শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

দূর্বিত্ত নাকি মৌলবাদী



একদিকে,

নবীর সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল ইহুদীরা;

কোরআন আগুনে পুড়িয়েছিল খ্রিষ্টানরা;

কোরআনে প্রসাব করে দিয়েছিল বৌদ্ধরা;

ভারতের বাবরী মসজিদ ভেঙ্গেছিল হিন্দুরা;

ইসলাম ধর্মকে কটুক্তি করে লিখছে নাস্তিকরা;

ইসলামের শরীয়ত মোতাবেক চলে না শিয়ারা।

উপরের সকল কথাগুলা তথাকথিত বাংলাদেশের মডারেট সুশীল মুসলিমরা জোর গলায় প্রচারনা চলায় এবং এই অনৈতিক কর্মকান্ডকে পুজি করে আজও তাদের কাজ বৈধ করে নেয় সুশীল নামধারী মৌলবাদী মুসলিমরা।

অন্যদিকে,

সংখ্যালঘুদের আক্রমন করে বেড়ায় দূর্বিত্তরা;

গির্জায় চার্চের গলা কেটে হত্যা করে দূর্বিত্তরা;

রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা করেছিল দূর্বিত্তরা;

শিয়াদের মসজিদে আক্রমন করে দূর্বিত্তরা;

নাস্তিক ব্লগার কুপিয়ে হত্যা করে দূর্বিত্তরা;

হিন্দুদের মন্দিরে আক্রমন করে দূর্বিত্তরা।

উপরের সকল কথাগুলা তথাকথিত বাংলাদেশের মডারেট সুশীল মুসলিমরা জোর গলায় প্রচারনা চলায়।কিন্তু তারা মানে মুসলিম ভাইয়েরা কেন বলে না যে,বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যেসকল আক্রমন হয় তারা কোন না কোন ধর্মের লোক।কেন তাদের দূর্বিত্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়?আর তারা কে বা কারা আপনার না বললেও গতকাল জন্ম নেওয়া শিশুটিও বলতে পারে এ আক্রমন গুলা বাংলাদেশী মৌলবাদী মুসলিমদেরই কাজ।অপরদিকে আবার যখন অন্য কোন দেশ বা গোষ্ঠী মুসলিমদের উপর চড়াও হয়ে আক্রমন করে তখন আবার ঠিকই আপনারা তাদের ধর্মকেই টেনে আনবেন সবার আগে।এবং এদেশ থেকে সংখ্যালঘুদের তাড়ানোর জন্য ডাক দিবেন মসজিদের মাইকে মাইকে।আর পরবর্তীতে তা আবার ঢালাও ভাবে প্রচারনা চালানো হবে অমুক সংখ্যালঘু জাতীদের উপর আক্রমন করেছে দুষ্কৃতকারী দুর্বিত্তরা।


কিন্তু অপরদিকে দেখুন-

সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া,ভারতে আখলাকের ঘরে গরুর মাংস আছে এই খবরে স্থানীয় গ্রামের শত শত “হিন্দু” মৌলবাদীরা আক্রমন করে,তাকে এবং তার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে বাংলাদেশের সকল নিউজ চ্যানেল এবং নিউজ পোর্টাল প্রচার করে।

অন্যদিকে যখন, ফেনী জেলা সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের জেলে পল্লীতে হিন্দু কোজাগরী পূর্ণিমা (শ্রীশ্রীলক্ষ্মী পূজা)-তে আতশবাজি পোড়ানোকে ইস্যু করে চাঁদা দাবী করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। চাঁদা না পেয়ে এর জের ধরেই পরদিন জেলেপল্লীতে গিয়ে অতর্কিত হামলা করে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক জেলের দোকানে লুট পাট, ভাঙচুর শুরু করলে অন্যরা এগিয়ে আসলে এলোপাথাড়ী কোপানো,লাঠিপেটা, কিলঘুষি, লাথি চালাতে থাকে অবিরত।এবং ৭ মাসের গর্ভবতী টুনী রাণীর গর্ভপাত হয়ে যায় লাথির আঘাতে।কিন্তু সেটাও প্রচার করা হলো দূর্বিত্ত এবং ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী বলে।কিন্তু কেন তারা যে “মুসলিম” এবং “ধর্ম”-কে কেন্দ্র করেই মুলত এ আক্রমন করা হয় তা কেন প্রচার করা হলো না?

আমীর খান কিছুদিন আগে বলেছেন- ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কমে যাচ্ছে এবং অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই নিয়ে বাংলাদেশী অনেক মডারেটর বলছেন সেই তুলানায় বাংলাদেশে হিন্দুরা অনেক ভালো আছে।আবার অনেকে আমীরের বিপক্ষেও মন্তব্য করেছে।

এই মতামতের বিরোধীতা করে ধর্মান্ধ মৌলবাদী “হিন্দু” শিবসেনা গ্রুপের শীর্ষনেতা রাজ থ্যাকারে এই ধরণের মতামত দেয়ার কারণে আমীর খানকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। সেই সাথে এটাও বলেছে, যারাই এই ধরণের কথা বলবে সবাইকেই হত্যা করা হবে।

কিন্তু আবার যখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলোক সেনকে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয় তখন সেটা প্রচার করা হলো “দূর্বিত্ত”-দের আক্রমনের শিকার বলে।কিন্তু কেন সেটা ইসলামী মৌলবাদের আক্রমন ফলে প্রচার করা হলো না?

এরকম হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যাবে,কিন্তু এই “দূর্বিত্ত” শব্দটি পরিবর্তন করে বাংলাদেশে “ইসলামী মৌলবাদী” শব্দটি কী আদো ব্যবহার করা যাবে কখনো?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন