের কারনে।কিন্তু আমার জানামতে খুব কম বাবা-মা কিংবা পরিবারই আছেন মেয়ের পিরিয়ড নিয়ে উদারচিত্তের ব্যবহার।যেখানে শিক্ষিত সমাজেই রয়েছে এই পিরিয়ড নিয়ে নানা বিভ্রান্তি,সেখানে অল্পশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত লোকের কথা একবার ভাবুন তারা কত পিছিয়ে আছে সামাজিক প্রতিবন্ধিকতায়।পিরিয়ড মেয়েদের লোকানোর জিনিস না বরং গর্ভ করার বিষয় তার প্রথম ঋতুচক্রে।কারন এই পিরিয়ডের কারনেই সে মা হওয়ার অধিকার রাখে।

তবে হ্যাঁ,আমি বিশ্বাস করি যে, একটা সময় আসবে যখন আর কোন জড়তা থাকবে না মানুষের মনে পিরিয়ড নিয়ে।কিন্তু কবে,কোথায়,কখন পিরিয়ড নিয়ে জড়তা কাটবে তা শুধু অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকা সেই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে।তবে হয়তো জড়তা মুছে যাওয়া দিনকাল বেশীদিন নাই।কারন আজকাল শহুরে শিক্ষিত সমাজ এবং গ্রামেও বিভিন্ন গ্রামো কমিউনিটি হেলথ সেন্টার কিংবা ক্লিনিকে পিরিয়ড নিয়ে নানা রকম খোলামেলা কথা এবং নানা ধরনের কুসংস্কার দূরীকরনে কাজ করে যাচ্ছে সরকার এবং সমাজ সচেতন জ্ঞানী লোকেরা।

নারীর সমঅধিকার ব্যর্থতার কারন নারী নিজেই



নারীদের অধিকার আদায় করা, নারী নির্যাতন বন্ধ করা সমাজের সবার মানসিকতা না বদলানো পর্যন্ত প্রায় অসম্ভব।নারীর অধিকারের প্রশ্নে সাংবিধানিক ও আইনগত জোড়ালো সমর্থন থাকা সত্ত্বেও পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিদ্যমান থাকার কারণে আমাদের সমাজে নারীদের এখনো সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।আমাদের দেশে নারীদের অধিকার সচেতনতার অভাবে নারীরা একদিকে যেমন তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ এবং আইনী সহায়তা থেকে বঞ্চিত,  অন্যদিকে বৈষম্যমূলক আইনের কারণে তাদের নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।যদিও নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের শ্রমে-ঘামে, মেধা-মননে আজকের সভ্যতা এ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।কিন্তু আমরা নারীদের প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিতে অক্ষম।আর তার জন্য মেয়েদেরও কিছু যে দোষ আছে!আমরা যদি একটু পিছনে গিরে তাকাই তাহলেই বুঝতে পারব নারীদের কি আদো কোন দোষ আছে কিনা?তবে আমি পিছনে ফিরে না গিয়ে সরাসরি বলছি কিভাবে মেয়েদের কিঞ্চিত হলেও দোষ রয়ে যায় তাদের অধিকার আদায় করে নেওয়ার ক্ষেত্রে। আমাদের দেশের নারী আন্দোলনে শিক্ষিত মানুষেরা, বিশেষ করে নারীরা অংশগ্রহণ করছেন না। দেখা যায়, তারা নিজেরা শিক্ষা পাচ্ছেন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন, তাই অন্যের অধিকার, বিশেষ করে সাধারণ দরিদ্র বা গ্রামীণ নারী বা কিশোরীর অধিকার লঙ্ঘন হলে তারা কিছু বলছেন না। এমনকি, যতক্ষণ না এই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির কোনো নারী নিজে আক্রান্ত হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত নিরব থাকছেন তারা।আর এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এবং ধর্মের কুসংস্কারের মাধ্যমে মেয়েদের যে, বেড়াজালে আটক করে রাখা হইছে তার জন্য প্রয়োজন মেয়েদের মধ্যে ঐক্যতার।ঐক্য ছাড়া নারী কখনো ধর্মীয় বেড়াজাল কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না তেমনি তাদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না।আমরা সবাই বেগম রোকেয়ার কথা জানি। বেগম রোকেয়া নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন। সে সময় বলতে গেলে নারীর কোনো স্বাধীনতাই ছিল না। বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা, বাড়িতে মেহমান এলেও তাকে লুকিয়ে রাখা হতো। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করে গেছেন। এ জন্য তাকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয়। বেগম রোকেয়ার মতো অনেক সম্মানিত ব্যক্তি আছেন, যারা নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করছেন।

কিছু কিছু ব্যাপারে মেয়েদেরও দোষ থাকে। তারাও মাঝেমাঝে ভুল করে ফেলে। এমন কিছু করে, যাতে তার পরিবারকে লজ্জায় পড়তে হয়। নারী সম্পর্কে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি পান্টাতে হবে। এখনও গ্রামে কোনো নারী পুরুষ কর্তৃক নির্যাতিত হলে নারীরাও নির্যাতিত নারীর বিভিন্ন দোষ তুলে ধরার চেষ্টা করে যা গ্রাম্য সমাজে খুব ভালোভাবেই চোখে পড়ে। নারীর প্রধান শত্রু আরেক নারী। একজন নারী আরেক নারীর প্রতি হিংসান্বিত হয়ে অত্যাচারের চুড়ন্তে যেতে পারে। নারীকে আক্রমণের জন্য একজন নারীর মুখেই অবলীলায় উচ্চারিত হয় বেশ্যার মতো অপমানকর হিংষাত্বক শব্দ। এখানে শিক্ষিত-অশিক্ষত নারীর মধ্যে কোনো তফাত নেই। একজন পুরুষ ক্রোধ বা হিংসার বশবর্তী হলেও কখনও আরেক পুরুষকে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করে অপমান করে না।

বেশিরভাগ ঘটনায় দেখা গেছে যে, কোনো নারীর ওপর নিপীড়ন চালানোর ঘটনায় একজন বা তার অধিক নারী জড়িত। শুধু জড়িত নয়, কখনও কখনও এরাই নারীর ওপর অত্যাচার চালাতে মূল ভূমিকা পালন করেন। নারীমুক্তির কথা যদি আসে তবে নারীকে প্রথম নারীর কাছ থেকেই মুক্তি নিতে হবে।