শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

নারীবাদী নাকি পুরুষবিদ্বেষী



তোমাদের নারীবাদী নাকি পুরুষবিদ্বেষী বলব বুঝে উঠতে পারতেছিনা!আসলে আমার সাথে বেশ কজন নারীবাদী অনলাইন এক্টিভিষ্টের সাথে পরিচয় হইছে।তারা অনলাইনের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন ব্লগেও নারীঅধিকার নিয়ে জোড়ালো আন্দোলন কিংবা লিখালিখি করে।আমিও তাদের লিখা নিয়মিত পড়ি,লাইক,কমেন্ট করি।তাদের মতের সাথে অনেক সময় ঘোর বিরুধীতা কিংবা সহমত পোষন করি।তবে তাদের মতের সাথে অনেক সময় নিজেকে মিলাতে পারি না,তাই হয়তো বিরুধীতাটাই বেশী করি।কারণ তাদের লিখা বা বলার ধরন এমনি যে,তারা আসলে নারীবাদী বা নারী অধিকার নিয়ে লিখালিখি করে না।আসলে তারা যা লিখে বা বুঝাতে চায় তা সরাসরি প্রতিটা পুরুষকে আঘাত করে কিংবা পশুর থেকেও ছোট করে ঘৃণ্য প্রানী হিসাবে দেখে পুরুষদের।তাদের কথা এমন যে,দুনিয়ার প্রতিটা পুরুষ বলতেই কুৎসিত নোংরা মনের অধিকারী,প্রতিটা পুরুষই নারী নির্যাতনকারী কিংবা ধর্ষক অথবা দুনিয়ার কোন পুরুষই কারো বাবা,ভাই,স্বামী,সন্তান,প্রেমিক কিংবা বন্ধু হওয়ার অধিকার রাখে না ইত্যাদি ইত্যাদি.........।


আপনারা আসলে,নারীবাদী নাকি পুরুষবিদ্বেষী তা বলার আগে আমাদের সবার আগে যেটা জানা দরকার তা হলো নারীবাদী এবং পুরুষবিদ্বেষী কি?আমি জানিনা কাকে নারীবাদী বা কাকে পুরুষবিদ্বেষী বলে?আমি শুধু জানি আমরা সবাই মানুষবাদী বা মানবতাবাদী।তারপরেও এই দুইটার মধ্যে যদি আমি বা আপনারা আগে ঠিক পার্থক্যটা না বুঝে উঠতে পারেন তাহলে তারা যে আসলে কি,তাও আমার কিংবা আপনাদের নির্ধারণ করা বেশ কঠিন হয়ে যাবে।তাই আগে নারীবাদী এবং পুরুষবিদ্বেষী সম্পর্কে হালকার উপর ঝাপসা একটু ধারণা নেওয়া যাক কেমন?


নারীবাদীঃনারীবাদী বলতে আমি যেটা বুঝি তাহলো,নারীদের অধিকার আদায়,নারী পুরুষের মাঝে থাকবেনা কোন রকম বিবেদ(সমতা অর্জন),সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও সমভাবে অংশগ্রহন কিংবা সমতালে নারী-পুরুষ একই সাথে সমস্ত কার্যক্ষেত্রে একে অপরের সহযোগী হয়ে পথ চলা।এক কথায় লিঙ্গ বৈষম্য বলে যে,একটা কথা আছে তা না মেনে স্বাধীনভাবে নারীপুরুষ একত্রিত হয়ে একে অপরের উপর হাত রেখে সকল প্রকার অপবাদ কিংবা বৈষম্যকে রুখে দেওয়া।নারীকে কোন অবলা কিংবা শুধু গৃহকর্মী করে আবদ্ধ না করে তার মতামতকে পুরুষের পাশাপাশি সমান ভাবে গ্রাহ্য করা।আর নারীদের উপরোক্ত বিষয় নিয়ে যারা লিখালিখি কিংবা আন্দোলন করে তাদেরই এককথায় নারীবাদী বলা হয়।অর্থাৎ যারা পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের সমঅধিকার নিয়ে কথা বলে তাদেরই নারীবাদী বলা হয়।নারীবাদী কোন নারী না শুধু যেকোন পুরুষও নারীবাদী হতে পারে।যদি সে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নারীর সমধিকার নিয়ে পক্ষপাতিত্ব করে তবেই।তাই এ নিয়ে কোন চিন্তা করার দরকার নাই যে,নারীবাদী কেবলই নারী ব্যতীত পুরুষ হতে পারবে না।


পুরুষবিদ্বেষীঃপুরুষবিদ্বেষী বলতে এককথায় নারীর বিপরীতে পুরুষকে ঘৃণ্য প্রানী কিংবা সমাজের জঞ্জাল কোন অতিরিক্ত বস্তু অথবা প্রানী যাই বলেন না কেন,মানে অস্তিতহীনতা ভেবে বিভিন্ন ভাবে দুনিয়ার সকল পুরুষকে এককাতারে দাঁড় করিয়ে অবহেলা,ঘৃণা,ছোট বা সমাজের কুৎসিত কিছু করে দেখা।যেখানে সমাজের হর্তাকর্তা নারী থাকবে,সমাজের সব অধিকার নারীদের উপর বর্তাবে,পুরুষদের বৈষম্য করে দেখা হবে,সমাজের নানা কারণ-অকারণ ছাড়াই অযথা যে কোন দোষ পুরুষদের উপর অযৌক্তিক ভাবে চাপিয়ে দেওয়া এবং পুরুষদের যে কোন কারণে তিরষ্কার করে কথা বলা বা অধিকার বন্টনে পুরুষদের হেস্তনেস্ত ইত্যাদি করাই হলো পুরুষবিদ্বেষী কার্যকলাপ।আর এই সকল বিষয়ের সাথে যে সকল লোক সংযুক্ত থেকে নারীদের কাজে সাহায্য-সহযোগীতা করে তাদেরই পুরুষবেদ্বেষী বলা হয়।


এখন আমরা নারীবাদী এবং পুরুষবিদ্বেষী সম্পর্কে বেশ কিছু হলেও ধারণা পেয়েছি।যা আমাদের সাহায্য করবে ওরা আসলে নারীবাদী নাকি পুরুষবিদ্বেষী নির্ধারনে।তাই আর কথা না বাড়িয়ে মুল কথায় চলে যাই-

আমার সাথে যতগুলা নারীবাদী নারীর সাথে পরিচয় হয়েছে এবং অন্য যাদের মুখে বিভিন্ন নারীবাদীর কথা শুনি তারা সবাই নারীবাদীদের উদ্দ্যেশে বলে এবং আমারও একটা কমন কথা যে,নারীবাদী মানে কি পুরুষকে ঘৃণার চোখে দেখে দুনিয়ার সকল পুরুষকে একই পাল্লায় পাল্লায়িত করা।দোষ করবে একজন পুরুষ আর সবাই এই দোষের ভাগী হবে দুনিয়ার সকল পুরুষ তা না কিন্তু!কিন্তু আমাদের নারীবাদীরা তাই করতাছে,একজন পুরুষের দোষে দুনিয়ার সকল পুরুষ জাতিকে ঢালাও ভাবে সকালে ঘুম থেকে উঠা শুরু করে রাতে চোখ বুঝে শান্তিতে নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘুমের রাজ্যে চলে যাওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত।পারলে হয়তো ঘুমের মাঝেও নারীবাদীর নামে পুরুষবিদ্বেষী আন্দোলন করে যেত।আর এই সকল নারীবাদীদের ভাব খানা এমন যেন,দুনিয়ার সকল নারী পুরুষদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে রাত দিন ২৪ ঘন্টা।কিন্তু এর মধ্যে কোন নারী ব্যতীত কোন পুরুষ নির্যাতনের বিরোধীতা কিংবা নারীর সমঅধিকার নিয়ে কোন কথা বা প্রতিবাদ করে না।যদি কোন পুরুষ নারীদের সমধিকার নিয়ে কথা বলে তবে ওই একজনের জন্যই দুনিয়ার সকল পুরুষকে এক পাল্লায় পাল্লায়িত করা যাবে না।অপরদিকে আমি এটাও বলব না যে,আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিংবা নারীরা ধর্ষিত,শোষিত কিংবা নির্যাতিত হচ্ছে না।বরং আমি এটাই বলব নারীরা আমাদের দেশে পুরুষ শাষিত সমাজে অনেক নারী বলি হচ্ছে পুরুষের হাতে বিভিন্ন কারণ অকারণে।কারণ আমাদের সমাজটা বেশ যুগের পর যুগ পুরুষ শাষিত সমাজ বলেই চলে আসছে।এই পুরুষ শাষিত সমাজে এতো সহজে কিংবা রাতারাতি বদলে নারী-পুরুষের মাঝে সমাধিকার বন্টন হবে না।এ জন্য নারীবাদীদের যথার্থ উপায়ে যথার্থ কথা কিংবা আন্দোলণের পথ বেছে নিয়ে ধীরে ধীরে আঘাতে হবে।কিন্তু আমাদের নারীবাদীরা রাতারাতি পরিবর্তন চায়।যেন তারা হাতে আলাউদ্দিনের কোন চেরাক পাইছে যে,মনের আশা সে চেরাকের সামনে উপস্থাপন করবে আর সাথে সাথে সব পরিবর্তন হয়ে যাবে।নারীবাদীরা এটা বুঝতে চায় না যে,হঠাৎ করেই আমাদের সমাজ ব্যবস্থা পুরুষ শাষিত হয়ে চলা শুরু করছে না।বরং তা বহু বছর আগ থেকেই চলে আসছে এবং তার মধ্যে আছে ধর্ম নামে কালপিটের নারীদের শোষন করা নিয়ে এবং পুরুষে ছায়াতলে নারীকে যেভাবে রাখা হবে সে ভাবেই থাকতে হবে তারও অনেক কৌশল বর্নণা করা হইছে বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে।সেহেতু এসব বাধা বিপত্তি রাতারাতি সংশোধন করে ফেলা যাবে না।কিন্তু আমাদের নারীবাদীরা তাই চাচ্ছে যে,রাতারাতি সবকিছু কেন পরিবর্তন হচ্ছে না!লেবু যেমন বেশী চিপলে তিতা হয়ে যায় আজ তেমনি নারীবাদীরা বিভিন্ন জন কিংবা বিভিন্ন উগ্রনারীবাদী নামে পুরুষবিদ্বেষী কার্যকলাপের জন্য তিতা হয়ে যাচ্ছে জনসাধারণের নিকট।অপরদিকে এই নারীবাদীরা এই চিন্তা করে না যে,আমাদের সমাজে নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সমাধিকার এবং অনেক ক্ষেত্রে ছেলেদের থেকেও বেশী অধিকার ভোগ করছে।আর নারীরা আজ বিভিন্ন জায়গা কিংবা প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করে তাদের সমাধিকার আদায় করে নিচ্ছে।তা আমরা আজ দৈন্দিন জীবনে বেশ ভালোভাবেই খেয়াল করছি।


পরিশেষে আমি এই বলব যে,তুমি নারীবাদী হও,পুরুষবাদী যাই হও না কেন,তার আগে তোমার মানবতাবাদী হতে হবে।তাছাড়া তোমার মাঝে বৈষম্যতা নিজের অজান্তেই চলে আসবে এবং তোমার কার্যকলাপগুলো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই উস্কানিমূলক হয়ে যাবে।কারণ তোমরা যারা নিজেদের নারীবাদী বলে দাবী করো তারা কিন্তু পুরুষ শাষিত সমাজ ভেঙ্গে নারী-পুরুষের সমধিকার বন্টনে কাজ করতে চাচ্ছ।কিন্তু তোমাদের কথা বার্তায় তা পুঙ্খানোপুঙ্খ ভাবে তা পুরুষবিদ্বেষী বৈষম্য মূলক আচরণ প্রকাশ হচ্ছে।কারণ নারীবাদীদের মতে,পুরুষ মানেই ধর্ষণকারী,নারী নির্যাতনকারী ইত্যাদি ইত্যাদি।আর তার মানে প্রতিটা পুরুষ আপনাদের কাছে পশু সমতুল্য।কিন্তু এই পুরুষদের মাঝে কিন্তু আপনার বাবা,ভাই,স্বামী,সন্তান,প্রেমিক কিংবা বন্ধুও হতে পারে।আর আপনাকে আজ যে বাবা তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে গায়ের রক্ত পানি করে টাকা উপার্জন করে আপনাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পারছে,এবং আজ আপনি যার কারণে শিক্ষিত হয়ে নারীবাদী হয়ে উঠেছেন,নারীদের সমাধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পুরুষদের অপমান করছেন সেই সারিতে কিন্তু আপনার বাবাও পরছে সে কোন অপরাদি না হয়েও।সেহেতু একটা কথা নারীবাদীরা মনে রাখবেন যে,নারী নির্যাতনকারী কিংবা ধর্ষকের কোন জাত নাই,আর সকল পুরুষই ধর্ষক বা নারী নির্যাতনকারী না।তাদের মধ্যে আপনার বাবা,ভাই,সন্তান,স্বামী,প্রেমিক কিংবা আপনার কাছের বিশ্বাসী ভালো এবং সৎ বন্ধুও লুকিয়ে থাকতে পারে।আর আজকাল অনেক শিক্ষিত সচেতন পুরুষও কিন্তু নারীবাদী এবং নারীদের সমাধিকারের সমর্থিত।সেহেতু আপনাদের নারীবাদীর নামে পুরুষবিদ্বেষী হওয়ার কোন মানেই হয় না।তাই দয়া করে আপনাদের চিন্তাধারাকে পরিবর্তন করুন যদি আপনি সত্যি নারী-পুরুষের মাঝে যে বৈষম্যতা মূলক হিংস্রতা তা দূর করতে চান।


অ.টঃপ্রতিটা নারীবাদীদের মাঝে পুরুষবিদ্বেষী ভাব অপ্রিয় সত্য হলেও খুব জোড়ালো ভাবে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে লক্ষ্য করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন