শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

ধর্ম এবং ধর্মের উৎপত্তি



সাধারণ ভাবেই যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় ধর্ম কি এবং কাকে বলে তাহলে সে সোজাসাপ্টা উত্তর না দিতে পেরে ত্যানা পেঁচিয়ে ভুলভাল বকা শুরু করে দিবে।তাই শুরুতে ধর্ম কি এবং কাকে বলে তা জেনে নেওয়া দরকার।

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাক্তন অধ্যাপক শৈলেন্দ্র ‘স্বভাব, শক্তি, গুণ’ অর্থাৎ বস্তুর অভ্যন্তরস্থ সেই নীতি যা সে মেনে চলতে বাধ্য থাকে। যেমন আগুনের ধর্ম হলো পোড়ানো, পানির ধর্ম ভেজানো বিশ্বাস এম. এ প্রণীত সংসদ্ বাঙ্গালা অভিধানে ধর্ম শব্দের অর্থ করা হয়েছে- ইত্যাদি। আগুন ও পানির এই গুণ চিরন্তন সত্য। লক্ষ বছর আগেও আগুন পোড়াতো, লক্ষ বছর পরও পোড়াবে। এটাই তার ধর্ম।

জেমস জি. ফ্রেজার বলেন,‘ধর্ম মানুষের চেয়ে উন্নত ধরণের একটি শক্তির বিধান, যে শক্তি মানব জীবন ও প্রকৃতির ধারাকে নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্লেষণ করে।’

টেলার বলেছেন,‘ ধর্ম হচ্ছে প্রেতাত্মায় বিশ্বাস।’

নাস্তিক কার্ল মার্কস বলেন,‘ধর্ম হল আফিম এর মতো।’

ডঃ অভিজিৎ রায় বলছেন,‘ধর্ম একটি ভাইরাস।’

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,”ধর্ম এমন একটি ভাব, যাহা পশুকে মনুষ্যত্বে ও মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করে। ”

মোট কথা হল ধর্ম হল স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস। অন্যভাবে বলা যায় ধর্ম হল স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক।

পৃথিবীতে ধর্মের কি ভাবে শুরু কিংবা উৎপত্তি হয়েছিল তার ব্যাখ্যা ও ইতিহাস বিস্তর। তবে ৩ থেকে ৫ লক্ষ বছ্র আগে মধ্য প্রস্তরযুগে ধর্মীয় আচার আচরনের সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায়।কিন্তু মানুষ যখন মাত্র ৫০০০ বছর আগে লিখার প্রচলন শুরু করে কেবল তখনই ধর্ম লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়েছে।৫০০০ বছর পূর্বে ধর্ম সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন জাগায় তেমন কিছু বলা হয় নাই বলে জানি আমি যতদূর।আবার কালের আবর্তে অনেক ধর্মের উৎপত্তি,উস্থান,পতন এবং হারিয়েও গেছে।

তবে ধর্মের উৎপত্তি হিসেবে কয়েকটি তত্ত্ব আছে। যেমন-

১। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত মতবাদ

২।মানবীয় বিচার-বুদ্ধি ভিত্তিক মতবাদ

৩।মনস্তাত্ত্বিক মতবাদ

৪।নৃ-তাত্তিক মতবাদ


সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত মতবাদব মানুষকে বিশ্বাস করতে বলে যে- পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকেই একজন ঈশ্বর আছেন এবং তিনিই ধর্মের প্রবক্তা।


মানবীয় বিচার-বুদ্ধি ভিত্তিক মতবাদ বিশ্বাস করে যে-পৃথিবীর সকল ধর্মের উৎপত্তি হল পুরোহিতদের মাধ্যমে।

নৃ-তাত্তিক মতবাদ এবং মনস্তাত্ত্বিক মতবাদের মতে ধর্মের উৎপত্তি বা ক্রমবিকাশ একদিনেই ঘটেনি।কালের বিবর্তে বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও ঘটনার মধ্যদিয়ে উদ্ভূত হয়েছে ‘ধর্ম’ শব্দটির।ক্রমবিকাশ বলতে বোঝায়- ক্রমশ বিকাশ,ক্রমোন্নতি,একটু একটু করে উন্নতি,অভিব্যক্তি,বিবর্তন,Evolution।অর্থাৎ কোন অলৌকিক ঘটনার মধ্য দিয়ে ধর্মের উৎপত্তি হয় নাই।আমি যতদূর জেনেছিলাম পৃথিবীতে প্রায় ৪২০০ ধর্ম রয়েছে এবং সকল ধর্মেরই একটা বিশ্বাস যে,আমাদের সৃষ্টির পিছনে একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে।প্রত্যেক ধর্মেরই একটা নিজস্ব আচার,ব্যবহার,অনুষ্ঠান,সংস্কৃতি এবং সৃষ্টিকর্তাকে বিভিন্ন নামে সম্ভোধন করে থাকে।কিন্তু আজ পর্যন্তই কোন ধর্ম অন্য ধর্মের আচার-আচরন,সংস্কৃতি এবং তার সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকৃতি দেই নি।বরং মানুষ আজ ধর্মকে ব্যবহার করে অন্য ধর্মের মানুষকে অবলীলায় হত্যা করছে এবং তা ধর্ম গ্রন্থের বিভিন্ন হাদিস চষে তা জায়েজ করা হচ্ছে।প্রত্যেক ধর্মেরই এক দাবি তার ধর্ম,সৃষ্টিকর্তা এবং তার ধর্মগ্রন্থ ব্যতীত বাকী সকল ধর্মই বানোয়াট এবং মিথ্যা ধর্ম।কিন্তু আমি বলি মানব ধর্ম ব্যতীত বাকী সকল ধর্মই বানোয়াট এবং ধর্ম ব্যাবসায়ীদের ধর্মের ফন্দী একে অন্য কোন কিছু হাসিল করা।যার জন্যই সাধারন সহজ সরল মানুষগুলোকে ব্যাবহার করে ধর্ম নামের অন্ধ বিশ্বাসকে আজো জিইয়ে রেখেছে এই আধুনিক বিজ্ঞানের জগতে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, মানুষের মনোভাব, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদির উন্নতি ও উন্মেষ ঘটতে দেখলেই ধর্মের দোহাই দিয়ে ধার্মিকেরা তার গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছে, আজও করেছে অনেক।

সব ধর্মই জঘন্য, বিষাক্ত এবং এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের সাপ-লাঠির সম্পর্ক।তবে কালের বিবর্তনে সিংহভাগ ধর্মই আজ শুধু পুঁথিগত হয়ে পড়ে রয়েছে। বাস্তবে তার তেমন একটা প্রয়োগ নেই।অনেকের কাছে ধর্ম এখন শুধু উৎসব হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।তবে সকলের উদ্দ্যেশে একটি কথাই বলব “সবার উপরে মানুষ সত্য,তাহার উপরে নাই।”তাইতো কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘হায় রে ভজনালয় তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয় ! মানুষেরে ঘৃণা করি ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি ও মুখ হইতে কেতাব- গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে যাহারা আনিল গ্রন্থ- কেতাব সেই মানুষেরে মেরে । পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল !– মুর্খরা সব শোনো মানুষ এনেছে গ্রন্থ,–গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।’আর ফকির লালন সাঁই বলেছিলেন,

‘এমন মানব সমাজ কবেগো সৃজন হবে

যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টান

জাতি গোত্র নাহি রবে।’

সব শেষে একটি কথাই বলব জয় হোক মানবতার,জয় হোক সকল শান্তি প্রিয় মানুষের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন